বিষয়বস্তুতে চলুন

ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায়
জন্ম১৮৯৪
মৃত্যু২৭ জানুয়ারি, ১৯১৬
আন্দোলনভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • আদিনাথ চট্টোপাধ্যায় (পিতা)
  • সুলতা দেবী (মাতা)

ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৯৪ - ২৭ জানুয়ারি, ১৯১৬) একজন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লববাদী ও শহীদ।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় ১৮৮৮ সালে চন্দননগর মহকুমার তারকেশ্বর ব্লকের বাহিরখণ্ড গ্রামে আদিনাথ চট্টোপাধ্যায় ও সুলতা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা মানিকতলা হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। শৈশবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শে আসায় ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বাধীনতার প্রতি আকৃষ্ট হন।[]

বিদেশে বিপ্লবী তৎপরতা

[সম্পাদনা]

১৯০২ সালে তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন এবং স্বদেশ মন্ত্রে দীক্ষিত হন। বিদ্যুতের প্রতি তাঁর আকর্ষণ তাঁর বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষার সমান্তরালে ছিল, এমন একটি আবেগ যা তাঁর পরবর্তী প্রচেষ্টাগুলিতে ভালভাবে কাজ করবে। কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে অধ্যয়নকালে তিনি আরেক বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাথে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যিনি মানবেন্দ্রনাথ রায় নামেও পরিচিত। আজীবন সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভোলানাথ বদ্ধপরিকর ছিলেন। ১৯১০ সালে আলিপুর বোমা মামলার সময় অনুশীলন সমিতি পুলিশি তদন্তের আওতায় এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। তিনি রাসবিহারী বসু, যদুগোপাল মুখোপাধ্যায়বাঘা যতীনের নির্দেশ মেনে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে মেকানিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে যান। তাঁর লক্ষ্য ছিল প্রবাসী ভারতীয়দের স্বাধীনতা আন্দোলনে একত্রিত করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় ফিরে তিনি জার্মানির পক্ষে উত্তর ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হন। পেনাং এ গিয়ে সেখানকার কৃষক শ্রমিকদের সাথে কাজ করতে করতে কারখানায় মিস্ত্রীর কাজে যোগ দেন। নিজের পারিশ্রমিকের টাকার বেশিটাই পাঠাতেন দেশে বিপ্লবী ফান্ডে। পেনাং ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় অক্লান্ত পরিশ্রমে বিপ্লবী কর্মকেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি।

ইন্দো-জার্মান ষড়যন্ত্র

[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে ফেরেন। কলকাতা আসেন ১৯১৪ এর নভেম্বরে। এই সময় বিপ্লবী বাঘা যতীনের সাথে যোগাযোগ হলে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে প্রচেষ্টায় অস্ত্র আমদানির কাজে জড়িত হয়ে যান। দেশব্যাপী বিপ্লব প্রচেষ্টায় কলকাতা - নাগপুর রেলওয়ে ব্যবস্থা অকেজো করে দেওয়ার ভার পড়ে তার ওপর।[] জার্মানির সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও মালপত্র প্রেরণ, নিরাপদ রাখার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি। বাঘা যতীনের নির্দেশে সমস্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করতে ও মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সাথে সংযোগের হেতু তিনি সাথী বিনয়ভূষন দত্তের সাথে পর্তুগিজ অধিকৃত গোয়ায় যান ১৭ ডিসেম্বর, ১৯১৫ এবং মানবেন্দ্রনাথ ওরফে সি. মার্টিনকে টেলিগ্রাম করেন। এই সময় ব্রিটিশ পুলিশ তার সন্ধান জানতে পেরে পর্তুগিজ পুলিশকে গ্রেপ্তার করার অনুরোধ করে। পর্তুগিজ সরকার তাকে গ্রেপ্তার না করলেও গোয়া থেকে বহিষ্কার করে। সাথে সাথেই তিনি দুই সরকারের সীমান্ত এলাকায় বন্দী হন। পুলিশ তাকে পুনে জেলে পাঠায়।[][]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

পুনে জেলে তার ওপর ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয়েছিল তথ্য ও পরিকল্পনার খবর আদায়ের নামে। আপোষহীন বিপ্লবী ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় তাদের কোনো তথ্যই সরবরাহ করেননি। ২৭ জানুয়ারি, ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে রাত্রে লক আপের ভেতরে ধুতির ফাঁসে আত্মহত্যা করেন এই তরুন বিপ্লবী।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৮৪। 
  2. Budheswar Pati (১৯৯৬)। India and the First World War। Atlantic Publishers & Dist। পৃষ্ঠা 124। 
  3. Volume 2, Srikrishna Sarala (১৯৯৯)। Indian Revolutionaries: A Comprehensive Study, 1757-1961। Prabhat Prakashan।