রোমান ব্রিটেনে খনন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রোমান ব্রিটেনের খনি ও সম্পদের মানচিত্র।

খনন কার্য ছিল রোমান ব্রিটেনের অন্যতম একটি সমৃদ্ধিশালী কাজ। রোমান ব্রিটেন ছিল তামা, সোনা, লোহা, সীসা, লবণ, রূপা এবং টিনের খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। রোমান সাম্রাজ্যে এই সব খনিজের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এর প্রধান কারণ হলো অভিজাতদের মধ্যে মুদ্রা ও বিলাসবহুল বস্তুর চাহিদা মেটাতে সেইসময় ধাতুর পর্যাপ্ত সরবরাহের দরকার পড়ে।[১] রোমানরা সোনা নিষ্কাশনের জন্য প্যানিং এবং পুডলিং পদ্ধতির প্রচলন করে। ব্রিটেনের বেশিরভাগ দ্বীপে রোমান সাম্রাজ্যের আধিপত্য থাকায় ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। মধ্যযুগ পর্যন্ত তারা একছত্র অধিপতি হয়ে মূল্যবান খনিজগুলি খুঁজে বেড়িয়েছে। রোমানরা খননকার্যের বিকাশ এবং খনিজ আহরণ করতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল।

সীসার খননকার্য[সম্পাদনা]

সমারসেটের চার্টারহাউসে রোমান সীসার খনি
ওয়েলস এবং মেনডিপ মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রোমান ব্রিটেনের সীসার ধাতুপিণ্ড

রোমান সাম্রাজ্য সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য সীসা ছিল একটি অপরিহার্য ধাতু।[২] রোমান আমলে নানান কাজে সীসা ব্যবহার করা হতো। সেই আমলে জলের পাইপ লাইনে, পিউটার নামে সীসা ও টিনের সংকর ধাতু তৈরি করতে, মৃত ব্যক্তির কফিনে, নর্দমার জল নির্গমনের নলে সীসা ব্যবহৃত হতো। তাছাড়া সীসার খনিজে রুপো মিশে থাকত বলে কখনও কখনও সীসার খনিজই রুপোর উৎস ছিল। ইংল্যান্ডের সমারসেটের চার্টারহাউস থেকে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত বাথ শহরের কাছে এখনও মেন্ডিপ সীসার আকরিক থেকে তৈরি বাহান্নটি সীসার পাত রয়েছে। চার্টারহাউস ছিল ব্রিটানিয়ার রোমান প্রদেশের একটি শহর।

বৃহত্তম রোমান সীসার খনিটি দক্ষিণ হিস্পানিয়ার রিও টিন্টো নদীর কাছাকাছি অবস্থিত ছিল।[৩][৪] ব্রিটানিয়ায় সবচেয়ে বড় সীসার খনিজ ভাণ্ডারটি ছিল দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যান্ডের মেন্ডিপ পার্বতঅঞ্চলে বিশেষ করে চার্টারহাউসে। রোমানদের ব্রিটেন আক্রমণ এবং বিজয়ের ছয় বছর পর ৪৯ খ্রিস্টাব্দে মেন্ডিপ, ডার্বিশায়ার, শ্রপশায়ার, ইয়র্কশায়ার এবং ওয়েলসের সীসার খনিগুলিতে পুরোদমে দিনরাত খননকার্য চলত। ৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সীসা উৎপাদনকারী প্রদেশ হিসেবে ব্রিটেন শীর্ষ থাকা হিস্পানিয়াকে ছাড়িয়ে যায়। সীসা উৎপাদনে হিস্পানিয়াকে ছাড়িয়ে যাওয়া স্প্যানিশরা ভাল ভাবে মেনে নেন নি। তারা শীঘ্রই সম্রাট ভেসপাসিয়ানের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ শুনে সম্রাট ভেসপাসিয়ান আদেশ দেন ব্রিটেনে সীসা উৎপাদনের পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখতে। যদিও ব্রিটিশ সীসার উৎপাদন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। সীসার ধাতুপিণ্ড (বা কাঁচা সীসা) উৎপাদন দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষে এবং তৃতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকেও চালু থাকে।[৫] গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্রিটিশ সীসা (অর্থাৎ সমারসেট সীসা) পম্পেই নগরীতে ব্যবহার করা হয়েছিল। পম্পেই নগরী ছিল রোমানদের একটি ছোট শহর। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে পম্পেই নগরী সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

রোমানরা মেন্ডিপ পর্বত অঞ্চল, ডার্বিশায়ার, ডারহাম এবং নর্থম্বারল্যান্ড অঞ্চলে সীসার খননকার্য শুরু করে।[৬] এথেনিয়ান সীসা-রুপোর খনি এবং এশিয়া মাইনরের খনিগুলির তুলনায় এই অঞ্চলগুলি থেকে পাওয়া আকরিকে রুপোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।[৬]

বিশুদ্ধ সীসা পেতে হলে বিগলন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সীসার আকরিক গ্যালেনা থেকে সীসা নিষ্কাশন করা হতো। গ্যালেনাকে তাপজারণ করে প্রথমে লেড অক্সাইড তৈরি করে পরে একে বিজারিত করে সীসা পাওয়া যেত।[৬] গ্যালেনা আকরিকে থাকা সালফাইড এই বিক্রিয়ায় বিজরকের কাজ করে। জ্বালানী শুধুমাত্র উচ্চ তাপমাত্রা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজন হতো। গৃহস্থালির জ্বালানী, কাঠকয়লা বা শুকনো কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে গ্যালেনা আকরিকেকে ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে তাপজারণ করে প্রথমে অক্সাইডে রূপান্তর করা হতো।[৬] এই রূপান্তর সহজেই হয়ে যেত কারণ ৩২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীসা সহজেই গলে যায়। তাপজারণের ফলে গ্যালেনা আকরিকে থাকা লেড সালফাইড থেকে প্রথমে লেড অক্সাইড (PbO) তৈরি হয়। পরে এটি অবশিষ্ট লেড সালফাইড (PbS) এর সঙ্গে বিক্রিয়া করলে গলিত সীসা (Pb) এবং সালফার ডাই অক্সাইড (SO2) পাওয়া যেত।[৬]

রোমানদের সীসা গলানোর বিশদ বিবরণ লিখিত আকারে পাওয়া যায়নি। যদিও রাহটজ এবং বুন এই দুই অনুসন্ধানকারী মেন্ডিপ অঞ্চলে সীসা গলানোর কিছু খোলা চুল্লীর সন্ধান পান।[৬] এই ধ্বংসাবশেষে গলিত সীসা এবং গলিত আকরিকের নমুনা পাওয়া যায়।[৬] প্রথম শতাব্দীর ধ্বংসাবশেষগুলি পেন্ট্রে, এফওয়ারন্ডানে পাওয়া গিয়েছে। যদিও এই আবিষ্কারগুলি মূল্যবান ছিল তবে ধ্বংসাবশেষের প্রভূত ক্ষতির কারণে এগুলির পুনর্গঠন সম্ভব ছিল না।[৬] ধ্বংসাবশেষ ক্ষেত্র থেকে পাওয়া একটি নিষ্কাশিত আকরিকের নমুনায় সীসার পরিমাণ ছিল প্রতি টনে ৩ আউন্স (৮৫.০৫ গ্রাম)। অন্য একটি নিষ্কাশিত আকরিকের নমুনায় সীসার পরিমাণ ছিল প্রতি টনে ৯ আউন্স (২৫৫.১৫ গ্রাম)[৬]

রুপো নিষ্কাশন[সম্পাদনা]

অনেক জায়গার সীসার খনিজে রুপো মিশে থাকত বলে কখনও কখনও সীসার খনিজই রুপোর উৎস ছিল। তাই সীসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার ছিল এর খনিজ থেকে রুপোকে আলাদা করা। সীসা এবং রুপো প্রায়শই গ্যালেনা আকরিকে একত্রে পাওয়া যেত। গ্যালেনা আকরিকটি অবার প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। খনি থেকে গ্যালেনা তোলার পর আকরিকের মধ্যে থাকা অশুদ্ধি শিলাগুলি সরিয়ে আকরিকের গাঢ়ীকরণ করা হতো।[৬]আকরিকের উচ্চ ঘনত্ব এবং গাঢ় রঙ দেখেৃ আকরিকের গাঢ়ীকরণ বোঝা যেত।[৬] রোমান অর্থনীতি রুপোর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, কারণ তখনকার বেশির ভাগ মূল্যবান মুদ্রাই মূল্যবান ধাতু থেকে তৈরি করা হয়। গ্রিসের লরিয়নে পাওয়া ব্রিটিশ আকরিকগুলিতে রুপোর পরিমাণ অন্যান্য স্থান থেকে খনন করা আকরিকের তুলনায় কম ছিল।[৬] রোমানরা এইসব সীসার খনির জন্য 'ব্রিটিশ সিলভার' শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করে।[৬]

গ্যালেনা এর সীসা এবং রৌপ্য সামগ্রীর জন্য খনন করা হয়েছিল।

ধাতু নিষ্কাশন ও বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া মোটামুটি সহজ ছিল। প্রথমে রুপোযুক্ত সীসার আকরিকে গলানো হতো যতক্ষণ না পাথর থেকে সীসা আলাদা হয়। গলিত সীসা অলাদা করার পর আকরিক মিশ্রণকে হস্তচালিত হাপরের সাহায্যে আরও ১১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত উত্তপ্ত করলে সীসা থেকে রুপো আলাদা হয়ে যেত। তবে গলিত রুপোর মধ্যে অল্প পরিমাণ সীসা লিথার্জ হিসাবে অশুদ্ধি অবস্থায় থেকে যেতো বলে রুপোর গলিত পৃষ্ঠ থেকে লিথার্জকে উড়িয়ে বা হাড়ের তৈরি মুচিতে রেখে শোষিত করা হতো। লিথার্জকে পুনরায় গলিয়ে সীসা পুনরুদ্ধারের কাজও তারা করত। অন্যদিকে গলিত রুপোকে ছাঁচে ঢেলে ঠান্ডা হয়ে গেলে ইনগট অর্থাৎ ধাতুমণ্ড তৈরি করে পুরো রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে থাকা ট্যাঁকশালগুলিতে পাঠানো হতো মুদ্রা তৈরির জন্য।[২][৭] সিলচেস্টার, রক্সেটার এবং হেঙ্গিসবারি হেড এইসব জায়গায় রোমানদের রুপো নিষ্কাশনের নিদর্শন ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দেখতে পাওয়া গিয়েছে।[৬]

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে মুদ্রাস্ফীতি শুরু হলে সরকারি মুদ্রায় আর বিশুদ্ধ রুপো ব্যবহার হতো না। তখন থেকে ব্রোঞ্জের তৈরি সরকারি মুদ্রায় রুপোর প্রলেপ দেওয়া শুরু হয়। সেইসময় সমারসেটে দুটি এই ধরনের টাঁকশাল কাজ আরম্ভ করে। একটি মেন্ডিপ পর্বতের ঠিক দক্ষিণে পোল্ডেন পাহাড়ে এবং অন্যটি ব্রিস্টলের হুইচার্চে। এই টাঁকশালগুলিতে মেন্ডিপ রুপো ব্যবহার করে যে মুদ্রাগুলি তৈরি হতো সেগুলিতে রোমান সাম্রাজ্যের সরকারি টাঁকশালের তুলনায় রুপোর মান অনেক উন্নত ছিল। এই সকল মুদ্রার নমুনা এবং মুদ্রার ছাঁচ এখনও টাউটন ক্যাসেলের সমারসেট জাদুঘরে দেখতে পাওয়া যায়।

তামার খননকার্য[সম্পাদনা]

রোমান ব্রিটেনে ব্রোচ, চামচ, মুদ্রা, মূর্তি প্রভৃতি তৈরি করতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তামার সংকর ধাতু ব্যবহৃত হতো। এছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস তৈরিতে তামার সংকর ধাতুর প্রচলন ছিল।[৮] তবে বিশুদ্ধ তামা খুব কমই ব্যবহার করা হতো। এটিতে সবসময় অন্য ধাতু যেমন টিন, দস্তা বা সীসা মেশানো থাকত। এইসব ধাতুগুলি তামার সংকরে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধর্ম যুক্ত করে।[৮] খাঁটি তামার একটি গোলাপী রঙের আভা রয়েছে। তবে এতে অন্য ধাতুর কয়েক শতাংশ যোগ করলে এর রঙের পরিবর্তন হয়। অন্য ধাতু যোগ করার সাথে সাথে এর রঙ ফ্যাকাশে বাদামী, সাদা বা হলুদে পরিবর্তিত হতে পারে।[৮]

রোমান সাম্রাজ্যে তামার সংকর ধাতুর মধ্যে থাকা উপাদানে পরিমাণের অনুপাত অঞ্চলভেদে ভিন্ন ছিল।[৯] সীসাযুক্ত এবং সীসামুক্ত ব্রোঞ্জ প্রধানত ভূমধ্যসাগরীয় যুগে ব্যবহৃত হতো।[৯] তামার সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে টিন এবং সীসা যুক্ত করে এই ধরণের ব্রোঞ্জ তৈরি করা হয়। উৎপাদিত বস্তু কোন্ ধরণের হবে তার উপর নির্ভর করে ব্রোঞ্জের ধরন ঠিক হতো।[৯] বেশিরভাগ বস্তুর ঢালাইয়ের জন্য যে ব্রোঞ্জ ব্যবহার হতো তাতে টিন ধাতুর পরিমাণ থাকত শতকরা ৫ থেকে ১৫ ভাগ। অন্যদিকে ব্রোঞ্জ সংকর ধাতু দিয়ে আয়নাও তৈরি করার নিদর্শনও পাওয়া যায়। তবে তাতে টিনের ভাগ বেশি থাকত। এতে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ টিন থাকত। এই সংকর ধাতুটি দেখতে ছিল রূপালী-সাদা রঙের।[৯]

বর্তমান আমলে পিতল যেমন বহুল ব্যবহৃত হয় রোমান ব্রিটেনে তেমনটি ছিল না। রোমান ব্রিটেনে পিতল ঢালাই বস্তুতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়নি কারণ এটি উৎপাদন করা সেযুগে খুব কঠিন কাজ ছিল।[৯] সিমেন্টেশন প্রক্রিয়ার বিকাশ না হওয়া পর্যন্ত পিতলের উৎপাদন শুরু হয়নি।[৯] এই প্রক্রিয়ায় দস্তার আকরিক এবং বিশুদ্ধ তামার মিশ্রণকে একটি বায়ুবদ্ধ ক্রুসিবল অর্থাৎ মুচির মধ্যে নিয়ে উত্তপ্ত করা হয়।[৯] দস্তা আকরিক দস্তা ধাতুতে পরিণত হওয়ার সাথে সাথে বদ্ধ মুচির মধ্যে এটি দস্তার বাষ্পে পরিণত হয়। মুচির ভিতরে থাকা দস্তার বাষ্প বিশুদ্ধ তামার সাথে মিশে গিয়ে পিতল তৈরি করে।[৯] এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিতলের উৎপাদন রাষ্ট্র দ্বারা একচেটিয়া ভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। এর কারণ হলো পিতল মুদ্রা ও সামরিক সরঞ্জামের জন্য ব্যবহার করা হতো।[৯] অগাস্টান সময়ে পিতল দিয়ে মুদ্রা উৎপাদন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেইসময় পিতল অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করতেও ব্যবহার করা হয়।[৯]

সোনার খননকার্য[সম্পাদনা]

দোলাউকোথি সোনার খনির নকসা
দোলাউকোথির জলপ্রণালী

লিনলিথগো (স্কটল্যান্ড), কর্নওয়াল (ইংল্যান্ড) এবং অন্যান্য ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে সোনা খনন করা হয়েছিলো। খনিতে সোনা মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে এটি পাওয়া যেত পাত বা ফিলামেন্টের আকারে। এতে কিছু অশুদ্ধিও মিশে থাকত। তাই এটি গলানোর প্রয়োজন হতো।

ব্রিটেনের সোনার খনিটি ওয়েলসের দোলাউকোথিতে অবস্থিত ছিল। রোমানরা তাদের আক্রমণের পরপরই দোলাউকোথি মণিকশিরা আবিষ্কার করে। আঞ্চলিক শিলা দিয়ে আবদ্ধ মণিকের পাতের আকৃতিবিশিষ্ট দেহকে মণিকশিরা বলে।[১০] রোমানরা স্বর্ণ-বহনকারী কোয়ার্টজাইটের সমৃদ্ধ মণিকশিরা আবিষ্কার করার আগে পাহাড়ে খননকার্যের জন্য হাইড্রোলিক মাইনিং পদ্ধতি ব্যবহার করে। হাইড্রোলিক মাইনিং পদ্ধতি হলো খননের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে জলের উচ্চ-চাপের জেট ব্যবহার করে টুকরো টুকরো শিলা বা পলি সরানো হয়। খনির উপরে বেশ কয়েকটি জলনির্গম প্রণালী এবং জলের ট্যাঙ্কের ধ্বংসাবশেষের নিদর্শন আজও দেখা যায়। হাইড্রোলিক মাইনিং পদ্ধতির সময় ট্যাঙ্কগুলি জল ধরে রাখতে ব্যবহৃত হতো। ট্যাঙ্কের জলের সাহায্যে জলের তরঙ্গ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত পাথর অপসারণ এবং অধিশিলাটি উন্মুক্ত করা হতো।

যদি পাথরে একটিও মণিকশিরা পাওয়া যেতো তাহলে সেটি আগুন ব্যবহার করে ভাঙ্গা হতো। এই পদ্ধতিতে প্রথমে আগুনের সাহায্যে শিলাটিকে উত্তপ্ত করা হয়। যখন শিলা গরম হয়ে ওঠে তখন গরম শিলার উপর জল ছিটানো হয়। এর ফলে তখন এটি সহজেই ভেঙে যায়। ধাতব সোনা যুক্ত পাথরের টুকরোগুলিকে জলের তরঙ্গ সৃষ্টি করে অতিরিক্ত পাথর অপসারণ করা হয়। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সেই সময় অসংখ্য ওপেনকাস্ট বা খোলা মুখ খনি তৈরি করা হয়েছিল যা আজও ওয়েলসের পুমসেন্ট বা লুয়েনটিনামের পাহাড়ে উপরে দৃশ্যমান। কোঠি উপত্যকার কাছাকাছি অঞ্চলে একটি দুর্গ, বসতি এবং স্নানাগার স্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি সম্ভবত সীসা এবং টিনের খনির জন্য অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে খনি পদ্ধতিতে ডিনামাইটের মতো বিস্ফোরক অবিষ্কারের আগে এই পদ্ধতিই ব্যাপকভাবে প্রচলন ছিল। পরবর্তীকালে উন্নতধরণের বিস্ফোরক অবিষ্কারের ফলে এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। তবে হাইড্রোলিক মাইনিং পদ্ধতি এখনও টিনের পলিজ খনিজ থেকে টিন নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে ভূত্বকের স্বল্প নিম্ন স্তরে সোনার ভাণ্ডার পাওয়া গেলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

খোলা মুখ খনির খননকার্য পদ্ধতি কার্যকর না হওয়ায় দোলাউকোথির একটি পাহাড়ে দীর্ঘ ড্রেনেজ অ্যাডিট খনন করা হয়। অ্যাডিট হলো এক ধরনের আনুভূমিক সূড়ঙ্গ। এই অ্যাডিট বা আনুভূমিক সূড়ঙ্গ অনেকসময় কাটা হয় খনির কাজে এবং ভূগর্ভে সঞ্চিত জল নিষ্কাশনের জন্য। আকরিক উত্তলনের পর সম্ভবত জল চাকার সাহায্যে চালিত স্বয়ংক্রিয় ভারী হাতুড়ির দিয়ে আকরিককে মিহি গুঁড়ো করে ভেঙ্গে ফেলা হতো। এরপর মিহি গুঁড়ো করা আকরিককে জলের প্রবাহ দিয়ে ধুয়ে নুড়ি পাথর ও অন্যান্য অশুদ্ধি সরানো হয়। নীচে জমে থাকা সোনার গুঁড়ো এবং দানা সংগ্রহ করে সেগুলিকে গালিয়ে সোনার ধাতুপিণ্ড তৈরি করা হতো। সোনার পিণ্ডগুলি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রোমান সাম্রাজ্যের নানা জায়গায় পাঠানো হতো। পরে এগুলির থেকে মুদ্রা তৈরি বা সিন্দুকে পুরে রেখে দেওয়া হয়েছিলো।[২]

লোহা খননকার্য[সম্পাদনা]

যুদ্ধের সরঞ্জাম, নির্মাণকার্যের যন্ত্রপাতি, কৃষি সরঞ্জাম এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী বেশিরভাগ লোহা দিয়ে তৈরি হয়। তাই লোহা সবসময়ই মানুষের চাহিদার মধ্যে অন্যতম একটি ধাতু।[১] আত্মনির্ভরতার জন্য রোমান সাম্রাজ্যের অনেক অংশেই লোহার সর্বদা যোগান ছিল।

রোমান ব্রিটেনে অনেক লোহার খনি ছিল। রোমান ব্রিটেনের অর্ডন্যান্স সার্ভে মানচিত্রের সূচকে ৩৩টি লোহার খনি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৬৭ ভাগ লোহার খনি রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের ওয়েল্ডে এবং শতকরা ১৫ ভাগ লোহার খনি রয়েছে দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যান্ডের ফরেস্ট অফ ডিনে। লোহার আকরিক ব্যাপকভাবে বিস্তৃত থাকায়, লোহা ছিল তুলনামূলকভাবে সস্তা। লোহার খনির অবস্থান প্রায়শই কাঠের সহজলভ্যতা দিয়ে নির্ধারিত হতো। এর কারণ হলো তখনকার দিনে লোহা নিষ্কাশনে কাঠকয়লার প্রয়োজন হতো। ব্রিটেনে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পাওয়া যেত, যার থেকে কাঠকয়লা তৈরি করা হতো। রোমান যুদ্ধের সরঞ্জামের জন্য প্রচুর পরিমাণে লোহার প্রয়োজন ছিল। তাই লোহার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্রিটেন ছিল উপযুক্ত জায়গা।[১১]

অনেক ভূগর্ভস্থ খনি রোমানরা নির্মিণ করে। খনি থেকে লোহার আকরিক খননের পর সেটিকে খনির বাইরে আনা হতো। তারপর লোহার আকরিক ভেঙ্গে জল দিয়ে ধোওয়া হতো। জলের প্রবাহে কম ঘনত্বের অশুদ্ধিগুলি বয়ে গিয়ে নীচে পড়ে থাকত বেশি ঘনত্বের আয়রন অক্সাইড। এই আয়রন অক্সাইডকে ব্লুমারী পদ্ধতিতে গলানো হতো। এই পদ্ধতিতে আয়রন অক্সাইড অর্থাৎ লোহার আকরিককে কাঠকয়লার সাথে মিশ্রিত করে গলনাঙ্কের নীচে একটি নিম্ন চুল্লিতে উত্তপ্ত করা হয়। তাপমাত্রা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে লোহার মিশ্রণ গলে গিয়ে পিগ আয়রন অর্থাৎ কাঁচা লোহা তৈরি না করে কিন্তু বিজারিত লোহা যেন এক জায়গায় জড়ো হয়ে পিণ্ডের মতো অবস্থায় থাকে। এক্ষেত্রে ধাতুমল বের করে নেওয়া হয়। খুব বেশি পরিমাণে ধাতুমল বের করা হয়েছিল যা পরবর্তীকলে প্রত্নতাত্ত্বিকদের দ্বারা প্রত্নস্থলগুলি থেকে সহজেই সনাক্ত করা হয়। কখনও কখনও রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী হিসাবে এই সব ধাতুমল ব্যবহার করা হয়। আয়রন অক্সাইডকে ব্লুমারী পদ্ধতিতে গলানো হতো বলে নিষ্কাশিত এই লোহাকে বলা হতো ব্লুম লোহা। এই ব্লুম লোহাকে হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে বিক্রি করার কথা জানা যায়। এই লোহা ব্যবহারের আগে আবার বিশুদ্ধ করে নেওয়া হতো। [১১]

রোমান লোহা অন্য ধাতুর চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল বলে মনে করা হয়। এর কারণ হলো এই লোহা সরাসরি বা ব্লুমরি চুল্লিতে গলিয়ে পাওয়া যেত। এর উৎপাদন পদ্ধতি শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষও ছিল।[১২] ব্রিটেনে উদ্ধার হওয়া প্রাচীনতম হাতে লেখা নথি ভিন্ডোল্যান্ডা ফলক থেকে জানা যায় আসকানিয়াস নামে একজন ব্যক্তি ৩২ ডেনারি মূল্যে ৯০ রোমান পাউন্ড লোহা কেনেন।[১২] প্রতি কিলোগ্রাম লোহার মূল্য ছিল ১.১ ডেনারি।[১২]

কয়লা[সম্পাদনা]

রোমান ব্রিটেনে গৃহস্থালি এবং শিল্প উভয় ক্ষেত্রে জ্বালানী হিসাবে কয়লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গৃহস্থালি ব্যবহারে কয়লার সাহায্যে ষেমন তাপমাত্রা বাড়ানো যায় তেমনি আবার শিল্প ক্ষেত্রে এটি ধাতু প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজন হয়। লোহা গলানোর জন্য কয়লা উপযুক্ত ছিল না কিন্তু ধাতুগড়নের বিভিন্ন পর্যায়ে কাঠকয়লার চেয়ে কয়লা বেশি কার্যকর ছিল।[১৩] বিশেষ করে মৃৎপাত্র, টাইলস এবং ইট উৎপাদনের ক্ষেত্রে কয়লা বেশি ব্যবহার হতো। কয়লা ব্যবহারের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক বাথ শহরে দেবী সুলিসের মন্দিরে এবং গৃহস্থলির হাইপোকস্ট এর নিদর্শনগুলি থেকে। হাইপোকস্ট হলো একটি পদ্ধতি যা কোনো বাড়িকে কেন্দ্রীয় ভাবে গরম করার একটি ব্যবস্থা। একটি ঘরের মেঝেতে গরম বাতাস তৈরি এবং সঞ্চালন করে দেয়ালগুলিকে একাধিক পাইপ দিয়ে গরম করার একটি পদ্ধতি। রোমান ব্রিটেনের হ্যাড্রিয়ানের প্রাচীর বরাবর সামরিক ছাউনির কাছে এবং রোমানদের দ্বারা পাথরের ভিত্তির উপর নির্মিত অ্যান্টোনাইন প্রাচীরের দুর্গের দূরবর্তী স্থানগুলিতে কয়লা ব্যবহারের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়।

উত্তর ওয়েলসে কারমেল সীসার খনি এবং হোল্ট শহরে টালি তৈরির ভাটাগুলিতেও কয়লা ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। ওয়েলস এবং ইংল্যান্ড উভয় অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ডি নদীর উপর হেরনব্রিজের বন্দরের প্রত্নতাত্ত্বিক খননগুলি প্রমাণ করে যে সেখানে কয়লা বিতরণের একটি প্রতিষ্ঠিত নেটওয়ার্ক ছিল। পূর্ব মিডল্যান্ডের কয়লাক্ষেত্র থেকে কয়লা পরিবহন করা হতো বিশেষ খনন করা রাস্তা দিয়ে যাকে বলা হতো কার ডাইক। এই কার ডাইক রাস্তা ধরে কয়লা নিয়ে যাওয়া হতো ডুরলিপন্টের (কেমব্রিজ) উত্তরে। খাদ্যশস্য সমৃদ্ধ এই অঞ্চলে খাদ্যশস্য শুকানোর জন্য কয়লা ব্যবহার করা হতো।[১৪] [১৫] [১৬] [১৭]

কয়লা উত্তোলন শুধুমাত্র ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি খোলা মুখ পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কয়লার সীম অর্থাৎ স্তর অনুসরণ করে অনুভূমিক গ্যালারীর সাহায্যে খাদ অর্থাৎ সুড়ঙ্গ খনন করে কয়লা কাটা হয়েছিল।[১৮]

খননকার্যের পরিবেশ[সম্পাদনা]

ডি রে মেটালিকা তে প্রকাশিত ভূগর্ভস্থ খনির মধ্যে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা
রিও টিন্টো খনির ভিতর থেকে জল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত চাকা

কিছু খনি শ্রমিক ক্রীতদাস ছিল তবে সকলে নয়। খনি জলপ্রণালী, জল নিষ্কাশন এবং কারিগরী নির্মাণের জন্য দক্ষ কারিগরের প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া শিলা ভাঙ্গতে এবং শিলা থেকে অশুদ্ধি সরিয়ে আকরিক গুঁড়ো আলাদা করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হতো। জল উত্তোলনের জন্য রিভার্স ওভারশট ওয়াটার-হুইল ব্যবহার করা হতো। স্প্যানিশ খনিগুলিতে এই ধরনের চাকার ক্রম পাওয়া গিয়েছে। রিও টিন্টো থেকে চাকার একটি বড় অংশ ব্রিটিশ যাদুঘরে আজও দেখা যায়। দোলাউকোঠিতে চাকার একটি ছোট অংশ পাওয়া যায়, দেখা গিয়েছে তারা ব্রিটেনে একই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল।

খনির ভিতর কাজের পরিবেশ ভাল ছিল না। বিশেষ করে যখন খনির নীচে আগুন ব্যবহার করে পাথর ভাঙ্গা হতো। অবশ্য খনিতে বিস্ফোরক ব্যবহারের আগে এটাই ছিল খননের প্রাচীন প্রচলিত পদ্ধতি। আগেই বলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে শক্ত শিলার উপর আগুন দিয়ে প্রথমে গরম করা হতো। তারপর গরম শিলার উপর জল ছিটিয়ে আগুন নেভানো হতো যাতে অসম তাপের কারণে শিলাতে ফাটল ধরে। পরে আরও ভেঙ্গে খনিজটিকে বের করা হতো। এই পদ্ধতিটি বর্ণনা করেছেন প্রাচীন গ্রীক ঐতিহাসিক ডায়োডোরাস সিকুলাস যখন তিনি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে প্রাচীন মিশরের সোনার খনি নিয়ে আলোচনা করেন। এর অনেক পরে জার্মান খনিজবিদ জর্জ অ্যাগ্রিকোলা ১৬ শতকে তার ডি রে মেটালিকা গ্রন্থে এই পদ্ধতিটি বর্ণনা করেন। গভীর খনিগুলির ভিতর বায়ুচলাচল করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা করা হয়। এর একটি উদাহরণ হলো, অনেকগুলি দীর্ঘ অ্যাডিট অর্থাৎ আনুভূমিক সূড়ঙ্গ কেটে খনির ভিতর পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা। এছাড়াও একই অ্যাডিট খনির অন্য কাজে এবং ভূগর্ভস্থ সঞ্চিত জল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার হতো।

ধাতু অর্থনীতির পতন[সম্পাদনা]

রোমান আমলে অনেক অঞ্চলে খনন করা হয়। খনন করে নানান ধাতু প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই রোমান অর্থনীতি ধাতু উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল ছিল।[১৯] আনুমানিক ১০০,০০০ টন সীসা এবং ১৫,০০০ টন তামা রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যেত এবং প্রতি বছর প্রায় ২,২৫০ টন লোহার উৎপাদন হতো।[১৯] ধাতুর এই প্রাচুর্য এবং ব্যাপক উৎপাদন গ্রীনল্যান্ডের বরফ দূষণের জন্য কিছুটা হলেও দায়ী। শুধু তাই নয় ধাতুর প্রাচুর্যতা এবং ব্যাপক উৎপাদন এই ধাতু শিল্পকেও প্রভাবিত করেছিল কারণ পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে অনেক সস্তায় ধাতু সহজলভ্য ছিল।[১৯]

রোমানো-ব্রিটিশ অর্থনীতি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে গলানো ধাতুর উৎপাদন এবং এর লভ্যতা একেবারে কমতে শুরু করে।[১৯] যাদের জীবিকা ধাতু উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল ছিল তাদের ধাতু উৎপাদনের একমাত্র উপায় ছিল ধাতুর ছাঁট অর্থাৎ বর্জিতাংশ সংগ্রহ করে সেখান থেকে বিশুদ্ধ ধাতু উৎপাদন করা।[১৯] এর প্রমাণ মেলে সাউথওয়ার্ক এবং ইকহাম থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে পাওয়া ধাতু সামগ্রীর নমুনা দেখে।[১৯] চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রিটেন ধাতুর চাহিদা বজায় রাখতে পারেনি। তাই অনেক ধাতুর খননকার্য বন্ধ হয়ে গিয়ে খনিগুলি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। দক্ষ শ্রমিকদের হাতে তখন কোনো কাজ ছিল না। [১৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Edmondson, J. C. (১৯৮৯)। "Mining in the Later Roman Empire and beyond: Continuity or Disruption?": 84–102। আইএসএসএন 0075-4358জেস্টোর 301182ডিওআই:10.2307/301182 
  2. Roman Britain: mining
  3. Rosman, Kevin J. R.; Chisholm, Warrick (ডিসেম্বর ১৯৯৭)। "Lead from Carthaginian and Roman Spanish Mines Isotopically Identified in Greenland Ice Dated from 600 B.C. to 300 A.D.": 3413–3416। ডিওআই:10.1021/es970038k 
  4. Chew, Sing C. (২০০১)। World Ecological Degradation: Accumulation, Urbanization, and Deforestation, 3000 B.C.-A.D. 2000 (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman Altamira। আইএসবিএন 978-0-7591-0031-2 
  5. Roman Britain: Industrial layer map ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৬ তারিখে
  6. Tylecote, R. F. (১৯৬৪)। "Roman Lead Working in Britain": 25–43। আইএসএসএন 0007-0874জেস্টোর 4025082ডিওআই:10.1017/S0007087400001825 
  7. North, F.J. (১৯৬২)। "Mining for metals in Wales" (পিডিএফ)। National Museum of Wales। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২০ 
  8. Bayley, Justine (২০১৭)। "Roman Non-Ferrous Metalworking in Southern Britain"। Agriculture and Industry in South-Eastern Roman Britain (1st সংস্করণ)। Oxbow Books। পৃষ্ঠা 330–345। আইএসবিএন 978-1-78570-319-5জেস্টোর j.ctt1kw2bfx.21 
  9. Aspects of Industry in Roman Yorkshire and the North। Oxbow Books। ২০১৬। আইএসবিএন 978-1-84217-078-6জেস্টোর j.ctt1s4755s 
  10. সংসদ ভূ-বিজ্ঞান কোষ, দীপংকর লাহিড়ী, সাহিত্য সংসদ, প্রকাশসাল- জানুয়ারি ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ২৪১
  11. Croydon Caving Club ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত নভেম্বর ২৭, ২০০৬ তারিখে
  12. BRAY, LEE (২০১০)। "'Horrible, Speculative, Nasty, Dangerous': Assessing the Value of Roman Iron": 175–185। আইএসএসএন 0068-113Xজেস্টোর 41725161ডিওআই:10.1017/S0068113X10000061 
  13. Sim, David (১ জুন ২০১২)। "Overview of the technical aspects of iron making"। The Roman Iron Industry in Britain। The History Press। আইএসবিএন 9780752468655 
  14. Forbes, R.J. (১৯৫৮)। Studies in ancient Technology। Brill। পৃষ্ঠা 27। ওসিএলসি 848445642 
  15. Clark, J. G. D. (অক্টোবর ১৯৪৯)। "Report on Excavations on the Cambridgeshire Car Dyke, 1947": 145–163। ডিওআই:10.1017/S0003581500017261 
  16. Salway, Peter (২০০১)। A history of Roman Britain। The Society of Antiquaries of London। পৃষ্ঠা 457। আইএসবিএন 9780192801388 
  17. Dearne, Martin J.; Branigan, Keith (সেপ্টেম্বর ১৯৯৫)। "The Use of Coal in Roman Britain": 71–105। ডিওআই:10.1017/S000358150007298X 
  18. R. G. Collingwood; Nowell Myres (১৯৩৬)। Roman Britain and the English settlements (1990 সংস্করণ)। Biblo and Tannen। পৃষ্ঠা 231। আইএসবিএন 9780819611604 
  19. Fleming, Robin (২০১২)। "Recycling in Britain After the Fall of Rome's Metal Economy": 3–45। আইএসএসএন 0031-2746জেস্টোর 23324202ডিওআই:10.1093/pastj/gts027 

তথ্যসূচি[সম্পাদনা]

  • ডেভিস, ও. রোমান মাইনস ইন ইউরোপে, অক্সফোর্ড (১৯৩৫)
  • এলকিংটন এইচ.ডি.এইচ দ্য মেন্ডিপ লিড ইন্ডাস্ট্রি ইন ব্রানিগান কে. অ্যান্ড ফাউলার পি.জে দ্য রোমান ওয়েস্ট কান্ট্রি (১৯৭৬)
  • এলকিংটন এইচ.ডি.এইচ রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ অ্যান্ড ব্রিটেনে সীসার খনির উন্নয়ন, ডারহাম ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি (১৯৬৮)(ইংরেজি)
  • জোন্স জি.ডি.বি, আই.জে.ব্লেকি, অ্যান্ড ই.সি.এফ.ম্যাকফেরসন, দোলাউকোথি: দ্য রোমান অ্যাকুইডাক্ট, বুলেটিন অফ দ্য বোর্ড অফ সেল্টিক স্টাডিজ ১৯ (১৯৬০): ৭১-৮৪ এবং প্লেট III-V
  • লুইস, পি.আর. এবং জি.ডি.বি. জোন্স, দ্য দোলাউকোথি গোল্ড মাইনস, I: দ্য সারফেস এভিডেন্স, দ্য অ্যান্টিকোয়ারিজ জার্নাল, ৪৯, নং২ (১৯৬৯): ২৪৪-৭২।
  • লুইস, পি.আর. এবং জি.ডি.বি. জোন্স, রোমান গোল্ড-মাইনিং ইন নর্থ-ওয়েষ্ট স্পেন , জার্নাল অফ রোমান স্টাডিজ ৬০ (১৯৭০): ১৬৯-৮৫
  • জোন্স, আর.এফ.জে. এবং বার্ড, ডি.জি., রোমান গোল্ড-মাইনিং ইন নর্থ-ওয়েষ্ট স্পেন, II: ওয়ারকিংস অন দ্য রিও ডুয়ের্না, জার্নাল অফ রোমান স্টাডিজ ৬২ (১৯৭২): ৫৯-৭৪
  • লুইস, পি.আর., দ্য ওগোফাউ রোমান গোল্ড মাইনস অ্যাট দোলাউকোথিতে, দ্য ন্যাশনাল ট্রাস্ট ইয়ার বুক ১৯৭৬-৭৭ (১৯৭৭)
  • অ্যানেলস, এ এবং বার্নহাম, বিসি, দ্য দোলাউকোথি গোল্ড মাইনস, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েলস, কার্ডিফ, ৩য় সংস্করণ (১৯৯৫)।
  • বার্নহ্যাম, ব্যারি সি. "রোমান মাইনিং অ্যাট দোলাউকোথি: দ্য ইমপ্লিকেশনস অফ দ্য ১৯৯১-৩ এক্সকাভেশনস নিয়ার দ্য ক্যারেগ পুমসেইন্ট", ব্রিটানিয়া ২৮ (১৯৯৭), ৩২৫-৩৩৬
  • হজ, এ.টি. (২০০১). রোমান অ্যাকুইডাক্ট অ্যান্ড ওয়াটার সাপ্লাই, ২য় সংস্করণ। লন্ডন: ডাকওয়ার্থ
  • বার্নহ্যাম, বিসি এবং এইচ, দোলাউকোথি-পুমসেন্ট: সার্ভে অ্যান্ড এক্সাভেসন অ্যাট এ রোমান গোল্ড-মাইনিং কমপ্লেক্স (১৯৮৭-১৯৯৯), অক্সবো বুকস (২০০৪).

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • ডার্ক, কে., এবং পি. ডার্ক, দ্য ল্যান্ডস্কেপ অফ রোমান ব্রিটেন , স্ট্রাউড: সাটন, ১৯৯৭
  • জোন্স, বি. এবং ডি. ম্যাটিংলি, অ্যান অ্যাটলাস অফ রোমান ব্রিটেন, অক্সফোর্ড: অক্সবো, ২০০২
  • রিস, আর, দ্য কয়েনএজ অফ রোমান ব্রিটেন , স্ট্রাউড: টেম্পাস, ২০০২
  • শ্রুফার-কোলব, আইরিন, রোমান আয়রন প্রোডাক্সন ইন ব্রিটেন : টেকনোলজিক্যল অ্যান্ড স্যোসিয়ো-ইকনমিক ল্যান্ডস্কেপ ডেভেলাপমেন্ট অ্যালং দ্য জুরাসিক রিজ , অক্সফোর্ড: আর্কিওপ্রেস, ২০০৪।
  • সিম, ডি., এবং আই. রিজ, আয়রন ফর দ্য ঈগলস: দ্য আয়রন ইনডাস্ট্রি অফ রোমান ব্রিটেনে. স্ট্রাউড: টেম্পাস, ২০০২