বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী আলাপ:Haseeb I Rahman

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
আলোচনা যোগ করুন
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম

[সম্পাদনা]

ম. হাবিবুর রহমান

[সম্পাদনা]

ম. হাবিবুর রহমান (২৭.০২.১৯৫৩—১৭.০৫.২০১৯) শিক্ষাই যে মানবমুক্তির প্রধানতম আয়ুধ তা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেছিলেন ম. হাবিবুর রহমান। এই লক্ষ্যপূরণেই তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগ নিয়োজিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রাথমিক, সাক্ষরতা ও বিকাশের কাজে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে যে শিক্ষাবিস্তারের বিস্তৃত ক্ষেত্র রয়েছে সে-কথা অনুভব করেছিলেন তিনি যৌবনেই। কর্মজীবনে প্রবেশের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশের মতো সদ্যস্বাধীন একটা দেশের উন্নতির জন্য প্রাক্‌-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকে তাঁর নজর পড়ে। ভূ-বিদ্যা তাঁর উচ্চতর শিক্ষার অধীতব্য বিষয় হওয়া সত্ত্বেও সে বিষয় পরিহার করে সাক্ষরতা এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই বিশ্বাসের সূত্র ধরেই এই স্বল্পপরিসর জীবনে তাঁর কর্মজীবনে যে বহুমুখী বিস্তার ঘটেছিল তা তাঁকে বাংলাদেশের উন্নয়নকর্মীদের মধ্যে অনন্য করে রাখবে। তার প্রসন্ন মুখ, বুদ্ধিদীপ্ত আন্তরিক ব্যবহার ও অনুচ্চ মধুর হাসিটি বাংলাদেশের উন্নয়নকর্মীরা হারালেন । সে সঙ্গে হারালেন এক অনন্য শিক্ষাকর্মীকে।

     বহুদিন আগে পড়ুয়াদের জন্য তিনি উঁচুদরের প্রাইমার লিখেছেন। অজস্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন দেশের সব প্রান্তে । সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সুশিক্ষা ও প্রগতির জন্য প্রকল্পরচনা ও রূপায়ন করেছেন বছরের-পর-বছর। ছোটো–বড়ো নানা সংস্থার ভালোকাজের জন্য অর্থ জুটিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক শিক্ষানীতি প্রণয়নে গভীর অবদান রেখেছেন।  সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নের জন্য ও ছোটোজনগোষ্ঠীর শিক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন সবসময় নিরলসভাবে। বিগত প্রায়  পঁয়ত্রিশবছর ধরে প্রতিটি দিনের শেষে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাপরিকল্পনা ও কর্মসূচি রূপায়ণে এবং মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে এদেশের অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে নীরবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারপর শুতে গেছেন সকলের প্রিয় এই মানুষটি।
         জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পাবনা জেলায়। পিতা এম. আব্দুর রহমান, মাতা আমেনা খাতুন। তাঁদের ছিল ১১ ভাই-বোনের সংসার (আমিনুল ইসলাম, রিজিয়া জাফর, এ কে এস এম আমানউল্লাহ, ম হাবিবুর রহমান,নজরুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম,রওশন আরা রহমান, আমিরুল ইসলাম, হাফিজুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম ও রেহানা মাহমুদ)। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে কুষ্টিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল এবং পরিবেশবিদ্যায় সম্মানিক পাঠক্রমে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন ১৯৭৬ সালে। একই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে; স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় ১৯৭৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। সকলের প্রিয়পাত্র ও বন্ধুবৎসল ছিলেন। কর্মজীবনে প্রবেশের পরে ক্রমশ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর সক্রিয় চিন্তাভাবনার কেন্দ্রে চলে আসে। এই কাজে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাঠ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে। এছাড়াও ২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের আয়োজনে ওয়াশিংটনে স্ট্র্যাটেজিক চয়েসেস ফর এডুকেশন রিফর্ম বিষয়ে প্রথামাফিক প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। 
            ১৯৭৭ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগে গবেষক হিসাবে কাজ করেন ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। এরপর ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গবেষণা আধিকারিকের পদের দায়িত্ব সামলে যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার হিসাবে। ১৯৮৪ সালে রংপুর দিনাজপুর রুরাল সার্ভিসে (RDRS) যোগ দেন শিক্ষা সমন্বায়ক হিসাবে। এই সময় আরডিআরএস-এর অধীনে যাবতীয় শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন, বয়স্কদের জন্য সামাজিক সাক্ষরতার পাঠ-উপকরণ প্রস্তুত, সে কাজের প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ গড়ে তোলা, নব-সাক্ষরদের জন্য পত্রিকার সম্পাদনা, পাঠাগার স্থাপনা ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকাণ্ড তাঁর সাড়ে পাঁচবছরের কার্যকালে সম্পন্ন করেছেন। এরপর ১৯৮৯-এর নভেম্বর থেকে ১৯৯০-এর আগস্ট-এর মধ্যে ঢাকা আহসানিয়া মিশনের সাক্ষরতা এবং বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রের অধিকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষরতা নিয়ে কাজ করবেন যাঁরা তাদের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাক্রমের পরিকল্পনা তাঁর এই সময়ের মূল অবদান। দেশে এবং বিদেশে সাক্ষরতার  বিভিন্ন কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯০-এর সেপ্টেম্বরে গণসাক্ষরতা অভিযান (Campaign for Popular Education, CAMPE)-এর মূল সমন্বায়ক এবং নির্দেশক হিসাবে কাজ শুরু করেন। গণসাক্ষরতা অভিযানে দীর্ঘ ছয় বছরের কার্যকালে বিভিন্ন সাক্ষরতা কর্মসূচি গ্রহণ, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মপ্রকল্প শুরু করা, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির নির্দেশিকা রচনা, বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলা, সমাজের নানাস্তরের মানুষের মধ্যে সাক্ষরতা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার উপকরণ তৈরি ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকাণ্ডে পরিপূর্ণ ছিল। 
         এরই মাঝে ১৯৯৬-এর অক্টোবর থেকে ১৯৯৭-এর জুন পর্যন্ত ইউনেস্কোর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসারের দায়িত্বও পালন করেছেন। অ্যাকশান এইড বাংলাদেশের REFLECT কার্যক্রমের প্রধান হিসাবে এর সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশের ৩১টি এনজিও-র মধ্যে সমন্বয় সাধন তাঁর অন্যতম প্রধান অবদান। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের মাধ্যম হিসাবে শিক্ষার গুরুত্বকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকশান এইড-এর সঙ্গে রিফ্লেক্ট কার্যক্রমের প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং কর্মপ্রকল্পকেও যুক্ত করেছিলেন। ১৯৯৮-এর ডিসেম্বরে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসাবে যুক্ত হলেন ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের বাংলাদেশ শাখার সঙ্গে। উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার, তার জন্য অর্থের সংস্থান করা, মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প রূপায়ণ, উন্নয়নের জন্য শৈশবে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার রূপরেখা তৈরি, ভিত্তিমূলক শিক্ষা-উত্তরশিক্ষা এবং চলমান শিক্ষা পরিকল্পনা ইত্যাদি তাঁর বিশেষ অবদান হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। ২০০১ সালে যোগ দিলেন সেভ দ্য চিলড্রেন ফেডারেশনের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক হিসাবে। বাংলাদেশের শিক্ষা কেন্দ্রিক যে সমস্ত প্রকল্প এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে গৃহীত হয়েছিল তাদের সঠিক দিক্-নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু নতুন উদ্‌যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সারা পৃথিবীব্যাপী শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত করেছিলেন নিজেকে বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নের উপযুক্ত পথনির্দেশিকা খুঁজে পেতে। নতুন দায়িত্বে শিক্ষাবিস্তারের প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো, শিক্ষার যুগোপযোগী কার্যক্রম তৈরি করা তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে আগামী দিনেও।  তাঁর কর্মজীবন শেষ হয়েছে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টান্যাশনাল-এর বরিষ্ঠ শিক্ষা উপদেষ্টা হিসাবে ২০১৮ সালে। বহুবিধ কর্মদ্যোগে নেতৃত্ব দান, সমাজের নানা স্তরে শিক্ষাকে পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষা সংক্রান্ত গবেষণায় উৎসাহ দেওয়া, প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যুক্ত করা, শিক্ষার নতুন নকশা প্রস্তুত করার কাজে তাঁর সক্রিয় কর্মজীবনের শেষ কয়েক বছর অতিবাহিত হয়। এছাড়াও জাতীয় শিক্ষা পাঠক্রম তৈরি (২০১০), বহুভাষিক শিক্ষা পরিকল্পনা (২০১১), শিক্ষা নীতি প্রণয়ন (২০০৯), শৈশবকালীন পরিচর্যা এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন [Early Childhood Care and Development (ECCD) Policy] (২০০৯-২০১৩), শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন (১৯৯৭) প্রস্তুতকরণ, প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার মান নির্ধারণ (২০১৬), শৈশবকালীন পরিচর্যা এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতি সংক্রান্ত কৌশল প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়ন (২০১৭), শিশু শিক্ষা এবং উন্নয়নের মান নির্ধারণ (২০১৫-১৬), প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি এবং বেসরকারি উদ্‌যোগ সমূহের একত্রীকরণ (২০১৬) ইত্যাদি নানা জাতীয় কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন একজন শিক্ষা-অন্তপ্রাণ মানুষ হিসাবে। সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষাবিস্তারে তাঁর সদর্থক চিন্তা এবং বুদ্ধিদীপ্ত সহযোগ তাঁকে একজন দায়িত্বশীল প্রগতিবান্ধব হিসাবে আমাদের মধ্যে উজ্জ্বল করে রাখবে। শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে শুধু বাংলাদেশই নয়, বাংলাদেশের বাইরে মিশর, কম্বোডিয়া, সুইডেন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপিন্‌স, থাইল্যান্ড, কানাডা, চীন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেপাল, কোরিয়া, নরওয়ে, ডেনমার্ক, লাওস, ইউক্রেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, ইথিওপিয়া, পাকিস্তান এবং ভারতসহ পৃথিবীর বহুদেশে গিয়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় রূপরেখার খোঁজে। অতিথি অধ্যাপক হিসাবে পড়িয়েছেন আহ্‌সানুল্লাহ্‌ ইউনিভার্সিটি অভ্ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (১৯৯৮-২০০০) ইন্সটিটিউট অভ্ প্রাইমারি অ্যান্ড নন-ফর্ম্যাল এডুকেশন-এ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অভ্ এডুকেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট-এ (২০০৯-আমৃত্যু), ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডাল্ট অ্যন্ড নন-ফর্ম্যাল এডুকেশন বিভাগে (২০০৬-আমৃত্যু)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অভ্ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের পরীক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছেন ২০০৩ সাল থেকে আমৃত্যু। এশিয়ান সাউথ প্যাসিফিক ব্যুরো অভ্ অ্যাডাল্ট এডুকেশন নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উপদেষ্টা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন (১৯৯২-১৯৯৬)। 

এত বিচিত্র কর্ম প্রবাহের পাশাপাশি বেশ কিছু গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লিখেছেন।তাঁর ভাবনার বিষয় বৈচিত্র্যে এবং গভীরতায় অনন্য ছিল। বাংলাদেশের লোকসংগীত ও ভৌগোলিক পরিবেশ (বাংলা একাডেমি, ১৯৮২), Museums in Bangladesh (Bangla Academy, 1987), সামাজিক সাক্ষরতা (আরডিআরএস, ১৯৮৮), Literacy and Basic Education in Bangladesh: An Annotated Bibliography (Campaign for Popular Education, 1996), Education Sector Strategy of Bangladesh: A Vision for 2020 (Dhaka: World Bank, 2000), Mapping of Non-formal Education Activities in Bangladesh (Dhaka: Bureau of Non-Formal Education, 2009), New Vision Old Challenges—State of Pre-Primary Education (Education Watch Report 2013, CAMPE), Social Development ইত্যাদি তাঁর মূল্যবান কিছু কাজ।

    শিক্ষাকোষ (শিক্ষার জন্য নাগরিক সমাজ, ২০০৩) সম্পাদনা এবং প্রকাশ তাঁর জীবনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষাকর্মী, গবেষকদের পরিশ্রমকে একত্রিত করে এমন একটি কোষগ্রন্থের পরিকল্পনা তাঁর আধুনিক মনন ও দূরদৃষ্টির পরিচয় বহন করে। বাংলাভাষায় এ জাতীয় কোষগ্রন্থ শুধু যে অনন্যপূর্ব তা-ই নয়, এই কোষগ্রন্থ একটা সম্পূর্ণ নতুন দিক উন্মোচিত করেছিল শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে। প্রায় ২২৭৫টি ভুক্তি সহ ১০০০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থ শিক্ষাসম্পৃক্ত নানাবিষয়ের এক নির্ভরযোগ্য আকর হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি এই গ্রন্থের পরিমার্জিত, পরিবর্ধিতদ্বিতীয় সংস্করণের কাজ শুরু করেছিলেন একজন নিমগ্নপ্রাণ শিক্ষাসাধকের আস্পৃহা নিয়ে। যে বিশাল ব্যাপ্তিতে এই সংস্করণের পরিকল্পনা করেছিলেন তা তাঁর মৃত্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হল। এই ক্ষতি অপূরণীয়। পরবর্তী প্রজন্মের গবেষকদের এই কাজের দায়ভার তুলে নিতে হবে উপযুক্ত নিষ্ঠা সহকারে। 

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের পক্ষ থেকে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন শীর্ষক একটি গ্রন্থ রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অকাল মৃত্যুতে সে কাজ অপূর্ণ রয়ে গেল। প্রসঙ্গত উল্লেখনীয়—ছাত্র অবস্থায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে দেশের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্যই জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসাবে পেয়েছিলেন চাঁদ সুলতানা পুরস্কার (২০০৭)। এর আগে ১৯৮০ সালে পেয়েছিলেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ। সদস্য হিসাবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কে (২০০৫-২০১৭ সালে এই সংস্থার কর্মপরিষদের সহ-সভাপতিও ছিলেন), গণ উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিষদে, সেভ দ্য চিলড্রেন-এর ইসিসিডি-র গ্লোবাল অ্যাডভোকেসি গ্রুপে। ন্যাশনাল কোয়ালিশন অভ্ ইন্ডিজেনাস পিপল-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত Who’s Who in Education গ্রন্থে পৃথিবীর শিক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁর নাম প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে নথিভুক্ত হয়েছিল।

   ব্যক্তিগত জীবনে জনাব হোসনেয়ারা রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৭৭ সালের ১১ই জানুয়ারি। দুই সফল পুত্রের জনক—হাসিব এবং সজীব। দুই পুত্রবধূ (মারুফা আখতার এবং তাজিন জান্নাত) এবং চারজন পৌত্রী (হিয়া,হিমি,সুবাহা,মাইসুরা) তাঁর উত্তরাধিকার বহন করছেন।