ব্যবহারকারী:Nilotpal.sanyal/নিতাই বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিতাই বসু
জন্মনামনিতাই বসু
জন্ম২৬ মে ১৯২৭
কলকাতা
মৃত্যু৫ মার্চ ২০০৯ (বয়স ৮১)
কলকাতা
ধরনভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত
পেশাসঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীতশিক্ষক, সঙ্গীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রসেতার
কার্যকাল– ২০০৯


নিতাই বসু (জন্ম : ২৬শে মে, ১৯২৭  – মৃত্যু : ৫ই মার্চ, ২০০৯) একজন বাঙালী সেতারবাদক এবং সঙ্গীতজ্ঞ, যিনি হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সংগীতে জয়পুর সেনিয়া ঘরানার বাদনশৈলীর অন্যতম প্রতিনিধি।

পরিবার ও ছেলেবেলা[সম্পাদনা]

নিতাই বসুর পিতা রমেন্দ্র কুমার বসু এবং মাতা উমারানি দত্ত। তাঁর পিতামহ নগেন্দ্র কুমার বসু এবং প্রপিতামহ হরিশচন্দ্র বসু। এই বসু পরিবার মূলতঃ অধুনা আহিরিটোলার বৃন্দাবন বসাক স্ট্রীটের বাসিন্দা ছিলেন। নগেন্দ্র কুমার বসু এবং তাঁর ভাই গুণেন্দ্র কুমার বসু পাইকপাড়ায় ২০/১ রাজা মনীন্দ্র রোডে অবস্হিত বাড়িটি তৈরি করেন। গুণেন্দ্র কুমার বসুর পুত্র দীপেন্দ্র কুমার বসু একজন কৃতি চিত্রশিল্পী ছিলেন। তাঁর আঁকা চৈতন্য সিরিজের ছবিগুলি কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ্ ফাইন আর্টস্-এ এবং দুর্গা সিরিজের ছবিগুলি গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন-এ আজ‌ও সংরক্ষিত আছে। তাঁর সৃষ্টি 'ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিনী' ছবিটি নিতাই বসুর ঘরে আজীবন সাজিয়ে রাখা ছিল। নিতাই বসুরা ছিলেন আট ভাই ছয় বোন। মাতা উমারানি ছিলেন অতুল চন্দ্র দত্ত ও বীণাপাণি দত্তের কন্যা। অতুল চন্দ্রের পিতা কালিকাদাস দত্ত ছিলেন কুচবিহারের রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের দেওয়ান এবং এক উল্লেখযোগ্য ব‍্যক্তিত্ব, যাঁর নামে কুচবিহারের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল, যা এখন‌ও বিদ্যমান। কালিকাদাস মহাশয়ের তিন পুত্র -- জেষ্ঠ্য পুত্র অতুল চন্দ্র দত্ত, মধ‍্যম পুত্র চারুচন্দ্র দত্ত ছিলেন শ্রী অরবিন্দের (অরবিন্দ ঘোষ) খুব‌ই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এবং কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন সেতারবাদক নরেশ চন্দ্র দত্ত। ছোটো মামা নরেশ চন্দ্র দত্তের প্রভাব নিতাই বসুর অন্তর্নিহিত শিল্পী-সত্তার স্ফুরণে ইন্ধন যুগিয়ে ছিল। উমারানি দেবীর মামার বাড়ি ছিল ঝামাপুকুরের মিত্র বাড়ি, যেখানে জোড়া গোপাল জিউ অধিষ্ঠিত ছিলেন। উমারানি দেবীর মাতা বীণাপাণি দেবী ছিলেন শ্রী ভোলানন্দ গিরি মহারাজের শিষ‍্যা। ভোলাগিরি বাবা বীণাপাণি দেবীকে 'জটিয়া মা' নামে পরিচিতি দেন। বস্তুতঃ তিনি 'গোপাল মা' ও 'জটিয়া মা' নামে খ‍্যাত ছিলেন। [১]

সঙ্গীত জীবন[সম্পাদনা]

নিতাই বসুর প্রথম শিক্ষা ছোটো মামা নরেশ চন্দ্র দত্ত মহাশয়ের কাছে। তার পরে উনি সেনিয়া ঘরানার উস্তাদ মুস্তাক আলী খান[২] সাহেবের কাছে সেতার ও সংগীতের শিক্ষা শুরু করেন। মুস্তাক আলি খান সারা জীবনে যে ছয়জন শিষ্যকে গান্ডা-বন্ধন করে গান্ডা-বাঁধা শিষ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেন, তিনি তাদের অন্যতম [৩]স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি.এ. পাস করার পর তিনি কলকাতার এবং বাইরের প্রায় প্রত্যেক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স, বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স এবং বাংলা ও বাংলার বাইরে বহু অনুষ্ঠানে সেতারবাদনে তিনি প্রশংসা ও গুণীজনের স্বীকৃতি লাভ করেন এবং বহু জায়গায় পুরস্কৃত হন। কিন্তু তারপরেও আস্তে আস্তে তিনি পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থাকার চেষ্টা করেন। তিনি শুধু সেতার নয়, বিভিন্ন যন্ত্র বাজাতে পারতেন। তিনিই সম্ভবতঃ একমাত্র সেতারবাদক যিনি ডান হাতের মধ্যমায় মিজরাব ব্যবহার করে সেতার বাজাতেন। হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছাড়াও তিনি সব রকম গান বাজনাই শুনতেন, দেশী ও বিদেশী। শোনার ক্ষেত্রে উনার কান ছিল একেবারে আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু সেতার বাজানোর ক্ষেত্রে তিনি একদম গোঁড়া এবং একনিষ্ঠ সেনিয়া ঘরানার প্রতিনিধি ছিলেন, কারণ সে ব্যাপারে তিনি তাঁর গুরু মুস্তাক আলি খানের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন।


প্রভাব[সম্পাদনা]

নিতাই বসু উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় ২০/১ রাজা মনীন্দ্র রোডের বাড়িতে থাকতেন। উনার বাড়ির পাশেই প্রখ্যাত সাহিত্যিক নরেন্দ্রনাথ মিত্র মহাশয়ের বাড়ি ছিল [৪]। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের লেখা 'সেতার' গল্পটি নিতাই বসুর জীবনচরিত অবলম্বনেই লেখা। নিতাই বসু ব্যক্তিগত ভাবে প্রচারবিমুখ হলেও ওনার অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং তারই সাথে সদাহাস্যময় প্রফুল্ল মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের গুণে এবং টানে বহু নামি-অনামি শিল্পীই ওনার বাড়ীতে আসতেন বা নিয়মিত যাতায়াত করতেন [৫]। বড় বড় উস্তাদরা যেমন আসতেন, তেমনি আবার সমসাময়িক আধুনিক শিল্পীরাও আসতেন। উনি পেশা-জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে ছোটো বড়ো সকলের কথাই গুরুত্ব দিয়ে ভালোবেসে শুনতেন, মানুষকে সম্মান করতেন, অনুপ্রেরণা দিতেন এবং মানুষের ওপর আস্থাশীল ছিলেন।

শিক্ষা ও দর্শন[সম্পাদনা]

  • কোনো রাগ বা সুর অথবা কোনো গায়কী বোঝানোর জন্য উনি অনেক সময়ই গান করে বোঝাতেন।
  • তিনি বলতেন, মানুষের যখন প্রথম গলা দিয়ে সুর আসে সেটা খুব চড়ায় আবার খুব খাদেও নয়। সুরটা আসে মধ্যম অবস্থা থেকে। তিনি ভালোবাসতেন মধ্য লয়ে বাজাতে, এটাই উনার শিক্ষা। বারবারই বলতেন, মধ্য লয়ে থাকো; মধ্য লয়ে মার্গ সংগীত সম্পূর্ণ প্রকাশ করা বেশ পান্ডিত্যের ব্যাপার।
  • তিনি বলতেন - দক্ষতা খুব প্রয়োজনীয়, কিন্তু দেখতে হবে দক্ষতা যেন তোমায় গ্রাস না করে ফেলে। অর্থাৎ যে রাগটা তুমি বাজাচ্ছ বা তুমি গাইছ সেই রাগ বা সেই গান আর তুমি এক হয়ে গেছো আর আলাদা করা যাচ্ছেনা। তুমিই হয়ে গেলে এক জীবন্ত রাগ বা গান। এই জায়গায় পৌঁছানোই হল মূল উদ্দেশ্য।

প্রকাশিত অ্যালবাম[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]