বিষয়বস্তুতে চলুন

রুবেন দারিও

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রুবেন দারিও
রুবেন গার্সিয়া কাস্তালীয় রাজকুমার পণ্ডিত ও ‘মডার্নিসমো সাহিত্য আন্দোলনে’র অবিসংবাদিত জনকরূপে পরিচিতি পেয়েছেন।
রুবেন গার্সিয়া কাস্তালীয় রাজকুমার পণ্ডিত ও ‘মডার্নিসমো সাহিত্য আন্দোলনে’র অবিসংবাদিত জনকরূপে পরিচিতি পেয়েছেন।
জন্মফেলিক্স রুবেন গার্সিয়া সারমিয়েন্তো
(১৮৬৭-০১-১৮)১৮ জানুয়ারি ১৮৬৭
মেতাপা, বর্তমানে সিওদাদ দারিও নামে পরিচিত, মাতাগাল্পা, নিকারাগুয়া
মৃত্যু৬ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬(1916-02-06) (বয়স ৪৯)
লিওন, নিকারাগুয়া
ছদ্মনামরুবেন গার্সিয়া
পেশাকবি, সাংবাদিক, কূটনীতিবিদলেখক
জাতীয়তানিকারাগুয়ী
সাহিত্য আন্দোলনমডার্নিসমো
দাম্পত্যসঙ্গীরাফায়েলা কন্ত্রেরাস,
রোজারিও মুরিলো,
ফ্রান্সিসকা সাঞ্চেজ ডেল পোজো

স্বাক্ষর

ফেলিক্স রুবেন গার্সিয়া সারমিয়েন্তো (স্পেনীয়: Rubén Darío; জন্ম: ১৮ জানুয়ারি, ১৮৬৭ - মৃত্যু: ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬) মাতাগাল্পা এলাকার মেতাপায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত নিকারাগুয়ী কবি, সাংবাদিক, কূটনীতিবিদলেখক ছিলেন। ১৯শ শতাব্দীর শেষদিকে প্রস্ফূটিত হওয়া স্পেনীয়-আমেরিকান সাহিত্য আন্দোলন নামে পরিচিত ‘মডার্নিসমো’র পথিকৃৎ তিনি। রুবেন দারিও স্পেনীয় সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জগতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে গেছেন যা ২০শ শতাব্দী পর্যন্ত দীর্ঘকালব্যাপী টিকেছিল। ‘কাস্তালীয় রাজকুমার পণ্ডিত’ ও ‘মডার্নিসমো সাহিত্য আন্দোলনে’র অবিসংবাদিত জনকরূপে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

তাঁর পিতা-মাতা ম্যানুয়েল গার্সিয়া ও রোজা সারমিয়েন্তো নিকারাগুয়ার লিওনে ২৬ এপ্রিল, ১৮৬৬ তারিখে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয় স্তরের আত্মীয় হওয়ায় প্রয়োজনীয় যাজকীয় অনুমোদন লাভের পরই তাঁরা বিয়ে করেন। তবে, অতিরিক্ত মদ্যপানজনিতউচ্ছৃঙ্খল আচরণের ফলে রোজা তাঁর দাম্পত্য জীবন পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন ও মাতাগাল্পার মেতাপা শহরে পলায়ণ করতে বাধ্য হন। সেখানেই তিনি ফেলিক্স রুবেনের জন্ম দেন। পুনরায় দাম্পত্য জীবনে অগ্রসর হন ও রোজা কান্দিদা রোজা নাম্নী দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন। তবে জন্মের অল্প কয়েকদিন পরই সে মারা যায়। বৈবাহিক জীবনে পুনরায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়। এবার রোজা স্বামীকে ত্যাগ করে বার্নার্দা সারমিয়েন্তো নাম্নী এক কাকীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। অল্প সময়ের মধ্যেই রোজা সারমিয়েন্তো অন্য লোকের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়েন ও তাঁকে নিয়ে হন্ডুরাসের চলুটেকা এলাকার স্যান মার্কোস ডে কোলনে বসবাস করতে থাকেন।

শৈশবকাল

[সম্পাদনা]

নিকারাগুয়ার মাতাগাল্পার মেতাপায় রুবেন দারিও’র জন্ম। তবে, বাপ্তিস্মকালীন(?) রুবেনের পারিবারিক নাম গার্সিয়া রাখা হয়। পিতামহের পরিবারের পারিবারিক নাম ‘দারিও’ অনেক বছর ধরে বিরাজমান ছিল। পরবর্তীকালে রুবেন দারিও তার আত্মজীবনীতে আরও স্পষ্ট করে এ বিষয়ে উল্লেখ করেন যে,

আমার শৈশবকালে শহরের বয়স্কদের কেউ কেউ ও আমার প্র-পিতামহ ডাকনাম হিসেবে দারিও কিংবা প্রথম নামে ডাকতেন। ছোট্ট এই শহরে প্রত্যেকের কাছেই তিনি ‘ডন দারিও’ এবং পুরো পরিবারের কাছে দারিওস নামে পরিচিত ছিলেন। এভাবে তিনি ও তাঁর পরিবারের সকলের নাম থেকে শেষের নামটি অদৃশ্য হয়ে যেতে থাকে। তবে, আমার পৈতৃক সম্পর্কীয় প্র-মাতামহ এর পরিবর্তে রিতা দারিও নামে দলিলপত্রাদিতে স্বাক্ষর করতে শুরু করেন। গোত্র ও অর্জিত বৈধ অবস্থান ও মূল্যায়ণের বিষয়টি আমার বাবার কাছ থেকে আসে। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর সমগ্র ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ম্যানুয়েল দারিও নাম উল্লেখ করতেন। ...[]

নিকারাগুয়ার লিওনের ক্যাথেড্রাল-বাসিলিকা ডে লা অসানসিওনে কবি তাঁর শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। এ গীর্জাতেই তাঁর দেহাবশেষ সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

দারিও তার শৈশবকাল লিওন নগরে কাটান। তার মায়ের কাকী ও কাকা ফেলিক্স ও বার্নার্দা তাকে নিজেদের কাছে রাখতে নিয়ে আসেন। তাদেরকেই দারিও শৈশবকাল থেকে তার প্রকৃত পিতা-মাতারূপে চিনতেন। তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ের শুরুর বছরগুলো তিনি ফেলিক্স রুবেন রামিরেজ নামে স্বাক্ষর করতেন। হন্ডুরাসে বসবাসকারী মায়ের সাথে তিনি খুব কমই বলতেন। অন্যদিকে তার বাবাকে ‘আঙ্কেল ম্যানুয়েল’ নামে আখ্যায়িত করতেন। তবে তার প্রথমদিককার দিনগুলো সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। ১৮৭১ সালে ফেলিক্স রামিরেজের দেহাবসানের পর দলিলপত্রাদিতে দেখা যায় যে, পরিবারটি খুবই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছিল। দর্জির কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে পাঠানোকেই তারা অগ্রাধিকার দেন। তার আত্মজীবনীকার এদেলমিরো তোরেসের মতে, ১৮৭৯ থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে লিওনের বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি হন ও রোমান ক্যাথলিকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করেন।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

নিজস্ব বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায় যে, তিনি তিন বছর বয়স থেকেই পড়তে পারতেন।[] অসাধারণ পাঠক হিসেবে তিনি তার প্রথমদিককার কবিতাগুলো লিখতে শুরু করেন। তিনি ১৮৭৯ সালে চতুর্দশপদী কবিতা লিখেন। মাত্র তেরো বছর বয়সেই প্রথমবারের মতো সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন। ২৬ জুলাই, ১৮৮০ তারিখে রিভাসভিত্তিক দৈনিক ‘এল তারমোমেত্রো’য় শোকগাঁথাবিষয়ক ‘ইউনা লাগরিমা’ প্রকাশ করেন। অল্প কিছুদিন পর সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা ‘এল এনসেয়ো’য় অন্যান্যদের সাথে কাজ করেন যা তাঁকে ‘শিশু কবি’রূপে সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

তিওদোসিও ফার্নান্দেজের মতে, শুরুর দিকের ঐ সকল কবিতা সমসাময়িক স্পেনীয় কবি হোস জরিলা, রামোন ডে ক্যাম্পোয়ামোর, গাস্পার নানেজ ডে আর্ক ও ভেঞ্চুর ডে লা ভেগা’র সাথে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।[]

ঐ সময়কার তাঁর লেখায় উদারনীতি প্রদর্শন থেকে শুরু করে রোমান ক্যাথলিক চার্চের অত্যধিক প্রভাবের বিষয় ফুঁটে উঠে যা তাঁর ১৮৮১ সালে প্রকাশিত ‘এল জেসুইতা’ রচনায় প্রকাশ পায়। রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন হিসেবে ইকুয়েডরীয় জুয়ান মন্তালভো’র কর্মকাণ্ড তাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে ও তার প্রথমদিককার সংবাদপত্রধর্মী নিবন্ধে প্রতিফলিত হয়েছে।[]

কয়েকজন উদারপন্থী রাজনীতিবিদের অনুরোধক্রমে ১৪ বছর বয়সে ডিসেম্বর, ১৮৮১ সালে রাজধানী ম্যানাগুয়ায় স্থানান্তরিত হন। তারা তাকে এ পরামর্শ দেন যে, কবিতা উপহার দেয়ার মাধ্যমে হয়ত-বা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় নির্বাহক্রমে তাকে শিক্ষালাভের জন্য ইউরোপে পাঠানো হবে। তবে, তার কবিতায় কেরাণীবিরোধী সূর থাকায় কংগ্রেস সভাপতি রক্ষণশীল পেদ্রো জোয়াকুইন চামোরো আলফারো’র মনঃপূত হয়নি। তবে তাকে নিকারাগুয়ী শহর গ্রানাডায় পড়াশোনার সুযোগ দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন ও ম্যানাগুয়ায় অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে তিনি ‘এল ফেরোকারিল’ ও ‘এল পোরভেনির ডে নিকারাগুয়া’র ন্যায় সংবাদপত্রসমূহে কাজ করতে থাকেন।

রাজধানীতে অবস্থানকালে তিনি রোজারিও এমেলিনা মুরিলো নাম্নী এগারো বছর বয়সী এক বালিকার প্রেমে পড়ে যান। তিনি তাঁকে বিয়ে করতে চান। তবে, বিয়ের পরিকল্পনাকে বিলম্বিত করতে আগ্রহী বন্ধুদের অনুরোধক্রমে আগস্ট, ১৮৮২ সালে এল সালভাদর ভ্রমণ করেন।

এল সালভাদর ভ্রমণ

[সম্পাদনা]

এল সালভাদরে কবি জোয়াকুইন মেন্দেজের ছত্রচ্ছায়ায় ও সহায়তায় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি রাফায়েল জালদিভারের সাথে স্ক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি সালভাদরীয় কবি ও ফরাসি কবিতানুরাগী ফ্রান্সিসকো গাভিদিয়া’র সাথে পরিচিত হন।[] গাভিদিয়া’র ঐকান্তিক আগ্রহে ফরাসি ষটপদী কবিতাকে কাস্তিলীয়ধর্মী কবিতায় পরিণত করতে সচেষ্ট হন। এল সালভাদরে প্রভূতঃ খ্যাতি ও সামাজিক জীবনযাপনে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তন্মধ্যে, সিমন বলিভারের জন্মশতবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করেন। এরপরই তাঁর দূর্ভাগ্যজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়। তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিপতিত হন তিনি ও গুটিবসন্তে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থাতেই অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন। সুস্থ হবার পর তিনি সংক্ষিপ্তকাল লিওনে অবস্থান করেন ও পরবর্তীতে গ্রানাডায় চলে যান। অবশেষে পুনরায় মানাগুয়ায় জাতীয় গ্রন্থাগার বিবলিওটেকা ন্যাশিওনাল ডে নিকারাগুয়ায় কাজ পান। ফলশ্রুতিতে আবারো রোজারিও মুরিলো’র সাথে প্রণয়কর্ম চলতে থাকে। মে, ১৮৮৪ সালে ভবঘুরেমির জন্য অভিযুক্ত হন ও আটদিনের জন্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। তবে, তিনি এ শাস্তি রহিতকরণে সফল হয়েছিলেন। এ সময়ে তিনি তাঁর নতুন ধাঁচের কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে থাকেন। ‘এপিস্তোলাস ওয়াই পোমাস’ শিরোনামীয় একটি গ্রন্থও মুদ্রণের জন্য প্রস্তুত ছিল। দ্বিতীয় এ পুস্তকটিও প্রকাশিত হয়নি। অবশেষে ১৮৮৮ সালে ‘প্রাইমেরাস নোটাস’ নামে এ বইটি অবশেষে আলোর মুখ দেখে। মঞ্চ নাটক নিয়েও নিজ ভাগ্যকে পরীক্ষা করেন। ‘কাদা ওভেজা...’ শিরোনামে প্রথম নাটক প্রকাশ করেন। কিছু সফলতা পেলেও কোন সংখ্যা অবিক্রিত থাকেনি। ম্যানাগুয়ায় অস্বস্তিকর জীবন উপভোগ করতে থাকেন। কিছু বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শক্রমে ৫ জুন,১৮৮৬ তারিখে চিলিতে চলে যান।

কবিতা ও গল্পপ্রেমী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর ১৮৮৬ সালে নিকারাগুয়া থেকে চিলিতে অবস্থান করেন। ২৩ জুন, ১৮৮৬ তারিখে ভালপারাইসো এলাকায় থাকেন। চিলিতে পোইরিয়ারসহ এদুয়ার্দো ডে লা বারা নামীয় এক কবির সাথে থাকেন। তারা একত্রে ‘এমেলিনা’ শিরোনামে ভাবপ্রবণ উপন্যাস প্রকাশ করেন। এরফলে তারা সাহিত্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন, তবে তারা কেউই জয়ী হননি। পোইরিয়ারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে এমনটি হয়নি। জুলাই, ১৮৮৬ সালে সান্তিয়াগোভিত্তিক ‘লা ইপোকা’ সংবাদপত্রে চাকরি করেন তিনি।

ঔপন্যাসিক ও সাহিত্য সমালোচক জুয়ান ভালেরা সাময়িকীপত্র ‘এল ইম্পারসিয়ালে’ রুবেন দারিওকে উল্লেখ করে চিঠিপত্র লিখতেন যা রুবেন দারিওকে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করতো।

২১ জুন, ১৮৯০ তারিখে স্যান সালভাদরে রাফায়েলা কন্ত্রেরাস নাম্নী এক রমণীকে আইন মোতাবেক বিয়ে করেন। হন্ডুরীয় জনপ্রিয় সুবক্তা আলভারো কন্ত্রেরাসের কন্যা ছিলেন তিনি। বিয়ের একদিন পরই রাষ্ট্রপতি ও জেনারেল মেনেন্দেজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান পরিচালিত হয়। ঐ অভ্যুত্থানটির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জেনারেল কার্লোস ইজেতা। ইজেতা দারিও’র বিবাহ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে তাকে পুনরায় বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়।

নতুন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে চাকরি লাভের প্রস্তাবনা পাওয়া স্বত্বেও তিনি এল সালভাদর ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। নবপরিণীতাকে এল সালভাদরে রেখেই জুন মাসের শেষদিকে গুয়াতেমালায় চলে যান। গুয়াতেমালার রাষ্ট্রপতি ম্যানুয়েল লিসান্দ্রো বারিলাস এল সালভাদরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। গুয়াতেমালীয় সংবাদপত্র ‘এল ইম্পারসিয়ালে’ ‘হিস্টোরিয়া নেগ্রা’ শিরোনামে এক নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এতে তিনি মেনেন্দেজের এজেতা’র বিষয়ে বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়ে নিন্দাজ্ঞাপন করেন। ডিসেম্বর, ১৮৯০ সালে নতুন প্রকাশিত সংবাদপত্র ‘এল কোরিও ডে লা তার্দ’ পরিচালনার দায়িত্ব পান। ঐ একই বছরে সফলতম পুস্তক আজুলের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন। বইয়ের আকার সম্প্রসারণ করেন ও ভালেরার চিঠিগুলো তুলে ধরেন। এরফলে তার সাহিত্যিক সুনাম ব্যাপকভাবে বয়ে নিয়ে আসে। গুয়াতেমালায় প্রকাশিত ঐ গ্রন্থের ভূমিকাংশে ও পরবর্তী সংস্করণগুলোয় ঐ চিঠিগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। জানুয়ারি, ১৮৯১ সালে তার স্ত্রী গুয়াতেমালায় তার সাথে পুণঃএকত্রিত হন ও ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯১ তারিখে গীর্জায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন মাস পর দারিও সম্পাদিত সাময়িকপত্র ‘এল কোরিও ডে লা তার্দ’ সরকারী ভর্তুকি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলে এটি জোরপূর্বক বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এরপর আগস্ট, ১৮৯১ সালে তিনি কোস্টারিকায় চলে যান ও রাজধানী স্যান হোসে বসবাস করতে থাকেন। কোস্টারিকায় অবস্থানকালে চাকরিতে নিয়োজিত থাকা স্বত্ত্বেও ঋণজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েন ও নিজ পরিবারকে সহায়তা করতে বাঁধাপ্রাপ্ত হন। ১২ নভেম্বর, ১৮৯১ তারিখে প্রথম পুত্রসন্তান রুবেন দারিও কন্ত্রেরাস জন্মগ্রহণ করে।

১৮৯২ সালে নিজ পরিবারকে কোস্টারিকায় ফেলে রেখে উন্নততর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুয়াতেমালা ও নিকারাগুয়া সফরে যান। আকস্মিকভাবে নিকারাগুয়ী সরকার তাকে মাদ্রিদে নিকারাগুয়ার প্রতিনিধি দলের সদস্যরূপে তাকে অন্তর্ভূক্ত করেন। সেখানে আমেরিকা আবিষ্কারের চতুর্থ শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্পেন সফরের এক পর্যায়ে দারিও কিউবার হাভানায় যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে তিনি জুলিয়ান ডেল কাসল ও অ্যানিসেতো ভালদিভিয়া ও রাউল কে’র ন্যায় শিল্পীদের সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। ১৪ আগস্ট, ১৮৯২ তারিখে স্পেনের বন্দরনগরী স্যান্তান্দারে যাত্রীবাহী যানবাহনে চড়েন। সেখান থেকে রেলগাড়ীতে চড়ে মাদ্রিদে যান। নিয়মিতভাবে যে সকল কবির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন, তারা হলেন - গাস্পার নানেজ ডে আর্ক, হোস জরিলা ও সালভাদর রুয়েদা; ঔপন্যাসিক জুয়ান ভালেরা ও এমিলিয়া পার্দো বাজান; শিক্ষাবিদ মার্সেলিনো মেনেন্দেজ পেলাও এবং বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এমিলিও কাস্তেলার ও অ্যান্টোনিও কানোভাস ডেল কাস্তিলো প্রমূখ। নভেম্বরে নিকারাগুয়ায় ফিরে আসেন। স্যান সালভাদর থেকে টেলিগ্রামে জানতে পারেন যে, তাঁর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। ২৩ জানুয়ারি, ১৮৯৩ তারিখে তাঁর স্ত্রীর দেহাবসান হয়।

১৮৯৩ সালের শুরুতে রুবেন ম্যানাগুয়ায় অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি রোজারিও মুরিলো নাম্নী এক রমণীর সাথে প্রণয় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অতঃপর তাঁর পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে জোরপূর্বক বিয়ে করতে বাধ্য করান।[][][]

দেহাবসান

[সম্পাদনা]
১৯১৫ সালে দারিও’র স্থিরচিত্র

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্ত্রী ফ্রান্সিসকা ও দুই পুত্র সন্তানকে ফেলে রেখে দারিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। জানুয়ারি, ১৯১৫ সালে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কবিতাগুলো পড়তে শুরু করেন। ১৯১৫ সালের শেষদিকে নিকারাগুয়ায় ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর কূটনৈতিক পদ থেকে ইস্তফা দেন ও প্যারিসে চলে যান। সেখানে তিনি কান্তো এ লা আর্জেন্টিনা’র ন্যায় নতুন বইগুলো রচনায় মনোনিবেশ ঘটান। ঐ সময়ে তাঁর মাত্রাতিরিক্ত মধ্যপান ঘন ঘন স্বাস্থ্য সমস্যায় ফেলে ও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর জীবনের শেষদিকের বছরগুলোয় স্বাস্থ্যের অবনতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬ তারিখে লিওনে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। তাঁর শবানুষ্ঠান বেশ কিছুদিন ধরে চলে। তাঁর দেহ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৬ তারিখে শহরের গীর্জায় সমাহিত করা হয়।

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

ইংরেজি:

  • Poet-errant: a biography of Rubén Darío/Charles Dunton Watland., 1965
  • Rubén Darío centennial studies/Miguel Gonzalez-Gerth, 1970
  • Critical approaches to Rubén Darío/Keith Ellis, 1974
  • "Rubén Darío and the romantic search for unity"/Cathy Login Jrade., 1983[১০]
  • Beyond the glitter: the language of gems in modernista writers/Rosemary C. LoDato, 1999
  • An art alienated from itself: studies in Spanish American modernism/Priscilla Pearsall, 1984
  • Modernism, Rubén Darío, and the poetics of despair/Alberto Acereda, 2004
  • Darío, Borges, Neruda and the ancient quarrel between poets and philosophers/Jason Wilson, 2000
  • The meaning and function of music in Ruben Dario a comparative approach/Raymond Skyrme, 1969
  • Selected Poems of Rubén Darío/Lysander Kemp, trans., 1965. ISBN 000-0-000-00000-0
  • 'Four Melancholic Songs by Rubén Darío', Cordite Poetry Review, 2013

স্পেনীয়:

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. http://science.jrank.org/pages/10258/Modernism-Latin-America-Origin-Modernism-in-Latin-America.html "It was in the late 1880s that the celebrated Nicaraguan poet Rubén Darío (1867–1916) first published the term modernism (or modernismo in Spanish). The earliest known appearance in print worldwide of this term was in 1888 in Darío's essay "La literatura en Centroámerica" (Revista de arte y cultural, Santiago, Chile)
  2. Autobiografía. Oro de Mallorca, Introducción de Antonio Piedra (Spanish ভাষায়)। Madrid: Mondadori। ১৯৯০। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 84-397-1711-3 
  3. Among the books he mentions reading are Don Quijote, the Bible and works by Leandro Fernández de Moratín (ref. Rubén Darío, op. cit., p. 5)
  4. Fernández, Teodosio: Rubén Darío. Colección "Protagonistas de América" (Spanish ভাষায়)। Madrid: Historia 16 Quórum। ১৯৮৭। পৃষ্ঠা 10। আইএসবিএন 84-7679-082-1 
  5. Rubén Darío, op. cit., p. 18
  6. Francisco Gavidia's influence on Darío was decisive since it was him who introduced Darío to French poetry. The Nicaraguan wrote, in Historia de mis libros:

    Años atrás, en Centroamérica, en la ciudad de San Salvador, y en compañía del poeta Francisco Gavidia, mi espíritu adolescente había explorado la inmensa salva de Víctor Hugo y había contemplado su océano divino en donde todo se contiene... (English: Years ago, in Central America, in the city of San Salvador, and in the company of the poet Francisco Gavidia, my adolescent spirit had explored the immense promise of Victor Hugo and had contemplated his divine ocean where everything is contained...)

  7. His biographer, Edelberto Torres, narrates the events in the following way:

    It is Rosario's brother, a man completely lacking in scruples, Andrés Murillo; he knows his sister's intimate drama, which rendered her incapable of marrying any punctilious gentleman. Furthermore, Rosario's 'case' has become public knowledge, so Andres conceives a plan to marry his sister with Darío. He knows the poet's spineless character, and the state of apathy to which he is reduced under the influence of alcohol. He informs his plan to his sister and she accepts. At dawn of some ill-fated day, Rubén has innocently and honestly given himself to the amorous flirts with Rosario, in a house located in front of the lake. Suddenly, Andrés, who pulls out a revolver and with insolent words threatens Darío with death if he does not marry his sister. The poet, confused and scared, accepts. Since everything is prepared, a priest arrives at the house of Francisco Solórzano Lacayo, one of Andrés' brothers in law: who has made sure Rubén had plenty of whiskey and in this drunken state he proceeds to the religious marriage, the only type allowed in Nicaragua, on March 8, 1893. The poet has no idea about the 'yes' he has uttered. His senses are completely dulled, and when he wakes up the next morning and regains consciousness, he is in his conjugal bed with Rosario, under the same blanket. He does not protest or complain; but he realizes that he has been the victim of a perfidy, and that this event would go down as a burden of disgrace during his lifetime.

  8. ""Cronología""। ২৯ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৬ 
  9. "Dariana"। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৬ 
  10. 1949-, Jrade, Cathy Login, (১ জানুয়ারি ১৯৮৩)। "Rubén Darío and the romantic search for unity: the modernist recourse to esoteric tradition"। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৬ 
  • Acereda, Alberto and Rigoberto Guevara. "Modernism, Rubén Darío, and the Poetics of Despair".
  • Orringer, Nelson R. (2002) "Introduction to Hispanic Modernisms", Bulletin of Spanish Studies LXXIX: 133–148.
  • Ramos, Julio (2001) Divergent Modernities: Culture and Politics in Nineteenth-Century Latin America trans. John D. Blanco, Duke University Press, Durham, NC, আইএসবিএন ০-৮২২৩-১৯৮১-০
  • Mapes, Edwin K. (1925) L'influence française dans l'oeuvre of Rubén Darío Paris, republished in 1966 by Comisión Nacional para la Celebración del Centenario del Nacimiento de Rubén Darío, Managua, Nicaragua OCLC 54179225
  • Rivera-Rodas, Oscar (1989) "El discurso modernista y la dialéctica del erotismo y la castidad" Revista Iberoamericana 146–147: 45–62
  • Rivera-Rodas, Oscar (2000) "'La crisis referencial' y la modernidad hispanoamericana" Hispania 83(4): 779–90
  • Schulman, Iván A. (1969) "Reflexiones en torno a la definición del modernismo" In Schulman, Iván A. and Gonzalez, Manuel Pedro (1969) OCLC 304168 Martí, Darío y el modernismo Editorial Gredos, Madrid
  • Ward, Thomas (1989) "El pensamiento religioso de Rubén Darío: Un estudio de Prosas profanas y Cantos de vida y esperanza" Revista Iberoamericana 55: 363–375.
  • Ward, Thomas (2002) "Los posibles caminos de Nietzsche en el modernismo" Nueva Revista de Filología Hispánica. 50(2): 489–515.
  • Crow, John A. The Epic of Latin America. London England, University of California Press: 1992.
  • Skidmore, Thomas E. & Smith, Peter H. Modern Latin America. New York, Oxford University Press: 2005.

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
  • Fiore, Dolores Ackel. Rubén Darío in Search of Inspiration: Graeco-Roman Mythology in His Stories and Poetry. New York: La Amėricas Publishing Co., 1963.
  • Morrow, John Andrew. Amerindian Elements in the Poetry of Rubén Darío: The Alter Ego as the Indigenous Other." Lewiston: Edwin Mellen Press, 2008.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]