মানকর রঙমহল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানকর রঙমহল
বিকল্প নামমানকর জমিদারবাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনজমিদারবাড়ি
অবস্থানমানকর
ঠিকানাবুদবুদ থানা, গলসি ১ নং ব্লক
শহরপূর্ব বর্ধমান জেলা
দেশভারত
স্বত্বাধিকারীদীক্ষিত পরিবার
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড
তলার সংখ্যাদ্বিতল

রঙমহল হল পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার মানকরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

পূর্ব বর্ধমান জেলার মানকর একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ স্থান। এখানকার রাইপুর অঞ্চলেই [১]রয়েছে এই রঙমহল জমিদারবাড়ি। মানকরের এই কনৌজ ব্রাহ্মণরাই ছিলেন[২] মানকরের প্রধান জমিদার। সে প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। এই বংশের আদিপুরুষ ছিলেন উত্তর ভারতের কনৌজ নিবাসী বদলে দুবে । তাঁর পরবর্তী উত্তরপুরুষরা হলেন মনোরথ দুবে ও শ্রীকান্ত দুবে। এই শ্রীকান্ত দুবে কনৌজ থেকে মথুরায় রাধাবল্লভ সম্প্রদায়ের কাছে দীক্ষা নিয়ে মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় আসেন। এবং গোস্বামী উপাধি লাভ করেন। তাঁদের উত্তরপুরুষরা হলেন মধুসূদন গোস্বামী, নিহারীদাস গোস্বামী এবং শ্যামসুন্দর গোস্বামী। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে পন্ডিত শ্যামসুন্দর গোস্বামী বর্ধমান মহারাজ জগৎরাম রাই ও তাঁর স্ত্রী ব্রজকিশোরী দেবীকে দীক্ষা দেন। এবং মানকরের পাশে খান্ডারী গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। শ্যামসুন্দর গোস্বামীর পুত্র ভক্তলাল গোস্বামী বর্ধমান মহারাজ কীর্তিচাঁদ রাই ও তাঁর পুত্র চিত্রসেন রাইকে দীক্ষা দেন। এবং গুরুদক্ষিণা স্বরূপ ১১২৯ বঙ্গাব্দে তথা ১৭২২ খ্রীষ্টাব্দে মহারাজ কীর্তিচাঁদের কাছ থেকে মানকর রাইপুর গ্রাম ব্রহ্মোত্তর পান। পণ্ডিত ভক্তলাল গোস্বামীই ছিলেন মানকর রাইপুরের প্রথম জমিদার। তিনি রঙমহল নামে জমিদারবাড়ি, রাধাবল্লভ মন্দির, সিংহবাহিনী মন্দির প্রভৃতি নির্মাণ করেন।

১১৩৫ বঙ্গাব্দে উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন রাধাবল্লভ জিউকে নবনির্মিত নবরত্ন মন্দিরে স্থাপন করা হয়।

ভগ্ন রঙমহল জমিদারবাড়ির একাংশ

ভক্তলাল গোস্বামীর পরবর্তী জমিদাররা হলেন ব্রজলাল গোস্বামী, সেতবলাল গোস্বামী ও অজিতলাল গোস্বামী। মানকরের উন্নয়নে তিনি ভূমিকা গ্রহণ করেন। মানকর ছাড়াও ভরতপুর ও খান্ডারী গ্রামে আরও দুটি এস্টেট ছিল।অজিতলালের পরবর্তী জমিদার হন তাঁর দৌহিত্র হিতলাল মিশ্র। তিনি ছিলেন অজিতলাল ও হরিপ্রিয়া দেবীর কন্যা ধনকুমারী দেবীর একমাত্র পুত্র । এই হিতলাল মিশ্র ছিলেন এই বংশের সবচেয়ে কৃতি জমিদার। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তাঁর পাণ্ডিত্য, জ্ঞান, উদারতাবোধ ও জনহিতকর কার্যাবলী আজও আমাদের অবাক করে। একাধারে তিনি ছিলেন জমিদার, আরেকদিকে তিনি ছিলেন নীলকুঠির মালিক, আবার তিনিই ছিলেন বর্ধমান রাজপরিবারের কুলোগুরু ও পুঁথি রচয়িতা । হিতলাল মিশ্র অসংখ্য পুঁথি রচনা করেন এবং হাতের লেখা পুঁথি সংগ্রহ করতেন । পুঁথি সংগ্রহ করে রাখার জন্য তিনি তাঁর গৃহে ভাগবতালয় নির্মাণ করেন। তাঁর ভাগবতালয়ে পুঁথির সংগ্রহ যা ছিল তা বর্ধমান জেলার অন্য কোথাও ছিলনা বোধ হয়।হিতলাল মিশ্র শ্রীমদ্ভাগবতগীতার ভাষ্যও রচনা করেন। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বঙ্গদর্শন পত্রিকায় হিতলাল মিশ্রের গীতার প্রশংসা করেন। তিনি লেখেন, “বাঙ্গালা টীকা দুই প্রকার হইতে পারে। এক, শঙ্করাদি-প্রণীত প্রাচীন ভাষ্যের ও টীকার বাঙ্গালা অনুবাদ দেওয়া যাইতে পারে। দ্বিতীয়, নূতন বাঙ্গালা টীকা প্রণয়ন [৩]করা যাইতে পারে। কেহ কেহ প্রথমোক্ত প্রথা অবলম্বন করিয়াছেন। বাবু হিতলাল মিশ্র নিজকৃত অনুবাদে, কখন শঙ্করভাষ্যের সারাংশ, কখন শ্রীধর স্বামীর কৃত টীকার সারাংশ সঙ্কলন করিয়াছেন। .... ইঁহাদিগের নিকট বাঙ্গালী পাঠক তজ্জন্য বিশেষ ঋণী।”

ভগ্ন রঙমহল জমিদারবাড়ির একাংশ

বঙ্কিম রচনাবলীর ‘শ্রীমদ্ভাগবতগীতা’ প্রবন্ধের ভূমিকায় এখনও তার উল্লেখ পাওয়া যায়। হিতলাল মিশ্র মানকরে টোলও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর আমলে টোল ও ভাগবতালয় ইত্যাদির মাধ্যমে মানকরে একটা বিদ্যাচর্চার একটা উৎসাহ সঞ্চারিত হয়েছিল। তিনি সভাপণ্ডিত ছাড়াও জ্ঞানীগুণী পণ্ডিতদের সসম্মনে সমাদর করতেন। তাদের মধ্যে গদাধর শিরোমণি, নারায়ণ চূড়ামনি, যাদবেন্দ্র সার্বভৌম প্রভৃতি ব্যাক্তির নাম উল্লেখযোগ্য। জমিদার হিতলাল মিশ্রের পাণ্ডিত্য ও ভাগবতের উদারতাবোধ তাকে অসাম্প্রদায়িক করে তুলেছিল। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু জমিদার হয়েও তিনি মুসলমানদের জন্য মসজিদ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তার খরচ নির্বাহের জন্য ১৫ বিঘা নিস্কর জমি ও অজু করার জন্য একটি পুকুরও দান করেন। আবার তিনিই বর্তমান মানকর হাসপাতালের কাছে গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। মানকরে হাই ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠায় তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মানকর হাটতলার হাটটির পত্তন করেন হিতলাল মিশ্রই। তিনি সেখানে দুটি বড়ো হাট চালা নির্মাণ করে দেন। মানকর থেকে বুদবুদ পর্যন্ত রাস্তাটি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের গড়িমসির ফলে সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠলে তিনি সেটি নিজে সংস্কার করান এবং সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তার দুপাশে কয়েকশো তালগাছ রোপণ করেন। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ মানকর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাদ্যাভাব ও জলসঙ্কটের ফলে অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। এইরকম পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন হিতলাল মিশ্র। তিনি জলসঙ্কট দূর করার জন্য বর্ধমানের কৃষ্ণসায়রের অনুকরণে মানকরে কাটালেন কৃষ্ণগঙ্গা দীঘি। তার চারপাশে ছিল মোট ১২ টি ঘাট নির্মাণ করেন। এবং সৌন্দর্যায়নের জন্য দীঘির চারিদিকে ছিল সুন্দর বিভিন্ন গাছের সমাহার‌।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে হিতলাল মিশ্রের একমাত্র পুত্র জগদীশ মিশ্রর অকালমৃত্যু হয়। তাই ১৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দে হিতলাল মিশ্রের পরবর্তী জমিদার হন তাঁর দৌহিত্র রাজকৃষ্ণ দীক্ষিত। তিনি ছিলেন বীর ও সাহসী এবং ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী। একসময় তিনি তাঁর জমিদারীতে বিলাতি দ্রব্য নিষিদ্ধ করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রভাব পড়েছিল মানকরেও। মানকর রঙমহলের জমিদার রাজকৃষ্ণ দীক্ষিত মানকরে বিলাতি কাপড় পুড়িয়ে বঙ্গভঙ্গ প্রতিবাদী আন্দোলনে সামিল হন এবং গ্রেফতার হন। তিনিই ছিলেন বাংলার প্রথম জমিদার যিনি স্বদেশী আন্দোলনের জন্য জেল খেটেছিলেন। তাঁর প্রতিবাদ ও সাহসের জন্য হিতবাদী সংস্থা জমিদার রাজকৃষ্ণ দীক্ষিতকে হাতির দাঁতের ছড়ি, রূপোর মেডেল ও শাল দিয়ে পুরস্কৃত করে । তিনি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের নানাভাবে সাহায্য করতেন। রাজকৃষ্ণ দীক্ষিতের পরবর্তী জমিদার হন তাঁর পুত্র রাধাকান্ত দীক্ষিত। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশকে স্বাধীন করবার জন্য সেইসময় বিপ্লবীরা অনুশীলন সমিতি তৈরি করেছিল। সেই গুপ্ত সমিতির বিপ্লবীরা গোপনে মানকর রঙমহলের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। যাদবেন্দ্র পাঁজা, নিরোদ মিত্র, জিতেন চৌধুরী, গিরিজাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফকিরচন্দ্র রায় এইসব বিপ্লবীরা গোপনে রঙমহলে আসতেন। জমিদারবাবুর সাথে আলোচনা চালাতেন স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে। জমিদার রাধাকান্ত দীক্ষিত জমিদারীর কিছু কিছু অংশ বিক্রি করে প্রাপ্ত গোপনে বিপ্লবীদের দিয়ে সাহায্য করতেন। মাত্র ৩২ বছর বয়সে রাধাকান্ত দীক্ষিতের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী শক্তিবালা দেবী দত্তক নেন কাঞ্চনকন্তি দীক্ষিতকে। তিনিই ছিলেন মানকর রঙমহলের শেষ জমিদার।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৪ সালে জমিদারী উচ্ছেদ আইন কার্যকর হলে রঙমহলে প্রায় ২৫০ বছরের জমিদারীর অবসান হয়। এরপরেও দীক্ষিত পরিবার তিন দশক তাঁদের এই বসতবাটিতে বসবাস করে।‌ ১৯৮৩ সালে রঙমহলে ডাকাতি হলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, অসংখ্য পুঁথি, ঠাকুরের বাসনপত্র সহ আরো নানান মূল্যবান সামগ্রী লুট হয়। এছাড়াও তাঁরা আরো নানা রাজনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এইসব ঘটনার পর শক্তিবালা দেবী ও কাঞ্চনকান্তি দীক্ষিত মানকর ছাড়ার পরিকল্পনা করেন। ১৯৮৯ সালে দীক্ষিত পরিবার তাঁদের কুলদেবতা রাধাবল্লভ জিউ, শ্রীরাধিকা ও দেবী সিংহবাহিনী মুর্তি সহ তাঁদের ঐতিহাসিক বসতবাটি রঙমহল ছেড়ে স্থায়ীভাবে বর্ধমানে বসবাস শুরু করে।

চিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

মানকর রঙমহলের ভগ্ন রাধাবল্লভ জিউ মন্দির


সিংহবাহিনী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ
ভগ্ন জোড়া শিব মন্দির














রঙমহলের দুর্গাপূজা[সম্পাদনা]

1729 খ্রিস্টাব্দে মানকর রঙমহলে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন প্রথম জমিদার পন্ডিত ভক্তলাল গোস্বামী। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলালেও রঙমহলের সাবেকি পুজোর গন্ধ আজও এতটুকু ম্লান হয়নি। মানকর জমিদার পরিবারের প্রাচীন পুজো আজও রীতি মেনে চলে আসছে। মানকর রঙমহলে শেষবার দুর্গাপুজো হয় ১৯৮৯ সালে। পরের বছর দুর্গাপুজো চলে আসে বর্ধমানে। ষষ্ঠীর দিন বোধনের মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়, চলে দশমী পর্যন্ত। অতীতে মানকরে কৃষ্ণগঙ্গা দীঘি থেকে নবপত্রিকা স্নান ও ঘট উত্তোলন করা হতো। বর্তমানে বাড়ির নিকটবর্তী পুকুরে তা করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে সিংহবাহিনী। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ দেবীর সঙ্গে নেই। ২ ফুট উচ্চতার এই মূর্তিটি নির্মাণ করান হিতলাল মিশ্র। পঞ্চমীর দিন রাত জেগে দেবীকে সাজান বর্তমান উত্তরপুরুষ। দেবীর বেদী ডাকের সাজে সাজানো হয়। দেবী সোনার অলঙ্কারে ভূষিতা। পুজো হয় শাক্ত বৈষ্ণব রীতি মেনে, তাই বলি প্রথা নেই। অতীতে দেবী সিংহবাহিনীকে স্নান করানো হতো ১ মন গাওয়া ঘি দিয়ে। এখন দেবীর স্নানে কয়েক ফোঁটা ঘি ব্যবহার করা হয়। দেবীর ভোগ হয় নিরামিষ। দুপুরে অন্নভোগ ও রাতে লুচি। দেবীর ভোগ রান্না করেন ব্রাহ্মণরা, মহিলারা দেবী ও ভোগ কোনো কিছুই স্পর্শ করতে পারেন না। পুজো হয় হিতলাল মিশ্র লিখিত পুঁথি অনুসারে। কুমারীপুজো হয়না। অতীতে মানকরে সন্ধিপুজোর সময় বন্দুক দাগ হতো, এখন সেই প্রথা নেই। সন্ধিপুজোর সময় দেবীকে মোহনভোগ দেওয়া হয় ও ১০৮ টি বেলপাতার মালা দেওয়া হয়। সন্ধিপুজোর পর সিঁদুর খেলার চল রয়েছে। দেবীর ঘট আমার পর গৃহদেবটা লক্ষ্মীনারায়ণকে নিয়ে এসে দেবীর কাছে বসানো হয়। ঘট বিসর্জনের পর তাঁদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্বস্থানে। পরিবারের বিশ্বাস নাহলে দেবীর সাথে এই গৃহাদেবতারাও বিসর্জিত হয়ে যাবেন। অতীতে পুজোর দিনগুলিতে নহবতের সুরে ঘুম ভাঙত মানকরবাসীর। পুজোর চারদিন সমগ্র গ্রামবাসীকে দেবীর প্রসাদ খাওয়ানো হতো। রঙমহলে উপচে পড়ত ভিড়। কিন্তু সেসবই এখন ইতিহাস। দশমীতে অপরাজিতার তাগা পড়ার ছিল রয়েছে। সেইসাথে নবপত্রিকায় দেওয়া কাঁচা হলুদ পরিবারের সকলকে খেতে হয়। একসময় দেবীর কাছে অব্রাহ্মণদের যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল, অঞ্জলী তো দুরস্ত। বর্তমানে প্রয়াত কাঞ্চন দীক্ষিত অব্রাহ্মণদের অঞ্জলী দেওয়ার প্রথা শুরু করেন। দীক্ষিত বাড়িতে রয়েছে প্রাচীন হাতির দাঁতের দেবী দুর্গা। দীক্ষিত পরিবার সূত্রে জানা যায় অষ্টধাতুর দেবী মূর্তির সামনে চন্ডীপাঠ প্রাচীনকাল থেকেই নিষিদ্ধ, তাই পুজোর দিনগুলিতে এই হাতির দাঁতের দেবী মূর্তির সামনেই চণ্ডীপাঠ করতেন বর্তমানে প্রয়াত কাঞ্চন দীক্ষিত। [৪]

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আগমন[সম্পাদনা]

মানকর এসেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও রামকুমার চট্টোপাধ্যায়। চণ্ডীপাঠের সূত্রেই শেষ জমিদার কাঞ্চন দীক্ষিত কিংবদন্তি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৭৪ সালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও রামকুমার চট্টোপাধ্যায় মানকরের কাছে মাড়ো গ্রামে অনুষ্ঠান করতে আসেন। তা জানতে পেরে যুবক কাঞ্চনবাবু মানকর স্টেশনে তাদের অমৃতসর এক্সপ্রেস থেকে নামিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে মাড়ো গ্রামে পৌঁছে দেন। তবু তাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না দেখে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে বলেন ‘আপনার চণ্ডীপাঠ তো আমার মুখস্থ’। তাঁর সাহস দেখে কাছে ডেকে কাঞ্চনবাবু ও তাঁর পরিবারের বিষয়ে খোঁজ নেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মানকর রঙমহলে রাত্রিযাপন করেন। সকালে কাঞ্চনবাবুর কণ্ঠে শোনেন চণ্ডীপাঠ। উচ্চারণে কিছু ত্রুটি শুধরে দেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বর্ধমানের বিশিষ্ট চিকিৎসক শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের আত্মীয় ছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, সেই সূত্রে বর্ধমানে অনুষ্ঠান করতে এলেই ডাক পেতেন কাঞ্চনবাবু। তানপুরা, ভায়োলিন সহ নানা যন্ত্রে তিনি পারদর্শী ছিলেন। তাই তারপর থেকেই তাঁর পাতানো দাদু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনুষ্ঠানে যন্ত্রী হিসেবে থাকতেন, গলাও মেলাতেন কখনো। গুণী কাঞ্চন দীক্ষিতের প্রতিভায় সন্তুষ্ট হয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও রামকুমার চট্টোপাধ্যায় দুজনেই নিজের হতে প্রশংসাসূচক আশীর্বাদ লিখে দেন। যা আজও দীক্ষিত বাড়িতে সযত্নে রক্ষিত আছে। [৫]



















তথ্যসুত্র

  1. ঘোষ, বিনয় (জানুয়ারী ১৯৫০)। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। পুস্তক প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২১৩। 
  2. ঘোষ, বিনয় (জানুয়ারী ১৯৫০)। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। কলকাতা ১২: পুস্তক প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২১৩। 
  3. মেটে, ধীরেন্দ্রনাথ। ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে মানকর, মাড়ো, অমরারগড়। পৃষ্ঠা ২০। 
  4. বেরা, শ্যামসুন্দর। এই সময়  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য);
  5. শ্যামসুন্দর, বেরা (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। এই সময়  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)

[১]

  1. আনন্দবাজার পত্রিকা (২৬ সেপ্টম্বর ২০০৯) রানা সেনগুপ্ত।