নিকোটিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিকোটিন
রোগশয্যাসম্বন্ধীয় তথ্য
বাণিজ্যিক নামNicorette, Nicotrol
এএইচএফএস/
ড্রাগস.কম
মনোগ্রাফ
গর্ভাবস্থার শ্রেণি
নির্ভরতা
দায়
High
প্রয়োগের
স্থান
smoked (as smoking tobacco, mapacho, etc.), insufflated (as tobacco snuff or nicotine nasal spray), chewed (as nicotine gum, tobacco gum or chewing tobacco), transdermal (as nicotine patch, nicogel or topical tobacco paste), intrabuccal (as dipping tobacco, snuffs, dissolvable tobacco or creamy snuff), vaporized (as electronic cigarette, etc.), directly inhaled (as nicotine inhaler), oral (as nicotini), buccal (as snus)
এটিসি কোড
আইনি অবস্থা
আইনি অবস্থা
ফার্মাকোকাইনেটিক উপাত্ত
জৈবপ্রাপ্যতা20 to 45% (oral)
বিপাকhepatic
বর্জন অর্ধ-জীবন2 hours; 20 hours active metabolite (cotinine)
শনাক্তকারী
  • ৩-(১-মিথাইল পাইরোলিডিন ২-আইল) পাইরিমিডিন
সিএএস নম্বর
পাবকেম সিআইডি
আইইউপিএইচএআর/
বিপিএস
ড্রাগব্যাংক
কেমস্পাইডার
ইউএনআইআই
কেইজিজি
সিএইচইবিআই
সিএইচইএমবিএল
কমপটক্স ড্যাশবোর্ড (আইপিএ)
ইসিএইচএ ইনফোকার্ড100.000.177 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
রাসায়নিক ও ভৌত তথ্য
সংকেতC10H14N2
মোলার ভর162.12 g/mol
থ্রিডি মডেল (জেএসমোল)
ঘনত্ব1.01 g/cm3
গলনাঙ্ক−৭৯ °সে (−১১০ °ফা)
স্ফুটনাংক২৪৭ °সে (৪৭৭ °ফা)
  • n1cc(ccc1)[C@H]2N(C)CCC2
  • InChI=1S/C10H14N2/c1-12-7-3-5-10(12)9-4-2-6-11-8-9/h2,4,6,8,10H,3,5,7H2,1H3/t10-/m0/s1 YesY
  • Key:SNICXCGAKADSCV-JTQLQIEISA-N YesY

নিকোটিন‌ এক প্রকারের স্নায়ুবিষ (নিউরোটক্সিন), যা একধরনের অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরের (কোলিনার্গিক অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টর) উপর কাজ করে। এটি মূলত সোলানেসি গোত্রের উদ্ভিদে পাওয়া যায়। উদ্ভিদের পাতা এবং মূল নিকোটিনের উৎস।

উৎস[সম্পাদনা]

নিকোটিন মূলত তামাক এবং তামাকজাত বিভিন্ন দ্রব্য যেমন সিগারেট বা জর্দা এ পাওয়া যায়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তামাক গাছ Nicotiana tabacum হতে তামাকের নামকরণ করা হয়েছে। পর্তুগালের ফরাসী রাষ্ট্রদূত Jean Nicot de Villemain এর নামে এই গাছের নামকরণ করা হয় যিনি ১৫৬০ সালে প্যারিসে তামাক প্রেরণ করেন। তামাক হতে নিকোটিন পৃথক করে জার্মান পদার্থবিদ উইলেম হেনরিখ এবং রসায়নবিদ লুইডউইক উইম্যান।

প্রথম ব্যবহার : কীটনাশক হিসেবে[সম্পাদনা]

তামাক ইউরোপে প্রথম পরিচিতি লাভ করে ১৫৫৯ সালে এবং পরে সপ্তদশ শতাব্দীতে. এটি কেবল ধূমপানেই ব্যবহৃত হত না বরং কীটনাশক হিসেবেও এর ব্যবহার ছিল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এর পর আড়াই হাজার টন নিকোটিন কীটনাশক (তামাক কারখানার বর্জ্য) বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ১৯৮০ সালের মধ্যে এর ব্যবহার ২০০ টনে নেমে আসে। মানুষের জন্য কম ক্ষতিকর অন্যান্য কীটনাশক আবিষ্কৃত হওয়ায় এমন ঘটেছিল।

নিকোটিন আসক্তিতে দায়ী জিন[সম্পাদনা]

চেইন স্মোকার হয়ে ওঠার পেছনে দায়ী মূলত এ জিনগত ঝুঁকি। যেসব কিশোর ধূমপান শুরু করেছে, বয়স ১৫ হতেই তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের এতে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ১৮ বছর বয়সের মধ্যে তাদের ৪৩ শতাংশের প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি সিগারেট প্রয়োজন হতে পারে

জিনগত কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ কৈশোরে ধূমপান শুরু করে এবং পরে চেইন স্মোকার হয়ে দাঁড়ায়। এ বৈশিষ্ট্যের ফলেই একজন মানুষ পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে পারে ধূমপায়ী হিসেবে। সম্প্রতি এক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা তাদের মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান করার পেছনে জিনগত বৈশিষ্ট্যের প্রভাব খোঁজার চেষ্টা করেন। নিউজিল্যান্ডের এক হাজার অধিবাসীর ওপর জন্মের পর থেকে ৩৮ বছর পর্যন্ত তারা গবেষণা পরিচালনা করেন। ফলাফলে দেখা যায়, যাদের বেশি মাত্রায় জিনগত ঝুঁকি ছিল তারা কৈশোর থেকেই ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়া অতিরিক্ত মাত্রায় ধূমপানের প্রতিও তাদের আসক্তি থাকে (প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি)। গবেষণায় দেখা যায়, ৩৮ বছর বয়সে এসে নিকোটিনের প্রতি তারা দারুণ আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ধূমপান ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বেলস্কাই বলেন, জিনগত বৈশিষ্ট্যই তাদের ধূমপানে আসক্তির দিকে ধাবিত করে। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, কিশোর বয়স থেকেই তারা সিগারেট শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রচুর নিকোটিনে অভ্যস্ত হয়ে যান। তবে জিনগত ঝুঁকির মধ্যে যারা রয়েছেন, তারা ঠিক কখন থেকে সিগারেটের অভ্যাস শুরু করবেন এটা ধারণা করা যায়নি। চেইন স্মোকার হয়ে ওঠার পেছনে দায়ী মূলত এ জিনগত ঝুঁকি। যেসব কিশোর ধূমপান শুরু করেছে, বয়স ১৫ হতেই তাদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের এতে নিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া ১৮ বছর বয়সের মধ্যে তাদের ৪৩ শতাংশের প্রতিদিন এক প্যাকেট বা তার বেশি সিগারেট প্রয়োজন হতে পারে। অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে যারা জিনগত ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের ২৭ ভাগ নিকোটিনে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন। আর ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ২২ শতাংশ সিগারেট ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হবেন। [১]

নিকোটিনের ক্ষতিকর দিক[সম্পাদনা]

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর বিশ্বে ৪ মিলিয়ন লোক মৃত্যুবরণ করছে এই তামাক সেবনের ফলে। মনে করা হচ্ছে তামাক সেবনের হার এভাবে চলতে থাকলে ২০২০ সালের মধ্যে মৃত্যু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার প্রধান কারণ হবে তামাক সেবন। [২] পরোক্ষ ধূমপানে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শিশুরা এমনিতে দ্রুত শ্বাস নেয়, তা ছাড়া তাদের শ্বাসতন্ত্রও অপরিণত, তাই সিগারেটের ধোঁয়া সহজেই শিশুদের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে সমূহ ক্ষতিসাধন করে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে শিশুর নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর তিন লাখ শিশু চারপাশের ধূমপানের কারণে নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিসে ভোগে। পরোক্ষ ধূমপানে শ্বেত রক্তকণিকা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে শিশু অল্পতেই অসুখে ভোগে। যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ১৭ হাজার শিশু বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পারিপার্শ্বিক ধূমপানের কারণে শিশুরও হৃদরোগ হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণের প্রদাহ, বধিরতা, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, ঝিমুনি, অস্থিরতাও হতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ধূমপানের ধোঁয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু গণিত ও যুক্তিবিদ্যায় কম পারদর্শী তাদের বেশির ভাগেরই মা-বাবা ধূমপায়ী। এরা শিক্ষক ও সহপাঠীর সঙ্গে সঠিক আচরণ করতেও শেখে না। গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়। কারণ গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যে রক্ত বাহিত হয় এর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা কমিয়ে দেয় তামাকের কার্বন মনোক্সাইড। নিকোটিন গর্ভফুলের রক্ত-সরবরাহ হ্রাস করে। ফলে মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি গর্ভস্থ সন্তানের শরীরে যেতে পারে না, তাই শিশুর বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। এ ছাড়া ধূমপানের কারণে গর্ভপাত কিংবা অপরিণত শিশু জন্মাতে পারে। এই অপরিণত শিশুরা আবার সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে থাকে। মায়ের ধূমপানের কারণে অনাগত সন্তানের জন্মগত সমস্যাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারে বাবা, বড় ভাই বা অন্য কেউ ধূমপান করলে শিশুরা সহজেই আকৃষ্ট হয়। [৩]

নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপি[সম্পাদনা]

নিকোটিন প্রতিস্থাপন থেরাপি (Nicotine replacement therepy বা সংক্ষেপে এনআরটি (NRT)) হল তামাক ব্যতীত অন্য উপায়ে নিকোটিন গ্রহণের মাধ্যমে তামাক সেবনের ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করার জন্য একটি চিকিৎসাগতভাবে অনুমোদিত উপায়।[৪] এটি ধূমপান ত্যাগ বা তামাক চর্বণ বন্ধ করতে সহায়তা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।[৫] এটি তামাক ধূমপান ত্যাগ করার সম্ভাবনা প্রায় ৫৫% বৃদ্ধি করে। প্রায়শই এটি অন্যান্য আচরণগত কৌশলগুলির সাথে ব্যবহার করা হয়। আলসারেটিভ কোলাইটিসের চিকিৎসার জন্যও NRT ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এনআরটি-র প্রকারের মধ্যে রয়েছে এ্যাডহেসিভ প্যাচ, চুইংগাম, লজেন্স, নাজাল স্প্রে এবং ইনহেলার। এক সময়ে একাধিক ধরনের NRT ব্যবহার কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৩ 
  4. Jain R, Majumder P, Gupta T (২০১৩)। "Pharmacological intervention of nicotine dependence"BioMed Research International2013: 278392। ডিওআই:10.1155/2013/278392অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 24490153পিএমসি 3891736অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  5. Smith KD, Scott MA, Ketterman E, Smith PO (এপ্রিল ২০০৫)। "Clinical inquiries. What interventions can help patients stop using chewing tobacco?"The Journal of Family Practice54 (4): 368–9। পিএমআইডি 15833231