লম্বক ও কারাঙ্গাসেমে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লম্বক ও কারাঙ্গাসেমে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ (১৮৯৪)

১৮৯৪ সালে লম্বকের একটি বালীয় দুর্গে ওলন্দাজদের আক্রমণ।
তারিখজুলাই–নভেম্বর ১৮৯৪
অবস্থান
ফলাফল ওলন্দাজদের বিজয়। লম্বক ও কারাঙ্গাসেমে ওলন্দাজদের নিয়ন্ত্রণ
বিবাদমান পক্ষ
নেদারল্যান্ডস
পূর্ব সাসাক
লম্বক মাতারাম-চক্রনেগারা রাজ্য
পশ্চিম সাসাক
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
জেনারেল মেজর জেকোবাস অগাস্টিনাস ভেটার (কমান্ডার)
জেনারেল মেজর পিপিএইচ ভ্যান হাম (সেকেন্ড ইন কমান্ড)  
শক্তি
২,২০০ (জুলাই অভিযান)
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৫০০ (আগস্ট ১৮৯৪)
১৬৬ (নভেম্বর ১৮৯৪)
হাজার খানেক

টেমপ্লেট:বালিদ্বীপে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ টেমপ্লেট:ওলন্দাজদের ঔপনিবেশিক অভিযান

১৮৯৪ সালে লম্বক ও কারাঙ্গাসেমে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ হতে দেখা যায়। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ওলন্দাজদের বালি এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে অভিযান চালানোর অংশ, যার ফলে বালি দ্বীপের কিয়দংশ ও‌ লম্বক দ্বীপে ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক মজবুত হয়।

প্রাথমিক জোট[সম্পাদনা]

ষোড়শ শতাব্দীতে ইসলামকে স্বধর্ম হিসাবে গ্রহণকারী জাতি সাসাক অধ্যুষিত ছিল লম্বক দ্বীপ। লম্বক দ্বীপের পশ্চিম অংশে কারাঙ্গসেম রাজত্বের অধীনে কিছু বালীয় গোষ্ঠীর শাসক শাসন করতেন এবং তাদের মধ্যে মাতারাম গোষ্ঠী বাকি বালীয় গোষ্ঠীগুলি ও বিশেষ করে সিংহসারদের সাথে বিরোধে টিকে থেকে ১৮৩৯ সাল থেকে দ্বীপের সমগ্রতা দখল করতে সফল হয়েছিল।[১][২][৩] এরপর থেকে লম্বকে একটি সমৃদ্ধ বালীয় রাজসংস্কৃতি গড়ে ওঠে।[১]

জিপি কিং-এর সূত্র ধরে ইংরেজদেরর সাথে এই সমস্ত দ্বীপ এলাকার যোগাযোগ প্রশস্ত হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের স্বার্থ বিকশিত হতে থাকে। এই সময়ে ১৮৪৩ সালে ওলন্দাজরা মাতরমের শাসকগোষ্ঠীর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ইংরেজদের প্রভাব বন্ধ করতে সক্ষম হয়।[২] ১৮৪৯ সালে‌ বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপের সময়েও মাতারাম ওলন্দাজদের জোটসঙ্গী ছিলেন এবং কারাঙ্গাসেমের উপর কর্তৃত্বের স্থাপন করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন।[২]

সাসাক বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

জেনারেল পি.পি.এইচ. সেকেন্ড ইন কমান্ড ভ্যান হ্যাম আগস্টের এনকাউন্টারে নিহত হন
১৮৯৪ সালে লম্বক অভিযানের কর্মকর্তা: আনাক আগুং কেতুত কারাঙ্গসেম, জেনারেল-মেজর পি.পি.এইচ. ভ্যান হ্যাম (প্রতিনিধি), জেনারেল-মেজর জে.এ. ভেটার (কমান্ডার), আবাসিক এম.সি. ড্যানেনবার্গ, এবং গুস্টি জেলান্তিক।[২]
চক্রনেগারা ধ্বংস, ১৮৯৪ সাল

১৮৯১ সালে পূর্ব লম্বকের মুসলিম সাসাক গোষ্ঠী যখন লম্বক থাকা কারাঙ্গসেমের বালীয় হিন্দু শাসক আনাক আগুং গদে নাগুরাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তখন থেকে সমস্যা শুরু হয়।[১][২] এর পূর্বে ১৮৫৫ ও ১৮৭১ সালের মাতারাম শাসক দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহ ইতিমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছিল, যখন তিনি বালির সর্বোচ্চ শাসক হওয়ার প্রয়াসে বালির ক্লুংকুং রাজ্যে আক্রমণ করার জন্য সাসাকদের কাছ থেকে হাজার হাজার সৈন্যের অনুরোধ করেছিলেন।[৪]

১৮৯১ সালের ২৫ শে আগস্ট শাসকের পুত্র আনাক আগুং কেতুত কারাঙ্গসেমকে ৮,০০০ সৈন্য নিয়ে সেলাপারাং-এর লম্বক রাজ্যের প্রায়ারএর বিদ্রোহীদের দমন করতে পাঠানো হয়।[২] ৮ সেপ্টেম্বর, শাসকের অপর পুত্র আনাক আগুং মাদে কারাঙ্গাসেমের নেতৃত্বাধীন আরও ৩,০০০ সৈন্য পাঠানো হয়।[২] রাজকীয় বাহিনী সমস্যায় পড়ে থাকতে পা, এই আশঙ্কা করে শাসক গোষ্ঠী কারাঙ্গাসেমের নামমাত্র জমিদার শাসক আনাক আগুং গাদে জেলন্তিকের সাহায্য চেয়ে বিদ্রোহ দমন করার জন্য ১,২০০ অভিজাত সৈন্য পাঠানোর আদেশ করে।[২] ১৮৯১ থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত এই দমনপীড়ন চলে, এবং মাতারাম সেনাবাহিনী তাদের সবচেয়ে উন্নত দুটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ "শ্রী মাতারাম" এবং "শ্রী চক্র" সহ সমস্ত বিদ্রোহী গ্রামগুলি দখল করতে এবং শেষ সাসাক প্রতিরোধকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হন।[২]

১৮৯৪ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি সাসাকরা নিজেদের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে ওলন্দাজদের হস্তক্ষেপ এবং সমর্থনের আহ্বান জানায়।[২] ওলন্দাজরা অন্তর্দ্বন্দ্বের এই ঘটনাগুলিকে ইস্ট ইন্ডিজে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখে সাসাকদেরকে সমর্থন করাকে বেছে নেয়। সাসাকদের সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে ওলন্দাজরা বালীয় শাসকদের সিঙ্গাপুর থেকে অস্ত্র ও সরবরাহ আমদানিতে ব্যাঘাত ঘটাতে শুরু করে।[১][২]

ওলন্দাজ মধ্যবর্তিতা (জুলাই ১৮৯৪)[সম্পাদনা]

খুব একটা বেশি অবরোধ না থাকায় মাতারাম শাসকরা ওলন্দাজ মধ্যস্থতার প্রস্তাব খারিজ করা হয়।[২] ১৮৯৪ সালের জুলাই মাসে ওলন্দাজরা মাতারাম শাসককে গদিচ্যুত করার জন্য একটি সামরিক অভিযান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।[১] বাটাভিয়া থেখে প্রিন্স হেনড্রিক, কোনিনগিন এমা এবং ট্রোম্প নামে তিনটি জাহাজ পাঠানো হয় যেখানে ১০৭ জন অফিসার, ১,৩২০ জন ইউরোপীয় সৈন্য, ৯৪৮ জন আদিবাসী সৈন্য এবং ৯৮৬ টি ঘোড়া পাঠানো হয়েছিল।[২]

১৮৯৪ সালের আগস্ট থেকে বালীয়রা ওলন্দাজদের সামরিক উপস্থিতি প্রতিরোধ করতে উদ্যত হয়। ১৮৯৪ সালের ২৫ শে আগস্ট তারা চক্রনগরের ময়ূর প্রাসাদে রাতের বেলা ৯০০ শক্তিসম্পন্ন ওলন্দাজ সামরিক শিবিরে আচমকা হামলা চালায় এবং ৫০০ জনেরও বেশি সৈনিক, নাবিক ও কুলি হত্যা করে।[১][৪] মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন এই অভিযানের অধিনায়ক জেনারেল পি পি এইচ ভ্যান হ্যাম।।[৫] এর ফলে অরুন্ধরা পশ্চাত্পদ হয়ে উপকূল বরাবর দুর্গ নির্মাণ এবং পরিকল্পিত পরিখার মাধ্যমে নিজেদের শিবির সুরক্ষিত করার পরিকল্পনা করেন।[৫]

ওলন্দাজদের নববলীয়ান (নভেম্বর ১৮৯৪)[সম্পাদনা]

জেনারেল ভেটারের নেতৃত্বাধীনে ওলন্দাজরা আরো শক্তি সঞ্চয় করে ঔপনিবেশিক সমরে ফেরত এলেন। মাতারামে আক্রমণ করে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়।[১][৫] ১৮৯৪ সালের ৮ই নভেম্বর চক্রনেগারায় বালীয় প্রাসাদে বোমাবর্ষণ করে সেটি ধ্বংস করা হয়। এতে ২,০০০ বালীয় সহ ১৬৬ জন পুরুষ সৈন্য নিহত হয়।[৩]

১৮৯৪ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ওলন্দাজরা হাজার হাজার হতাহতের সাথে বালীয় স্থাপত্য ও সমাজে তাদের অবস্থান ধূলিসাৎ করে দেয় ফলে কিছু বালীয়রা আত্মসমর্পণ করেন বাকিরা সাংস্কৃতিক আত্মহত্যা বা পুপুতানে অংশগ্রহণ করেন।[১]

১৮৯৪ তে ওলন্দাজ অভিযানের আমস্টারডাম স্মৃতিস্তম্ভ

লম্বক এবং কারাঙ্গাসেম ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিজের অংশ হয়ে ওঠে এবং বালি থেকে প্রশাসনিক কাজ শুরু হয়।[১] গুস্তি গেদে জেলান্তিক ১৮৯৪ সালে ওলন্দাজদের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত হন এবং ১৯০২ সাল পর্যন্ত শাসন চালিয়ে যান।[৬]

ওলন্দাজরা লম্বকের রাজকীয় ধনসম্পদ নিজেদের হস্তোগত করে, যার মধ্যে ছিল ২৩০ কেজি (৭,৪০০ ট্রয় আউন্স) সোনা, ৭,০০০ কিলোগ্রাম (৬.৯ লং টন) রূপা এবং বিভিন্ন গয়না।[২] এর পরপরই বাংলি এবং গিয়ানিয়ার ওলন্দাজদের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে, তবে দক্ষিণ বালির রাজ্যগুলি ১৯০৬ সালের অভিযানের আগে পর্যন্তও স্বাধীন ছিল।[৩]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

১৮৪৯ সালে বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ooi, Keat Gin, সম্পাদক (২০০৪)। Southeast Asia: a historical encyclopedia, from Angkor Wat to East Timor (3 vols)। Santa Barbara: ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 790 ff। আইএসবিএন 978-1576077702ওসিএলসি 646857823। ৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০২২ 
  2. Keurs, Pieter ter (২০০৭)। Colonial Collections RevisitedCNWS publications152। Amsterdam University Press। পৃষ্ঠা 190 ff। আইএসবিএন 9789057891526 
  3. Priests and programmers by John Stephen Lansing p.20
  4. The rough guide to Bali & Lombok By Lesley Reader, Lucy Ridout p.494
  5. Bali handbook with Lombok and the Eastern Isles: the travel guide by Liz Capaldi, Joshua Eliot p.300
  6. The rough guide to Bali & Lombok by Lesley Reader, Lucy Ridout p.298