শুভ্রা ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাননীয় সুশ্রী বিচারপতি
শুভ্রা ঘোষ
কলকাতা উচ্চ আদালতের বিচারক
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৯শে নভেম্বর ২০১৮
মনোনয়নকারীরঞ্জন গগৈ
নিয়োগদাতারামনাথ কোবিন্দ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1968-04-23) ২৩ এপ্রিল ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

শুভ্রা ঘোষ (জন্ম ২৩শে এপ্রিল ১৯৬৮) হলেন একজন ভারতীয় বিচারক, বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে কাজ করছেন।[১] তিনি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মামলায় রায় দিয়েছেন, যার মধ্যে ছিল ভারতে মৃত্যুদণ্ড আরোপ সংক্রান্ত মামলা। এছাড়া তিনি উল্লেখযোগ্যভাবে কলকাতা হাইকোর্টের ওপরেই জরিমানা আরোপ করেন কারণ আদালত ইতিপূর্বে ভুল করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে অসদাচরণের কারণে অভিযুক্ত করে অবসর নেওয়ার আদেশ দিয়েছিল।[২]

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শুভ্রা ঘোষ কলকাতায় শিক্ষালাভ করেন, এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়ন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি একটি সমন্বিত কলা ও আইন (বিএ, এলএলবি) ডিগ্রি অর্জন করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শুভ্রা ঘোষ ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে বিচার বিভাগে যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি একজন সিভিল জজ নিযুক্ত হন এবং পরে উচ্চতর বিচার বিভাগীয় পরিষেবাতেও যোগ্যতা অর্জন করেন। তিনি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির রেজিস্ট্রার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইন বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব এবং দার্জিলিংকলকাতার একজন জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯শে নভেম্বর, শুভ্রা ঘোষকে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সর্বোচ্চ বিচারিক ফোরাম, কলকাতা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তাঁর নিয়োগ ২০২০ সালের ৪ঠা মে স্থায়ী করা হয়েছিল।[১][৩]

উল্লেখযোগ্য রায়[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের জুনে, পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তাররা রোগীদের পরিবারের দ্বারা ডাক্তারদের উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ধর্মঘট শুরু করেন। শুভ্রা ঘোষ এবং অন্য একজন বিচারক ডাক্তারদের কাজে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ব্যাপকভাবে প্রকাশিত মতামতে জানা যায়, তিনি এর পরিবর্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ধর্মঘটে থাকা চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন, একটি সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।[৪][৫][৬][৭] একই মাসে, শুভ্রা ঘোষ ভারতে মাওবাদী বিদ্রোহীদের সাথে সহযোগিতা করার জন্য ভুলভাবে অভিযুক্ত তিন ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন এই কারণে যে তাঁদের অপরাধের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ব্যক্তিরা বিচারের অপেক্ষায় ১৪ বছর কারাবাস ভোগ করেছেন।[৮][৯]

২০১৯ সালের জুলাই মাসে, শুভ্রা ঘোষ এবং অন্য এক বিচারক সঞ্জীব ব্যানার্জি মনে করেন যে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশাসন ভুল করেছে। এক রেলওয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ট্রেন বিলম্বের জন্য রেলের আধিকারিকদের তিরস্কার করার আদেশ দিয়েছিলেন। প্রশাসন তাঁকে নিলম্বিত করে এবং বাধ্যতামূলক অবসর নেওয়ার আদেশ দেয়। দুই বিচারক বলেন প্রশাসনের রায় "অসমানুপাতিক" এবং "বেদনাদায়ক"। তাঁরা হাইকোর্ট প্রশাসনকে  ১,০০,০০০ (US$ ১,২২২.৩৩) জরিমানা করার এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে পুনর্বহাল করার আদেশ দেন। তাঁদের রায়টি ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল, কারণ এটি কলকাতা হাইকোর্টের নিজেই নিজেকে জরিমানা করার একটি মামলা হিসাবে রিপোর্ট করা হয়েছিল।[২][১০]

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, শুভ্রা ঘোষ এবং অন্য এক বিচারক, জয়মাল্য বাগচী, হেরোইন রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের আদেশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত করেছিলেন। শুভ্রা ঘোষ এবং জয়মাল্য বাগচী তাঁদের রায়ে বলেছিলেন যে পরিসংখ্যানগত তথ্য ইঙ্গিত করে না যে মৃত্যুদণ্ড আরোপ করা হলে তা অপরাধের প্রতিবন্ধক হিসাবে কাজ করবে। এটিই তাদের সাজা কমানোর অন্যতম কারণ।[১১][১২]

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, থোট্টাথিল বি. রাধাকৃষ্ণন, আর্থিক জালিয়াতি, দুর্নীতি এবং পঞ্জি স্কিম (একটি বিনিয়োগ জালিয়াতি যেখানে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত তহবিল দিয়ে বর্তমান বিনিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান করা হয়) সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেছিলেন, বিচারক শুভ্রা ঘোষ এবং বিচারক জয়মাল্য বাগচীকে এই ধরনের সমস্ত মামলার শুনানির জন্য নিয়োগ করেছিলেন, যেখানে আইন প্রণয়ন প্রতিনিধিরা জড়িত।[১৩][১৪] তাঁরা সারদা গ্রুপের আর্থিক কেলেঙ্কারি সহ বেশ কয়েকটি মামলার শুনানি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Hon'ble Justice Suvra Ghosh"Calcutta High Court 
  2. Service, Tribune News। "Calcutta HC imposes Rs 1 L 'cost' on itself"Tribuneindia News Service (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  3. "SC Collegium recommends elevation of 5 judicial officers as Judges of Karnataka HC"in.news.yahoo.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  4. Scroll Staff। "Calcutta HC asks state to persuade protesting doctors, refuses to pass interim order on strike"Scroll.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  5. "Refusing interim order on doctors' strike, Calcutta HC asks state govt to persuade them to work"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৬-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  6. NETWORK, LIVELAW NEWS (২০১৯-০৬-১৫)। "Reconcile!, Calcutta HC Tells 'Striking' Doctors; Reminds Them About Hippocratic Oath [Read Order]"www.livelaw.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  7. "Calcutta High Court refuses to pass interim order on Bengal doctors' strike"www.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  8. "Kolkata: Three 'Maoists' Acquitted After Spending 14 Years in Jail"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  9. Sebastian, Manu (২০১৯-০৬-২৬)। "Calcutta HC Sets Aside Conviction Of Alleged Maoists For Sedition After 13 Years [Read Judgment]"www.livelaw.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  10. Kini, Ashok (২০১৯-০৭-০৬)। "Calcutta HC Reinstates Magistrate Who Was Compulsorily Retired; Imposes 1 Lakh Costs On Itself [Read Judgment]"www.livelaw.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  11. Saxena, Akshita (২০১৯-১২-০৫)। "No Data To Conclusively Establish That Imposition Of Death Penalty Leads To Reduction Of Crime: Calcutta HC [Read Judgment]"www.livelaw.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  12. "Death commuted to 30 years in jail"www.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  13. "Calcutta HC forms benches for Ponzi scheme matters, criminal cases involving lawmakers"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৯-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬ 
  14. "New benches at Calcutta HC for hearing criminal cases against lawmakers"Outlook India। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৬