রূপকুণ্ড

স্থানাঙ্ক: ৩০°১৫′৪৪″ উত্তর ৭৯°৪৩′৫৪″ পূর্ব / ৩০.২৬২২২° উত্তর ৭৯.৭৩১৬৭° পূর্ব / 30.26222; 79.73167
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রূপকুণ্ড
  • রহস্যময় হ্রদ
  • কঙ্কাল হ্রদ
রূপকুণ্ড হ্রদ, আগস্ট ২০১৪
হ্রদের ছবি, আগস্ট ২০১৪
Location of Roopkund lake within Uttarakhand
Location of Roopkund lake within Uttarakhand
রূপকুণ্ড
Location of Roopkund lake within Uttarakhand
Location of Roopkund lake within Uttarakhand
রূপকুণ্ড
অবস্থানচামোলি, উত্তরাখণ্ড
স্থানাঙ্ক৩০°১৫′৪৪″ উত্তর ৭৯°৪৩′৫৪″ পূর্ব / ৩০.২৬২২২° উত্তর ৭৯.৭৩১৬৭° পূর্ব / 30.26222; 79.73167
গড় গভীরতা৩ মিটার (৯.৮ ফু)
পৃষ্ঠতলীয় উচ্চতা৪,৫৩৬ মিটার (১৪,৮৮২ ফু)
মানচিত্র

রূপকুন্ড (স্থানীয়ভাবে রহস্যময় হ্রদ বা কঙ্কাল হ্রদ নামে পরিচিত) [১] ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের একটি উঁচু হিমবাহের হ্রদ । এটি ত্রিশূলের পর্বতপ্রাচীরে অবস্থিত। হিমালয়ে অবস্থিত এই হ্রদের চারপাশের এলাকা জনবসতিহীন। এটি প্রায় ৫,০২০ মিটার(১৬,৪৭০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত, [১] এবং শিলা-বিস্তৃত হিমবাহ ও তুষার-ঢাকা পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। রূপকুন্ড একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং গন্তব্য। [২] হ্রদের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, তবে এর ব্যাস কদাচিৎ ৪০ মিটারের বেশি (১,০০০ থেকে ১,৫০০ বর্গ মিটার এলাকা) হয় এবং শীতকালে হিমপূর্ণ থাকে। [৩]

প্রায় তিন মিটার গভীর রূপকুন্ড হ্রদের ধারে প্রাপ্ত শত শত প্রাচীন মানব কঙ্কালের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। [৪] তুষার গলে গেলে মানুষের কঙ্কালের অবশেষ হ্রদের নীচে দৃশ্যমান হয়। [৫] প্রাথমিক তদন্তের ফলে কেউ কেউ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে, কঙ্কালগুল একটি আধা-কাল্পনিক ঘটনার অবশেষ ছিল, যখন ৯ম শতাব্দীতে এক আকস্মিক ও তীব্র শিলাবৃষ্টিতে কোন একক গোষ্ঠী নিহত হয়েছিল। [৬] তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে দেহাস্থিগুলি তিনটি পৃথক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। প্রায় ৮ম ও ১৮ শতাব্দীর ভিন্ন কোনো সময়ে তারা মারা গিয়েছিলেন। [৭] মানব দেহাবশেষের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হ্রদটিকে "কঙ্কাল হ্রদ" বলা হয়। [৮]

নরকঙ্কাল[সম্পাদনা]

রূপকুন্ড হ্রদে মানব কঙ্কাল

১৯৪৩ সালে হরি কিষণ মাধওয়াল নামে নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যানের একজন বনরক্ষক কর্তৃক কঙ্কালগুলি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়। [৯] প্রথমে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করেছিল কঙ্কালগুলি গুপ্ত জাপানি আক্রমণকারী বাহিনীর সৈনিকদের , কিন্তু দেখা গেল যে কঙ্কালগুলি জাপানী সৈন্যদের চেয়ে বহু পুরোনো। [৬] বরফ গলার ফলে এক মাসের মধ্যে অগভীর হ্রদের স্বচ্ছ জলে কঙ্কালগুলি দৃশ্যমান হয়। [১] কঙ্কালের পাশাপাশি কাঠের শিল্পকর্ম, লোহার বর্শা, চামড়ার চপ্পল [১০] ও আংটিও পাওয়া গেছে। ২০০৩ সালে যখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি দল প্রায় ৩০টি কঙ্কাল উদ্ধার করেছিল তখনও কিছু কঙ্কালের সাথে মাংস সংযুক্ত ছিল। [১]

স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে, কনৌজের রাজা যশধাবল, তার গর্ভবতী স্ত্রী রানী বলম্পা, তাদের ভৃত্য, একটি নৃত্য দল ও অন্যান্যরা নন্দা দেবীর মন্দিরে তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন। দলটি বড় শিলাবৃষ্টি ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল যার দরুন রূপকুন্ড হ্রদের নিকটে পুরো দলটি মারা যায়। [১১] [১২]

শনাক্তকরণ[সম্পাদনা]

এই হ্রদে তিনশ'রও বেশি মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। ভারতের নৃতাত্ত্বিক জরিপ ১৯৫০-এর দশকে কঙ্কালগুলির উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করে ও কিছু নমুনা অ্যানথলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া মিউজিয়াম, দেরাদুনে প্রদর্শিত হয়। [১৩] কঙ্কালের গবেষণায় মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে; [১৪] কিছু সূত্র অনুসারে [১৫] এই আঘাতগুলি উপর থেকে পতিত গোলাকার বস্তু দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল। মৃতদের মধ্যে মৃত্যুর সাধারণ কারণ বিদ্যমান ছিল। এই গবেষকরা উপসংহারে পৌঁছেছেন যে স্থানীয় কিংবদন্তি ও গাথায় যেমন বর্ণনা করা হয়েছে তদনুযায়ী হতভাগ্যরা হঠাৎ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়েছিলেন। [৬] [১৫] অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন অ্যাক্সিলারেটর ইউনিটে হাড়ের রেডিওকার্বন ডেটিং নির্ধারণ করেছে, তাদের মৃত্যুর সময়কাল ৮৫০ শতক ±৩০ বছর।[ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ] অতি সম্প্রতি রেডিওকার্বন ডেটিং রূপকুন্ড হ্রদের ৩৮ জন ব্যক্তির জিনোম-ভিত্তিক বিশ্লেষণের সাথে মিলে গিয়েছে।২৩ জনের একটি গোষ্ঠীর (তারিখ ~৮০০ খ্রিস্টাব্দ) সাধারণত দক্ষিণ এশীয় পূর্বপুরুষ ছিল, অপর ব্যক্তির (তারিখ ~১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় পূর্বপুরুষ ছিল, এবং ১৪ জন ব্যক্তির (তারিখ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) পূর্বপুরুষ ভূমধ্যসাগরের অধিবাসী ছিল যারা বিশেষভাবে বর্তমান সময়ের মূল ভূখণ্ড গ্রীসক্রিটের বাসিন্দা । এই ফলাফলগুলি এই তত্ত্বের বিরোধী যে উল্লিখিত ব্যক্তিরা কোন একক বিপর্যয়মূলক ঘটনায় মারা গিয়েছিল। রেডিওকার্বন ডেটিং আরও ইঙ্গিত দেয় , পুরোনো দক্ষিণ এশীয় কঙ্কালগুলি একটি বর্ধিত সময়ের মধ্যে স্তূপীকৃত হয়েছিল , এবং ক্ষুদ্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ও দক্ষিণ - পূর্ব এশীয় কঙ্কালগুলি এক পৃথক দূর্ঘটনায় জমা হয়েছিল ।

সংরক্ষণের উদ্বেগ[সম্পাদনা]

কঙ্কালগুলির নিয়মিত ক্ষয় সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়ছে ও আশঙ্কা করা হচ্ছে যে যদি এগুলি সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে আগামী বছরগুলিতে কঙ্কালগুলি ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে । [১৬] জানা গেছে যে এই অঞ্চলে আসা পর্যটকদের প্রচুর পরিমাণে হাড় সংগ্রহ করার অভ্যাস রয়েছে এবং জেলা প্রশাসন এই অঞ্চলটি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছে । [১৩] চামোলি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন, পর্যটক ট্রেকার এবং কৌতূহলী গবেষকরা খচ্চরের উপর কঙ্কালগুলি পরিবহন করছেন ও এই অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করার পরামর্শ দিয়েছেন । [১১] সরকারী সংস্থাগুলি কঙ্কালগুলি রক্ষার জন্য এই অঞ্চলকে একটি ইকো - ট্যুরিজম গন্তব্যরূপে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেছে ।[১৭]

ভ্রমণব্যবস্থা[সম্পাদনা]

বেদনি বুগিয়ালের কাছে রূপকুণ্ডের ট্রেকিং পথ।

রূপকুণ্ড একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র এবং হিমালয়ের দুটি শৃঙ্গের পাদদেশের নিকট হিমালয়ের চামোলি জেলা ট্রেকিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলির একটি। শৃঙ্গ দুটি হলো ত্রিসুল (৭,১২০ মি.) ও নন্দ ঘুন্টি (৬,৩১০ মি.) ।   [১৮] হ্রদের উত্তরে জুনাগড় নামে একটি শিলা ও পূর্বে চন্দনিয়া কোট নামে একটি শৃঙ্গ রয়েছে । প্রতি শরৎকালে বেদনি বুগিয়াল আলপাইন তৃণভূমিতে একটি ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আশেপাশের গ্রামগুলি অংশগ্রহণ করে । রূপকুণ্ডে প্রতি বারো বছর অন্তর নন্দা দেবী রাজ জাট অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ে দেবী নন্দার পূজা করা হয় । [১৮] বছরের বেশিরভাগ সময়ই হ্রদটি বরফে ঢাকা থাকে। ট্রেকিংয়ের সেরা সময় হল শরৎকাল (সেপ্টেম্বরের—অক্টোবর পর্যন্ত) ।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

রূপকুণ্ডের কঙ্কালগুলি ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তথ্যচিত্র " রিডলস অফ দ্য ডেডঃ স্কেলেটন লেক-এ(Riddles of the Dead: Skeleton Lake) প্রদর্শিত হয়েছিল । [১৯][২০] ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি) " দ্য মিস্টিরিয়াস ফ্রোজেন লেক ইন দ্য হিমালয় " নামে তথ্যচিত্র তৈরি করেছে যেখানে একটি বৈজ্ঞানিক দল ও একটি চলচ্চিত্র দল হ্রদটি তদন্ত করার চেষ্টা করছে ।[২১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Alam, Aniket (২৯ জুন ২০০৪)। "Fathoming the ancient remains of Roopkund"The Hindu। ৭ নভেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১৩ 
  2. Kohli, M.S. (২০০০)। The Himalayas : playground of the gods : trekking, climbing, adventure। Indus Publishing Co.। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 9788173871078 
  3. Harney, Éadaoin; Nayak, Ayushi (২০ আগস্ট ২০১৯)। "Ancient DNA from the skeletons of Roopkund Lake reveals Mediterranean migrants in India": 3670। ডিওআই:10.1038/s41467-019-11357-9পিএমআইডি 31431628পিএমসি 6702210অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  4. Andrews, Robin George (২০ আগস্ট ২০১৯)। "The Mystery of the Himalayas' Skeleton Lake Just Got Weirder: Every summer, hundreds of ancient bones emerge from the ice. A new genetic study helps explain how they got there."The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  5. Sati, Vishwambhar Prasad; Kumar, Kamlesh (২০০৪)। Uttaranchal: dilemma of plenties and scarcities (1st সংস্করণ)। Mittal Publ.। পৃষ্ঠা 82। আইএসবিএন 9788170998983 
  6. "Skeleton Lake of Roopkund, India"Atlas Obscura। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৬ 
  7. Harney, Éadaoin; Nayak, Ayushi (ডিসেম্বর ২০১৯)। "Ancient DNA from the skeletons of Roopkund Lake reveals Mediterranean migrants in India": 3670। ডিওআই:10.1038/s41467-019-11357-9পিএমআইডি 31431628পিএমসি 6702210অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  8. "Roopkund lake's skeleton mystery solved! Scientists reveal bones belong to 9th century people who died during heavy hailstorm"India Today। ৩১ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৩ 
  9. Woodward, Aylin (২২ অক্টোবর ২০১৯)। "A remote Himalayan lake holds up to 800 skeletons from people who died 1,000 years apart. The mystery remains unsolved."Business Insider (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০২১ 
  10. Menon, Hari (৮ নভেম্বর ২০০৪)। "Bones Of A Riddle"। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৩ 
  11. "Roopkund's human skeletons go missing"Deccan Herald। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭। ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৩ 
  12. Vicki, Pomeroy (২০০৭)। Deep in the Indian Himalaya। Garhwal Publishing। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 9780615156972 
  13. Kazmi, SMA (১২ নভেম্বর ২০০৭)। "Tourists to Roopkund trek back with human skeletons"The Indian Express 
  14. Pant, Alka Barthwal (২০১৮)। "Roopkund Mystery "Pathology Reveals Head Injury behind the Casualties" (পিডিএফ): 1084‐1096। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০ 
  15. Orr, David (৭ নভেম্বর ২০০৪)। "Giant hail killed more than 200 in Himalayas"The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০ 
  16. "Skeletons:AWOL"Satesman। uttarakhand.org (Govt. website)। ১৬ জুলাই ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৩ 
  17. Kazmi, SMA (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Roopkund's skeletal tales"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৩ 
  18. Nigam, Devesh (২০০২)। Tourism, environment and development of Garhwal Himalaya (1. সংস্করণ)। Mittal Publ.। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 9788170998709 
  19. "Skeleton Lake"। Miditech.tv। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১২ 
  20. Riddles of the Dead Episode Guide, National Geographic Channel
  21. The Mysterious Frozen Lake in Himalayas. (ইংরেজি ভাষায়), সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২১ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]