শেংগেন অঞ্চল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শেনজেন অঞ্চল থেকে পুনর্নির্দেশিত)
The Schengen Area
শেংগেন অঞ্চলের মানচিত্র;
  শেংগেন অঞ্চল
  প্রকৃতপক্ষে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহ
  ভবিষ্যতে শেংগেন অঞ্চলে যোগদানের জন্য চুক্তির মাধ্যমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যসমূহ

শেংগেন অঞ্চল বা শেঙেন অঞ্চল বলতে ইউরোপ মহাদেশের ২৭টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চলকে বোঝায়, যে অঞ্চলটির অভ্যন্তরে দেশগুলির মধ্যকার পারস্পরিক সীমান্তগুলিতে সব ধরনের পাসপোর্ট এবং অন্যান্য সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদপ্রাপ্ত দেশগুলির স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং বিচার নীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একই রকম হওয়ায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দেশগুলির সিংহভাগই একটি সাধারণ ভিসা নীতি মেনে চলে। ১৯৮৫ সালের শেংগেন চুক্তি এবং ১৯৯০ সালের শেংগেন ঐকমত্য (কনভেনশন) অনুযায়ী অঞ্চলটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করা হয়। উভয় চুক্তি লাক্সেমবার্গের শেংগেন শহরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল বলে এই নাম দেওয়া হয়। কিছু বাংলা গণমাধ্যমে "শেনজেন" বানানটিও দেখা যায়।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়োনের ২৭টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ২২টি শেংগেন অঞ্চলের আওতাভুক্ত। শেংগেন এলাকার অংশ নয়, এমন পাঁচটি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হলো বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, রোমানিয়া এবং আয়ারল্যান্ড। এদের মধ্যে বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস এবং রোমানিয়া ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে যোগ দিতে আইনত বাধ্য হলেও আয়ারল্যান্ড নিজস্ব ভিসা নীতি মেনে উক্ত অঞ্চলে যোগ দেয়া থেকে বিরত আছে৷ ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সংস্থার চারটি সদস্য রাষ্ট্র - আইসল্যান্ড, লিশটেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র না হলেও শেংগেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া তিনটি ইউরোপীয় ক্ষুদ্র রাষ্ট্র — মোনাকো, সান মারিনো, এবং ভ্যাটিকান সিটি তাদের প্রতিবেশীদের সাথে যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্মুক্ত সীমান্ত বজায় রাখে। এই কারণে অন্ততপক্ষে একটি শেংগেন অঞ্চলভুক্ত দেশের ভেতর দিয়ে উক্ত ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের অতিক্রমণ (ট্রানজিট) ছাড়া চলাচল করা সম্ভব নয় বিধায় দেশ তিনটিকে শেংগেন অঞ্চলের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১]

শেংগেন অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি এবং আয়তন ৪৩,১২,০৯৯ বর্গকিলোমিটার (১৬,৬৪,৯১১ মা)।[২] প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন একটি অভ্যন্তরীণ ইউরোপীয় সীমান্ত পেরিয়ে কাজ করার জন্য অন্য দেশে যাতায়াত করে এবং কিছু অঞ্চলে এরা কর্মশক্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত গঠন করে। প্রতি বছর শেংগেন অঞ্চলে মোট ১৩০ কোটি সীমান্ত পারাপার ঘটে থাকে। প্রতি বছর সড়কপথে ২ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি ইউরো সমমূল্যের ৫ কোটি ৭০ লক্ষটি আমদানি-রপ্তানির ঘটনা সংঘটিত হয়।[৩] [৪] [৫] ভৌগোলিক অবস্থা, বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে শেংগেন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের ব্যয় ০.৪২% থেকে ১.৫৯% পর্যন্ত হ্রাস পায়। শেংগেন এলাকার বাইরের দেশগুলিও এ কারণে উপকৃত হয়। [৬] শেংগেন অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলি শেংগেন চুক্তিভুক্ত নয় এমন দেশগুলির সাথে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে৷ [৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Tourist, Student and Work visa to Europe"। Swift Tourism। ২০১০। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. European Commission (১২ ডিসেম্বর ২০০৮)। The Schengen Area (পিডিএফ)। European Commission। আইএসবিএন 978-92-79-15835-3ডিওআই:10.2758/45874। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৩ 
  3. European Parliamentary Research Service (মার্চ ২০১৬)। "The economic impact of suspending Schengen" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৫ 
  4. European Council on Foreign Relations (২০১৬)। "The Future of Schengen"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৫ 
  5. "Schengen's economic impact: Putting up barriers"The Economist। ২০১৬-০২-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৫ 
  6. "Trade costs of border controls in the Schengen area"Centre for Economic Policy Research। ২০১৬-০৪-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৬-১৫ 
  7. "The refugee crisis: Fixing Schengen is not enough"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮