রূপমতি
রানী রূপমতি ছিলেন একজন কবি এবং মালবের সুলতান বাজ বাহাদুরের স্ত্রী। রূপমতি মালবের লোককাহিনীগুলিতে সুনির্দিষ্টভাবে বৈশিষ্ট্যযুক্ত, যাতে সুলতান এবং রূপমতির মধ্যকার প্রেম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রূপমতির সৌন্দর্য্য আদম খানকে মান্ডু জয় করতে আংশিকভাবে প্ররোচিত করেছিল। আদম খান দুর্গে রওনা হলে বাজ বাহাদুরের ছোট বাহিনীর সাথে তাঁর যুদ্ধ হয় এবং বাজ বাহাদুর পরাজিত হলে রূপমতী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এইভাবে সংগীত, কবিতা, রোমান্টিক উপন্যাস, যুদ্ধ এবং মৃত্যুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ঐন্দ্রজালিক প্রেমের গল্পের সমাপ্তি ঘটে। এই প্রেমের ঘটনাটিকে কিছু কিংবদন্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় যদিও অন্যরা এটিকে সত্য বলে মনে করে।
জীবন
[সম্পাদনা]বাজ বাহাদুর ছিলেন মান্ডুর শেষ স্বাধীন শাসক, তিনি বরাবরই সংগীতের খুব ভক্ত ছিলেন। একবার শিকারে বের হওয়ার পর বাজ বাহাদুর দৈবক্রমে এক মেষপালিকার মুখোমুখি হন, সে তখন তার বন্ধুদের সাথে খেলতেছিল এবং গান গাইতেছিল। তার মায়াবী সৌন্দর্য এবং স্বরমাধুর্য বিদ্ধ হয়ে তিনি রূপমতীকে তাঁর সাথে রাজধানীতে যেতে অনুরোধ করেন। রূপমতি তাঁর প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নদী নর্মদা দেখা যায় এমন এক প্রাসাদে বাস করবে এই শর্তে মান্ডু যেতে রাজি হন। এভাবেই মান্ডুতে রেওয়া কুন্ড নির্মিত হয়েছিল।
দুর্ভাগ্যক্রমে এই মুসলিম রাজপুত্র এবং হিন্দু মেষপালিকার প্রেম ব্যর্থ হয়ে যায়। মহান মোগল সম্রাট আকবর মান্ডু আক্রমণ করে রূপমতি ও বাজ বাহাদুরকে বন্দী করার সিদ্ধান্ত নেন। আকবর মান্ডু দখল করার জন্য আদম খানকে প্রেরণ করেন এবং বাজ বাহাদুর তার ছোট সেনাবাহিনী নিয়ে তাকে মোকাবেলা করেত যান। বিরাট মুঘল সেনাবাহিনীর সাথে কোনও তুলনাই হয় না, মান্ডু খুব সহজেই পরাজিত হয়।
বাজ বাহাদুর সাহায্যের আশায় চিত্তোরগড়ে পালিয়ে যান। আদম খান মান্ডু আসার সাথে সাথে রূপমতির সৌন্দর্য দেখে অবাক হয়ে যান। রানি রূপমতি নিজেকে গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য নির্বিকারভাবে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন, আর এভাবেই প্রেমের গল্পের অবসান ঘটে।[১]
রানী রূপমতির কবিতা
[সম্পাদনা]১৫৯৯ সালে শরাফ-উদ-দীন মির্জার কর্মচারী আহমদ-উল-উমরি তুরকোমান ফার্সি ভাষায় রানী রূপমতির গল্প লিখেছিলেন। তিনি তার ২৬ টি কবিতা সংগ্রহ করেছিলেন এবং সেগুলিকে তাঁর লেখায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। আসল পাণ্ডুলিপিটি তার নাতি ফুলাদ খানের নিকট চলে যায় এবং তার বন্ধু মীর জাফর আলী ১৬৫৩ সালে পাণ্ডুলিপির একটি অনুলিপি তৈরি করেন। মীর জাফর আলীর অনুলিপিটি শেষ পর্যন্ত দিল্লির মেহবুব আলীর হাতে চলে যায় এবং ১৮৩১ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে দিল্লির এক মহিলার কাছে চলে যায়। ভোপালের জমাদার ইনায়েত আলী এই পাণ্ডুলিপিটি তাঁর কাছ থেকে আগ্রায় নিয়ে আসেন। এই পান্ডুলিপিটি পরে সি.ই. লুয়ার্ডের কাছে পৌঁছে এবং ১৯২৬ সালে এল.এম. ক্রাম্প এটি দ্য লেডি অফ দ্য লোটাস: রূপমতি, কুইন অব মান্ডু: এ স্ট্রেঞ্জ টেল অব ফেইথফুলনেস (পদ্মের ললনা: রূপমতি, মান্ডুর রানী: বিশ্বস্ততার এক অদ্ভুত গল্প) শিরোনামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এই পাণ্ডুলিপিতে রূপমতির বারোটি দোহ, দশটি কবিতা এবং তিনটি সায়ের এর সংকলন রয়েছে।[২]
রেওয়া কুন্ড ও রানী রূপমতি পটমণ্ডপ
[সম্পাদনা]মান্ডুতে নির্মিত রেওয়া কুন্ডটি একটি জলাশয়, রূপমতির প্রাসাদে জল সরবরাহের জন্য কৃত্রিম জলপ্রণালী দ্বার এটি সজ্জিত। বাজ বাহাদুর এটি নির্মান করেন। বর্তমানে এটিকে একটি পবিত্র স্থান হিসাবে সম্মান করা হয়। বাজ বাহাদুর প্রাসাদটি ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত হয়েছিল, এবং এটি হলগুলির সাথে প্রশস্ত চত্বর এবং উঁচু ভবনশ্রেণীর জন্য বিখ্যাত,যা মনোরম পরিবেশের এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেয়। সেনা পর্যবেক্ষণ চৌকি হিসাবে নির্মিত হয়েছিল রানী রূপমতি পটমণ্ডপটি। এটি আরও বেশি রোম্যান্টিক উদ্দেশ্যে রূপমতির নির্জন আবাসস্থল হিসাবে কাজ করেছে। পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপন করা এই মনোরম মণ্ডল থেকে রানী তার প্রিয় প্রাসাদ এবং নীচ দিয়ে প্রবাহিত নর্মদা দর্শন করতে পারতেন। দক্ষিণ দূর্বাসে রানি রূপমতির দ্বৈত পটমণ্ডপ নর্মদা উপত্যকার এক অপূর্ব দৃশ্য প্রদান করে।
-
রানী রূপমতি পটমণ্ডপ
-
বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ
-
রেওয়া কুন্ড
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]নোট
[সম্পাদনা]- ↑ "Rewa kund"। ১৪ মার্চ ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০০৬।
- ↑ Khare, M.D. (ed.) (1981). Malwa through the Ages, Bhopal: Directorate of Archaeology and Museums, Government of M.P., pp.365-7
গ্রন্থপঞ্জী
[সম্পাদনা]- Explore India: The Official Newsletter of the Ministry of Tourism। Durga Das Publications Pvt. Limited। ২০০১।
- Amiteshwar Ratra (২০০৬)। Marriage and Family: In Diverse and Changing Scenario। Deep & Deep Publications। আইএসবিএন 978-81-7629-758-5।
- M. D. Khare (১৯৮১)। Malwa Through the Ages: Papers of the Seminar Held at Indore Museum on 7, 8, and 9 February, 1981। Directorate of Archaeology & Museums, Government of M.P.।
- Seema Suneel (১৯৯৫)। Man-woman relationship in Indian fiction: with a focus on Shashi Deshpande, Rajendra Awasthy, and Syed Abdul Malik। Prestige Books।
- Sir Thomas Herbert; John Anthony Butler (২০১২)। Sir Thomas Herbert, Bart: Travels in Africa, Persia, and Asia the Great : Some Years Travels Into Africa and Asia the Great, Especially Describing the Famous Empires of Persia and Hindustan, as Also Divers Other Kingdoms in the Oriental Indies, 1627-30, the 1677 Version। ACMRS (Arizona Center for Medieval and Renaissance Studies)। আইএসবিএন 978-0-86698-475-1।
- Tiwari, Chandra Kant (১৯৭৭)। "Rupmati 'The Melody Queen of Malwa'"। Proceedings of the Indian History Congress। 38: 244–249। জেস্টোর 44139077।
- "Afghan architecture in sandstone"। The Hindu। ১১ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- Chand, Sharmila (৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Monsoon in Mandu"। India Today। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- "Mandu in Madhya Pradesh is a romantic treasure waiting to be explored"। Times Travel। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯।