ব্যবহারকারী আলাপ:কমল উদ্দিন

পাতাটির বিষয়বস্তু অন্যান্য ভাষায় নেই।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম[সম্পাদনা]

সাহায্য করুন আমার আলাপটি কিভাবে ডিলিট করব? কমল উদ্দিন (আলাপ) ০০:০৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]

ফিচার[সম্পাদনা]

ওরা আমাদেরই আপনজন কমল উদ্দিন

বছর দুই-এক আগের কথা। ঈদুল আজহার দিনে দাওয়াত পেয়েছিলাম এক ভদ্রলোকের বাড়িতে। উক্ত ভদ্রলোক আমার পূর্ব পরিচিত হলেও তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতাম না। পরবর্তীতে জানার সুযোগ হয়েছিল।

ঈদের দিন বিকেল বেলা। আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে উক্ত ভদ্রলোকের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গন্তব্যে পৌছে বাড়ির সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলাম। বাড়ির কর্তা আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। আমরা সুসজ্জিত একটি খাটে বসলাম। হঠাৎ ঘরের বারান্দায় আমার চোখ পড়ল। সেখানে একটা মশারি টাঙ্গানো রয়েছে। আমি বারান্দার মশারীর দিকে পা বাড়ালাম এবং মশারীর ভিতরে কিছু একটা খোঁজ করতে চেষ্টা করলাম। ভিতরে যা দেখতে পেলাম তা এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। ভিতরে রয়েছে ১০ বছরের এক বালক। যার সুদর্শনীয় চাহনি আমাকে নাড়া দিল। আমি তার নাম জানতে চাইলাম। সে শুধু অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হলাম। কারণ আমি তার সমস্যাগুলো জানতাম না। বাড়ির কর্তার নিকট সুন্দর বালকের এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলাম।

তিনি জানালেন, এটা আমার সন্তান। জন্মের পর সে সুস্থ ছিল। হঠাৎ করে তার দুই পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। সেই সাথে কথা বলার সক্ষমতাও হারায়। এই বলে তিনি চোখের জল অঝোরে ছেড়ে দিলেন। ধরে রাখতে পারলেন উনার মনের মধ্যে লুকানো কষ্টগুলো। আমি ভদ্রলোকটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমি বালকটির নাম জানতে চাইলাম।

বালকটির নাম সুমন। আমি আবার তার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনলাম। আবার তার চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করলাম। হ্যা, এবার তার চোখের চাহনি বুঝতে সক্ষম হলাম। তার অপলক দৃষ্টি যেন বলছিল, আমি তোমাদের মতই মানুষ। তোমরা যেমন মহান আল্লাহর সৃষ্টি, ঠিক তেমনি আমিও আল্লাহর সৃষ্টি। আমি তোমাদের মত চলাফেরা করতে পারি না। খেলাধুলা করতে পারি না। তোমাদের মত মনের আবদার গুলোও আব্বু-আম্মুর কাছে জানাতে পারি না। আব্বু-আম্মু তো আর শত চেষ্টা করেও আমার আকুতি বুঝতে পারে না। তবুও তারা আমার ইচ্ছা গুলো পূরণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। আমার কাছে কেউ আসতে চাই না। যারা আসে তাদেরকে দেখে আমার খুব ভাল লাগে। তাদের মত আমারও ঘুরতে, খেলতে ও স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমি তো আর পারি না। সবার মতো আমারও সপ্ন ছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবো। দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবো। সে যা বলতে চাইছিল এগুলো তার মর্মকথা। আমি ও আমার বন্ধু খাওয়া-দাওয়া সেরে বিদায় নিলাম। কিন্তু সুমনের কথা আর মাথা থেকে সরে না।

মাথার মধ্যে এক সুমন থেকে লক্ষ সুমনের জন্ম নিল। আমাদের আশেপাশে আরও অনেক সুমন আছে যাদের খোঁজ আমরা পায় না। সুমনের মতো ঘরের কোণে বা বারান্দায় শুয়ে কিংবা বসে স্বপ্নগুলে বিসর্জন দিয়ে চলেছে। তারা এক মুঠো স্নেহ পাবার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুণে থাকে। কিন্তু তাদের দিকে ফিরে তাকানোর সময় কারও নেই। স্নেহের পরশ বুলিয়ে তাদের মনের কোণে এক পশলা আশার সঞ্চার করার সময়টুকু কারও নেই। সুমনের মত কত শিশু প্যারালাইজডের মত শারীরিক অক্ষমতা কিংবা বাকশক্তিহীন অথবা অন্য কোন মানসিক সমস্যা নিয়ে দিনযাপন করেছে। এরা মানসিক কষ্টে ভুগতে থাকে।

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তাদেরকে বোঝা মনে করা হয়। তাদের কোন গুরুত্ব আমাদের সমাজে নেই। একমাত্র পিতামাতাই তাদের শেষ আশ্রয়স্থল। তারপরও পিতামাতার সংসারের অন্যান্য কাজের ঝামেলায় সেই গুরুত্ব আর থাকে না। তাদেরকে অকেজো মনে করা হয়। সমাজের সকল অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।

বঞ্চিত এই মানুষ গুলোকে বলা হয় প্রতিবন্ধী। আর প্রতিবন্ধী শব্দটার মধ্যে রয়েছে হাজারও অবহেলা। এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অপরিহার্য। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সুমনের মত হাজারও প্রতিবন্ধী বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে রয়েছে। আজ তাদের কথা কে চিন্তা করছে? তাদের সুযোগ-সুবিধা, নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত করার জাতিসংঘ ১৯৯২ সালে ৩ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কারণ তাদের মানসিক প্রশান্তি প্রয়োজন। সুন্দর এই পৃথিবীতে সুষ্ঠু ভাবে বাঁচার অধিকার তাদেরও রয়েছে। অবাধ স্বাধীনতা নিয়ে তারাও বাচতে চাই। এই মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এই দিবস পালিত হয়। প্রতিবন্ধী সম্পর্কে সচেতন করাই এ দিবসের মহান লক্ষ্য। তাছাড়া প্রতিবন্ধীদের সংখ্যাও কম নয়। বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে হিসেবের বাইরে রেখে কোন দেশের উন্নতি আশা করা যায় না। তাই আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস পালিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে জাতিসংঘ।

তবে দিবস পালনের মধ্যে দিনটিকে সীমাবদ্ধ রাখলে সুমনের মত হাজারও প্রতিবন্ধী ঘরের কোণে, বারান্দা ও মশারীর মধ্যে থেকে যাবে। প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে দিবস পালন ব্যর্থ হবে। প্রতিদিনই হতে হবে ৩ ডিসেম্বর। তাদের মানসিক বিকাশের পথ তৈরি করতে হবে। যেখানে তারা তাদের জীবনকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকবে। সোনালী দিনের অপেক্ষায় থাকবে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের সাথে থাকবে আত্মিক সম্পর্ক। তাদের প্রতি থাকতে হবে সকলের অকুণ্ঠ ভালবাসা, স্নেহ, সহানুভূতি ও যথার্থ সমবেদনা। প্রতিবন্ধীরা থাকবে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। তাদের প্রতি সমবেদনা কোন দয়া ভিক্ষা নয়। এ অবস্থার অবসানের জন্য সবার মধ্যে এই উপলব্ধি থাকতে হবে যে, সুমনের মত মানুষেরা আমাদের প্রতিবেশী। তারা কেউ পর নয়, ওরা আমাদেরই আপনজন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সরকারি কেসি কলেজ, ঝিনাইদহ। কমল উদ্দিন (আলাপ) ২৩:৫৬, ৩০ অক্টোবর ২০১৮ (ইউটিসি)[উত্তর দিন]