ব্যবহারকারী আলাপ:Nayeem 19

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
আলোচনা যোগ করুন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৈয়দ মোহাম্মদ আলী[সম্পাদনা]

ডাক নাম এস এম আলী বা আলী ভাই জন্ম তারিখ ৫ ডিসেম্বর ১৯২৮ জন্মস্থান সিলেট মৃত্যু তারিখ ১৭ অক্টোবর ১৯৯৩ জীবিকা সাংবাদিক


সৈয়দ মোহাম্মদ আলী (এস এম আলী বা আলী ভাই)১৯২৮ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি আসাম সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা সৈয়দ মোস্তফা আলীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন।তিনি খ্যাতিমান সাহিত্যিক মরহুম সৈয়দ মুজতবা আলী এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনষ্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম সৈয়দ মুর্তজা আলীর ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন।

                 কলকাতা,ঢাকা এবং লন্ডন শিক্ষাপ্রাপ্ত এস এম আলী গুটি কয়েক এশীয় সাংবাদিকতার অন্যতম যারা আঞ্চলিক সাংবাদিকতায় অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর  রেখে গেছেন।১৯৪৯ সালে ছাত্রবস্থায় তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার এর একজন কাব রিপোটার হিসেবে সাংবাদিকতার সূত্রপাত করেন। পরবর্তী জীবনে পাকিস্তান,হংকং,থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন।সিলেটে ম্যাটিকুলেশন পরিক্ষায় উত্তীণ হয়ে তিনি কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে পড়তে জান।তিনি ১৯৫১ সালে ঢাবি থেকে ইংরেজিতে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। পঞ্চাশ দশকের প্রথমার্ধে সাংবাদিকতার উচ্চ ডিগ্রি লাভের জন্য লন্ডন জান।সেখানে তিনি নিউজ ক্রনিকল ও বিবিসি তে চাকরি করেন।
                    লন্ডনে মওলানা আব্দুল আমিন খান ভাসানী্র সংক্ষিপ্ত নির্বাসিত জীবনকালে জনাব আলী সেখানে মওলানা সাহেবের মুখপাত্র ও দোভাষী হিসেবে কাজ করেন।১৯৫৪ সালে আলী দেশে ফিরে এসে করাচীতে দৈনিক ডন এর ষ্টাফ রিপোর্টার নিযুক্ত হন এবং ১৯৫৬ সালে পুনরায় ষ্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পাকিস্তান অবজারভার এ যোগদান করেন।
                     এ সময়ে ঢাকা অবস্থান কালে তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে গভীরভাবে জড়িত হয়ে পড়েন এবং ১৯৫৮-৬০ সময়কালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।সাংবাদিকদের প্রথম বেতন বোর্ডে তিনি সাংবাদিকের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬০ সালে তিনি লাহোরে পাকিস্তান টাইম্‌স এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হংকং থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক প্রকাশনা এশিয়া ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদকের পদে যোগদান করেন(১৯৬২-৬৪)। এরপর তিনি করাচির দৈনিক ডন এর দক্ষিণপূর্ব এশীয় অঞ্চলের ব্যুরো প্রধান নিযুক্ত হন(১৯৬৪-৬৫)।১৯৬৬-১৯৭০ সাল তিনি থাইল্যান্ডের ইংরেজি ভাষার অন্যতম প্রধান দৈনিক সংবাদপত্র ব্যাংকক পোষ্ট এর ম্যানেজিং এডিটর পদে চাকরি করেন।        
               ১৯৭১ সালে আলী সিংগাপুরে বৈকালিক দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকার ভ্রাম্যমাণ বৈদেশিক সম্পাদক নিযুক্ত হন। এ সময়ে তিনি বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এর এক বছর পর তিনি নতুন আঞ্চলিক সাপ্তাহিক The Asiann এর contributing Editor হিশেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য বাংলাদেশ আসেন।সে সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত তার লেখা অগনিত পাঠকের অবিমিশ্র শ্রদ্ধা অর্জন করে।
               ১৯৭২ সালের শেষ দিকে আলী আবার হংকং এ দেড়া বাঁধেন এবং Hongkong standard এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের পদে নিযুক্ত হন। এ সময়ে এশিয়া মহাদেশ সম্পর্কিত তার পর্যালোচনা মূলক বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট Far Eastern Economic Review,Asian wall strcet journal প্রভৃতি সাময়িকীতে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হতো।
                 ১৯৭৩ সালে তিনি After the Dark Night নামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা সমৃদ্ধ একটি বই প্রকাশ করেন।
                  এস এম আলী ১৯৭৭ সালে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ম্যালিনা ভিত্তিক প্রেস ফাউণ্ডেশ অব এশিয়ায় যোগদান করেন এবং সুপরিচিত উন্নয়নমূলক ফিচার সার্ভিস Deptnews Features চালু করেন।সাংবাদিকের প্রশিক্ষণ এবং গবেষণার এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের পর তিনি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কুয়ালালামপুর ভিত্তিক ইউনেস্কো দফতরের আঞ্চলিক গণমাধ্যম উপদেষ্টা পদে যোগদান করেন। এই পদ থেকে এ অঞ্চলের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের উন্নয়নরে ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
                     জনাব আলী ইউনেস্কোতে অবস্থানকালে বাংলাদেশের বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্টান বিশেষত PIB সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য সহায়তা লাভ করে।
                     প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার ধারক এবং বাহান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী জনাব আলী জীবন প্রায় এক দশক এই পদে যোগ্যতার সাথে চাকরি করার পর জনাব আলী স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।১৯৮৯ সালে দেশে ফিরে অল্প কিছু দিনের জন্য অবজারভার এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। মতানৈকের কারনে ১৯৯০ সালে পদত্যাগ করেন।১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারী তিনি দি ডেলী স্টার এর সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ পর্যন্ত এটিকে প্রকৃত অর্থে উচ্চমানের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ জাতীয় দৈনিক রূপান্তরের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
                       কিডনি জনিত জটিলতায় আক্রাত হয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি ব্যাঙ্ককের সেমিটিভেগ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।তিনি রিওমেটিয়েড আরথারাইটিস ও ফুসফুসের ক্যান্সারেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।নিঃসন্তান সৈয়দ আলী বা এস এম আলী মা,স্এী ন্যান্সী আলি,চার ভাই,তিন বন,আত্মীয় স্বজন ও দেশ বিদেশে বন্ধু বান্ধব ও গুণগ্রাহী রেখে গিয়েছিলেন।১৯ অক্টোবর বায়তুল মকাররক মসজিদ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে নামায-ই-জানাজার পর বনানী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। একই দিনে তার মরদেহ ব্যাংকক থেকে ঢাকা পৌছে। চিকিৎসা ও ছুটি ভোগের জন্য ব্যাংকক যাওয়ার একদিন আগে ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত অফিস মেমোতে সহকর্মীদের উদ্দেশে লিখে গিয়েছিলেন অবশ্যই আমি ২০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা ফিরে আসবো। 
                   চুয়াল্লিশ বছর বিস্তৃত এস এম আলীর গৌরবোজ্জল ও বর্ণাঢ্য সাংবাদিক জীবনের অবসান হয়েছে। দেশ এবং বিদেশে বিশেষতঃ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয় অঞ্চলে সাংবাদিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত দীপ্তমান জনাব আলী ১৭ অক্টোবর ১৯৯৩ ব্যাংককের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কাল প্রজন্ত তিনি ডেলী স্টার এর সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। 
             তথ্য সংগ্রহ
             সাংবাদিকের সংবাদ
             এম এ মান্নান সম্পাদিত