রসগোল্লা দিবস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রসগোল্লা দিবস হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষণা অনুসারে প্রতি বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ১৪ নভেম্বর পালিত একটি দিবস।[১] চিনি অথবা গুড় দিয়ে তৈরি নরম তুলতুলে ছানার বল রসগোল্লা বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে বাগবাজারের নবীন ময়রার আবিষ্কৃত 'রসে' আর 'গোল্লা'র বিশেষত্বে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী 'স্পঞ্জ রসগোল্লা' তথা বাংলার রসগোল্লা ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব-পরিচয়ে স্থান লাভ করেছে। বাংলার রসগোল্লার সেই পরিচয়ের ভৌগোলিক নির্দেশক বা 'জিআই' তথা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবেদনক্রমে মেলে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বরে।[২]

২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর বাংলার অত্যন্ত জনপ্রিয় ছানার তৈরি মিষ্টান্ন রসগোল্লা , বাংলার রসগোল্লা নামে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই ট্যাগ (সার্টিফিকেট নম্বর ৩০৩) লাভ করে। অর্থাৎ ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন অফ গুডস (রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, অনুসারে 'বাংলার রসগোল্লা' ভারতের ভৌগলিক নিদর্শনগুলির তালিকাভুক্ত হয়।[৩][৪] স্বীকৃতি প্রাপ্তির প্রথমবর্ষ পূর্তিতে অর্থাৎ ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ সরকার 'বাংলার রসগোল্লা' র প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিকে সম্মান দিতে রাজ্যজুড়ে রসগোল্লা দিবস পালনের ঘোষণা করে।[৫] অন্যদিকে আশ্চর্যজনক ভাবে ১৪ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস দিবস পালিত হলেও, মধুমেহ রোগের সমস্ত বাধানিষেধ দূরে রেখে বাংলা ও বাঙালি ১৪ নভেম্বর আস্বাদন করে রসগোল্লার সুমিষ্ট স্বাদ।[৬] রসগোল্লা দিবস পালনের জন্য রাজ্যের সমস্ত মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান নানা আয়োজন করে থাকে।

জিআই প্রাপ্তির ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাই স্থিত ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফিসে রসগোল্লার জন্য জিআই ট্যাগের আবেদন করে। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশার সঙ্গে সংঘাতের শুরু হয় তখনই। তারা বিরোধিতা করে দাবি করে, বহু প্রাচীনকাল থেকে (৬০০ বৎসর পূর্বে দ্বাদশ শতাব্দীতে পুরীতে) জগন্নাথ দেবের ভোগে রসগোল্লা নিবেদন করা হয়। তাই তারাও নিজেদেরকে রসগোল্লার জিআই ট্যাগের দাবিদার হিসাবে লড়াইয়ে নামে। শুরু হয়ে যায় প্রকৃত তথ্য তথা রসগোল্লার জন্মবৃত্তান্ত সন্ধানের খোঁজ। ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে রন্ধনশালা তথা প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ পেশ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প ও উদ্যানপালন বিভাগ। ওড়িশাও পেশ করেন নিজের স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণ। ভারত সরকারের তরফে গড়া বিশেষজ্ঞ কমিটি সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে দীর্ঘ আড়াই বছর পর অবশেষে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর বাংলাকেই রসগোল্লা জন্মস্থান হিসাবে ঘোষণা করে। বাংলার রসগোল্লা নামে জিআই ট্যাগ লাভ করে পশ্চিমবঙ্গ।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মিষ্টির মালিকানা নিয়ে ওডিশা-বাংলার তুমুল লড়াই, তারপর...! 'রসগোল্লা দিবস'- এ জানুন গৌরবের ইতিহাস"। এই সময়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৩ 
  2. "রসগোল্লা পেয়ে জিতে গেল বাংলা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৪ 
  3. "Now that the jury is out, here's a brief history of rasogolla" (ইংরেজি ভাষায়)। ইকোনমিক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৩ 
  4. "West Bengal to Observe 'Rosogolla Day' On November 14"। এনডিটিভি। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৩ 
  5. "West Bengal to observe 'Rosogolla Day' on Nov.14" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য হিন্দু। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৩ 
  6. "Rosogolla Day: জিআই স্বীকৃতির পাঁচে পা, বাংলায় পালিত রসগোল্লা দিবস"। এবিপি। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-০৪