ল্য শাতলিয়ে-র নীতি
রসায়নশাস্ত্রের আলোচনায় লা শাতলিয়ে-র নীতি, যা সাম্যাবস্থা নীতি নামেও পরিচিত, রাসায়নিক সাম্যাবস্থার কোনও নিয়ামকের (তাপ,চাপ,ঘনমাত্রা) পরিবর্তন ঘটালে বিক্রিয়ার পরিণতি কী হবে, তা নির্দেশকারী একটি নীতি। ল্য শাতলিয়ে-র নীতিটি শক্তির সংরক্ষণ সূত্র থেকে উৎসারিত হয়েছে। ফরাসি রসায়নবিদ ও প্রকৌশলী অঁরি ল্য শাতলিয়ে (১৮৫০-১৯৩৬) ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এই নীতিটি বিবৃত করেন, তাই তার নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া কার্ল ফের্ডিনান্ড ব্রাউন নামক একজন জার্মান পদার্থবিদও স্বতন্ত্রভাবে এরকম একটি নীতি বর্ণনা করেছিলেন। নীতিটি মোটামুটি নিম্নরূপ:[১][২]
যখন কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়া একটি রাসায়নিক সাম্যাবস্থায় থাকে, তখন যদি সাময়িকভাবে সেই বিক্রিয়া ব্যবস্থাটির তাপ, চাপ কিংবা এর বিক্রিয়ক বা উৎপাদগুলির ঘনমাত্রার পরিবর্তন করা হয়, তবে সেই পরিবর্তনের প্রত্যুত্তরে ব্যবস্থাটি এমনভাবে উপযোজিত বা পরিবর্তিত হবে যেন সাম্যাবস্থাটি বিপরীত দিকে চালিত হয়ে তাপ, চাপ বা ঘনমাত্রার পরিবর্তনের ফলাফল আংশিকভাবে নাকচ বা প্রশমিত হয়ে নতুন একটি সাম্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
কোনও রাসায়নিক ব্যবস্থা একটি সাম্যাবস্থায় থাকলে সেটি সর্বদা সেই অবস্থাতেই থাকবে যদি সেটির কোনও পরিবর্তন না হয়। যদি ব্যবস্থাটির চাপ, তাপমাত্রা বা কোনও পদার্থের ঘনমাত্রা (মোলের সংখ্যা) পরিবর্তনের মাধ্যমে সেটির সাম্যাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে এমন একটি প্রতিক্রিয়া ঘটবে, যাতে ব্যবস্থাটি একটি নতুন সাম্যাবস্থার দিকে পরিচালিত হয়। ল্য শাতলিয়ে-র নীতি বলে যে এই সামগ্রিক প্রতিক্রিয়াটি এমন একটি দিকে ঘটবে, যাতে প্রযুক্ত পরিবর্তনটি আংশিকভাবে নাকচ হয়ে যায়। ল্য শাতলিয়ে-র নীতিটি মূলত সেইসব বিক্রিয়ার জন্যই বাস্তবিকভাবে প্রযোজ্য, যেগুলিতে একই সাথে বিক্রিয়ক পদার্থ ও উৎপাদিত পদার্থগুলি উভয়েই সাম্যাবস্থাতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিমাণে বিরাজ করে, অর্থাৎ যে বিক্রিয়াগুলি তাপগতীয়ভাবে প্রত্যাবর্তনযোগ্য।
যদিও রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণে সাধারণত বিক্রিয়কগুলিকে বামদিকে, উৎপাদগুলিকে ডানদিকে লেখা হয় ও তাদের মধ্যবর্তী স্থানে একটি ডানদিকে মুখ করা তীরচিহ্ন স্থাপন করে বিক্রিয়ার দিক নির্দেশ করা হয়, তথাপিও বাস্তবতা এই যে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে। অন্য ভাষায়, একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্মুখ ও পশ্চাৎ উভয় দিকে অগ্রসর হতে পারে ও আদি দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে, অর্থাৎ এটি উভমুখী প্রকৃতির। সাম্যাবস্থায় সম্মুখগামী ও পশ্চাৎগামী উভয় ধরনের বিক্রিয়াই ঘটে থাকে। এখন যদি কোনও সাম্যাবস্থা মিশ্রণে আরও উৎপাদ পদার্থ যোগ করা হয়, তাহলে সাম্যাবস্থাটি বামদিকে চালিত হবে। যদি বিক্রিয়ক পদার্থের পরিমাণ বাড়ানো হয়, তাহলে সেটি ডান দিকে চালিত হবে। আবার যদি কোনও বিক্রিয়া তাপোৎপাদক হয় (অর্থাৎ সমীকরণের ডান দিকে তাপ থাকে), তাহলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিক্রিয়াটি বামদিকে অর্থাৎ তাপগ্রাহী বা তাপশোষক দিকে চালিত হবে, যাতে ব্যবস্থাটি তাপ শোষণ করে আংশিকভাবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি নাকচ করে দেয়। ফলে সাম্যাবস্থা ডান দিকে সরে যাবে ও তাপমাত্রা হ্রাস পাবে। অন্যদিকে তাপশোষী বিক্রিয়াতে (অর্থাৎ যেখানে তাপ সমীকরণের বাম দিকে থাকে) তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে, সেটি ডানদিকে চালিত হয়ে সমগ্র ব্যবস্থার তাপমাত্রা বৃদ্ধি করবে। চাপের পরিবর্তন মূলত গ্যাসীয় পদার্থের উপর প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, 2SO2 + O2 ⇌ 2SO3 এই গ্যাসীয় বিক্রিয়াটির বিক্রিয়া মিশ্রণের উপর চাপ বৃদ্ধি করলে সাম্যাবস্থাটি ডান দিকে সরে যাবে, কেননা এর ফলে মিশ্রণে মোট অণুর সংখ্যা হ্রাস পেয়ে চাপ কমে যাবে।[২]
ল্য শাতলিয়ে-র নীতির বাস্তবিক প্রয়োগের একটি ধ্রুপদী উদাহরণ হল হেবার-বশ প্রক্রিয়া যেখানে অ্যামোনিয়াকে সংশ্লেষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়াতে নিম্ন তাপমাত্রা ও উচ্চচাপের মধ্যে একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হয়, যাতে অ্যামোনিয়ার উৎপাদন সর্বোচ্চ হয়। ফ্রিৎস হেবার ও কার্ল বশ উভয়েই এই প্রক্রিয়াটির উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ল্য শাতলিয়ে-র নীতির সুবাদে অবস্থার কোনও পরিবর্তন (যেমন তাপমাত্রা, চাপ বা বিক্রিয়ক পদার্থসমূহের ঘনমাত্রা) কোনও রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে, তার পূর্বাভাস করা সম্ভব হয়। এ নীতিটি রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন শিল্পখাতে সবচেয়ে দক্ষ রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি নির্বাচন ও বিকাশে অত্যন্ত মূল্যবান ভূমিকা রাখে। ল্য শাতলিয়ে-র নীতিটি কোনও পরিবর্তনশীল সাম্যাবস্থায় অবস্থিত রাসায়নিক বিক্রিয়ার অবস্থাগুলি পরিবর্তন হলে কী ঘটবে, তার একটি উপকারী নির্দেশিকামাত্র, কেন আণবিক স্তরে এই পরিবর্তনগুলি ঘটে, তার কোনও ব্যাখ্যা এই নীতিতে দেওয়া হয়নি।
রসায়নশাস্ত্রে এ নীতিটির খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ আছে। অনিয়ন্ত্রিত বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতি কমানো, ইত্যাদিতে এ নীতির সাহায্য নেওয়া হয়। ল্য শাতলিয়ে-র নীতির সাথে জীববিজ্ঞানের সুস্থিতি (হোমিওস্ট্যাসিস) ধারণাটির মিল আছে। এছাড়া ঔষধবিজ্ঞান ও অর্থশাস্ত্রেও অনুরূপ নীতি আছে।
ল্য শাতলিয়ে-র নীতির সারমর্ম
[সম্পাদনা]সাধারণত উভমুখী বিক্রিয়াগুলোর ক্ষেত্রে যে বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কগুলো বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয়, সে বিক্রিয়াকে বলে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া আর যে বিক্রিয়ায় উৎপাদগুলো বিক্রিয়া করে ফের বিক্রিয়কে পরিণত হয়, সে বিক্রিয়াকে বলে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া। সাধারণত বিক্রিয়ার শুরুতে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া এর হার বেশি থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এ বিক্রিয়ার হার কমতে থাকে। বোঝাই যাচ্ছে, বিক্রিয়ার শুরুতে পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার হার কম থাকে, কিন্তু সময় যতই পার হয় এ পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার হার ততই বাড়তে থাকে।
বিক্রিয়া চলাকালীন যে সময় সাম্যাবস্থা শুরু হয়, তখন যে পরিমাণ সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া ঘটে, ঠিক সে পরিমাণ পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া ঘটে অর্থাৎ যে পরিমাণ বিক্রিয়ক উৎপাদে পরিণত হয়, ঠিক সে পরিমাণ উৎপাদ বিক্রিয়কে পরিণত হয়। রাসায়নিক বিক্রিয়ার এ সময় মনে হয় যে কোনও বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে না অর্থাৎ মনে হবে বিক্রিয়া থেমে গেছে। কিন্তু বাস্তবে বিক্রিয়া তখনো চলমান থাকে। এ রাসায়নিক সাম্যাবস্থার সময় বিক্রিয়ার নিয়ামক তাপমাত্রা, চাপ, ঘনমাত্রা ইত্যাদি যদি পরিবর্তন করে দেয়া হয়, তখন দেখা যাবে বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বিক্রিয়কের উৎপাদন বেড়ে যায়,অথবা উৎপাদের উৎপাদন বেড়ে যায়। এ সময় শাতলিয়ে-র নীতিটি কাজ করে। এটি বলে যে, বিক্রিয়ার নিয়ামক পরিবর্তন করা হলে বিক্রিয়াটি নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করে নেয়, যাতে বিক্রিয়াটি আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায় অর্থাৎ সাম্য লাভ করে। এটিই ল্য শাতলিয়ে-র নীতির মূলকথা।
সাম্যাবস্থার উপর তাপের প্রভাব
[সম্পাদনা]একটি উভমুখী বিক্রিয়া বিবেচনা করা যাক-
দেখা যাচ্ছে, বিক্রিয়াটির সম্মুখবর্তী অংশটি তাপ উৎপাদী অর্থাৎ যখন বিক্রিয়াটিতে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে, তখন ৯২ কিলোজুল তাপ উৎপন্ন হয়। আবার, যখন অ্যামোনিয়া ভাঙে অর্থাৎ পশ্চাৎমুখি অংশটি সম্পন্ন হয়, তখন অ্যামোনিয়া কর্তৃক ৯২ কিলোজুল তাপ শোষিত হয় অর্থাৎ পশ্চাৎমুখি অংশটি সম্পন্ন হতে ৯২ কিলোজুল তাপ লাগে। এখন, বিক্রিয়াটি ঘটার সময় তাপ প্রদান করা হলে উৎপন্ন তাপের পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবে অ্যাামোনিয়া কিছু তাপ পাবে। তাই অধিক পরিমাণে অ্যাামোনিয়া ভাঙতে শুরু করবে ও একটা সময় দেখা যাবে বিক্রিয়া পাত্রে আর কোনো অ্যামোনিয়া অবশিষ্ট থাকবে না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সাম্যাবস্থা বাম দিকে সরে গেছে অর্থাৎ পশ্চাৎমুখি বিক্রিয়া সম্মুখবর্তী বিক্রিয়ার চেয়ে বেশি হচ্ছে। আবার, যদি বিক্রিয়াপাত্র থেকে তাপ সরিয়ে নেয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে অ্যামোনিয়া নিজেকে ভাঙার জন্য পর্যাপ্ত তাপ পাচ্ছে না। কিন্তু সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া চলতে থাকবে এবং দেখা যাবে অধিক পরিমাণে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হবে। অর্থাৎ পূর্বের ঘটনা থেকে বলা যায়, সাম্য ডানদিকে সরে গেছে অর্থাৎ সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার চেয়ে বেশি হচ্ছে। অর্থাৎ বলা যায়, তাপ উৎপাদী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদ পেতে তাপমাত্রা কমাতে হবে। উল্লেখ্য, উপরে উল্লেখিত বিক্রিয়াটিকে হেবার বস বিক্রিয়া বা সংক্ষেপে হেবার বিক্রিয়া বলে, যার জন্য অত্যানুকূল তাপমাত্রা ৪৫০-৫৫০° সে. ও চাপ ২০০-২৫০ atm. এ বিক্রিয়ার প্রভাবক Fe. অর্থাৎ বিক্রিয়াটিকে এভাবেও লেখা যায়-
আরেকটি বিক্রিয়ার কথা ধরা যাক -
দেখা যাচ্ছে, বিক্রিয়াটি ঘটাতে ১৮০ কিলোজুল তাপ লাগে অর্থাৎ এটি একটি তাপহারী বিক্রিয়া। এখন বিক্রিয়ায় তাপ দেয়া হলে স্বাভাবিকভাবে সম্মুখবর্তী ক্রিয়া বেড়ে যাবে অর্থাৎ নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে নাইট্রোজেন মনো অক্সাইড তৈরি হবে। আর যদি তাপ শোষণ করা হয় অর্থাৎ যথাযথ পরিমাণ তাপ না দেয়া হয়, তাহলে সম্মুখবর্তী বিক্রিয়া থেমে যাবে কিন্তু পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়া বেড়ে যাবে। অর্থাৎ বলা যায়, 'তাপহারী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদ পেতে তাপ বাড়াতে হবে।'
সাম্যাবস্থার উপর চাপের প্রভাব
[সম্পাদনা]সাম্যাবস্থার উপর চাপের প্রভাব জানার আগে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, চাপীয় প্রভাব ঘটাতে চাইলে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের যেকোনো একটি মৌল বা যৌগকে তরল বা গ্যাসীয় হতে হবে। এটা একটা সাধারণ বিষয়, কেননা এটা বুঝাই যায় যে কঠিন পদার্থের উপর চাপের তেমন একটা প্রভাব নেই অর্থাৎ কঠিন পদার্থকে চাপ দেয়া হোক বা না হোক, এটি কঠিন-ই থেকে যায়। সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা ও উৎপাদের মোট মোল সংখ্যা যদি ভিন্ন হয়, তাহলেই কেবল বিক্রিয়ায় চাপের প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মোল সংখ্যা অভিন্ন হলে বিক্রিয়াটিতে চাপের কোনো প্রভাব থাকবে না।
আবার ওই হেবার বস বিক্রিয়াতে আসা যাক। সুবিধার্থে বিক্রিয়াটি আবার লিখে দিচ্ছি-
এখন, বিক্রিয়াটি সাম্যাবস্থায় চাপ প্রয়োগ করলে শাতলিয়ে-র নীতির আলোকে বিক্রিয়াটির সাম্যাবস্থার এমন পরিবর্তন হবে যাতে চাপের পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয়। যখন বিক্রিয়ার সকল পদার্থ একই আয়তনের বিক্রিয়াপাত্রে থাকে, তখন যে গ্যাস বা তরলের মোল সংখ্যা বেশি তার চাপ বেশি হয় আর মোল সংখ্যা কম হলে চাপ কম হয়। ব্যাপারটা সহজ, মনে কর তোমার কাছে ২৫০ mL এর দুটি পাত্র আছে। এখন তুমি যদি এর একটিতে ৫০০ mL গ্যাস রাখ আর আরেকটিতে ১০০ mL গ্যাস রাখ, তাহলে দেখা যাবে যে পাত্রে ৫০০ mL গ্যাস রাখা ছিল, সে পাত্রে রক্ষিত গ্যাস পাত্রের দেয়ালে বেশি চাপ প্রয়োগ করবে আর যদি পাত্রটি নরম হয়, তাহলে দেখা যাবে পাত্রটি ফেটে গেছে! এখন, উপরের বিক্রিয়াটিতে দেখা যায়, বিক্রিয়কের মোট মোল সংখ্যা ১+৩ = ৪ আর উৎপাদের মোল সংখ্যা ২। এখন যদি চাপ বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বিক্রিয়াটি তার চাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত করার জন্য বিক্রিয়াটির গ্যাসীয় উপাদান বেশি মোল বা বেশি চাপ অংশ থেকে কম মোল বা কম চাপের অংশের দিকে যেতে থাকবে। অর্থাৎ বিক্রিয়ার সম্মুখবর্তী অংশটি বৃদ্ধি পেয়ে অ্যামোনিয়া বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি করবে। অন্যভাবে বলা যাচ্ছে, সাম্য কম মোলের দিকে সরে যাবে।
এখন যদি চাপ কমিয়ে দেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে শাতলিয়ে-র নীতি অনুযায়ী চাপ হ্রাসজনিত ফলাফল প্রশমিত করার জন্য (কিংবা বলা যায় চাপ বাড়ানোর জন্য) সাম্য বেশি মোল থেকে কম মোলের দিকে সরে যাবে অর্থাৎ পশ্চাৎমূখী বিক্রিয়া বেড়ে যাবে।
এ বিক্রিয়ায়, বিক্রিয়কের মোল সংখ্যা ২, উৎপাদের ও ২। তাই বিক্রিয়াটিতে চাপের কোনো প্রভাব থাকবে না।
সাম্যাবস্থার উপর ঘনমাত্রার প্রভাব
[সম্পাদনা]সকল বিক্রিয়ায় সাম্যাবস্থার উপর ঘনমাত্রার প্রভাব আছে। ঘনমাত্রা মানে হচ্ছে মোলারিটি অর্থাৎ নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থিত পদার্থের মোল সংখ্যা, এককথায় পদার্থের পরিমাণ। যদি সাম্যাবস্থায় থাকাকালীন বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা কমানো হয় অর্থাৎ বিক্রিয়ক থেকে পদার্থ কমানো হয়, তাহলে লা-শাতেলিয়ার নীতি অনুযায়ি ঘনমাত্রার পরিবর্তনের ফলাফল কমানোর জন্য বিক্রিয়কের পরিমাণ বাড়াতে হবে অর্থাৎ সাম্য বাম দিকে সরে যাবে। অতএব বিক্রিয়াটি পশ্চাৎমুখী হবে। ফলে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা পরিবর্তন প্রশমিত হবে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ M. J. Clugston, সম্পাদক (২০১৪), The Penguin Dictionary of Science, Penguin Books, পৃষ্ঠা 388
- ↑ ক খ John Daintith; Elizabeth Martin, সম্পাদকগণ (২০১০), A Dictionary of Science, Oxford University Press, পৃষ্ঠা 472
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৯।