হান্টার কমিশন, ১৮৮২
উইলিয়াম হান্টার শিক্ষা কমিশন, ১৮৮২ ছিলো আধুনিক ভারতের সরকারিভাবে প্রথম শিক্ষা কমিশন, যা হান্টার কমিশন নামেই বেশি পরিচিত ছিলো।[১][২] এই কমিশনের অফিশিয়াল সরকারিভাবে নামকরণ করা হয়েছিলো ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশন, ১৮৮২।[৩] ব্রিটিশ ভারতের সরকারের এই কমিশনের লক্ষ্য ছিলো উডের শিক্ষা নীতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করা, এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকরন সম্পর্কে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রস্তাব করা। এই কমিশনের আরেকটি বড় লক্ষ্য ছিলো ১৮৫৪-এর উডের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগে তুলে ইংল্যান্ডে মিশনারিদের বিক্ষোভ পর্যালোচনা করা।[৪]
প্রস্তাবসমূহ
[সম্পাদনা]হান্টার কমিশন ১৮৮৩ সালের অক্টোবর মাসে তাদের রিপোর্ট জমা দেন। প্রাথমিক শিক্ষার উপরে ৩৬টি সুপারিশ করেন। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয় যে,
যখন শিক্ষার প্রতিটি শাখা যথার্থভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করতে পারবে, তখন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গণপ্রাথমিক শিক্ষা, এর শর্তাবলি, বিস্তার ও এর উৎকর্ষকে শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি সরকারের পূর্বেকার প্রচেষ্টার তুলনায় আরও ব্যাপকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা সুপারিশ
[সম্পাদনা]কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার ব্যপারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছিলো, স্থানীয় সুযোগসুবিধা পাওয়া যাক অথবা না, উক্ত স্থানে প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এ কমিশনের প্রদত্ত সুপারিশগুলো: প্রাথমিক শিক্ষার উপরে ৩৬টি সুপারিশের কিছু
- প্রাথমিক শিক্ষাকে জনগণের শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়সমূহের শিক্ষা মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রদান করা হবে এবং তা কোনক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হবে না।
- আইনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিস্তৃতি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে
- স্কুলগুলিকে প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে যেখানে দেশীয় স্কুল রয়েছে সেখানে সেগুলিকে সহযোগিতা প্রদান এবং সেগুলির মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
- প্রাথমিক শিক্ষাকে জনশিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থার ওই অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, যেখানে শিক্ষা খাতে নির্দিষ্টকৃত স্থানীয় অর্থের উপর এবং প্রাদেশিক রাজস্বের উপর একচেটিয়া দাবি রয়েছে।
- পৌর ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার উভয়কেই স্বতন্ত্র স্কুল ফান্ড রাখতে হবে।
- পরিদর্শন ও তত্ত্বাবধান, সম্ভবপর স্থানে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
- গ্রামীণ পরিবারের সুবিধানুযায়ী বিদ্যালয়ে অবস্থানের সময় নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।
- ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা সুপারিশ
[সম্পাদনা]এছাড়াও কমিশন উল্লেখ করেছিলো, সমাজের স্বাভাবিক সুষম অগ্রগতির জন্য প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চ শিক্ষারও সমভাবে প্রয়োজন রয়েছে ও গুরুত্ব দিতে হবে। কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উপরেও ২৩টি সুপারিশ করেছিলো। মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে কমিশন সুপারিশ উল্লেখ করেছিলো, মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য উক্ত স্থানকে উপযোগী করে তুলতে হবে। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুলগুলোকে তখনই সমর্থন করা যাবে, যখন সেখানে স্থানীয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে। ভারত সরকার সেই সময়ে এই কমিশনের প্রায় সবগুলো সুপারিশই গ্রহণ করেছিলো।
কমিশন সদস্য
[সম্পাদনা]উইলিয়াম হান্টারকে এই কমিশনের সভাপতি নিয়োগ করা হয়, এবং তার নামেই এই কমিশন জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এছাড়া এই কমিশনের অনন্য সদস্য ছিলেন:
- আনন্দমোহন বসু
- এ ডব্লিউ ক্রাফট (পরিচালক, বেঙ্গল পাবলিক ইনস্ট্রাকশন)
- ভূদেব মুখোপাধ্যায়
- যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর
- কাশীনাথ ত্রিম্বক তীলং এবং
- সৈয়দ আহমদ খান (তিনি পুত্র সৈয়দ মুহম্মদকে নিজের নিযুক্তি করে নিজে প্রত্যাহার করেন)
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ তাসনিম, জারিন (২০২২-০১-১৯)। "শিক্ষার ইতিহাস: ভারতীয় শিক্ষা কমিশন বা হান্টার কমিশন"। বিশ্লেষণ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।
- ↑ Chuaungo, Mikael। "Hunter Commission 1882"। www.academia.edu/। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টো ২০২২।
- ↑ "Hunter Commission Report - Hunter Commission 1882 and 1920 [UPSC GS-I Notes]"। BYJUS (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।
- ↑ "হান্টার কমিশন - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৯।