রবিনসন ক্রুসো
লেখক | ড্যানিয়েল ডিফো |
---|---|
অঙ্কনশিল্পী | অজ্ঞাত |
দেশ | ইংল্যান্ড |
ভাষা | ইংরেজি |
ধরন | উপন্যাস |
প্রকাশক | ডব্লিউ. টেলর |
প্রকাশনার তারিখ | ২৫ এপ্রিল, ১৭১৯ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ |
পরবর্তী বই | দ্য ফারদার অ্যাডভেঞ্চারস অফ রবিনসন ক্রুসো |
রবিনসন ক্রুসো (ইংরেজি: Robinson Crusoe) ড্যানিয়েল ডিফো রচিত একটি উপন্যাস। ১৭১৯ সালে এই উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসখানি রবিনসন ক্রুসো নামে এক ভগ্নপোত ব্যক্তির কাল্পনিক আত্মজীবনীর আকারে রচিত। এই ব্যক্তি ভেনেজুয়েলার কাছে একটি নির্জন বিষুবীয় দ্বীপে ২৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করেন। এই সময় আমেরিকার উপজাতীয়, বন্দী ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে তার সংঘর্ষও হয়। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।
ঔপন্যাসিক সম্ভবত আলেকজান্ডার সেলকার্ক নামে এক স্কটিশ ভগ্নপোত ব্যক্তির জীবনের একটি বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই উপন্যাস রচনা করেছিলেন। সেলকার্ক চিলির ম্যাস আ টিয়েরা ("Más a Tierra") (১৯৬৬ সালে এই দ্বীপের নাম বদলে রবিনসন ক্রুসো দ্বীপ রাখা হয়) নামে একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে চার বছর অবস্থান করেছিলেন। যদিও ক্রুসোর দ্বীপটির বিবরণ সম্ভবত ক্যারিবিয়ান টোবাগো দ্বীপের বর্ণনা অনুযায়ী লেখা হয়। কারণ উক্ত দ্বীপটি ওরিনোকো নদীর মোহনার কাছে ভেনেজুয়েলান উপকূলের কিছুটা উত্তরে এবং ত্রিনিদাদ দ্বীপের নিকটে অবস্থিত।[১] এও মনে করা হয় যে, ডিফো ইবন ইয়ুফাইল রচিত হ্যায় ইবন ইয়াকধান নামক উপন্যাসটির ইংরেজি ও লাতিন অনুবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই উপন্যাসটি একটি নির্জন দ্বীপের পটভূমিকায় লেখা হয়েছিল।[২][৩][৪][৫] টিম সেভেরিন তার ২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘’’ইন সার্চ অফ রবিনসন ক্রুসো’’’ বইতে বিতর্ক করে বলেন যে, হেনরি পিটম্যান তার ঘটনাপঞ্জীর ছোট বইতে ক্যারিবিয়ান বন্দি শিবির থেকে তার পলায়ন এবং পরবর্তি জাহাজ ডুবি ও নির্জন দ্বীপের দূর্ঘটনার যে বর্ণনা দেন তাই এই গল্পের অনুপ্রেরণা। আর্থার ওয়েলেসলি সেকর্ড তার স্টাডিজ ইন দ্য ন্যারেটিভ মেথড অফ ডিফো (১৯৬৩: ২১-১১১)-তে যত্নশীলভাবে রবিনসন ক্রুসো রচনার একটি সম্ভাব্য উৎসের তালিকা প্রদান করেন যেটিতে তিনি সেলকার্ক যে ডিফোর একমাত্র উৎস এই পরিচিত তত্ত্ব অস্বীকার করেন।
সাধারণ বর্ণনা শৈলী থাকা সত্ত্বেও রবিনসন ক্রুসো সাহিত্য জগতে সমাদৃত হয় এবং প্রায়ই সাহিত্য ধারায় Realistic Fiction এর সূচনায় এটিকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। ১৭১৯ সাল সমাপ্তির পূর্বেই এই বইয়ের চারটি সংস্করণ শেষ হয় এবং এটি ইতিহাসে বহুল প্রকাশিত বইয়ের একটি। এই বইয়ের কাহিনী উপজীব্য করে অসংখ্য মঞ্চ, চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন কর্মসূচি করা হয়।
কাহিনী সংক্ষেপ
[সম্পাদনা]রবিনসন ক্রুসো ইংল্যান্ডের অধিবাসী ছিলেন। ক্রুসো ১৬৫১ সালের আগস্ট মাসে হালের (Hull) কুইন্স ডক থেকে সমুদ্র যাত্রা শুরু করে। এটি সে করে তার মাতা-পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, তারা চেয়েছিলো যে ক্রুসো কোন পেশায় নিযুক্ত হোক, সম্ভবত আইন পেশা। প্রথম যাত্রায় ঝড়ের কবলে পড়ে তার জাহাজ ধ্বংস হয়, তা সত্ত্বেও তার সমুদ্র যাত্রার আকাঙ্ক্ষা আগের মতই শক্তিশালী থাকে যার ফলশ্রুতিতে সে আবারও সমুদ্র যাত্রা করে। তার এই যাত্রাও দূর্যোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় কারণ তার জাহাজটি স্যালি (Salé) জলদস্যুরা তাদের নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয় এবং ক্রুসো একজন মুরের দাসে পরিণত হয়। দুই বছর পরে ক্রুসো একটি নৌকা নিয়ে জুরি নামের এক বালককে নিয়ে সেখান থেকে পালায়। পর্তূগীজ জাহাজের একজন ক্যাপ্টেন ক্রুসো এবং ঐ বালককে উদ্ধার করেন যে কিনা আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের দূরে ছিলেন। ঐ জাহাজটি ব্রাজিল যাচ্ছিলো। ক্যাপ্টেনের সাহায্যে ক্রুসো সেখানে গিয়ে আবাদ করার সুযোগ পায়।
কয়েক বছর পরে ক্রুসো আফ্রিকা থেকে দাস আনার জন্য একটি অভিযানে যান কিন্তু পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পরে তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি সমুদ্র থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি দ্বীপে আশ্রয় নেন যেটি অরিনোকো নদীর মুখের কাছেই অবস্থিত। ক্রুসো দ্বীপটিকে আইল্যান্ড অফ ডেসপেয়ার (Island of Despair) নামে ডাকেন। ক্রুসোর বর্ণনাকৃত দ্বীপটি সম্ভবত টোবাগোর ক্যারিবিয়ান দ্বীপের উপর ভিত্তি করে বলা, যেহেতু ত্রিনিদাদ থেকে ঐ দ্বীপটি অল্প উত্তরে ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অরিনোকো নদীমুখের কাছে অবস্থিত। সে উত্তর অক্ষাংশ ৯ ডিগ্রী ২২ মিনিট পর্যবেক্ষণ করেন। সে ঐ দ্বীপে পেঙ্গুইন এবং সীল দেখেন। সে ছাড়া বাকী আর তিনটি প্রাণী ঐ দ্বীপে তার সাথে জীবিত রয়েছে- একটি হচ্ছে ক্যাপ্টেনের কুকুর এবং অন্য দুইটি বিড়াল। ক্রুসো তার হতাশাকে জয় করে ভাঙ্গা জাহাজ থেকে অস্ত্র, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য দরকারি জিনিস নিয়ে আসেন এটি ডুবে যাওয়ার পূর্বে। সে একটি গুহার কাছে বেড়া দিয়ে তার বাসস্থান তৈরি করে। কাঠের ক্রসের উপর চিহ্ন দিয়ে সে ক্যালন্ডার তৈরি করেন। যেসব যন্ত্রপাতি সে জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছিলো সেগুলো এবং কিছু সে নিজে লোহাকাঠ দিয়ে তৈরি করেছিলো সেগুলি দিয়ে সে শিকার শুরু করে, বার্লি এবং ধান উৎপাদন করেন, আঙ্গুর থেকে কিসমিস, মাটির জিনিস পত্র তৈরির কৌশল রপ্ত করেন এবং ছাগল পালন করেন। সে একটি তোতা পাখিও পুষেন। সে বাইবেল পড়তে শুরু করে এবং ধার্মিক হয়। সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় সব কিছু পাবার জন্য যদিও সে মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।
আরও কিছু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ক্রুসো স্থানীয় নরখাদকের দেখা পায়, যারা মাঝেমধ্যে এই দ্বীপে আসে বন্দীদের হত্যা করে খাওয়ার জন্য। সে প্রথমে পরিকল্পনা করে যে সে তাদেরকে হত্যা করবে এই ধরনের জঘন্য কাজ করার জন্য। কিন্তু পরে সে বুঝে যে তাদেরকে হত্যা করার কোন অধিকার তার নেই যেহেতু তারা জেনে এই কাজ গুলো করছে না। সে কল্পনা করে যে, একজন অথবা দুইজন বন্দী নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে তার চাকর বানাতে। যখন সে দেখে যে একজন বন্দী তাদের কাছ থেকে পালিয়েছে, সে ঐ পলায়নকৃত লোককে সাহায্য করে এবং নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। ক্রুসো তাকে শুক্রবারে পায় বলে তার নাম রাখে ফ্রাইডে। ক্রুসো তারপর তাকে ইংরেজি শেখায় এবং খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। পরবর্তীতে যখন আরও স্থানীয় নরখাদক তাদের ঐ ভোজ উৎসব করতে আসে তখন ক্রুসো এবং ফ্রাইডে দুইজন মিলে নরখাদকদের বেশিরভাগকে হত্যা করে এবং আরও দুইজন বন্দীকে রক্ষা করে। তাদের একজন ফ্রাইডের বাবা এবং অপরজন একজন স্পেনীয় নাবিক, যিনি ক্রুসোকে জানান যে আরও একটি স্পেনীয় জাহাজ প্রধান ভুমিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তার পর তারা একটি পরিকল্পনা করেন এইভাবে যে, স্পেনীয় নাবিক এবং ফ্রাইডে’র বাবা জাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঐ প্রধানভূমিতে যাবে এবং অন্য যারা আছে তাদের ফেরত এনে একটি জাহাজ তৈরি করে তারা সবাই মিলে স্পেন বন্দরের দিকে রওনা করবে।
স্পেনীয়রা (যাদেরকে আনতে যাওয়া হয়েছে) ফিরে আসার পূর্বেই একটি ইংরেজ জাহাজ আবির্ভাব হয়; এই জাহাজের বিদ্রোহীরা ঐ জাহাজটিকে নির্দেশ দিয়ে চাল্লাচ্ছে এবং বিদ্রোহীরা অভিপ্রায় করে যে তারা তাদের ক্যাপ্টেনকে এই দ্বীপে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রেখে যাবে ফলে পুরো জাহাজ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ক্রুসো এবং ঐ ইংরেজ ক্যাপ্টেন তার জাহাজের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ফিরে পাবার জন্য একটি চুক্তি করে। তারপর ক্রুসো, ক্যাপ্টেন এবং ঐ ইংরেজ জাহাজের বিশ্বস্ত নাবিকেরা মিলে জাহাজটি তাদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন এবং দুষ্ট ঐ বিদ্রোহীদের দ্বীপে রেখে যায়। ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার পূর্বে ক্রুসো বিদ্রোহী নাবিকদের দেখান যে কীভাবে সে একাকী এই দ্বীপে টিকে ছিলো এবং বলে যান যে, আরও লোক এই দ্বীপে আসতে থাকবে। ক্রুসো ১৯শে ডিসেম্বর ১৬৮৬ সালে তার দ্বীপ ত্যাগ করেন এবং ১১ই জুন ১৬৮৭ সালে ইংল্যান্ডে পৌছায়। সে ফিরে এসে জানতে পারে যে তার পরিবার মনে করেছে যে সে মারা গেছে। ফলে তার বাবা উইলে তার জন্য কিছুই রেখে যাননি। ক্রুসো তারপর লিসবনে যান ব্রাজিলে তার এস্টেটের মুনাফা ফিরে পেতে এবং সেখান থেকে সে প্রচুর সম্পদ লাভ করেন। অবশেষে সে তার সম্পদ নিয়ে স্থল পথে আসেন সমুদ্র পরিহার করার জন্য। ফ্রাইডে তার সাথে ছিলো এবং পথিমধ্যে তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ের সাথে শেষ একটি দুঃসাহসিক যুদ্ধের সম্মুখীন হয় যখন তারা পায়ারনিস (Pyrenees) পার হচ্ছিলো।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Robinson Crusoe, Chapter 23.
- ↑ Nawal Muhammad Hassan (1980), Hayy bin Yaqzan and Robinson Crusoe: A study of an early Arabic impact on English literature, Al-Rashid House for Publication.
- ↑ Cyril Glasse (2001), New Encyclopedia of Islam, p. 202, Rowman Altamira, আইএসবিএন ০-৭৫৯১-০১৯০-৬.
- ↑ Amber Haque (2004), "Psychology from Islamic Perspective: Contributions of Early Muslim Scholars and Challenges to Contemporary Muslim Psychologists", Journal of Religion and Health 43 (4): 357-377 [369].
- ↑ Martin Wainwright, Desert island scripts, The Guardian, 22 March 2003.
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |