ব্যবহারকারী আলাপ:M A Latif97

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম[সম্পাদনা]

‘জলের গান'[সম্পাদনা]

‘ও ঝরা পাতা’, ‘বকুল ফুল’, ‘দূরে থাকা মেঘ’, ‘প্রিয়তমা ও গো প্রিয়’, ‘হরেক রঙের বায়না’ সহ হরেক রকমের গানগুলো মনে হলেই যে নামটি ভেসে ওঠে তা হল ‘জলের গান’। খুব পাখি ডাকছে, বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা মাটির ঘ্রাণ, শহুরে রঙ টের পাওয়া যাচ্ছে তাদের গানে। অদ্ভুত সব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে স্বকীয় ভঙ্গিতে তারা নেচে গেয়ে ইতিমধ্যেই জয় করেছে মানুষের মন।

রাস্তায় জ্যাম ঠেলে রূপনগরে ‘জলের গান’-এর আস্তানায় পৌঁছাতে অনেক রাত। রাহুল আনন্দ হেসে বললেন, আপনিতো এসাইনমেন্ট মিস করে ফেললেন। তারপর হাসিমুখ সহজতায় কথা শুরু হল। শুরুতেই মুখ খুললেন রাহুল আনন্দ। বললেন, আগেই বলে নেই আমরা কিন্তু গুরু গম্ভীর কোনো ইন্টারভিউতে অভ্যস্ত না। ইন্টারভিউতে আমরা ফান করি, হাসি একটু দুষ্টুমি করি। বললাম, এইটা জানি। শুরু হল আলাপ।

চারুকলা থেকে শুরু করে আজ দেশ ও দেশ ছাড়িয়ে গেলো ‘জলের গান’র সুর। এত অল্প সময়ে কিভাবে সম্ভব হল? রাহুল: একটা কথা প্রায়ই বলতাম যে, গান যদি গান হয় তাহলে গান ডানা মেলে। গানের এই ক্ষমতাটা আছে। যে একটা গান যদি গান হয়ে যায়, তাহলে গানের শক্তিটা কিন্তু অনেক বেশী। মানে গানের একটা বড় শক্তি আছে। আর গানের শক্তি তখনই প্রকাশ পাবে যখন শুধুমাত্র একজন তার হৃদয়ে না শুধু, ভেতরে গুন গুন করে গাইলেই হবে না, সেটা যেভাবেই হোক তার কণ্ঠে আসতে হবে। গান যখন গান হয়ে যায়, তখন এমনিতেই গুন গুন করে মনে গেঁথে যাবে। আর এভাবেই গুন গুন করে আমার থেকে আপনি, আপনি থেকে ওর মুখে আর এভাবেই পর্যায়ক্রমে কোথায় থেকে কোথায় চলে যায় এটা যে গানটা তৈরি করে সেও জানে না।

একটা গল্প বলে তার উদাহারণ দিতে চাই। আগে অনেকেই বলতাম এটা যে, সব গানই গান হয় না। গাইলেই গান হয় না। সব কবিতা যেমন গান হয় না, ঠিক একইরকমভাবে সব গান গাওয়ার পরেও, সবকিছু করার পরেও সেটা গান হয়ে উঠে না। যদি না সে উড়তে পারে। তো একটা গল্প বলি, উড়ার গল্প বলি। একবার সে উরিয়া থেকে যাচ্ছিলাম শিলাইদহ ঠাকুর বাড়ি। যাওয়ার পথে একটা ভ্যানে করে যাচ্ছিলাম। আমার আর কনকের পাশে একটা ছেলে বসা। পাশের সবাই উদাস মনে নিজে নিজে গান গাচ্ছে। হঠাৎ ওই ছেলেটা গান গেয়ে উঠলো। আমি ও কনকও ছেলের সাথে গলা মেলালাম। গানটা শেষ হওয়ার পর ছেলেটাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, গানটা পাইছো কই?’ ছেলে বলে, ‘এটা খুব রেয়ার কালেকশন ভাই। একটা ব্যান্ড আছে জলের গান, এটা ওদের গান। ওদের একটা অ্যালবামও আছে, সব জায়গায় পাওয়া যায় না।এক বড় ভাইয়ের কাছে পাইছি।’ ছেলেটি যে গান আমাদের মাঝে বসে গাইলো, তার গীতিকার-সুরকার আমি, গাইছিল কনক।

কোন গানটা যেনো ছিল ওটা? রাহুল: ওই তো ‘পাখি’ নামের একটা গান আছে না! ‘সুয়া যাও যাওরে, যাওরে তেপান্তর’। তো ওই গানটা হচ্ছে আমাদের গান। ছেলেটি আমাদের মাঝখানে বসে গাইছে, সে জানেও না যে তার দুইপাশে বসে আছে সেই গানেরই মানুষ। এইটাই হচ্ছে আসলে আমাদের ওড়ার গল্প। গান যখন গান হয়ে উঠে, তখন কই থেকে কই উড়ে চলে যায় তা কেউ জানে না।

জলের গানের সাথে জার্নাল নেই বেশ ক’দিন হল। ঢাকার শ্রোতা-দর্শকরাতো অনস্টেজেই বলেন তার শুন্যতার কথা। কিন্তু জার্নালের সাথে অন স্টেজে আপনি সেই ক্যামিস্ট্রটা মিস করেন কিনা! রাহুল: সব ঠিকঠাক থাকলে জার্নাল আমাদের সাথে আবার নভেম্বর থেকে যোগ দিবে। আর জার্নালের সাথে আমার ক্যামেস্ট্রিটা আসলে কোথায় ঠিক জানি না, তবে একটা হতে পারে সে অনেক বেশী সুদর্শন। আর সুদর্শনকে মানুষ মিস করবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু স্টেজে আপনারা দু’জন একসাথে থাকলে দর্শক শ্রোতারা একেবারে মাত হয়ে যান? রাহুল: আসলে সে অনেক কথা বার্তা বলতো স্টেজে, দর্শক মাৎ করার একটা বিষয় ওর মধ্যে আছে। একটা মিউজিকেল ফেলোশিপে যোগ দিতে পাঁচ মাসের জন্য জার্নাল দক্ষিণ কোরিয়া গেছে। বিভিন্ন দেশের মিউজিশিয়ানদের সাথে সেখানে কাজ করছেন। সেখান থেকে হয়তো সে আরো বেশী মাৎ করে দেয়া্র মত জিনিষ সংগ্রহ করে নভেম্বরেই আমাদের সাথে যোগ দিবে।


নিজস্ব স্বকীয়তাগুণে আপনারা ভিন্নধর্মী একটা গানের দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এটাকে কিভাবে দেখছেন? রাহুল: আমরা ভিন্ন ঘরানার এইটা কি করে মানবো! কারণ হচ্ছে যে আমাদের এখানে গান বাজনার যে ঐতিহ্য, যে পরম্পরা সেটা অনেক পুরনো। সেই পুরনো পরম্পরাকে সাথে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তো আমরাতো বলবো আমরা ভিন্ন ধারা নই, বরং মূল ধারাই আমরা। কারণ হচ্ছে আমরা যে ধারা বা যে সুরে গান করছি; আসলে আমরাতো বড় হয়েছি এই শহরে। যদিও আমাদের কারো কারো একেবারে গ্রামের সাথে আমাদের বেড়ে উঠা। গ্রাম থেকে আমাদের মফস্বলে আসা, মফস্বল থেকে রাজধানীতে আসার যে স্মৃতি এগুলোতো ফেলে দেয়া যায় না। সঙ্গে থাকে। আমার সময়টাতো আমার সঙ্গে আছে। এবং আমি আবার এই সময়ের পিচঢালা রাস্তায় হাঁটি। সেটাও আমি বা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। যে কারণে আমাদের গানের মধ্যে গ্রাম বাংলার একটা আবহ যেমন পাওয়া যায়, আবার মফস্বল টাইপের একটা গন্ধ আছে, শহরেরও গন্ধ আছে। তো আমরা আমাদের খুব কনটেম্পোরারি গানের মধ্যেও খুব খুবই টেম্পারারি কথাবার্তা থাকে। মূলত আমরা নিজেদের কখনোই ভিন্ন ঘরানার মনে করি না।

জেনরের বিচারে আপনাদের ফোক-ফিউশন’ বলা হয়। তো এমন দল গড়ার অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন? রাহুল: একটা গানের উদাহরাণ দিয়ে বলি, ‘আয়না আয়না, যেখানে তুমি আমি/ প্রথমবার পরিচয়, এবার কাহিনী’। গানের কথার মধ্যে যেমন আমাদের এইসময় আছে, আমাদের চলমান সময়ের জীবন যাপন আছে, তেমনি সুরের মধ্যে আছে ঘুম পাড়ানি গানের আবহ। এখন ঘুম পাড়ানির গানকে আমরা বলতে পারবো না এটা শহুরে, নাকি গ্রাম্য নাকি সেকেলে নাকি একেলে, এইটা আমরা বলতে পারবো না। আবার ওই গানের মধ্যে বাজছে একেবারে ভাটিয়ালি। তো এই মেশানোটা আমরা হয়তো খুব ভালো পারি নাতো, ফলে এইটার সাথে ওইটা মেশাই, ওইটার সাথে এইটা মেশাই। ল্যাটিন আমেরিকার মিউজিকের সাথে আমারদের এইখানকার পালা গান মেশাই। এই করি। আপনারা যাকে বলেন ফোক ফিউশন। তবে আমরা কোনো ফিউশন, বা কনফিউশিনের মধ্যে নেই আসলে। আমরা কোথাও বলি না যে আমরা ‘ফোক ফিউশন ব্যান্ড’। কারণ ফোক ফিউশন হলে তাহলে বাকি ফিউশনটা কোথায় যাবে? আমাদের একটা গান আছে, যেখানে ল্যাটিন আমেরিকার ইনভলমেন্ট যেমন আছে, ঠিক একই রকমভাবে স্কটিশ কেলটিক মিউজিকের আবহও আছে। তো একে আমরা কোন ঘরানার মধ্যে ফেলবো। আমরা আসলে গান করছি। গান বাজনার মধ্য দিয়ে দৃশ্যকল্প নির্মাণ করার চেষ্টা করছি। এটাকে যদি কেউ ফোক ফিউশন বলে, বলুক। বরং আমরা আমাদের কাজটা করতে থাকি।

কিন্তু অনুপ্রেরণার জায়গাটা? রাহুল: আসলে এটাতো পূর্বপুরুষ থেকে পরম্পরা। পূর্ব পুরুষদের থেকেই আসলে পাওয়া...

কনক: বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধারার লোকাল মিউজিকগুলো থেকেই আমরা অনুপ্রানিত। পূর্ব পুরুষদের একটা ধারাবাহিকতা থাকে।

প্রচলিত বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি নিজেদের উদ্ভাবিত বাদ্যযন্ত্রও আছে আপনাদের প্রচুর। বাদ্যযন্ত্রেও এতা আপনারা প্রচলিত ব্যান্ড দলগুলো থেকে ভিন্নতর? রাহুল: ভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টটা আসলে কোন জায়গাতে? গিটার, বেজ গিটার আর ড্রাম হলেই কি স্বাভাবিক হতো। এখন একেকটা ব্যান্ড একেক ধরন নিয়ে কাজ করে। যেমন রক ঘরানা নিয়ে যে কাজ করে সে যদি ‘জলের গান’র ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে দাঁড়ায় তাহলে তো হবে না। ওই লেভেলতো সে পাবে না, রকের যে প্রেসার তাতো এগুলো দিয়ে পাবে না। ড্রামের স্পিরিটিটা তার লাগবে, প্লেটের ঝনঝনা শব্দটা তার লাগবে। যে মেটাল করছে তার লাগবে ওই শব্দটা। তো আমাদেরও যদি কখনো প্রয়োজন হয়, ওইরকম যান্ত্রিক শব্দের দরকার হয় তাহলে অবশ্যই করবো। ক্লাস এইটে যে জামাটা পরতাম, তাকি এখন এই বয়সে এই সময়ে আমার শরীরে লাগবে। এই সময়ের উপযোগি জামা আমরা পরতে বাধ্য হচ্ছি। তো এইভাবে আমরা একসময় দোতারা, একতারা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি গান করতে, কিন্তু এখন আর সেগুলো হচ্ছে না। আর হচ্ছে না বলেইতো আমরা নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করছি। এইযে এখনো একটি নতুন বাদ্যযন্ত্র তৈরি হচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে এটা আসলে ক্ষুধার বিষয়। নিত্যনৈমিত্তিক ক্ষুধার বিষয়। এটা এক জায়গায় স্টক করে রাখার বিষয় না।


নতুন বাদ্যযন্ত্রটির নাম কি রেখেছেন? রাহুল: বাচ্চা হওয়ার আগে কি নাম রাখে? মনে মনে হয়তো দুই তিনটা নাম ঠিক করা থাকে।

অন্যান্য ব্যান্ডগুলোর সাথে ‘জলের গান’-এর তুলনা কিভাবে করবেন? কনক: ব্যান্ডগুলো বলতেতো আসলে অনেক ধরনের ব্যান্ড। আসলে তিনজনের একটা দল হলেইতো ব্যান্ড, যেরকম অনেক জায়গায় অনেকভাবেই ব্যান্ড হচ্ছে। আর নামকরন যেগুলো হয় বেশীরভাগ সময় দেখা যায়, একজোট হয়ে গান করতে করতে একটা মেজাজ দাঁড়িয়ে যায়। আর ওই মেজাজটাকেই মূলত ‘ব্যান্ড’-এর জন্য নামকরন করা হয়। তো পরবর্তীতে যারা নিজেদের মতন করে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে চর্চাটা করছে, তাদেরই একটা নিজস্বতা দাঁড়িয়ে গেছে। সেটা এর আগে আপনি যে ভঙ্গিটার কথা বলছেন আমার মনে হয় শুধুমাত্র সেটা রক, মেটাল এবং অন্যান্যগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অ্যাকুয়েস্টিক বা অর্কেস্টেশন করেও বা সাধারণ পিয়ানো ভায়োলিন দিয়ে করা হয়। বেজ ব্যাণ্ডগুলো একরকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। কেলটিক ব্যাণ্ডগুলো আরেক ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। এরকম প্রচুর ব্যান্ড আছে। শুধুমাত্র রক আর মেটালই না, ব্যান্ড মানে কিন্তু আরো কয়েক’শ ধরনের প্রকার। সবগুলো বিচার করলে আমরা আসলে একদমই ভিন্নতার কিছু না। অনেকগুলো ব্যান্ডের মত আমরাও একটা ব্যান্ড। এটা হয়তো সত্য যে, ও বাঁশি বাজাতে পারে, আমি দোতারা বাজাতে পারি, ও ঢোল বাজাতে পারে কিংবা ও হয়তো গিটার বাজাতে পারে। যেহেতু আমরা এভাবে মিশছি। এখন দেখা যাচ্ছে সময় যাচ্ছে, আমাদের গানের ধরন পাল্টাচ্ছে আমাদের ভিতরকার আবেদন পাল্টাচ্ছে। যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে, আমরা সেই চাহিদা পূরণের চেষ্টা করছি, এই আরকি! তাই বলে আমরা বাদ্যযন্ত্রেও ভিন্ন ঘরানা এটা না।

আপনাদের গানে দৃশ্যগুলো খুব জীবন্ত। সুরে, কথায় আর যন্ত্রে কিভাবে গানের দৃশ্যগুলো আঁকেন একসঙ্গে? ম্যাজিকটা কি? কনক: এটা আসলে নির্ভর করে লিরিকের সাথে সুরের এক ধরণের সামঞ্জস্যতা থাকলে। গানের কথা আর সুরের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকলে। যেমন রাহুলের গান বানানোর বিষয়টা একটু অন্যরকম। ওর গান একটা সময়ের বা একটা মুহূর্তের হিসেবকে নিয়ে সুরও বাধে, কথাও ভাঁজে। কাজেই দুইটার মধ্যে একটা মেলবন্ধন বা সামঞ্জস্যতা থাকে। ফলে ওর শব্দগুলো ঘোর লাগা হয়, কিংবা ওর মেজাজটা ঘোর লাগা হয়। শব্দ এবং সুর একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে। আবার আমি হয়তো ছট্ফটানি সুর নিয়ে কাজ করতেছি, কথাগুলোও ওইরকম হতে পারে। তিড়িংবিড়িং কথাবার্তা। তো আমার সুরটাও ওইরকমই হবে। ওইযে রাহুল বললো না যে সবকিছুই আসলে দৃশ্যকল্প। মূল কথা হচ্ছে, যা বলতে চাই তার সুরটাও ওইরকম হবে।


‘জলের গান’-এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ডগুলোর একটি। কিন্তু বেশীর ভাগ সময়ই আপনাদের শো হচ্ছে বিনামূল্যে। এটা কেন? কনক: না, এখন বেশীর ভাগই বিনামূল্যে থাকে না। কারণ আমরা কিন্তু গান বাজনা করেই জীবিকা নির্বাহের একটা বিষয় চলে আসছে আমাদের মধ্যে। আমরা চাই যে গান বাজনা করে আমরা আমাদের সংসার চালাবো, আমাদের জীবন যাপন করব। কিন্তু জীবন যাপনের ক্ষেত্রে আসলে । এখানে বেশী টাকা নিলে আমার মান বেড়ে গেল, কিংবা কম টাকা নিলে আমার মান কমে গেল কিংবা আমার অ্যালবামের দাম কম দরলাম বলে আমার মান নীচের দিকে ব্যাপারটা এইরকম আমরা মনে করি না। মূলত আমাদের কাজ হচ্ছে গান করা।

রাহুল: (কনকের কথা শেষ না হতেই বলে উঠলেন) না, আরো একটা কথা আছে। আমাদের গান বিনামূল্যে তার কারণ, এটার যে মূল্য আছে এটা আসলে কে নির্ধারণ করে দিবে। বা আমাদের গানের কতোটুকু মূল্য আছে। মূল্যটা কে ঠিক করে দিবে। আমরা কিন্তু মূল্য দিয়েও টিকেট ছাড়ি, সেই টিকেট বিক্রির যে টাকাটা আসে তা ওই শো’য়ের পিছনেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। সাউন্ড, লাইট, মঞ্চ এটা সেটার পিছনে। তো এইসব শো করে আসলে টাকা রোজগার করা যাবে ওই দৃষ্টতা আমরা রাখি না। এখন আমরা যদি ১ হাজার টাকায় টিকেট ছাড়ি, কেউ কিনবে না। কেনই বা আমাদের গান শোনার জন্য হাজার টাকা টিকেট কেটে দেখতে আসবে! তবে হ্যাঁ, এটা সত্য যে এভাবে কিছু টাকা আমরা রোজগার করি, যা আবার এই ধরণের কাজের পিছনেই আবার খরচ করে ফেলি। গত মাসেও একজন সাধু বাউল অসুস্থ ছিলেন এবং উনি দেহ ত্যাগ করেছেন। উনার যে চিকিৎসা খরচ যা আসছে তা উনার ভক্ত, সাবকদের পক্ষে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। তারা মেহেরপুর থেকে উনাকে ঢাকায় নিয়ে আসছিলেন। আমি আমার সদস্যদের জিজ্ঞেস করেছি যে এই টাকাটা আমার কাছে আছে, সাধুকে দিয়ে দেই? সবার সম্মতিতে সত্যি বলছি যে টাকাটা জলের গানের কাছে ছিল সবটুকু ওই সাধুর চিকিৎসার্থে দিয়ে দিয়েছি। যা সাধুর চিকিৎসার মোট ব্যয়ের ৭০ শতাংশ ছিল। তো এধরনের কাজও কিন্তু আমরা করছি। মানে শুধু যে মূল্য আর মূল্যহীন, ব্যাপারটা তা না। এসবের মধ্যে আমরা আসলে যাচ্ছিই না!

তাহলে? কনক: খুব যদি এরকম হয়, যে আমরাতো রাস্তা ঘাটেও গান করি। এখন রাস্তায় গান করে কেউ যদি আমাকে খুশি হয়ে দশটা টাকা দেয় তাহলে আমি তা সাদরে গ্রহণ করবো, আমার কোনো অসুবিধা নাই। আমাকে যদি বিনিময়ে কেউ খাওয়াইতে চায়, আমি খাবো। আমাদের অ্যালবামগুলোর ক্ষেত্রেও এরকম। আমার আমাদের গানগুলো আমাদের অনলাইনে রেখে দিয়েছি। এখন সেখানে যে কেউ আমাদের অ্যালবামটা শুনে আমাদের টাকা দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। আমাদের গান শুনে যদি কারো মনে হয় আমাদের টাকা দেয়া উচিত, তাহলে দিবে। আর খারাপ লাগলে, বা না দিতে মন চাইলে তিনি দিবেন না।

সম্প্রতি গণঅর্থায়নে একজন শিল্পী অ্যালবাম প্রকাশ করার পদক্ষেপ নিলেন… রাহুল আনন্দ: এটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে আমরা নিজেদের পয়সা খরচ করেই আমাদের প্রথম অ্যালবাম করেছিলাম। আর গণঅর্থায়নেতো ফিল্মও হচ্ছে...

হ্যাঁ, আবু সাঈয়িদ এমন ঘোষণায় সম্প্রতি দিলেন। আপনাকেতো মাঝে মাঝে টিভি নাটকে দেখা যায়, নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে নেই? রাহুল: আমি সাধারণ টেলিভিশনে খুব কম অভিনয় করি। তার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, এক হতে পারে আমাকে কেউ নেয় না। আবার এটাও হতে পারে যে আমি একটু টাকা বেশী চাই। আবার হইতে পারে তথাকথিত একটা উত্তর আছে ‘গল্প পছন্দ না হলে আমি আসলে কাজ করি না।’ যে যা মনে করে নেয় আরকি! আর প্রাচ্যনাটের সাথে আছি, কাজ করছি। যতোদিন আছি প্রাচ্যনাটের সাথেই থাকবো।


প্রাচ্যনাটেওতো আপনাদের কম দেখা যাচ্ছে ইদানিং… রাহুল: আসলে আমরা খুব দূর্ভাগাতো। আমাদের এখানে থিয়েটারের পারফর্মেন্স খুব কম হয়। খুব কম হয়। আসলে থিয়েটারের আমাদের পারফর্মেন্সটা হল নির্ভর হয়ে গেছে। হল পেলে পারফর্ম হয়, শো করা হয়; আর হল না পেলে করা হয় না। কখনো কখনো এমনও হয় যে, একটা নাটকের প্রদর্শনী হচ্ছে দেড় বছর পরে, দুই বছর পরে। তো এইভাবে প্রদর্শনী করে, এত কম প্রদর্শনী করে পারফর্মারের ক্ষুধা মেটে না। অন্তত ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার কথা বলতে পারি। আমার সত্যিই এতকম পারফর্মেন্সে ক্ষুধা মেটে না। আমি আরো বেশী পারফর্মার হতে চাই, আমার কোনো লক্ষ্য নাই। আমি অভিনেতা হব, নাকি মিউজিশিয়ান হব নাকি অন্যকিছু হব তা আমি জানি না। এগুলোতে আমার ভ্রুক্ষেপ নাই। আমার মূল কথা হচ্ছে আমি পারফর্মার হবো। আমার মধ্যে পারফর্ম করার একটা ক্ষুধা আছে। এখন হয়তো জলের গান করছি, কিন্তু এরচেয়ে আরো কোনো মাধ্যমে যদি আমি বেশী পারফর্মেন্স করার সুযোগ পাই, তাহলে আমি সেটাই করবো।আমাদের প্রচুর গান আছে যা এই যে আজকেই প্রথম কম্পোজ করলাম। যা অন্তত ১০ থেকে ১২ বছর আগের করা। আমাদের এরকম অনেক গান আছে যেগুলো করা হচ্ছে না। সময়ের অভাবে সবকিছুর অভাবে গানগুলো করা হচেছ না। ওইগুলোতো আমাদের কাঁদায়।

‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’- নাটকটি কি আপনাকে নিয়েই লেখা হয়েছিল? কারণ আপনাদের গানের ভিশনের সাথে নাটকের নাটকটির ব্যাপক মিল? রাহুল: তার একটা কারণ হতে পারে যিনি এই নাটকটি লিখেছেন তিনি আমার কথা চিন্তা করেই নাটকটি লিখেছেন।

কিন্তু বাস্তবে কি আসলে গান দিয়ে সমাজ থেকে সব অপকর্ম মুছে দেয়া সম্ভব? রাহুল: এটা অনেক রাজনৈতিক একটা প্রশ্ন করছেন আপনি। যদিও আমরা রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে গান করি না। আমরা সৌন্দর্যে বিশ্বাসী, আমরা নান্দনিকতার আরাধনা করি। এখন সেই নান্দনিকতার আরাধনার ফলে যদি কিছু পরিবর্তন হয় তাহলে ভালো। আর যদি না হয় তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। আমাদের মূল কাজ শিল্প নির্মাণ করা। দেশ পরিবর্তন, জাতি পরিবর্তন বা কোনো স্লোগান নিয়ে আমরা গান করতে দাঁড়াই নাই। আমাদের গান একজন সাধারণ মানুষকে যেভাবে তুষ্ট করে, খুশি করে, আনন্দিত করে এবং সেটা ভেবে আমরা আনন্দিত হই তেমনি দেশের প্রধানমন্ত্রীও আমাদের গান শুনে হাত তালি দেয় সেটাও আমাদের পরম পাওয়া।

সূত্র বাংলামেইল

‘জলের গান