শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/6/6d/Sholakia_Eidgah_Maidan_05.jpg/220px-Sholakia_Eidgah_Maidan_05.jpg)
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান।[১] প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদুল আযহা নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত দিনাজপুরের "গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের" পর দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান। বর্তমানে এই ঈদগাহের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ও হিফজুর রহমান খান।
মাঠের ইতিহাস
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/c/c3/Sholakia_Eidgah%2C_a_locality_near_Kishoreganj_town%2C_Bangladesh..jpg/220px-Sholakia_Eidgah%2C_a_locality_near_Kishoreganj_town%2C_Bangladesh..jpg)
ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।[২][৩][৪][৫] ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় 'সোয়া লাখি' । পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়।[৪] আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া_ সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।[২]
মাঠের বর্ণনা
[সম্পাদনা]![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/a/ad/Sholakia_Eidgah_Maidan_02.jpg/220px-Sholakia_Eidgah_Maidan_02.jpg)
বর্তমান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন ৭ একর। নরসুন্দা নদীর তীরে শোলাকিয়ার অবস্থান। বর্তমানে শোলাকিয়ার পূর্বপ্রান্তে দু'তলা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উচু দেয়ালে ঘেরা হলেও মাঝে মাঝেই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে মানুষ মাঠে প্রবেশ ও বের হতে পারে। এছাড়া এই মাঠের প্রাচীর দেয়ালে কোনো দরজা নেই। শোলাকিয়া মাঠে ২৬৫ সারির প্রতিটিতে ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। ফলে মাঠের ভেতর সবমিলিয়ে এক লাখ বত্রিশ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ঈদুল ফিতরের সময় দেখা যায়, আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, এমনকি বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে সর্বমোট প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। এবং এই মুসল্লির এই সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ'র ব্যাবস্থাপনার জন্য ৫১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। ঈদের নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকাণ্ড এই কমিটি করে থাকে।[৬]
জামাত
[সম্পাদনা]১৮২৮ সালের প্রথম জমাত হিসেবে শোলাকিয়া মাঠে ১১ এপ্রিল ২০২৪ ঈদুল ফিতরে ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে পাঁচ লাখের বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন।[৭]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ শববীর আহমদ ও সৈয়দ আশরাফ আলী (২০১২)। "ঈদুল ফিত্র"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ দৈনিক আজকের খবর[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "সরকারি ওয়েবসাইট"। ১০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
- ↑ ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম, লেখকঃ মোঃ আবদুল করিম, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠাঃ ১২৫-১২৮
- ↑ দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত নিবন্ধ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে পাঁচ লাখের বেশি মুসল্লি, কালের কণ্ঠ, ১১ এপ্রিল ২০২৪