বিষয়বস্তুতে চলুন

মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মফিজউদ্দীন আহমদ শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭ বাংলাদেশের একটি শিক্ষা সংস্কারমূলক শিক্ষা কমিশন।[] এটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন, ১৯৮৭ নামেও পরিচিত। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মফিজ উদ্দীন আহমেদকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে।[] এই কমিশনের উপর পূর্ববর্তী কমিশনের ত্রুটি ও পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও পুনর্বিন্যাসের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে ব্যপক গবেষণা চালায়। তারা দেশের বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করে, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এছাড়াও এই কমিশন নানা শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাবিদগণের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করে। এভাবে তারা দেশের সম্যক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এমনকি এই কমিশনের দুই সদস্য বহিঃবিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন ও জাপান সফর করে। প্রায় এক বছর গবেষণা করে ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কমিশন তাদের রিপোর্ট সরকারের নিকট পেশ করে।

প্রস্তাবসমূহ

[সম্পাদনা]

এই কমিশন নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ প্রদান করেছিলো। বিশেষ করে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছিলো। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  1. প্রতি বৃহত্তর জেলায় বা বিভাগীয় শহরে এবং রাজধানীতে একটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা।
  2. দেশের মধ্যে দুটি এফেলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা সকল সাধারণ কলেজকে উক্ত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা।
  3. দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য সুনিদিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা এবং সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
  4. সরকার কর্তৃক দেশের বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের পূর্ণ বেতন ও ভাতা প্রদান করা।
  5. বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের জন্য গবেষণা পরিচালনার জন্য সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, গবেষণাগার স্থাপন এবং দেশের সার্বিক গবেষণা কেন্দ্রের উন্নয়ন সাধন করা।
  6. বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স কোর্সে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা, পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ প্রদান করা।
  7. বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ও পিএইচডি পরবর্তী গবেষণা করার জন্য কোনো একটি বিশেষ বিভাগ বাছাই করে সেটিকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে পরিণত করা।
  8. বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি সন্ধানী ব্যুরো স্থাপন করা এবং শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ নিশ্চিত করা।

ডিগ্রি বিষয়ক প্রস্তাব

[সম্পাদনা]

এই কমিশন বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার অগ্রগতি বিষয়ক একটি সুনিদিষ্ট প্রস্তাব করে। রিপোর্টে উল্লেখ করে, বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থায় তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু থাকবে। এই কমিশন আরো প্রস্তাব দেয়, ডিগ্রি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে পারবে এবং তৃতীয় বর্ষের সময় এই তিনটি বিষয় থেকে যেকোন একটি বিষয়ে কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করবে। কোনো শিক্ষার্থী ডিগ্রি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে এই তিনটি বিষয়ের যে বিষয়ে ৭০% এর বেশি নম্বর অর্জন করতে পারবে, তাকে উক্ত বিষয়ের উপর অনার্স ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তবে একই সাথে কমিশন দেশের ডিগ্রি কলেজসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সুপারিশ করে।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "শিক্ষা কমিশন - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮ 
  2. "আহমেদ, মফিজউদ্দীন - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮