ব্যবহারকারী আলাপ:Nazma Akhter

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম[সম্পাদনা]

স্নায়ুরোগবিদ্যা[সম্পাদনা]

স্নায়ুরোগবিদ্যা (Neurology গ্রীক শব্দ νεῦρον (neûron), "দড়ি বা রজ্জু; স্নায়ু" এবং শেষে প্রত্যয় -logia যুক্ত হয়েছে যার মানে "বিদ্যা") । চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে শাখায় স্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত সকল ব্যধি ও জটিলতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাকে স্নায়ুবিদ্যা বা স্নায়ুরোগবিদ্যা বলা হয়। স্নায়ুরোগবিদ্যার পরিধি কেন্দ্রীয় (সেনট্রাল=Central) ও প্রান্তীয় (পেরিফরাল =Peripheral)স্নায়ুতন্ত্র , স্বয়ংক্রিয়(অটনমিক =Autonomic) এবং দেহজ (সোমাটিক=Somatic) উভয় প্রকার এবং এদের আবরণ, সরবারহকারী রক্তনালী , স্নায়ু সরবারহ প্রাপ্ত সকল কোষের যেকোন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে দৈনন্দিন জীবনর স্বাভাবিক বুদ্ধিজাত কর্মকান্ডের অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে শুরু করে মাংসপেশীর বিভিন্ন রোগ এর অন্তর্ভুক্ত। স্নায়ুবিজ্ঞান স্নায়ুতন্ত্রের উপর তত্ত্বীয় গবেষণার ক্ষেত্র,যেখানে স্নায়ুরোগবিদ্যায় স্নায়ুবিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটানো হয়।

ইতিহাসঃ

প্রাচীনঃ প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গ্রন্থসমূহে মস্তিষ্কে আঘাতের চিকিৎসার বর্ণনায় শল্যপদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়। শুধু তাই নয় এ সকল গ্রন্থে মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুতে প্রবাহিত তরল (সেরেব্রস্পাইনাল ফ্লুইড = Cerebrospinal Fluid) ও মস্তিষ্কের ঝিল্লীর (মেনিনজেস = Meninges) বর্ণনা পাওয়া যায়। ইনকা সভ্যতায় “প্রস্তর যুগ” থেকে ছিদ্র বা গর্ত করে (ট্রেপ্যিানিং =Trepanning /Trephination) মস্তিষ্কের আঘাতের চিকিৎসার প্রমাণ দেখা যায় যা আধুনিক “বার হোল” (Burr Hole Surgery) চিকিৎসার অনুরূপ। তখন এই পদ্ধতি সাধারণতঃ যোদ্ধাদের উপর প্রয়োগ করা হোত এবং ফলাফল মৃ্ত্যুই হোত। ১৪০০ শতাব্দী থেকে ইনকা সভ্যতায় দক্ষ শল্যবিদের ন্যায় কাজ করা শুরু করে যার ফলে চিকিৎসাপ্রাপ্ত ৯০% রুগী সুস্থ হয়ে উঠে এবং সংক্রমণের হার অনেক কম দেখা যায়। পরবর্তীতে প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রাট্স (৪৬০খৃষ্টপূর্বাব্দ-৩৭০ষ্টপূর্বাব্দ) উপলব্ধি করতেন মৃগী রোগ (Epilepsy) কোন দৈব ঘটনা নয় বরং শরীরজাত কোন প্রাকৃতিক কারণ। এমনকি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায় স্নায়ুতন্ত্রের ব্যবচ্ছেদের প্রমাণ পাওয়া যায় উদাহরণস্বরূপ, এ্যারিস্টটল ( Aritotole) মস্তিষ্কের ঝিল্লীর বর্ণনা দেন এবং গুরুমস্তিষ্ক(Cerebrum) ও লঘুমস্তিষ্কের (Cerebellum)পার্থক্য বর্ণনা করেন। রোমের গ্যালেন (Galen) বাঁদর প্রজাতির উপর বহু ব্যবচ্ছেদ করেন এবং সুমেরিয় সভ্যতার কিছু চিত্রে “আবৃত্তিশীল স্বরযন্ত্রের স্নায়ুর (Recurrent Laryngeal Nerve)” গুরুত্বের বর্ণনা পাওয়া যায়। এছাড়া সুমেরীয় সভ্যতায় দৈহিক আঘাত থেকে পক্ষাঘাত ঘটার এবং প্রাচীন ভারতের বৈদিক যুগে রচিত ‘চক্রসংহিতায়’ মৃগী রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসার বর্ণনা পাওয়া যায়। চীনে ৫০০০-২০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে আবিষ্কৃত কিছু মাথার খুলিতে প্রাপ্ত ছিদ্র থেকে ধারণা করা হয় প্রাগৈতিহাসিক চীনে স্নায়ুবিদ্যার চর্চা ছিল। হান সাম্রাজ্যের সময় হুয়া তু এবং আল-আন্দালুস তথা স্পেনে মুসলমান সাম্রাজ্যের সময় আল-জাহরাওয়ি আঘাতসহ মস্তিষ্ক ও সনায়ুতন্ত্রর বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করতেন।

আধুনিক স্নায়ুরোগবিদ্যা উন্মেষকাল : স্নায়ুরোগবিদ্যা এবং স্নায়ুরোগের প্রকৃত উৎকর্ষ রেনেসাঁর সময় থেকে শুরু হয় । ১৪৯৯ খৃষ্টাব্দে জার্মানির লিপযিগ হতে প্রকাশিত জোহান পেইলিক্ রচিত “কম্পেনডিয়ম ফিলোসফি ন্যাচারালিস” বই আকারে শারীরসংস্থানবিদ্যা বা এ্যানাটমীর বই যেখানে মস্তিষ্কঝিল্লীর এবং মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠ সমূহেরর বর্ণনা পাওয়া যায়। স্নায়ুরোগবিদ্যার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে আঁদ্রে ভেসালিস কর্তৃক ১৫৪৩খৃষ্টাব্দে ডাচ ভাষায় প্রকাশিত “দ্য হিউম্যানিস করপরিস ফ্যাবরিকা” বইটির মধ্যমে। এখানে তিনি মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠ,মস্তিষ্কের ঝিল্লী, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের করোটিস্থ স্নায়ুসমূহ,পিটুইটারি গ্রন্থি,অক্ষিগোলকের গঠন, মগজ এবং মেরুরজ্জুর রক্ত সরবারহ , প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের সচিত্র বর্ণনা দেন। ভেসালিস তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের মতো মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠকে মূল নিয়ন্ত্রকারী অঙ্গ মানতে রাজী ছিলেন না।১৫৪৯ খৃষ্টাব্দে নেদারল্যান্ডের জ্যাসন প্রাটেনসিস প্রথম স্নায়ুরোগবিদ্যার উপর পূর্ণাঙ্গ বই প্রকাশ করেন যার নাম “দ্য সেরিব্রি মরবিস”। এই বইয়ে বিভিন্ন স্নায়ুরোগ ও এদের লক্ষণ বর্ণনা করা হয় এবং গ্যালেনসহ অন্যান্য গ্রীক,রোমান ও আরব গ্রন্থকারগণের ধারনাও আলোচনা করা হয় । প্রকৃতপক্ষে সংগঠিত আকারে স্নায়ুরোগবিদ্যার তত্ত্বীয় জ্ঞান চর্চার বিকাশ ঘটে ১৬শ শতাব্দী থেকে ১৯শ শতাব্দীর মধ্যে। থমাস ঊইলস্ মগজের গঠনবিন্যাস প্রকাশ করেন ১৬৬৪ খৃষ্টাব্দে,এরর ১৬৬৭ খৃষ্টাব্দে প্রকাশ করেন মস্তিষ্কের রোগসমূহ। তিনিই প্রথম “নিউরলজী” শব্দটি প্রয়োগ করেন। তিনি মগজকে করোটি থেকে পৃথক করতে সমর্থ হন এবং ঊইলস্ চক্র(সার্কল অফ ঊইলস্)- রক্তনালীর যে চক্রাকার গঠন মগজকে নিরবিচ্ছিন্নভবে রক্ত সরবারহ করে যাচ্ছে তা নির্ধারণ করেন। তিনি প্রতিবর্তি ক্রিয়া,পক্ষাঘাত ব্যাখা করেন। গ্যালভানি বৈদ্যুতিক কোষের মাধ্যমে মংসপেশীর সংকোচন ঘটিয়ে পেশীসমূহে তড়িৎ বিশ্লেষ্য উপস্থিতি প্রমাণ করেন । এছাড়া চার্লস বেল (১৭৭৪-১৮৪২) এবং ফ্র্যাংকইস ম্যাজেন্ডি(১৭৮৩-১৮৫৫) সংবেদনশীলতর স্নায়ু(সেনসরি নার্ভ) ও মাংসপেশীর স্নায়ু(মটর নার্ভ) পার্থক্য ও মেরুরজ্জুতে এর অবস্থান বর্ণনা করেন। এছাড়া মুখমন্ডলের স্নায়ুর (ফেসিয়াল নার্ভ) এবং মস্তিষ্কের গহবরে “ম্যাজেন্ডি ছিদ্র” (ফোরামনে অফ ম্যাজেন্ডি) বর্ণনা যথাক্রমে বেল ও ম্যাজেন্ডির অসাধারণ কীর্তি।স্নায়ুরোগ যে অসুস্থতা তার উপলব্ধি শুরু হয় ১৭৯৯খৃষ্টাব্দে ম্যাথিউ বেইলি এবং ১৮২৯ খৃষ্টাব্দে জিন ক্রভেইলার কর্তৃক রোগলক্ষণপূর্ণ রঙিন সচিত্র বর্ণনার মাধ্যমে। আণুবীক্ষণিক ভাবে স্নায়ুরোগের চর্চা ঘটে জে.ই.পার্কিন্জ কর্তৃক ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দে নিউরণ বা স্নায়ুকোষের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনার মধ্য দিয়ে ।তিনি ১৮৩৭ খৃষ্টাব্দে পার্কিন্জ কোষ আবিষ্কার করেন এবং ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে “সাবস্টনশিয়াল নায়াগ্রা” নামক মস্তিষ্কের একটি অংশে রঞ্জক পদার্থ নিউরমেলানিনের অস্তিত্ব পান। ক্যামিল গল্গি এবং সান্তিয়াগো র্যামন ওয়াই কাজাল ঊনবিংশ শতা্ব্দীর শেষ প্রান্তে স্নায়ুবিজ্ঞানের উপর অসাধারণ কাজ করেন এবং নিউরণের জালিকাকার শাখাসমূহ রঞ্জিত করে বুঝাতে সক্ষম হন স্নায়ুতন্ত্রের কোষ পরস্পরের সাথে সংস্পর্শর মাধ্যমে সংযোগ ঘটায় যাকে “সিন্যাপস্” বলা হয় যা স্নায়ুকোষেরই বৈশিষ্ট্য।তাঁদের এই আবিষ্কার ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করে এবং স্নায়ুরোগ চিকিৎসায় মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফরাসি বিজ্ঞানী পল ব্রোকা(১৮২৪-১৮৮০) পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির বাকশক্তি হারানো যে গুরুমস্তিষ্কের “বাকশক্তি কেন্দ্রের(স্পিচ সেন্টার)” সাথে জড়িত তা আবিষ্কার করেন যার নাম পরবর্তীতে ব্রোকা’স এরিয়া বা অঞ্চল রাখা হয়। ইভান পাভলভ(১৮৪৯-১৯৩৬) কুকুরের উর গবেষণা করে “অনৈচ্ছিক প্রতিক্রিয়া”র ধারনা দেন। বিভিন্ন যুগে প্রাপ্ত স্নায়ুতন্ত্রের উপর এই সকল গবেষণার ফলাফলসমূহের সমন্বয় সাধন এবং একীভূত করেন স্নায়ু-শারীরত্ত্ববিদ (নিউরোফিজিওলজিস্ট) চার্লস স্কট শেরিংটন(১৮৫৭-১৯৫২)। স্নায়ুকোষ তথা স্নায়ুবিদ্যার উপর তার কাজ ১৯৩২ খৃষ্টাব্দে এডগার আঁদ্রিয়ানের সাথে যৌথভাবে নোবেল এনে দেয়।

রোগ নির্ণয়ে আধুনিক স্নায়ুরোগবিদ্যার ক্রমবিকাশঃ যেসকল চিকিৎসকগণ প্রথম স্নায়ুরোগবিদ(নিরলজিস্ট) হিসবে স্নায়ুরোগবিদ্যার চর্চা শুরু করেন তাঁরা হলেন • মরিজ হেইনরিখ রম্বার্গ(১৭৯৫-১৮৭৩) যিনি ১৮২০-৫০ সময়কালের ইউরোপের সৃষ্টিশীল স্নায়ুরোগবিদগণের মধ্যে অন্যতম। সার্বজনীনভাবে প্রচলিত “রম্বার্গের লক্ষণ(রম্বার্গ’স সাইন)” তাঁরই অবদান। তিনি প্রথম স্বীকৃত স্নায়ুরোগবিদ(নিরলজিস্ট)। • উইলিয়াম এ.হ্যামন্ড আমেরিকার (১৮২৮-১৯০০) প্রথম স্নায়ুরোগবিদ(নিরলজিস্ট) যিনি স্নায়ুরোগের উপর বহু গ্রন্থ রচনা করেন এবং আমেরিকান নিউরোলজিকাল এ্যাসোসিয়েশনের অন্যম প্রতিষ্ঠাতা। • ফরাসি স্নায়ুরোগবিদ ডুশেন দ্য বঁলয়নি(১৮০৬-১৮৭৫) যাঁর হাত ধরে আধুনিক স্নায়ুরোগবিদ্যার বিকাশ ঘটে। কোষকলা কেটে বা ছেঁচে আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা(বায়প্সি),স্নায়ুর গতিবেগ পরিবহনের (N.C.S.) সক্ষমতা নির্ণয়ের পরীক্ষাসহ, মাংসপেশীর রোগ নির্ণয়ে তাঁর অবদান অমর হয়ে আছে। • জ্যঁ মার্তিন শার্কট(১৮২৫-১৮৯৩) ফরাসি স্নায়ুরোগবিদ যাঁকে ফ্রান্সের স্নায়ুরোগবিদ্যার জনক এবং বিশ্বের স্নায়ুরোগবিদ্যার অন্যতম পথিকৃ ৎ অভিহিত করা হয়। ১৯শ শতাব্দী থেকে পর্যায়ক্রমে কন্ডরার হাতুড়ি(Hammer), অফথ্যালমস্কোপ(Ophthalmoscope), পিন(pin) এবং স্বনশূ্ল(Tuning fork), সিরিঞ্জ, কটিদেশীয় সূঁচ(Lumber needle), রঞ্জন রশ্মি(X-ray) বং ই.ই.জি.(E.E.G.) এ্যানজিওগ্রাফি(Angiography) এবং সি.টি. স্ক্যানের আবিষ্কার ও ব্যবহার বর্তমান স্নায়ুবিজ্ঞান ও স্নায়ুরোগবিদ্যার অবস্থান তৈরী করেছে। ১৯শ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে স্নায়ুবিদ্যার সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সংযোগ স্থাপন শুরু হয় যেমন আঘাত এবং পক্ষাঘাত, সিফিলিসের সাথে মানসিক ও শারিরীক বৈকল্যের যোগসূত্র সহ স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় এ্যান্টিবায়টিকের ব্যবহার করা এমন অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করে যা ধাপে ধাপে বর্তমান অবস্থনে দিকে এগিয়ে চলে।

স্নায়ুচিকিৎসক (নিউরলজিস্ট): স্নায়ুচিকিৎসক বা নিউরলজিস্ট একজন চিকিৎসক যিনি স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিশেষায়িত হন এবং স্নায়ুতন্ত্রের রোগসমূহ লক্ষণসহ নির্ণয় করা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ও চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। তিনি রোগের গবেষণা, মানুষের উপর গবেষণার প্রয়োগ এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর মৌলিক বা পরিবর্তনমূলক গবেষণার সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকেন। স্নায়ুশল্যবিদ্যা বা নিউরসার্জারি স্নায়ুরোগবিদ্যার শল্যচিকিৎসা বা সার্জিকাল ক্ষেত্রের বিশেষায়িত শাখা। স্নায়ুতন্ত্রের রোগসমূহঃ ১) মাথাব্যথা সম্পর্কিত রোগসমূহঃ • উত্তেজনাজনিত মাথাব্যথা(Tension headache) • আধকপালি মাথাব্যথা (Migraine) • গুচ্ছবদ্ধ মাথাব্যথা (Cluster headache) • অতিরিক্ত ঔষধের ব্যবহারজনিত মাথাব্যথা (Medication overuse headache) • যুগ্ম-ত্রয়ী স্নায়ু জনিত মুখের স্নায়ুশূল (Trigeminal Neuralgia) । • ঝুঁকিহীন মাথাব্যথার আক্রমণ( Benign paroxysmal headaches)

২) মৃগী রোগ (Epilepsy)। ৩) কর্ণের অন্তঃভাগজনিত স্নায়ুরোগ • স্বল্প সময়ে কর্ণের অন্তঃভাগের কার্যক্ষমতা তীব্রভাবে হ্রাস পাওয়া(Acute vestibular failure) • ঝুঁকিহীন অবস্থানিক মাথা ঘোরার আক্রমণ (Benign paroxysmal positional vertigo) • মিনিয়ার্স রোগ (Ménière’s disease) ৪) নিদ্রাজনিত রোগঃ • দিবাকালীন অতিনিদ্রা: - অবচেতনে ঘুমে আক্রন্ত হওয়া(Narcolepsy)। • নিদ্রাবিকৃতি(Parasomnias): - অক্ষি দ্রুত চলাকালীন নিদ্রাবিকৃতি (REM sleep behaviour disorder)। - অক্ষি দ্রুত না চলাকালীন নিদ্রাবিকৃতি (Non-REM parasomnias)। - অস্থিরভাবে পা চালানো রোগ (Restless legs syndrome)। ৫) স্নায়ুতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগঃ • স্নায়ুতন্ত্রে বহুস্থানে কাঠিন্যভাব হওয়া (Multiple sclerosis) • স্বল্প সময়ে মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ুআবরণী পর্যন্ত প্রদাহ ছড়িয়ে পরা(Acute disseminated encephalomyelitis)। • মেরুরজ্জুর উভয় পাশে স্নায়ুআবরণীর প্রদাহ (Transverse myelitis)। • চোখের স্নায়ুআবরণীর প্রদাহ (Neuromyelitis optica)।

৬) স্নায়ুতন্ত্রের রোগের মাধ্যমে কর্কট রোগর অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া(Paraneoplastic neurological disorders)। ৭) স্নায়ুর ক্ষয়ুষ্ণতার রোগ(Neurodegenerative diseases) • নড়াচড়াজনিত রোগ( Movement disorders) । - পার্কিন্সন”স রোগ (Idiopathic Parkinson’s disease)। - বহুতন্ত্রের ক্ষয়জনিত রোগ (Multiple system atrophy)। - ক্রমবর্ধমান উপরিভাগের কেন্দ্রীয় কোষের ব্যধি (Progressive supranuclear palsy)। - গুরুমস্তিষ্ক-মস্তিষ্কের তলদেশ ক্ষয়জনিত রোগ(Corticobasal degeneration)। - উইলসন্স”স রোগ (Wilson’s disease)। - হাংটিংটন”স রোগ (Huntington’s disease)। • ভারসাম্যহীন অঙ্গসঞ্চালন( Ataxias )। - অন্য রোগের কারণে অর্জিত ভারসাম্যহীন অঙ্গসঞ্চালন (Acquired ataxia)। - বংশগত ভারসাম্যহীন অঙ্গসঞ্চালন (Inherited ataxias)। • কম্পন রোগ (Tremor disorders) । - অপরিহার্য কম্পন। - ঔষধের ব্যবহারজনিত কম্পন। • পেশীর অস্বাভাবিক দৃঢ়তা বৃদ্ধিজনিত রোগ (Dystonia) । • মুখের এক পাশের খিঁচুনি (Hemifacial spasm) । • পেশীতে সরবারহকারী স্নায়ুর রোগ (Motor neuron disease) । • মেরুদন্ডের পেশীরক্ষয়জনিত পেশী (Spinal muscular atrophy) । ৮) স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণঃ • মস্তিষ্কের ঝিল্লীর প্রদাহ (Meningitis): - ভাইরাস দ্বারা মস্তিষ্কের ঝিল্লীর প্রদাহ (Viral)। - ব্যাকটরিয়া দ্বারা মস্তিষ্কের ঝিল্লীর প্রদাহ (Bacterial)। - মস্তিষ্কের ঝিল্লীর যক্ষা (Tubercular)।

• স্নায়ুতন্ত্রের মূল গাঠনিক অঙ্গের কোষে ভাইরাসের সংক্রমণ (Parenchymal viral infections): - গুরুমস্তিষ্কের ভাইরাসের সংক্রমণ (Viral encephalitis)। - কান্ডবৎ মস্তিষ্কের ভাইরাসের সংক্রমণ(Viral encephalitis)। - পলিওময়ালাইটিস। - বিসর্প (Herpes zoster (shingles))। - সমগ্র গুরুমস্তিষ্কের কাঠিন্য আনয়নকারী প্রদাহSubacute sclerosing Panencephalitis)। - শ্বেত মস্তিষ্কের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়Progressive multifocal leucoencephalopathy।

• মস্তিষ্কের মূল গাঠনিক কোষে ব্যাকটরিয়ার সংক্রমণ (Parenchymal bacterial infections): - গুরুমস্তিষ্কের ফোঁড়া (Cerebral abscess)। - মস্তিষ্কের আবরণের তলদেশে পুঁজের সংক (Subdural empyema)। - মেরুদন্ডের আবরণের উপরে ফোঁড়া (Spinal epidural abscess)। - লাইম রোগ (Lyme disease)। - স্নায়ুর সিফিলিস (Neurosyphilis)। • ব্যাকটরিয়া নিঃসৃত বিষ দ্বারা সংক্রমণ(Diseases caused by bacterial toxins)। - ধনুষ্টংকার(Tetanus)। - বটুলিজম(Botulism)। • স্পঞ্জের ন্যায় ছিদ্রযুক্ত গুরুমস্তিষ্কের রোগ(Transmissible spongiform Encephalopathies)। - ক্রযফেল্ট-জ্যাকব রোগ(Creutzfeldt–Jakob disease)। - পরিবর্তনশীল ক্রযফেল্ট-জ্যাকব রোগ (Variant Creutzfeldt–Jakob disease)।

৯) মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে পিন্ডাকৃতির ক্ষত (Intracranial mass lesions ) • মস্তিষ্কের অধিমাংস (Brain tumours):  মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভত অধিমাংস (Primary brain tumours):  জীবনবিনাশি অধিমাংস (Malignant): ১. গ্লিওমা (Glioma)। ২. অলিগডেন্ড্রগ্লিওমা (Oligodendroglioma )। ৩. মেডুলব্লাস্টোমা (Medulloblastoma) ৪. এপেনডাইমোমা (Ependymoma )। ৫. গুরুমস্তিষ্কের লিম্ফোমা (Cerebral Lymphoma)।  জীবনবিনাশি নয় যে সকল অধিমাংস (Benign): ১. মেনিনজিওমা (Meningioma )। ২. নিউরফইব্রোমা (Neurofibroma )। ৩. ক্রানিওফ্যারানজিওমা (Craniopharyngioma )। ৪. পিটুইটারি এ্যাডেনোমা (Pituitary adenoma )। ৫. কলয়েড সিস্ট (Colloid cyst )। ৬. পিনিয়াল গ্রন্থিতে অধিমাংস (Pineal tumours)।

১০) মস্তিষ্কের উচ্চ অভ্যন্তরীণ চাপ (Raised intracranial pressure)। • পিন্ডাকৃতির ক্ষত(Mass lesion): - মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণ । - গুরুমস্তিষ্কের অধিমাংস। - সংক্রমণঃ ১. মস্তিষ্কের ফোঁড়া। ২.মস্তিষ্কের যক্ষা (Tuberculoma)। ৩. সিস্টিসার্কোসিস (Cysticercosis)। ৪. হায়ডেটিড সিস্ট (Hydatid cyst) । ৫. কলয়েড সিস্ট ( Colloid cyst )। • মস্তিষ্ক এবং মেরুরজ্জুর মধ্যে তরলের প্রবাহে বাধা। • মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত প্রবাহে বাধা। - মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত প্রবাহে বাঁধা। - আঘাত পাওয়া। • সমগ্র মস্তিষ্ক জলোস্ফীত(Odema) হওয়া। - মেনিনগোএনকেফালাইটিস। - আঘাত পাওয়া। - বিপাকীয় কারণে। - অজ্ঞাত কারণে মস্তিষ্কের উচ্চ অভ্যন্তরীণ চাপ।

১১) মস্তিষ্কে জলাবদ্ধতাঃ • জন্মগতভাবে (Congenital malformations): - সংকীর্ণ মস্তিষ্কের গহ্বর (Aqueduct stenosis)। - চিয়ারির বিকলাঙ্গতা ( Chiari malformations) । - ড্যান্ডি-ওয়াকারের রোগ (Dandy–Walker syndrome)। - জীবনবিনাশি নয় মস্তিষ্কের এমন জলকোষ( Benign intracranial cysts)। - জন্মগতভাবে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ (Congenital CNS infections)। - বিকলাঙ্গকরোটি-মুখমন্ডল (Craniofacial anomalies )। • অন্য রোগের কারণে (Acquired): - যেকোন পিন্ডাকৃতির ক্ষত (Mass lesions )। - শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া । • মস্তিষ্ক আঘাতপ্রপ্ত হওয়া।

১২) লঘুমস্তিষ্কের রোগসমূহ (Disorders of Cerebellar Function)।

১৩) মেরুদন্ড ও মেরুরজ্জুর রোগসমূহঃ • গ্রীবার ব্যথা উৎপাদনকরী রোগসমূহ (Cervical spondylosis): - গ্রীবাসংবন্ধীয় স্নায়ুর মূলদেশে রোগ (Cervical radiculopathy)। - গ্রীবাদেশীয় মেরুরজ্জুর রোগ (Cervical myelopathy)। • কটিদেশে ব্যথা উৎপাদনকরী রোগসমূহ (Lumbar spondylosis): - কটিদেশস্থ মেরুদন্ডর চাকতি সম্মুখে প্রসারিত হওয়া (Lumbar disc herniation)। - কটিদেশস্থ মেরুদন্ডের নালী সংকুচিত হওয়া( Lumbar canal stenosis)। • মেরুরজ্জুর উপর বাহির থেকে চাপ পড়া ( Spinal cord compression): - মেরুদন্ডের অস্থি সংক্রান্ত (Vertebral): ১) মেরুদন্ডের অস্থিতে ঘাত পাওয়া(Trauma)। ২) মেরুদন্ডের অস্থির চাকতি স্থানচ্যুত হওয়া (Intervertebral disc prolapse)। ৩) অন্য অঙ্গের কর্কট রোগের মেরুদন্ডে বিস্তার লাভ (Metastatic carcinoma)। ৪) প্লাজমা কোষের কর্কট রোগ (Myeloma)। ৫) যক্ষা (Tuberculosis)। - মস্তিষ্কের ঝিল্লীর অধিমাংস (Meninges Tumours): - মেরুরজ্জুস্থ অধিমাংস (Spinal cord Tumours)। • মেরুরজ্জুর অভ্যন্তরীণ রোগ (Intrinsic diseases of the spinal cord): - জন্মগত (Congenital): ১) বিভক্ত মেরুদন্ড (spina bifida)। ২) বংশানুক্রমিক অস্বাভাবিক দৃঢ়তাজনিত নিম্নাঙ্গের পক্ষাঘাত (Hereditary spastic paraplegia। - সংক্রমণ ও প্রদাহজনিত(Infective/ Inflammatory)। অনুপ্রস্থাকারে মেরুরজ্জুর প্রদাহ (Transverse myelitis ) বিসর্প (HZV), সিস্টসোমিয়াসিস (schistosomiasis), এইচ.আই.ভি(HIV), মাল্টিপল্ স্কেলেরসিস(MS), সারকয়ডসিস (sarcoidosis) ইত্যাদির কারণে অনুপ্রস্থাকারে মেরুরজ্জুর প্রদাহ (Transverse myelitis ) - সরবারহকারী রক্তনালী সংক্রান্ত (Vascular)। - কর্কট রোগ(Neoplastic)। - বিপাকীয়(Metabolic)। - ক্ষয়জনিত (Degenerative)। ১৪) প্রান্তীয় স্নায়ুর রোগসমূহ(Diseases of Peripheral Nerves):

    স্নায়ুর গমনপথে আটকে পড়া (Entrapment neuropathy), স্নায়ু রোগের একাধিক উৎস স্থল(Multifocal neuropathy), একাধিক স্নায়ুর রোগ (Polyneuropathy), দীর্ঘস্থায়ী একাধিক স্নায়ুর রোগ(Chronic demyelinating Polyneuropathy) ই্ত্যাদি রোসমূহ সাধারণতঃ নিম্নলিখিত কারণে হয়ে থাকে-

- শার্কট-মেরী ট্যুথ ডিজিজ সহ বিভন্ন বংশানুক্রমিক স্নায়ুর রোগ। - সমগ্র দেহ আক্রান্ত হয় যেমন,বহুমূ্ত্ররোগ(Diabetes), সারকয়ডসিস (Sarcoidosis),কিডনীর কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় ইত্যাদি - থায়ামিন, পাইরিডক্সিন, বি১২ ভিটামিন ই সহ বিভিন্ন খাদ্যপ্রাণের অভাব। - এইচ.আই..ভি. , কুষ্ঠ , ব্রূসেলসিস সহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যধি। - মদ (Alcohol), সীসা( lead), আর্সেনিক (arsenic), পারদ (mercury), ইত্যাদির বিষক্রিয়া। - গুলিয়ান-বাড়ে সিনড্রম(Guillain–Barré syndrome)সহ বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগ।

           ব্র্যাকিয়াল স্নায়ুজালিকার রোগ(Brachial plexopathy), লাম্বোস্যাকরাল স্নায়ুজালিকার রোগ(Lumbosacral plexopathy) সধারণতঃ আঘাত, কর্কট রোগের বিস্তার বা প্রদাহজনিতরগের কারণে হয়।

১৫) স্নায়ু-পেশীর সংযোগস্থলের রোগঃ • মায়াস্থানিয়া গ্রাভিস (Myasthenia gravis)। • লাম্বার্ট-ইটন মায়াস্থানিয়া (Lambert–Eaton myasthenic syndrome)। ১৬) পেশীর অসামঞ্জস্যতাঘটিত রোগ (Muscular dystrophies): • পেশীর দৃঢ়তাজনিত অসামঞ্জস্যতা (Myotonic dystrophy)। - দেহের মধ্যতলের নিকটবর্তী পেশীসমূহের দৃঢ়তাজনিত রোগ(Proximal myotonic Myopathy)। - ডুশেন পেশীর অসামঞ্জস্যতা(Duchenne)। - বেকার পেশীর অসামঞ্জস্যতা(Becker)। - অঙ্গ বেষ্টনীর পেশীর অসামঞ্জস্যতা(Limb girdle)। - মুখ-পৃষ্ঠদেশ-বাহুর পেশীর অসামঞ্জস্যতা(Facioscapulohumeral)। - চক্ষু-গলবিলের পেশীর অসামঞ্জস্যতা(Oculopharyngeal)। - ইমারি-ড্রেইফাস(Emery–Dreifuss)। • বংশানুক্রমিক পেশীর বিপাকীয় অসামঞ্জস্যতার রোগ(Inherited metabolic myopathies): - শর্করার বিপাকীয় অসামঞ্জস্যতার রোগ (Carbohydrate metabolism) ১. ম্যাকার্ডল”স রোগ। ২. পম্পে”স রোগ। - স্নেহজ পদার্থের বিপাকীয় অসামঞ্জস্যতার রোগ (Lipid metabolism)। - মাইটকন্ড্রিয়ার বিপাকীয় অসামঞ্জস্যতার রোগ(Mitochondrial disorders)। • পেশীর তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ(Muscle channelopathies): - সোডিয়াম (Sodium)পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ। - পটাসিয়াম (Potassium)পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ। - ক্লোরাইড (Chloride)পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ। - ক্যালসিয়াম(Calcium) পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ।

মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগের লক্ষণসমূহঃ • মাথা ব্যথা। • মুখমন্ডলে ব্যথা। • মাথা ঘোরা। • খিঁচুনি। • হঠাৎ মুহূর্তের জন্য জ্ঞান হারানো। • সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে যাওয়া। • বিকারগ্রস্ত হওয়া – সাময়িকভাবে বা দীর্ঘদিন ধরে। • দূর্বলতা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি। • শরীরের কোন অঙ্গ বা পার্শ্ব অবশ হয়ে যাওয়া। • স্মৃতি বিভ্রম। • ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। • অস্বাভাবিক নড়াচড়া। • অস্বাভাবিক হাঁটা। • পারিপার্শ্বিক উপলব্ধিতে অস্বাভাবিকতা। • শারিরীক ভারসাম্যহীনতা। • অস্বাভাবিকভাবে ভাষার ব্যবহর এবং বাকপ্রণালী। • শব্দ উচ্চারণে অস্বাভাবিকতা। • ঘ্রাণশক্তির অস্বাভাবিকতা। • দৃষ্টিশক্তি বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং চক্ষু সংক্রান্ত জটিলতা। • শ্রবণশক্তির অস্বাভাবিকতা। • গলাধঃকরণে সমস্যা। • মল-মূত্র ত্যাগে অস্বাভাবিকতা – আটকে যাওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। • যৌন ক্ষমতার অস্বাভাবিকতা। • ব্যক্তিত্বের লক্ষণীয় পরিবর্তন। • নিদ্রাহীনতা। • মনোরোগের উদ্ভব হওয়া। স্নায়ুতন্ত্রের পরীক্ষা : রোগের ইতিহাস বর্ণনা: প্রকৃতপক্ষে স্নায়ুতন্ত্রের রুগীর পরীক্ষা করা শুরু হয় রুগী অথবা রুগীর পরিবারের সদস্যের রোগের ইতিহাস বর্ণনা থেকে । ইতিহাস থেকেই চিকিৎসক সিদ্ধান্ত নেবেন শারীরিক পরীক্ষা কিভাবে শুরু করবেন এবং পরীক্ষাগারে কি পরীক্ষা দিবেন। সতর্কতার সাথে ইতিহাস নেবার সময় চিকিৎসক নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উপর জোর দেন – • রুগীর বয়স, লিঙ্গ, পেশা। • রোগের লক্ষণাদি প্রকাশের সময়কাল – অল্প সময়/ দীর্ঘ সময় /মাঝেমাঝে। • রোগে উৎপত্তি শরীরের যে অংশ থেকে। • লক্ষণাদি প্রকাশে রুগীর ভাষা , পরিবারের সদস্যের বক্তব্যের ভাষার সমন্বয় আছে কি না। • রুগী ডান হাতি বা বাম হাতি। • একই ধরনের রোগের পারিবারিক ইতিহাস। • অন্যকোন শারীরিক অসুস্থতা আছে কি না। • কোন ঔষধ ব্যবহার বা অপব্যবহারের ইতিহাস আছে কি না। • রুগীর সামাজিক অবস্থান।

মানসিক অবস্থার পরীক্ষাঃ সীমিত পরিসরে মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ (Mini Mental State Examination-MMSE) করা হয়। মোট ৩০ এর মধ্যে MMSE হিসাব করা হয়। যদি গণনায় ২৪ এর নীচে হয় তবে বুঝতে হবে সহজাত বুদ্ধিজাত কর্মকান্ড লোপ পেয়েছে। সীমিত পরিসরে মানসিক অবস্থা পরীক্ষার সময় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ দেখা হয়ঃ • স্মৃতিশক্তিঃ কোন নতুন নাম-ঠিকানা বলার ১/২ মিনিট পর রুগীকে পুনরাবৃত্তি করতে বলা হয় এবং এই সময়ের মধ্যে রুগীর মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানো হয় যাতে স্মৃতিশক্তি অক্ষত আছে বুঝা যায়। • মনোঃসংযোগঃ ১০০ থেকে ধারাবাহিকভাবে ৭ বিয়োগ করে প্রতিবার বিয়োগফল জিজ্ঞেস করা হয়। • সমন্বয় সাধনঃ স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সমন্বয় ক্ষমতা বুঝার জন্য রুগীর ব্যক্তিগত পরিচয়, পরীক্ষাকালিন দিনক্ষণ এবং অবস্থান জিজ্ঞেস করা হয়। • বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাঃ রুগীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্ন করা হয় এবং কথা বলা, ভাষাজ্ঞান ও প্রশ্ন বুঝতে পারার ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। শারীরিক পরীক্ষাঃ • করোটিস্থ স্নায়ুসমূহ ( Cranial Nerves):

১) ঘ্রাণ-সংক্রান্ত স্নায়ু(Olfactory N.)- ঘ্রাণ গ্রহনে কোন সমস্যা থাকলে পরীক্ষা করা হয়। ২) দৃষ্টি-সংক্রান্ত স্নায়ু (Optic N.) - দৃষ্টির তীক্ষ্নতা এবং পরিসীমা দেখা হয়। - টর্চ লাইট দোদুল্যমান (Swinging torch test) করে তারা রন্ধ্রের (Pupil) করমক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। - চক্ষুর অভ্যন্তর দেখার জন্য অফথ্যালমস্কপ( Ophthalmoscopy) যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। ৩) চক্ষুর সঞ্চালনকারী স্নায়ু (Oculomotor N.) - অক্ষিগোলক(Eyeball) ওচোখের পাতার নড়াচড়া এবং তারা রন্ধ্রের আকৃতি এবং সমতা দেখা হয়। ৪) কপিকল স্নায়ু (Trocholear N.) এবং ৬) সংকোচনকারী স্নায়ু (Abducens N.) - অক্ষিগোলক(Eyeball) ভিতরের, বাহিরের এবং নীচের দিকের নড়াচড়া দেখা হয়। ৫) যুগ্ম-ত্রয়ী স্নায়ু( Trigeminal N.)

-  মুখের উভয় পাশে উপরি, মধ্য এবং নিম্ন অংশের অনুভূতি 
- মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি 
- স্বাদ গ্রহণ ক্ষমতা।
- অচ্ছেদাপটলের (Cornea) প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
৭) মুখমন্ডলে সরবারহকারী স্নায়ু(Facial N.)
  -  মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তি 
  -  স্বাদ গ্রহণ ক্ষমতা।
  - মুখমন্ডলে উভয় পাশে সমত/অসমতা।

৮) কর্ণের প্রবেশ চত্বর ও অন্তঃভাগে সরবারহকারী স্নায়ু( (Vestibulococohlear N.)

  - শ্রবণ ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ফিস্ ফিস্ করে বা কানের পাশে চুলের ঘরষণ করা হয়।
  - বধিরতার ধরণ বুঝর জন্য স্বনশূল দিয়ে “রিনি ওয়েবার” (Rinne and Weber) পরীক্ষা করা হয়া।
  - মাথা-ঘোরা থাকলে হলপাইক (Hallpike test) পরীক্ষা করা হয়া।

৯) জিহবা ও গলবিল সরবারহকারী স্নায়ু (Glossopharyngeal N.) এবং ১০) ভ্রমণশীল স্নায়ু (Vagus N.) - – জিহবার নড়াচড়া এবং তালু ও আলা-জিহবার অবস্থান ও সমতা দেখার জন্য গ্যাগ প্রতিবরত ক্রিয়া (Gag reflex) পরীক্ষা করা হয়া।

১১) আনুষঙ্গিক স্নায়ু(Accessory N.)-ঘাড়ের উভয় পাশের মাংশপেশীর সমতা, নড়াচড়া ও শক্তি, ক্ষয় পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়।

১২) জিহবার তলদেশে সরবারহকারী স্নায়ু (Hypoglossal N.) – জিহবার ক্ষয়, গাঠনিক অবস্থান ও বেরিয়ে থাকা দেখা হয়।

• পেশী সঞ্চালনসংক্রান্ত পরীক্ষাঃ শরীরের উভয় পার্শ্ব সমানভাবে একসাথে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। ১) বাহ্যিক অবস্থাঃ সতর্কতার সাথে হাত ও পায়ের সকল অংশের পেশী সমূহ নিরীক্ষণ এবং স্পর্শ করে দেখা হয় - মংসপেশীর বাঁধন - ব্যথা - ক্ষয়িষ্ণুতা - অতিকায় আকৃতিপ্রাপ্ত হওয়া - অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া

২) পেশীর দৃঢ়তাঃ চিকিৎসক রুগীর হাত ও পায়ের পেশী সমূহে রুগীর কোনরকম চেষ্টা ব্যতীত নড়াচড়া (Passive movement) করিয়ে মাংসপেশীসমূহের প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বারা দৃঢ়তা পরীক্ষা করেন । - দৃঢ়তা কমে যাওয়া এবং বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থাৎ অনমনীয় হওয়া (Spasticity or Rigidity) উভয়ই স্নায়ুরোগের লক্ষণ।

৩) পেশীর শক্তি বা প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ রুগীর হাত ও পা সম্প্রসারিত করে চিকিৎসক কর্তৃক প্রতি অঙ্গে পেশীর উপর বল প্রয়োগ করে দেখা হয় রুগী সর্বচ্চ কত শক্তি দিয়ে তা প্রতিরোধ করতে পারে। পেশীর শক্তি বা প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ণয়ের জন্য একটি স্বিকৃত মানদন্ড (MRC scale = Medical Research Council Scale) আছে যা নিম্নরূপঃ ০ = কোন নড়াচড়া নেই। ১ = একটু ঝাড়া দেয়া বা অতি সামান্য নড়ে উঠা। ২ = কেবলমাত্র ভার না থাকলে নড়তে পারে। ৩ = ভারের বিপরীতে নড়তে পারে কিন্তু বল প্রয়োগ প্রতিরোধ রতে পারে না। ৪ = বল প্রয়োগ প্রতিরোধ রতে পারে। ৫ = স্বাভাবিক শক্তিসম্পন্ন।

৪)প্রতিবর্তি ক্রিয়াঃ প্রতিবর্তি ক্রিয়া পরীক্ষা মাধ্যমে পেশীতে স্নায়ুর সরবারহ মূল্যায়ন করা হয় যা নিম্নরূপঃ • উর্ধাঙ্গের জন্যঃ ক) দ্বিশির(Biceps) মাংসপেশী যা বাহুর উর্ধ্বাংশে অবস্থিত – গ্রীবাসংবন্ধীয় (Cervical - C5 , C6) স্নায়ু খ) পুরোবাহুর(Forearm) মাংসপেশী(Brachioradiali) - গ্রীবাসংবন্ধীয় (Cervical - C5 , C6) স্নায়ু গ) ত্রিশির(Triceps) মাংসপেশী যা বাহুর উর্ধ্বাংশের পশ্চাৎদিকের অবস্থিত - গ্রীবাসংবন্ধীয় স্নায়ু(Cervical – C7 , C8)

• নিম্নাঙ্গের জন্যঃ

                        ক) মালাইচাকি (Patellar) or quadriceps বা ঊরুর সম্মুখভাগের চার শির বিশিষ্ট মাংসপেশী        
                        (Quadriceps) – কটিদেশস্থ(Lumbar -( L3 , L4) স্নায়ু
                        খ) পায়ের পশ্চাৎদিক  অবস্থিত কন্ডরা (Tendon) যাকে এ্যাচিলিস (Achilles) টেন্ডন 
                         -        ত্রিকাস্থিতে(Sacral - S1 , S2 ) সরবারহকারী স্নায়ু

প্রতিবর্তি ক্রিয়া নির্ণয়ের মানদন্ডটি নিম্নরূপঃ ০ = অনুপস্থিত ১= উপস্থিত কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে কম ২ = স্বাভাবিক ৩ = অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া ৪ = ক্ষিপ্রবেগে অঙ্গ বিক্ষেপ(Clonus) হওয়া • ত্বকের প্রতিবর্তি ক্রিয়াঃ ক) পদলের প্রতিবর্তি ক্রিয়া । ১) পায়ের আঙ্গুলসমূহ নমিত হলে = স্বাভাবিক ২) পায়ের আঙ্গুলসমূহ সম্প্রসারিত হলে =মস্তিষ্ক হতে ত্রিকাস্থি(Sacral)র উপেরের যেকোন অংশ আঘাতপ্রাপ্ত বা রোগগ্রস্ত খ) পেটের ত্বকের প্রতিবর্তি ক্রিয়া । গ) অন্ডকোষের আবরণের ত্বকের প্রতিবর্তি ক্রিয়া। প্রতিবর্তি ক্রিয়ার পরীক্ষা দেহের উভয় পাশে ক্রমান্বয়ে করে যেতে হয়। • সমন্বয় সাধন ক্ষমতাঃ - গোড়ালি-পদ (Heel-Shin test)পরীক্ষা। - পদতলে লঘু আঘাতকরণ। লঘুমস্তিষ্কের( ) কর্মক্ষমতার পরীক্ষাঃ ১) অঙ্গসঞ্চালনের মাধ্যমে দূরত্ব বুঝতে পারার ক্ষমতাঃ - হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাকের ডগা স্পর্শ করা। - পায়ের গোড়ালি দিয়ে অপর পায়ের উপর ঘর্ষণ করা। ২) অসংগতিপূর্ণ অঙ্গসঞ্চালন ৩) অক্ষিগোলকের কম্পন। ৪) উদ্দেশ্যপূর্ণ নড়াচড়ার সময় কম্পন। ৫) ছাড়াছাড়া কথা বলা।

• সংবেদনশীলতা (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতির)পরীক্ষাঃ

রুগীর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সংবেদনশীলতা অক্ষত আছে কিনা বুঝার জন্য শরীরের নির্দিষ্ট স্নায়ু সরবারহের এলাকা অনুযায়ী পিন, তুলা, স্বনশূল ( ) দ্বারা নিম্নলিখিত অবস্থাসমূহ পরীক্ষা করে দেখা হয়ঃ ১) মৃদু স্পর্শ – তুলা দ্বারা ২) যন্ত্রণাদায়ক স্পর্শ – পিন দ্বারা ৩) স্পন্দনের অনুভূতি - স্বনশূল দ্বারা ৪) অবস্থানগত অনুভূতি – বড় পদাঙ্গুলি দ্বারা

• হাঁটার ধরন

• রম্বার্গিজম পরীক্ষা( Rombergism Test): দুই চোখ বন্ধ করে রুগীকে দুই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে বলা হয় । রোগগ্রস্ত না হলে রুগী ঐ অবস্থয় দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে, রোগগ্রস্ত হলে রুগী টলায়মান হয়ে পড়ে যাবে।

রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ • স্নায়ুতন্ত্রের রশ্মিচিত্র(Neuroimaging): স্নায়ুতন্ত্রে রশ্মি বিকিরণের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের চিত্র উত্তলন করে নিম্নে উল্লেখিত রোগসমূহ নির্ণয় করা যেতে পারেঃ ১) রঞ্জন-রশ্মি (X-Ray) -করোটির আঘাত বা বাহির থেকে ঢুকে যাওয়া বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের জন্য।

২) সি.টি(Computed Tomography – CT): কম্পিউটার টমোগ্রাফির মাধ্যমে প্রাপ্ত চিত্র।

- সন্ন্যাসরোগ(Stroke)- রক্ত ক্ষরণ জনিত বা রক্ত সরবারহের অপ্রতুলতাজনিত । - করোটির এবং মেরুদন্ডের অস্থির রোগ নির্ণয়ে। - ক্যালসিয়ামের আধিক্যে( Calcification) মস্তিষ্কের আক্রান্ত অংশ । - মস্তিষ্কের ক্ষয়(Atrophy)। - মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের অধিমাংস(Tumour)/ফোঁড়া(Abscess)/জলকোষ(Cyst)। - মস্তিষ্কের প্রকোষ্ঠে পানি জমার (Hydrocephalus) - যেকোন মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেইন।

    রঞ্জন রশ্মি দ্বারা অভেদ্য এমন তরল রাসায়নিক মাধ্যম ব্যবহার করে যেসব সি.টি. করা হয় তাদের ‘কন্ট্রাস্ট সি.টি.’ বলা হয়। ‘কন্ট্রাস্ট সি.টি.’অধিমাংসের ধরন নির্ণয়ে ব্যবহার করা 
                              ৩) সি.টি. স্ক্যানের মাধ্যমে স্নায়ুধমনীর রশ্মিচিত্র (CTangiography – CTA) :

- মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের সরবারহকারী ধমনীর আক্রান্ত অংশ দেখার জন্য।

                       ৪) চু্ম্বকীয় তরঙ্গের দ্বারা সৃষ্ট ধ্বনিচিত্র (এম.আর .আই-ম্যাগনেটক রেজোনেন্স ইমেজিং) :

সি.টি. যেসকল ক্ষেত্রে করা হয় এম.আর .আই সেসব ক্ষেত্রে করা যায়।যেহেতু এম.আর .আই চু্ম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে করা হয় সেইজন্য যেসব ক্ষেত্রে সি.টি.করা যায় না সেইসকল ক্ষেত্রেও এম.আর .আই উপযোগী বিশেষ করে মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর রোগ নির্ণয়ে, অনেক ক্ষেত্রে সি.টি. র চেয়ে অধিক কার্যকরী। তবে যাদের দেহে ধাতব কৃত্রিম ঙ্গ স্থাপন করা আছে এং যাদের জন্য আবদ্ধ স্থান আতংকস্বরূপ তাদের জন্য এম.আর .আই নিষিদ্ধ। এম.আর .আই এর ব্যবহার দেখা যায় - মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের পিন্ডাকৃতির ক্ষত সন্দেহ করলে। - বিচ্ছিন্ন হতে পারে মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের এমন ক্ষত দেখার জন্য। - স্মৃতি বা চিত্ত ভংশদেখা দিলে। - মৃগী রোগে মস্তিষ্কের আক্রান্ত স্থান। - মাল্টিপল স্কেলেরসিস বা স্নায়ুতন্ত্রে বহুস্থানে কাঠিন্যভাব নির্ণয়ে জন্য - মস্তিষ্কের পশ্চাৎ অংশের খাঁজ দেখার জন্য। - মস্তিষ্কের টেম্পরাল অংশদেখার জন্য। - সন্ন্যাসরোগ(Stroke)- রক্ত ক্ষরণ জনিত বা রক্ত সরবারহের অপ্রতুলতাজনিত ।

                  ৫) এম.আর .এ (ম্যাগনেটক রেজোনেন্স এ্যানজিগ্রাফি-এম.আর.এ.) - মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের 
               সরবারহকারী রক্তনালীর আক্রান্ত অংশ দেখার জন্য করা হয়।

- রক্তনালীর ত্রূটিপূর্ণ গঠন দেখার জন্য। - মেরুদন্ডের মস্তিষ্কের তলদেশের রক্ত সরবারহের অপ্রতুলতা বুঝার জন্য। - ক্যারোটিড ধমনীর ছেদন ঘটে গেলে।

• স্নায়ুর শারীরবৃত্তিয় কার্যধারা নির্ণয়ের পরীক্ষাঃ

১) মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের লেখচিত্রঃ মাথার খুলির ত্বকে বৈদ্যুতিক তারের প্রান্তভাগের সংযোগ ঘটিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। - মৃগীরোগ। - মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা দেয়া। - অবচেতন থাকা। - টেম্পরাল অংশের রোগ দেখা। - খুব ধীরে বিস্তার ঘটানো ক্ষত নির্ণয়ের জন্য।  ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা বা অধিক সময় নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের লেখচিত্র পর্যবেক্ষণ করা হয় যখন মন হয় রোগ নিশ্চিত আছে কিন্তু উৎস বুঝা যাচ্ছে না।  বিশেষায়িত কেন্দ্রে চু্ম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গের লেখচিত্র ব্যবহার করা হয় – - মস্তিষ্কে যে অংশে কেন্দ্রীভূত মৃগীরোগের উৎস কেন্দ্রীভূত আছে তা শল্যচিকিৎসার জন্য চিহ্নিত করতে। - স্নায়ুর শারীরবৃত্তিয় কার্যধারা ধরন বুঝার জন্য ইলেকট্রোড স্থাপনের জায়গা চিহ্নিত করতে। - মস্তিষ্কের অধিমাংস মানচিত্রকরণ করতে।

২) উদ্দীপনা আবির্ভাব ঘটানোর পরীক্ষা(ইভক্ড পটেনশিয়ালস্) : মস্তিষ্কের যে অংশে কার্যক্ষমতা বুঝার প্রয়োজন সেইংশে বৈদ্যুতিক তারের প্রান্তভাগের(ইলেক্ট্রোড) সংযোগ ঘটিয়ে এই পরীক্ষা করা হয়। নিম্নলিখিত রোগসমূহ মস্তিষ্কে বিস্তার ঘটেছে কিনা ত বুঝার জন্য ইভক্ড পটেনশিয়ালস্ করা হয়ঃ - সম্ভাব্য মাল্টিপল স্কেলেরসিস বা স্নায়ুতন্ত্রে বহুস্থানে কাঠিন্যভাব নির্ণয়ে জন্য - এইডস্। - লাইম ডিজিজ। - সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথোমেটোসাস। - সস্পাইনোসেরিবেলার ডিজেনারেশন। (মেরুরজ্জু-লঘু মস্তিষ্কে ক্ষয়)। - বংশানুক্রমিক অস্বাভাবিক দৃঢ়তাজনিত নিম্নাংশের ক্ষাঘাত। - ভিটামিন বি১ ও ই অভাবজনিত।


                            ৩) মাংসপেশীর বৈদ্যুতিক তরঙ্গের লেখচিত্র(ই.এম.জি.) বিশ্রামরত অবস্থায় এবং মাংসপেশীর সংকোচনের সময় বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত করে পেশীর কার্যক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাংসপেশীর দূর্বলতা ও ক্ষয়জনিত রোগ  নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।
                            ৪)  স্নায়ুর গতিবেগ পরিবহনের (N.C.S.) সক্ষমতা নির্ণয়ের পরীক্ষাঃ মাংসপেশীরকে উদ্দীপ্ত করে পেশীকে সরবারহকারী স্নায়ুর গতিপথে  বৈদ্যুতিক তরঙ্গের প্রতিক্রিয়া লিপিবদ্ধ করা হয়।এটি করা হয়ঃ

- বংশানুক্রমিক স্নায়ুর গঠনগত রোগ – বিস্তৃত আকারে এন.সি.এস. এর পরিবর্তন দেখা যায়। - স্নায়ুর উপর চাপজনিত অবশ হওয়া – একটি নির্দিষ্ট স্থানে এন.সি.এস. এর পরিবর্তন দেখা যায়। - গুলিয়ান-বারি সিনড্রোম এবং একাধিক স্নায়ুর প্রদাহজনিত মিশ্র অবস্থা - বহুমুখী এন.সি.এস. এর পরিবর্তন দেখা যায়।

                     ৫)  এফ(F)-ওয়েভ নিরীক্ষণঃ এই পরীক্ষাটি রা হয়-

- সুষম্নাস্নায়ুর মূলদেশে রোগ সত্ত্বেও স্নায়ুর গতিবেগ পরিবহনের (N.C.S.) ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকলে। - সম্ভাব্য গুলিয়ান-বারি সিনড্রোম হলে।


• মস্তিষ্ক এবং মেরুরজ্জুর মধ্যে প্রবাহমান তরলের নিরীক্ষণ(C.S.F. Study): কটিদেশে মেরুদন্ডের ৩ ও ৪ নং কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে সুঁই ঢুকিয়ে প্রবাহমান তরলের কিছু অংশ সংগ্রহ করা হয়। একে লাম্বার পাংচার টেস্ট বলা হয়। সি.এস.এফ. স্টাডি মস্তিষ্কও মস্তিষ্কের ঝিল্লীর সংক্রমণ,ঝিল্লীর তলদেশে রক্ত ক্ষরণ, মস্তিষ্কের উচ্চ অভ্যন্তরীণ চাপঃমাল্টিপল স্কেলেরসিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত বিভিন্ন রোগে করা হয়া

• বংশগতির ধারা নির্ণয়ের পরীক্ষা: বংশানুক্রমিক রোগ নিশ্চিতকরণেরর জন্য ডি.এন.এ. বিশ্লেষণ করা হয়।

• রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ণয়ের পরীক্ষা: অধুনা গবেষণায় দেখা গেছে স্নায়ুন্ত্রের অনেক রোগ, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিবর্তনের কারণে হয়।রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যতয়ের ফলাফল মাংসপেশীর এবং পেশী-স্নায়ুর সংযোগস্থলের রোগ থেকে পেশীর তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পারাপারকারী প্রণালীসমূহের রোগ পর্যন্ত বিস্তৃত । এই সকল রোগের লক্ষণ পেশীর দূর্বলতা , ব্যথা থেকে মৃগীরোগ বা মানসিক ব্যধি পর্যন্ত হতে পারে।

• কোষকলা কেটে বা ছেঁচে আণুবীক্ষণিক পরীক্ষাঃ স্নায়ুরোগের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি খুব কম করার প্রয়োজন হয়। সধারণতঃ প্রান্তীয় স্নায়ু, মাংসপেশী এবং অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ঝিল্লী ও মগজ থেকে করা হয়।


চিকিৎসা বিজ্ঞনের বিভিন্ন শাখার সাথে অধিক্রমণঃ স্নায়ুরোগবিদ্যার সাথে অন্য বিশেষায়িত ক্ষেত্রের অধিক্রমণ ঘটে যেখানে স্নায়ুরোগবিদকে অন্য বিশেষজ্ঞের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে হয়। যেমন, মস্তিষ্কের আঘাত প্রথমদিকের চিকিৎসা করবে স্নায়ুশল্যবিদ যেখানে মস্তিষ্কের আঘাতজনিত পরবর্তী চিকিৎসা করবে স্নায়ুরোগবিদ অথবা পুনর্বাসন চিকিৎসার বিশেষজ্ঞে। সন্যাসরোগ প্রাথমিক অবস্থায় অনেক সময় পথ্য বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞে বা স্নায়ুরোগবিদ দ্বারা চিকিৎসা করা হয় কিন্তু স্নায়ুশল্যবিদ ও স্নায়ুরোগবিদ এর মধ্যবর্তী বিশেষজ্ঞে ইন্টারভেনশনাল স্নায়ুরোগবিদের উত্থান ঘটায় ইদানিং তাঁরাই সন্যাসরোগ চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। মাথা ব্যথা বা ঊরুর ব্যথা (সায়াটিকা) প্রাথমিক অবস্থায় জেনারেল প্র্যাকটিশনার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন কিন্তু পরবর্তীতে স্নায়ুরোগবিদ বা স্নায়ুশল্যবিদ অথবা হাড়জোড় বিশেষজ্ঞের(অর্থপেডিসিয়ান) চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। নিদ্রাজনিত রোগসমূহ স্নায়ুরোগবিদ ছাড়াও শ্বাসতন্ত্রের বিশেষজ্ঞ(পালমনোলজিস্ট) এবং মনোরোগবিদ এর চিকিৎসা করে থাকে । সেরেব্রাল পাল্ সি যা জন্ম পরবর্তী মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থা এবং এর চিকিৎসা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শুরু করলেও প্রাপ্ততবয়স্ক হওয়ার পর স্নায়ুরোগবিদ চিকিৎসা করে থাকে। এছাড়া শারিরীক সক্রিয়তার চিকিৎসক বা ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং পুনর্বাসন চিকিৎসার বিশেষজ্ঞরা স্নায়ুতন্ত্রের রোগী নিয়ে কজকরে থাকেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত কারণে অস্বভাবিক নড়াচড়া বা হাঁটা,পার্কিনসন্স ডিজিজ, স্ট্রোক, ডিমেনসিয়া র চিকিৎসা বার্ধক্যজনিতরোগ বিশেষজ্ঞ(জেরিয়াট্রিক মেডিসিন) তদারক করেন। মনো-স্নায়ু-রোগপ্রতিরধিদ্যা (সইকোনিরোইমিউনলজী-পি.এন.আই.) বা মনো-অন্তঃস্রাবী-রোগপ্রতিরধিদ্যা (সইকোএন্ডোইমিউনলজী) এমন একটি বিষয় যেখানে স্নায়ুবিদ্যা আর রোগপ্রতিরধিদ্যার সাথে মিথষ্ক্রিয়া ঘটানো হয় মনোবিদ্যার।পি.এন.আই. বহুমাত্রিক বিষয়ের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়। যেখানে– মনোবিদ্যা, স্নায়ুবিজ্ঞান,রোগপ্রতিরধিদ্যা, শারীরবৃত্তবিদা,জীনতত্ত্ব, ঔষধবিজ্ঞান, অণুজীববিজ্ঞান, আচরণবিদ্যা,সংক্রামক ব্যধি,অন্তঃস্রবীবিদ্যা এবং বাতরোগত্ত্ব বা রিউম্যাটলজী অনেক বিষয়ই আলচিত হতে পারে। মনোরোগ ও স্নায়ুরোগের অধিক্রমণঃ স্নায়ুরোগবিদের কার্যধারার লক্ষ্যথকে জৈব বা অঙ্গীয় স্নায়ুতন্ত্রর রোগসমূহ তথা মগজ, মেরুজ্জু, এবং এদের থেকে উৎপন্ন স্নায়ুসমূহ ও আনুষঙ্গিকঝিল্লী,আবরণী ইত্যাদি যেখানে মনোরোগবিদ কাজ করেন “মনবা মান্ড নিয়ে। যদিও ধরনা অনেক স্নায়ুরোগের লক্ষণ মানসিক রোগের মতো হয়। যদিও গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত মস্তিষ্ক ও মন দু’টি ভিন্ন জিনিসয় বরং একই অঙ্গের দু’টি ভিন্ন রূপ(মাড় ১৯৮২)। ২০০২ সালের “আমেরিকন জার্নাল সাইকিয়াট্রির” রিভিউ আর্টিকেলে স্নায়ুরোগবিদ প্রফেসর জোসেফ বি মার্টিন বলেন “ এ দু’টিকে আলাদ করা আবেগপ্রসূত, দীর্ঘদিনের সংস্কার দ্বারা প্রভাবিত,কোন বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের ফল নয়। প্রকৃতপক্ষে মস্তিষ্ক ও মন আলাদা করা কাল্পনিক প্রচেষ্টা”। মনোরোগ স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অংশ তথা মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত হলেও এর চিকিৎসা মনোরোগবিদ করেন, স্নায়ুরোগবিদ নন। অনেক স্নায়ুরোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় মনোরোগর মাধ্যমে যেমন,সন্যাসরোগ পরবর্তী বিষন্নতা, পার্কিন্সন’স রোগে বিষন্নতা ও স্মৃতিবিভ্রম ঘটা, এ্যালঝেইমার ও হাংটিংটন ডিজিজের মেজাজ ও স্বাভাবিক বুদ্ধিজাত কর্ম-কান্ডের অবনতি হওয়া এমন প্রচুর উদাহরণ আনা যায়। মনোরোগ ও স্নায়ুরোগর পার্থক্য সবসময় জৈবিক ভিত্তিতে করা যায় না স্নায়ুরোগবিদ্যার সমৃদ্ধশালী উত্তরণ: স্নায়ুরোগের চিকৎসার অনেক পদ্ধতি এবং ঔষধের নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হলেও স্নায়ুরোগবিদ্যার অব্যাহত সমৃদ্ধিশাল উত্থান রোগের চিকৎসায় সম্ভাবনার দুয়ার উন্মচনের সাথে সাথে উন্নয়ন ঘটিয়েছে কর্মদক্ষতা, সামাজিক জীবন তথা ব্যক্তিজীবনে ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

Davidson's Principles & Practice of Medicine 22nd Edition. Harrison's Principles of Internal Medicine 18th Edition. https://en.wikipedia.org/wiki/Neurology https://en.wikipedia.org/wiki/Neurology#History