মুহাম্মাদের সম্পত্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইসলামের নবী মুহাম্মদ এর ব্যবহৃত বস্তুসমূহ, যেমন অস্ত্র, বর্ম এবং পোশাক, তাঁর সম্পত্তি হিসেবে পরিচিত - এগুলোর মধ্যে কয়েকটির স্বতন্ত্র নাম রয়েছে। মুহাম্মদ এর সাথে এই বস্তুগুলোর সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, কারণ দীর্ঘ যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে এগুলোর অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে।

অস্ত্র[সম্পাদনা]

তলোয়ার[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ এর নয়টি তলোয়ার ছিল: ২টি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত, ৩টি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে এবং বাকিগুলো উপহার হিসেবে প্রাপ্ত। মুহাম্মদ-এর নয়টি তলোয়ারের আটটি তুরস্কের তোপকাপি প্রাসাদে রয়েছে। নবমটি মিশরের কায়রোতে আছে। তবে এই তলোয়ারগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র "যুলফিকার" এর প্রমাণ সহীহ সুন্নাহ থেকে পাওয়া যায়।

  • আল-আদব (আরবি: العَضب): এই তলোয়ারের নামের অর্থ "ক্রোধ" বা "ধারালো"। এই তলোয়ারটি বদরের যুদ্ধের ঠিক আগে তাঁর একজন সাহাবী সা'দ ইবনে উবাদাহ মুহাম্মদ এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। মুহাম্মদ উহুদের যুদ্ধেও এই তলোয়ার ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর অনুসারীরাও এটি ব্যবহার করেছিলেন, বিশেষভাবে একজন সাহাবি সামাক বিন খারশা (যিনি সাধারণত "আবু দুজানাহ" নামে পরিচিত), যারা মুহাম্মদ-এর প্রতি তাদের আনুগত্য, ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি ও স্থিতিশীলতা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে এই তলোয়ারটি মিশরের কায়রোতে অবস্থিত আল-হুসেন মসজিদে সংরক্ষিত।
  • আল-মাথুর (আরবি: المأثُوُر), যা "মাথুর আল-ফিজার" নামেও পরিচিত। এই তলোয়ারটি মুহাম্মদ মক্কায় প্রথম ওহী লাভের আগে থেকেই ব্যবহার করতেন। তাঁর পিতার ইচ্ছানুযায়ী এই তলোয়ারটি তাঁর হাতে আসে। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের সময় মুহাম্মদ এই তলোয়ার সাথে রেখেছিলেন। পরে তা অন্যান্য যুদ্ধের সরঞ্জামের সাথেই আলী ইবনে আবি তালিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাতলসহ তলোয়ারটির দৈর্ঘ্য ৯৫ সেমি, হাতলের দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি, হাতলের কাছে প্রস্থ ৪ সেমি, ফলার দৈর্ঘ্য ৮১ সেমি এবং মুখ ৩.৫ সেমি। হাতলটি সোনার তৈরি এবং দুটি সাপের আকৃতিতে খোদাই করা। এতে পান্না ও ফিরোজা খচিত রয়েছে। হাতলের কাছে একটি শিলালিপিতে লেখা আছে: আবদুল্লাহ ইবনে আবদ আল-মুত্তালিব। এই তলোয়ারটি ইস্তাম্বুলের তোপকাপি জাদুঘরে রাখা হয়েছে।
  • আর-রাসুব (আরবি: الرسَّوب): তলোয়ারটি ইস্তাম্বুলের তোপকাপি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এই তলোয়ারের ফলাটি ১৪০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং এতে সোনার বৃত্ত রয়েছে ।
  • আল-বাত্তার (আরবি: البَتَّار): আল-বাত্তার নামের অর্থ "ছেদনকারী"। বনু কায়নুকার কাছ থেকে মুহাম্মদ এই তলোয়ারটি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসাবে নিয়েছিলেন। এটিকে "নবীদের তলোয়ার" বলা হয়। এই তলোয়ারে আরবিতে দাউদ, সুলাইমান, মুসা, হারুন, যوشুয়া, যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, যীশু, এবং মুহাম্মদ-এর নাম খোদাই করা আছে। এছাড়াও এতে রাজা দাউদের একটি চিত্রও আছে যেখানে তিনি গোলিয়াতের মাথা কেটে ফেলছেন। তলোয়ারটিতে একটি নাবাতিয়ান শিলালিপিও রয়েছে। এই তলোয়ারটির ফলার দৈর্ঘ্য ১০১ সেমি, তলোয়ারটি তামা দিয়ে তৈরি এবং মোড়কটি কালো রঙের। বর্তমানে এটি মুহাম্মদ-এর অন্যান্য আটটি সংরক্ষিত তলোয়ারের সাথে ইস্তাম্বুলের তোপকাপি জাদুঘরে আছে। কারো কারো বিশ্বাস এই তলোয়ারটিই যীশু (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসার পর দাজ্জালকে পরাজিত করতে ব্যবহার করবেন।
  • হাতফ (আরবি: الحتف): এর অর্থ "মৃত্যু"। মুহাম্মদ এই তলোয়ার বনু কায়নুকা থেকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে নিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, কুড়ি বছর বয়সের আগেই রাজা দাউদ যখন গোলিয়াতকে হত্যা করেন তখন তার কাছ থেকে "আল-বাত্তার" তলোয়ারটি লুণ্ঠন হিসেবে পান। আল্লাহ রাজা দাউদকে লোহা দিয়ে কাজ করার, যুদ্ধের জন্য বর্ম ও অস্ত্র তৈরি করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি নিজের জন্য একটি তলোয়ার বানিয়েছিলেন। এভাবেই হাতফ তলোয়ারটি তৈরি হয়েছিল, অবশ্য এটি আল-বাত্তার থেকে আকারে বড় ছিল। তিনি এই তলোয়ার ব্যবহার করতেন এবং পরে ইস্রায়েলীয়দের অস্ত্র রাখার জন্য নিযুক্ত লেভি গোত্রের কাছে তা হস্তান্তরিত হয়। এভাবেই তা মুহাম্মদ এর কাছে আসে। বর্তমানে এই তলোয়ারটি তোপকাপি জাদুঘরে সংরক্ষিত। তলোয়ারটির ফলার দৈর্ঘ্য ১১২ সেমি এবং প্রস্থ ৮ সেমি। এটিই সবচেয়ে ভারী তলোয়ার এবং মুহাম্মদ এই তলোয়ারটি আলী বিন আবি তালিব (রা.)-কে দিয়েছিলেন।