মেলিয়া (অ্যাপোলোর সঙ্গী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রাচীন গ্রিক ধর্মপুরাণে মেলিয়া (ইংরেজি: Melia, প্রাচীন গ্রিক: Μελία) হচ্ছেন টাইটান ওশেনাসের একজন কন্যা, অ্যাপোলোর সঙ্গী, এবং অ্যাপোলোর দ্বারা থিবীয় বীর ও দেবদূত টেনেরাস এর মাতা । তিনি একই সাথে থিবীয় নদী ইসমেনাস এর দেবতা ইসমেনাস এর মা (বা বোন) ছিলেন। মেলিয়া থিব্‌সের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাল্ট চরিত্র ছিলেন। তাকে থিব্‌সের এপোলোর মন্দির ইসমেনিয়নে পূজা করা হত, এবং নিকটস্থ একটি ঝরনার সাথে তাকে সম্পর্কিত করা হত।

পুরাণ[সম্পাদনা]

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ট শতকের শেষ দিক ও ৫ম শতকের প্রথম দিকের থিবীয় কবি পিন্ডার বলেন, মেলিয়া হচ্ছেন ওশেনাস এর কন্যা, এবং অ্যাপোলো এর দ্বারা থিবীয় বীর ও দেবদূৎ টেনেরাস এর মাতা।[১] এছাড়া তিনি মেলিয়া অফ দ্য গোল্ডেন স্পিন্ডল নামে পরিচিত।[২] খ্রিস্টীয় ২য় শতকের কবি পসানিয়াস মেলিয়া সম্পর্কিত আরও পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেন।[৩] তিনি বলেন, মেলিয়া অপহৃত হন, এবং মেলিয়ার বাবা ওশেনাস তার পুত্র ক্যান্থাসকে তার খোঁজ করার নির্দেশ দেন। থিব্‌সে অ্যাপোলো-এর দ্বারা ধৃত অবস্থায় মেলিয়া-কে খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যান্থাস অ্যাপোলোর কাছ থেকে মেলিয়াকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে অ্যাপোলোর স্যাঙ্কচুয়ারিতে আগুন লাগান। তাতে অ্যাপোলো রেগে গিয়ে ক্যান্থাসকে তীর ছুড়ে হত্যা করেন। পসানিয়াসের মতে, টেনেরাস (যাকে অ্যাপোলো স্বর্গীয়তার শিল্প দান করেছিলেন) ছাড়াও মেলিয়া ও অ্যাপোলোর ইসমেনাস নামে আরেক পুত্র ছিল, যার নামে থিব্‌সের নদী ইসমেনাসের নামকরণ করা হয়।[৪] পসানিয়াসের লেখা মেলিয়া এবং ক্যান্থাসের-এর গল্প, ইউরোপা আর ক্যাডামস-এর আরও বিখ্যাত গল্পটির প্রায় সমান্তরাল, যেখানে ক্যাডমাস থিব্‌সেরই প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাজা। মেলিয়ার মত, ইউরোপা একজন অলিম্পীয় দেবতার দ্বারা অপহৃত হয় (এই ক্ষেত্রে জিউস), এবং তার ভাই ক্যাডমাসকে তার বাবা নির্দেশ দেন ইউরোপাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য, যিনি ক্যান্থাসের মতই ব্যর্থ হন।[৫] ফন্টেনরোজের মতে থিবীয় মেলিয়া ও ইউরোপার মধ্যে আরও মিল রয়েছে।[৬] মেলিয়ার মত ইউরোপাও একজন ওশেনিড বা ওশেনাস কন্যা।[৭] খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের পৌরাণিক ফেলেসাইডিসের মতে, তার সাধারণ পিতা এজিনরের মেলিয়া নামে একজন কন্যা ছিল যার সাথে দানাউসের বিবাহ হয়।[৮] আবার পৌরাণিক অ্যাপোলোডোরাসের মতে, দানাউসের স্ত্রীদের একজনের নাম ছিল ইউরোপা।[৯] মেলিয়ার গল্পের অন্য সংস্করণও আছে।[১০] কিছু কিছু ঐতিহ্য অনুসারে থিবীয় মেলিয়া আর ইসমেনাস ভাইবোন, মাতা-পুত্র নন। পিন্ডারের একটি ভাষ্য অনুসারে ইসমেনাস হল মেলিয়ার ভাই।[১১] অক্সিরিংকাস প্যাপিরি অনুসারে, থিব্‌সে প্রথম ভ্রাতৃহত্যা ঘটে যখন মেলিয়ার দুই ভাই ইসমেনাস ও ক্ল্যাটিয়াস (ক্যান্থাস নামের বিকৃত রূপ?) একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে।[১২]

মেলিয়ার গল্পের আরেকটি সংস্করণ থিবীয় এম্ফিয়নের সাথে সম্পর্কিত।[১০] ফেরেসাইডিস বলেন, মেলিয়া ছিলেন থিব্‌সরাজ অ্যাম্ফিয়ন ও তার স্ত্রী ট্যান্টালাসকন্যা নাইওবীর একজন কন্যা।[১৩] পরবর্তী উৎস্যগুলো থেকে জানা যায়, তাদের এক পুত্রের নাম ইসমেনাস ছিল।[১৪] ক্যান্থাসের মত অ্যাম্ফিয়নকেও অ্যাপোলো তীর ছুড়ে হত্যা করেন, কারণ তিনিও তার মন্দিরে আক্রমণ করেছিলেন।[১৫]

এদিকে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের কবি ক্যালিমেকাস বলেন, থিব্‌সের মেলিয়া আসলে অশেনাসের কন্যা, আর পৃথিবীতে জন্মানো এক মেলিয়াই নিম্ফ। হেসিয়ডের মতে মেলিয়াইরা হল অ্যাশ বৃক্ষ নিম্ফ। ক্রোনাস যখন পিতা ইউরেনাস (আকাশ)-কে ক্যাস্ট্রেট করে, তখন তার রক্ত গাইয়া বা পৃথিবীতে পড়ার ফলে যেমন দৈত্যইরিনিদের জন্ম হয়, তেমনি মেলিয়াই নিম্ফদেরও জন্ম হয়।[১৬]

পৌরাণিক অ্যাপোলোডোরাসের মতেও মেলিয়া ওসেনাসের কন্যা। আর ভাই ও নদী দেবতা ইনাকাসের সাথে সঙ্গমে তার ফোরোনিয়াসঈগিয়ালিয়াস নামে পুত্রও ছিল।[১৭]

কাল্ট[সম্পাদনা]

থিব্‌সে অ্যাপোলোর প্রধান স্যাংকচুয়ারি ইসমেনিয়নের কাল্ট উপাসনার একটি প্রধান বিষয় ছিল মেলিয়া।[১৮] পিন্ডার তার শেষ তিনটি আলাদা আলাদা কবিতায় মেলিয়ার সাথে থিব্‌সের স্যাংকচুয়ারির সম্পর্কের কথা বলেছেন। একটিতে তিনি ইসমেনিয়নের কথা এবং মেলিয়ার ওশেনাসকন্যা হবার কথা উল্লেখ করেন।[১৯] আরেকটিতে তিনি বলেন, স্থানীয় নায়িকারা - ক্যাডমাসকন্যা সেমিলি, ইনো বা লিউকোথিয়া, হেরাক্লেসের মা আল্কমিনি মেলিয়ার সাথে স্বর্ণের ত্রিপদীর কোষাগার, অর্থাৎ এডাইটনে যুক্ত হয়।[২০] গ্রিক বা রোমান মন্দিরের সুরক্ষিত স্থান, যেখানে কোষাগার থাকে, তাকে এডাইটন বা এডাইটাম বলা হয়। ইসমেনিয়ন স্যাংকচুয়ারির মধ্যকার এডিটনেই সেই কোষাগারটি ছিল, যেখানে সেই ভক্তিমূলক ত্রিপদীটি দান উৎসর্গ করা হয়েছিল।[২১] পিন্ডার বলেন, সেই স্থানে মেলিয়ার অমর শয্যা [λέχει] রয়েছে,[২২] সেই সাথে তার শিশু-বিছানা রয়েছে যেখানে তিনি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।[২৩] ইসমেনিয়নের নিকটস্থ একটি ঝড়নাকে মেলিয়ার সাথে চিহ্নিত করা হয়, যা ইসমেনাস নদীর উৎস্য। এই ঝড়নাটির কথাই পসানিয়াস উল্লেখ করেছিলেন, যেখানে মেলিয়ার ভাই ক্যান্থাসকে সমাধিস্থ করা হয়।[২৪]

থিবীয়গণ মনে করেন তারা অ্যাপোলো ও মেলিয়া এর বংশদ্ভূত, বীর টেনেরাস ও ইসমেনাস হয়ে তাদের বংশানু থিবীয়দের মধ্যে বাহিত হয়েছে। লারসনের মতে, অ্যাপোলোর মত একজন সার্বজনীন গ্রিক দেবতার উত্তরাধিকত্ব তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে, এবং তারা অন্যান্য গ্রিকদের সাথে নিজেদেরকে সম্পর্কিত বলে মনে করে। অন্যদিকে নিম্ফ মেলিয়ার উত্তরাধিকার তাদেরকে স্থানীয় পরিবেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সাহায্য করে।[২৫]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Larson, pp. 40–41, 142; Pindar, Paean 9 fr. 52k 34–46 (Race 1997b, pp. 292–295; Rutherford, pp. 191–192); also Strabo, 9.2.34, which says that the "Teneric Plain" was named after Tenerus the son of Melia and Apollo.
  2. Pindar, fr. 29 1 (Race 1997b, pp. 232, 233).
  3. Larson, p. 142; Schachter 1967, p. 4; Fontenrose pp. 317–318; Pausanias, 9.10.5, 6, 9.26.1.
  4. Pausanias, 9.10.6; c.f. Pindar, fr. 29 1 (Race 1997b, pp. 232, 233). For the Theban Ismenus river, see Berman, p. 18.
  5. Larson, p. 142, describes the story as "clearly a doublet of the better-known myth" of Cadmus and Europa; Schachter 1967, p. 4, calls Melia's story an "imitation" of the story of Cadmus and Europa; see also Schachter 1981, p. 79; Fontenrose, p. 318. Compare with the story of the Theban Amphion (see below).
  6. Fontenrose, p. 318.
  7. Hesiod, Theogony 357; Andron of Halicarnassus fr. 7 Fowler = FGrHist 10 F 7 (Fowler 2013, p. 13).
  8. Gantz, p. 208; Pherecydes fr. 21 Fowler 2000, p. 289 = FGrHist 3 F 21 = Scholia on Apollonius RhodiusArgonautica 3.1177-87f.
  9. Apollodorus, 2.1.5.
  10. Schachter 1967, p. 4.
  11. Larson, p. 304 n. 57; Fontenrose, p. 319; Scholia on Pindar, Pythian 11.5–6 (Drachmann, pp. 254–255).
  12. Schachter 1967, p. 4; Fontenrose, p. 319; Oxyrhynchus Papyri X 1241.4.5–10 (Grenfell and Hunt, pp. 104: Greek text, 109: translation, 110: commentary).
  13. Fowler 2013, p. 367; Schachter 1967, p. 4; Pherecydes fr. 126 Fowler 2000, p. 342 = FGrHist 3 F 126 = Scholia on Euripides, Phoenician Women 159.
  14. Schechter 1967, p. 4; Apollodorus, 3.5.6; Ovid, Metamorphoses 6.221–224; Hyginus, Fabulae 11 (Smith and Trzaskoma, p. 100).
  15. Hyginus, Fabulae 9 (Smith and Trzaskoma, p. 99).
  16. Larson, p. 142; Callimachus, Hymn 4—To Delos 79–85 with note i; Hesiod, Theogony 187.
  17. Grimal, s.v. Melia 2, p. 281; Apollodorus, 2.1.1.
  18. Larson, p. 142; Berman, pp. 64, 124; Schachter 1967, p. 5, which calls her an "important component of the cult complex" at the Ismenion; for the Ismenion, and the cult of Melia, see Schachter 1981, pp. 77–88 (Melia: p. 78); Schachter 1967, pp. 3–5.
  19. Pindar, Paean 7 fr. 52g (Race 1997b, pp. 278, 279 ; Rutherford, p. 339).
  20. Larson, p. 142; Rutherford, p. 341; Pindar, Pythian 11.4–6 (Race 1997a, pp. 380, 381); c.f. Herodotus, 1.52.
  21. Schachter 2016, p. 267, which further supposes that Melia would have had a cult image, perhaps made of ash wood; see also Schachter 1981, pp. 82–83; Schachter 1967, p. 5.
  22. Pindar, Paean 9 fr. 52k 35 (Race 1997b, pp. 292–293; Rutherford, p. 191).
  23. Berman, p. 64; Rutherford, pp. 196, 341.
  24. Larson, p. 142; Schachter 1967, p. 5 with note 30; Fontenrose, p. 318; Scholia on Pindar Pythian 11.6 (Drachmann, p. 255), which says the spring had the same name as the "heroine" Melia, daughter of Oceanus; Pausanias, 9.10.5.
  25. Larson, pp. 40–41.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]