মাদক প্রত্যাহারজনিত সংলক্ষণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাদক প্রত্যাহারজনিত সংলক্ষণ
বিশেষত্বমনোচিকিৎসা

মাদক প্রত্যাহারজনিত সংলক্ষণ (ইংরেজি Drug withdrawal syndrome বা Substance withdrawal syndrome) বা সংক্ষেপে মাদক প্রত্যাহার (Drug withdrawal)[১] বলতে আরোগ্যমূলক ঔষধ বা বিনোদনমূলক নেশাদ্রব্য সেবন হঠাৎ বন্ধ করে দিলে বা দ্রুত কমিয়ে দিলে যে লক্ষণ-উপসর্গগুলি পরিলক্ষিত হয়, তাদের সমষ্টিকে বোঝায়। প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ ঘটার আগে প্রথমে ব্যক্তিতে কোনও প্রকারের মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হতে হয়। এটি শারীরিক আসক্তি, মানসিক আসক্তি বা উভয়ই হতে পারে। অনেক সময় ধরে এক বা একাধিক মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে আসক্তির জন্ম হয়।

মাদকের মাত্রার উপর নির্ভর করে আসক্তি সৃষ্টি হয়। কোন ধরনের মাদক ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গগুলি ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন বিষণ্ণতারোধক ঔষধ (Antidepressant) দীর্ঘদিন সেবন করার পরে প্রত্যাহার করলে যে প্রতিক্রিয়া হয়, তার বিপরীতে আফিম-সদৃশ ঔষধ (মাদক) যেমন হেরোইন প্রত্যাহার করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আফিম-জাতীয় ঔষধ সেবন বন্ধ করার কারণে যে লক্ষণ-উপসর্গগুলি দেখা যায়, তার মধ্যে উদ্বেগ, ঘর্মণ, বমন ও উদরাময় উল্লেখ্য। মদ্যপান প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গগুলির মধ্যে আছে খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ, কাঁপুনি ও বমিবমি ভাব। নিকোটিন প্রত্যাহার করলে খিটখিটে মেজাজ, অবসাদ, নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যথা, মনোযোগে সমস্যা, ইত্যাদি লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে প্রদত্ত এবং বৈধ কিন্তু ব্যবস্থাপত্রবিহীন অনেক ঔষধ আছে, যেগুলি সেবন বন্ধ করে দিলে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যদিও সেগুলি চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনেই সেবন করা হয়ে থাকে।

প্রয়োগের পথ, অর্থাৎ মাদকদ্রব্যটি শিরায় বা পেশীতে সূঁচের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়, নাকি মুখ দিয়ে গলধকরণ করা হয়, সে ব্যাপারটিও প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গের তীব্রতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গগুলি কয়েকটি ধাপে প্রকাশ পায়। সাধারণত একজন ব্যক্তির খারাপ লাগতে শুরু করে (যাকে ধস/ক্র্যাশ বা অধোগমন বলে), এর আরও বেশি খারাপ লাগতে শুরু করে, এরপর একটি স্থিতাবস্থায় পৌঁছায় (প্লাটো) এবং শেষ পর্যন্ত লক্ষণ-উপসর্গগুলি দূর হতে শুরু করে। তবে কিছু কিছু ঔষধ (বার্বিচুরেট, বেঞ্জোডায়াজেপিন, অ্যালকোহল, গ্লুকোকর্টিকয়েড, ইত্যাদি) থেকে প্রত্যাহার মরণঘাতী হতে পারে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আফিম-জাতীয় মাদক থেকে প্রত্যাহার করলে ব্যবহারকারীর মৃত্যু না হলেও, আফিম-সদৃশ ঔষধ (ও আরও কিছু ঔষধ) প্রত্যাহারের কারণে গর্ভপাত হতে পারে (প্রভ্রূণের প্রত্যাহারের কারণে)। কোনও মাদক সেবন হঠাৎ করে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা ও তার পরে শরীরে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার ঘটনাটিকে আকস্মিক পূর্ণবিরতি বলে।

যদি মাদকটি দীর্ঘস্থায়ী অপপুষ্টি, রোগ, দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা, রোগজীবাণু সংক্রমণ, নিদ্রাহানি, ইত্যাদিকে অপ্রকাশ্য করে রাখে, তাহলে সেটি প্রত্যাহার করলে আরও নাটকীয় লক্ষণ-উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। যখন ঔষধ বা মাদকটিকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, তখন এই রোগ বা অসুস্থতাগুলি আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, ফলে এগুলিকে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ-উপসর্গ ভেবে ভুল করা হতে পারে।


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "MeSH Browser"meshb.nlm.nih.gov। ৩০ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০