ধাতুগড়ন
ধাতুগড়ন বলতে একটি শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াকে বোঝায় যাতে বিভিন্ন স্থানীয়কৃত সংনমক বল ব্যবহার করে ধাতুকে আকৃতি প্রদান করা হয়। হাতুড়ি (প্রায়শই একটি বিদ্যুৎচালিত যান্ত্রিক হাতুড়ি) কিংবা ধাতু-ঢালাইয়ের ছাঁচের সাহায্যে ধাতুকে আঘাত করা হয় বা ধাতুর উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়।
ধাতুগড়নকে সাধারণত কোন্ তাপমাত্রায় এটি সম্পাদন করা হয়, তার ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে। যেমন শীতল ধাতুগড়ন (কক্ষ তাপমাত্রায় সম্পাদিত এক ধরনের শীতল ধাতুকর্ম), উষ্ণ ধাতুগড়ন (কক্ষ তাপমাত্রার চেয়ে উঁচুতে কিন্তু পুনর্কেলাসীভবন তাপমাত্রার নিচে অবস্থিত তাপমাত্রায়) এবং উত্তপ্ত ধাতুগড়ন (ধাতুর গলনাংকের প্রায় ৭৫% তাপমাত্রায়)। শেষোক্ত দুইটির ক্ষেত্রে ধাতুকে একটি হাপরে বা বায়ুচালিত চুল্লিতে উত্তপ্ত করা হয়। উত্তপ্ত ধাতুখণ্ডগুলির ওজন এক কিলোগ্রামের কম থেকে শুরু করে শত শত মেট্রিক টন হতে পারে।[১][২] আবার কোন্ কৌশলে ধাতুগড়ন করা হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করেও ধাতুগড়নের প্রকারভেদ আছে, যেমন পতনমূলক ধাতুগড়ন (বদ্ধ-ছাঁচ ধাতুগড়ন বা উন্মুক্ত-ছাঁচ ধাতুগড়ন), প্রেষণমূলক ধাতুগড়ন, বেলনভিত্তিক ধাতুগড়ন, নীট-আকৃতি ধাতুগড়ন, সমোষ্ণ ধাতুগড়ন, ঘূর্ণনমূলক ধাতুগড়ন, উলটানো ধাতুগড়ন, ইত্যাদি।
মানব ইতিহাসে বহু হাজার বছর ধরে কামার তথা কর্মকার পেশার ব্যক্তিরা ধাতুগড়নের কাজে নিয়োজিত আছে। কামাররা হাপরে ধাতুকে গনগনে লাল করে উত্তপ্ত করে সেটিকে নেহাইয়ের উপরে রেখে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করে। ঐতিহ্যবাহী ধাতুনির্মিত দ্রব্যগুলির মধ্যে ঘোড়ার নাল, রান্নার তৈজসপত্র গৃহস্থালি সামগ্রী, হাতের উপকরণ, ধারালো অস্ত্র, মন্দিরা, গহনা, ইত্যাদি উল্লেখ্য।
গণ-শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াগুলিতে একটি উদস্থিতিক ধাতুগড়ন প্রেষণযন্ত্রের সাহায্যে চাপ দিয়ে কিংবা বিদ্যুৎচালিত বা বাষ্পীয় শক্তিচালিত যান্ত্রিক হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে ধাতুগড়নের কাজটি সম্পন্ন করা হয়। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিভিন্ন যন্ত্র ও কলকব্জার যেখানেই শক্ত বা ঘাতসহ যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়, সেখানে ধাতুগড়নজাত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। ঐ জাতীয় ধাতুগড়নজাত দ্রব্যগুলিকে সাধারণত অধিকতর প্রক্রিয়াজাত করে (যেমন যন্ত্র দ্বারা আকৃতি-প্রদান করে) একটি সমাপ্ত যন্ত্রাংশ প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে ধাতুগড়ন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান অর্থনৈতিক শিল্প।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Degarmo, p. 389
- ↑ Heavy Manufacturing of Power Plants ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ নভেম্বর ২০১০ তারিখে World Nuclear Association, September 2010. Retrieved: 25 September 2010.
- ↑ "Forging: The Early Years"। All Metals & Forge Group। ২২ জানুয়ারি ২০১৩। ৩ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৩।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Degarmo, E. Paul; Black, J. T.; Kohser, Ronald A. (২০১১)। Materials and Processes in Manufacturing (11th সংস্করণ)। Wiley। আইএসবিএন 978-0-470-92467-9।
- Doege, E.; Behrens, B.-A.: Handbuch Umformtechnik: Grundlagen, Technologien, Maschinen (in German), 2nd Edition, Springer Verlag, 2010, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৬৪২-০৪২৪৮-৫
- Ostermann, F.: Anwendungstechnologie Aluminium (in German), 3rd Edition, Springer Verlag, 2014, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-৬৬২-৪৩৮০৬-০
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ধাতুগড়নের শব্দকোষ (ইংরেজি)
- ধাতুগড়নের ইতিহাসের সাক্ষ্যপ্রমাণ (ইংরেজি)