ভীম (বরেন্দ্র রাজা)

স্থানাঙ্ক: ২৫°০৭′২১″ উত্তর ৮৮°৩৭′১৩″ পূর্ব / ২৫.১২২৫° উত্তর ৮৮.৬২০২° পূর্ব / 25.1225; 88.6202
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ভীম(বরেন্দ্র রাজা) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দিবর দীঘি
রাজা ভীম দিবর দীঘি খনন ও দিবর জয়স্তম্ভ নির্মাণ করেন
দিবর দীঘি বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
দিবর দীঘি
দিবর দীঘি
অবস্থানপত্নীতলা উপজেলা, নওগাঁ জেলা
স্থানাঙ্ক২৫°০৭′২১″ উত্তর ৮৮°৩৭′১৩″ পূর্ব / ২৫.১২২৫° উত্তর ৮৮.৬২০২° পূর্ব / 25.1225; 88.6202
অববাহিকার দেশসমূহবাংলাদেশ
সর্বাধিক দৈর্ঘ্য১২০০ ফুট[১]
সর্বাধিক প্রস্থ১২০০ ফুট[১]
পৃষ্ঠতল অঞ্চলপ্রায় ২০ একর[১]
গড় গভীরতা১২ ফুট[১]

ভীম বরেন্দ্রর ইতিহাস অত্যন্ত শক্তিশালী একজন শাসক । তিনি ৩০ বছর বরেন্দ্র শাসন করেন। ভীম শাসন আমলে বরেন্দ্র এক সমৃদ্ধশালী রাজ্যে পরিনত হয়েছিল। ভীম একজন জনদরদী ও জনপ্রিয় রাজা ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ ও ভূসম্পত্তির সুবিধাভোগী শ্রেণীর অধিকারচ্যুত করেছিলেন ও তাদের থেকে কর আদায় করে কৃষক ও সাধারণ প্রজার কল্যাণে ব্রতী হয়েছিলেন। তার এই সাম্যবাদী মনোভাব ও জনকল্যাণের জন্য তাকে "মহামহিম" বলা হয়।[২] ভীম-এর বরেন্দ্র স্মৃতিতে স্থাপিত ভীমের ডাইং, ভীমের জাঙ্গাল, ভীম সাগর, ভীমের পান্টি প্রভৃতি এখনো তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। ভীম শাসক হিসেবে এ সমস্ত কীর্তি তাকে বরেন্দ্রর ইতিহাস স্মরনীয় করে রাখবে।[৩][১][৪][৫]

রাজবংশের প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস[সম্পাদনা]

পাল রাজাদের আমলে সামন্তরাজা দিব্য ১০৭৫-১০৮০ খ্রিস্টাব্দে কিছু সামন্ত ও কৃষকদের একত্রিত করে পাল রাজা মহীপালকে হত্যা করে বরেন্দ্রতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। দিব্যর মৃত্যুর পরে তার ভাই রূদক ও ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম বরেন্দ্র শাসন করেন।

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, মহীপালের ভাই রামপাল বরেন্দ্র উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। বরং দিব্য রামপালের রাজ্য আক্রমণ করে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত করেছিলেন। যদিও রামচরিতে দিব্যের রাজত্বকালের কোনো ঘটনার উল্লেখ নাই। তথাপি যিনি জাত বর্মা ও রামপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বরেন্দ্রী রক্ষা করতে পেরেছিলেন ও তিনি যে বেশ শক্তিশালী রাজা ছিলেন এবং বরেন্দ্রে তাহার প্রভূত্ব বেশ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা স্বীকার কতেই হবে। রামচরিতে ভীমের প্রশংসাসূচক কয়েকটি শ্লোক আছে এবং তাঁর রাজত্বের শক্তি ও সমৃদ্ধির বর্ণনা আছে। দিনাজপুরের কৈবর্ত স্তম্ভ আজও এ রাজবংশের স্মৃতি বহন করছে।[৬]

এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নীহাররঞ্জন রায় উল্লেখ করেছেন, দিব্যর পর রুদকের আমলেও রামপাল কিছু করে উঠতে পারেননি। রুদকের ভ্রাতা বরেন্দ্রীর অধিপতি হওয়ার পর সুপ্রতিষ্ঠিত কৈবর্ত শক্তি এক নূতন ও পরাক্রান্ততর আকারে দেখা দিল। ভীম জনপ্রিয় নরপতি ছিলেন, তাহার স্মৃতি আজও জীবিত। রামপাল শংকিত হয়ে প্রতিবেশী রাজাদের ও পাল রাষ্ট্রের অতীত ও বর্তমান স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সামন্তদের দুয়ারে দুয়ারে তাঁদের সাহায্য ভিক্ষা করে ঘুরে ঘুরে ফিরলেন। অপরিমিত ভূমি ও অজস্র অর্থ দান করে এই সাহায্য ক্রয় করতে হল।

এ প্রসঙ্গে নীহাররঞ্জন রায় আরো বলেছেন, ভীমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রামপাল অন্তত পনেরোজন রাজা এবং সামন্ত নায়কের পূর্ণ সহযোগীতা পান। এই সম্মিলিত শক্তিপুঞ্জের সঙ্গে ভীমের পক্ষে এঁটে ওঠা সম্ভব ছিলনা। রামচরিতে রামপাল কর্তৃক বরেন্দ্রীর উদ্ধার যুদ্ধের বিস্তৃত বিবরণ আছে। গঙ্গার উত্তর তীরে দুই সৈন্য দলে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং হস্তীপৃষ্ঠে যুদ্ধ করতে গিয়ে দৈব বিড়ম্বনায় উক্ত যুদ্ধে ভীম বন্দী হয়েছিলেন। ভীমের অগণিত ধনরত্ন রাজকোষ রামপালের সেনাদল কর্তৃক লুণ্ঠিত হয়। কিন্তু ভীম বন্দী হওয়ার অব্যাহিত পরেই ভীমের অন্যতম সুহৃদ ও সহায়ক হরি পরাজিত ও পর্যুদস্ত সৈন্যদের একত্রিত করে আবার যুদ্ধে রামপালের পুত্রের সম্মুখীন হন। কিন্তু অজস্র অর্থদানে কৈবর্ত সেনা ও হরিকে বশীভূত করা হয় এবং এভাবে শঠতা এবং দূর্নীতির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে ঐ যুদ্ধে জয়ী হন। ভীম সপরিবারে রামপাল হস্তে নিহত হন।[৭]

বাংলাদেশের লোককথা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে ভীমকে এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।[১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Pratidin, Bangladesh (২০১৯-০১-২২)। "নওগাঁয় এক রাতে তৈরি ঐতিহাসিক দিবর দীঘি"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৫ 
  2. Sharma, R. S.; Sharma, Ram Sharan (২০০৩)। Early Medieval Indian Society (pb) (ইংরেজি ভাষায়)। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 221–226। আইএসবিএন 978-81-250-2523-8 
  3. টেলিভিশন, Ekushey TV | একুশে। "কালের সাক্ষী নওগাঁর ঐতিহাসিক দিবর দীঘি"Ekushey TV (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৫ 
  4. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "ভীমের পান্টি কি হারিয়েই যাবে"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "ভীমের জাঙ্গাল - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৮ 
  6. মজুমদার, রমেশচন্দ্র। বাংলাদেশের ইতিহাস। পৃষ্ঠা ১১১–১১২। 
  7. রায়, নীহাররঞ্জন। বাঙ্গালীর ইতিহাস। পৃষ্ঠা ৩৯৫–৩৯৬।