শাহী হাম্মাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শাহী হাম্মাম
شاہی حمام
শাহী হাম্মামের কেন্দ্রীয় কক্ষ
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
অবস্থানলাহোর, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
ঠিকানাদিল্লি দরোয়াজা
স্থানাঙ্ক৩১°৩৪′৫৬″ উত্তর ৭৪°১৯′৩৪″ পূর্ব / ৩১.৫৮২০৯৬° উত্তর ৭৪.৩২৫৯৭৪° পূর্ব / 31.582096; 74.325974
খোলা হয়েছে১৬৩৫ (1635)
পুনঃসংস্কার২০১৫
ব্যবস্থাপনাপ্রাচীরবেষ্টিত লাহোর নগর কর্তৃপক্ষ
অন্যান্য তথ্য
সুবিধাসমূহ(পূর্বে) বাষ্পস্নান, উষ্ম স্নানকক্ষ, শীতল স্নানকক্ষ
মূল গম্বুজের নিচের ফ্রেস্কোগুলো পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করা হয়েছে।

শাহী হাম্মাম (উর্দু এবং পাঞ্জাবি: شاہی حمام; "রাজকীয় স্নানাগার"), ওয়াজির খান হাম্মাম নামেও পরিচিত, হলো পাকিস্তানের লাহোর শহরে অবস্থিত একটি পারস্য শৈলীর হাম্মাম বা স্নানাগার। মোঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে ১৬৩৫ খ্রিষ্টাব্দে হাম্মামটি নির্মাণ করা হয়। মোঘল দরবারের প্রধান চিকিৎসক ইলমুদ্দিন আনসারী (ওয়াজির খান নামে অধিক পরিচিত) এটি নির্মাণ করান।[১][২][৩] ওয়াজির খান মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণার্থে ওয়াকফ বা দাতব্য সম্পত্তি হিসেবে এই হাম্মামটি নির্মাণ করা হয়েছিল।[৪]

স্নানাগার হিসেবে আর ব্যবহৃত না করে সংরক্ষণের জন্য আগা খান সাংস্কৃতিক ট্রাস্টপ্রাচীরবেষ্টিত লাহোর নগর কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে ২০১৩ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে হাম্মামটির সংস্কার সাধন করে। নরওয়ে সরকার এই প্রকল্পের অধিকাংশ ব্যয় নির্বাহ করে। হাম্মামের সংস্কার ও সংরক্ষণের মাধ্যমে "পূর্বের বৈশিষ্ট্য" ফিরিয়ে আনায় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো প্রকল্পটিকে "অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট" এ ভূষিত করে।[৫]

অবস্থান[সম্পাদনা]

শাহী হাম্মাম প্রাচীরবেষ্টিত লাহোরের মধ্যস্থলে দিল্লি দরোয়াজার পাশেই অবস্থিত। শাহী হাম্মাম হলো লাহোরের মোঘল আমলের সর্বশেষ অবশিষ্ট হাম্মাম বা স্নানাগার।[৬]

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

মোঘল আমলে পারস্য ধাঁচের হাম্মামখানার প্রচলন ঘটে। তবু পারস্যের মতো মোঘল সাম্রাজ্যে হাম্মাম রীতি তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করে নি।[৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

লাহোরের গভর্নর ইলমুদ্দিন আনসারি ওয়াজির খান মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে শাহী হাম্মাম নির্মাণ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দী নাগাদ মোঘলদের পতন ও সাম্রাজ্যের অবসানের সাথে শাহী হাম্মামের ব্যবহারও কমে যেতে থাকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শুরু থেকে বিভিন্ন কাজে ভবনটি ব্যবহৃত হতে থাকে। প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঔষধাগার, বিনোদন কেন্দ্র এমনকি স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের দপ্তর হিসেবেও ভবনটি ব্যবহৃত হয়। সেই সাথে ভবনের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রবেশদ্বারে দোকান নির্মাণ করা হয়।[৭]

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্পূর্ণ হওয়া সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে উৎখনন কাজের পর দেখা যায়, স্থাপনার উল্লেখযোগ্য অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে ১৮৬০ এর দশকে দিল্লি দরোয়াজার মতো পুনর্সংস্কার কাজের আরম্ভ হয়।[৮]

কাঠামো[সম্পাদনা]

স্থাপনার কিছু দেয়ালে মোঘল আমলে ফ্রেস্কো দিয়ে সজ্জিত ছিল, যা এখনও অক্ষত আছে।

হাম্মামের তিনটি অংশ রয়েছে: জামা খানা (পোশাক বদলের কক্ষ), নিম গরম (গরম পানির স্নান কক্ষ) ও গরম (উষ্ম স্নান কক্ষ)।[৯] নারী ও পুরুষদের জন্য হাম্মামে আলাদা স্নান কক্ষ, আলাদা অভ্যর্থনা কক্ষ এমনকি ছোট ইবাদতখানাও ছিল।[৬]

স্থাপত্য[সম্পাদনা]

পারস্য স্থাপত্যশৈলীর সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য স্নানাগারে পর্যাপ্ত সূর্যালোক প্রবেশের সুবিধা ছিল। স্থাপনার ছাদের ছিদ্রপথে কক্ষের অভ্যন্তরে আলো প্রবেশ করতো। এছাড়াও ছিদ্রপথে বায়ু প্রবাহও সচল থাকত। হাম্মামের অভ্যন্তরভাগের অধিকাংশই এবং বেশ কিছু মোঘল ফ্রেস্কো সংরক্ষণ করা হয়েছে। ভবনের সম্মুখভাগে স্বল্প সংখ্যক জানালা থাকায়, হাম্মামের বহির্দেয়ালে বাণিজ্যিক দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[৬]

সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

সদ্য সংস্কারকৃত হাম্মাম

নরওয়ে সরকারের অর্থ সহায়তায় আগা খান সাংস্কৃতিক ট্রাস্ট হাম্মামটি সংস্কারকাজ শুরু করে। প্রত্ন স্থানটির সংরক্ষণ, ভবনের পূর্ব কাঠামো ফেরত আনা ও দেয়াল সজ্জার জন্য ব্যবহৃত মোঘল আমলের ফ্রেস্কোগুলো উদঘাটিত ও সংরক্ষণ করা হয়।[১০] ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার কাজ শেষ হয় এবং এর সাথে স্থানটির "নাটকীয়" পরিবর্তন ঘটে বলে মন্তব্য করা হয়।[১১]

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো শাহী হাম্মামের সংস্কার প্রকল্পকে "উচ্চ মাত্রায় কারিগরি দক্ষতা" এবং "অলঙ্কৃত শাহী হাম্মামকে এর পূর্বের বিশিষ্টতা"য় ফিরিয়ে আনার জন্য "অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট" এ ভূষিত করে।[৫]

উৎখনন কাজের মাধ্যমে হাম্মামের পানি উষ্মায়ন কাঠামো, নালা ও ভূগর্ভস্থ হাইপোকস্ট (পানি গরম করার জন্য ভূগর্ভস্থ কক্ষ) আবিষ্কার করা হয়েছে।[৮]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Asher, p.225
  2. Shelomo Dov Goitein. Studies in Islamic History and Institutions BRILL, 2010 আইএসবিএন ৯০০৪১৭৯৩১৩ p 170
  3. "Masjid Vazir K̲h̲ān"Archnet। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬The mosque was founded by Hakim Ilmud Din Ansari, a distinguished physician from Chiniot who received the Ministerial title of 'Wazir Khan' under the reign of Shah Jahan, and was later promoted to the position of Viceroy of Punjab. 
  4. "History and Background in Conservation of the Wazir Khan Mosque Lahore: Preliminary Report on Condition and Risk Assessment."Aga Khan Historic Cities Programme। Aga Khan Cultural Services - Pakistan। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬The spectacular monumental ensemble of the Wazir Khan Mosque in the Walled City of Lahore was built in 1634 during the reign of the Mughal emperor Shah Jahan. Its endowment then comprised the congregational mosque, an elaborate forecourt, a serai, a hammam, a bazaar, and a special bazaar for calligraphers and bookbinders. 
  5. "Lahore's Mughal-era Shahi Hammam wins UNESCO award"। Express Tribune। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  6. "Shahi Hammam Bathhouse"Asian Historical Architecture। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৬ 
  7. "Ilmuddin Wazir-built Shahi Hammam restored in Lahore"। Business Recorder। ১৯ জুন ২০১৫। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৬ 
  8. "Wazir Khan Hammam Conservation"। Aga Khan Trust for Culture। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৬ 
  9. Chaudhry, Nazir Ahmad (১ জানুয়ারি ১৯৯৯)। Lahore Fort: A Witness to History। Sang-e-Meel Publications। 
  10. Muzaffar, Zareen (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "The Walled City of Lahore: Protecting Heritage and History"। The Diplomat। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৬The Walled City of Lahore program was put into effect in partnership with the Aga Khan Trust for Culture. AKTC supports the Walled City Authority in all technical matters in terms of restoration and conservation work being carried out. Other donors include the World Bank, Royal Norwegian Government, USAID, and the German Embassy. 
  11. Peter, Ellis (১৩ নভেম্বর ২০১৫)। Leveraging Urbanization in South Asia: Managing Spatial Transformation for Prosperity and Livability। World Bank Publications। আইএসবিএন 9781464806636 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Khan, Ahmad Nabi. Islamic Architecture of Pakistan: An Analytical Exposition. Islamabad: National Hijra Council, 1990.
  • Koch, Ebba. Mughal Architecture New Delhi: Oxford University Press, 2002.
  • Michell, George (editor). Architecture of the Islamic World: Its history and Social Meaning London: Thames and Hudson, 1978.
  • Muhammad Wali Ulla Khan. Lahore and its Important Monuments Karachi: Anjuman Press, 1973.
  • Mumtaz, Kamil Khan. Architecture in Pakistan. Singapore: Concept Media Pte Ltd, 1985.
  • Rajput, A. B. Architecture in Pakistan Karachi: Pakistan Publications, 1963.