বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্যবহারকারী:আল মামুন খান/খেলাঘর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয় সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত নানা রোগের আক্রমণে উত্পাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এসব ছত্রাকজনিত রোগের একটির নাম শুকনা ক্ষত বা অ্যানথ্রাকনোজ রোগ। মুকুল বা ফুল এ রোগে আক্রান্ত হলে তা কালো হয়ে ঝরে পড়ে। গুটি বা ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে ধূসর বাদামি বা কালো দাগ পড়ে। বেশি আক্রান্ত হলে এগুলোও ঝরে পড়ে। আমের মুকুলে এ রোগের আক্রমণ হলে গাছের সব মুকুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এ সময় ছত্রাকনাশক স্প্রে করে রোগ দমন করতে হয়। এক্ষেত্রে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সিমবুশ ও ০.৫ মিলি লিটার হারে টিল্ট ২৫০ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মটর দানার আকৃতি ধারণ করলে একই মাত্রায় এ বালাই নাশক দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।


পাউডারি মিলডিউ নামক এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো এক প্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে ঢেকে যায় এবং ঝরে পড়ে। এ রোগ প্রতিরোধেও গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে থিওভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে একইভাবে স্প্রে করতে হয়। আবার গুটি হলে একই মাত্রায় একইভাবে দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।


আমের মুকুলের ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে মিলিবাগ বা হপার একটি মারাত্মক পোকা। হপার দেখতে সবুজ-বাদামি রঙের হয়ে থাকে। নিমম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এরা ক্ষতি করে। এ পোকার আক্রমণে ২০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত আমের উত্পাদন কমে যেতে পারে। আম গাছে মুকুল আসার সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিমম্ফ দেখা যেতে পারে। এরা মুকুলের রস চুষে খায়। এতে মুকুল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে। এ পোকা যখন মুকুলের রস চুষতে থাকে তখন এদের মলদ্বার দিয়ে প্রচুর আঠালো রস নিঃসরণ হয়। এ রস মুকুলের ফুল ও পাতায় আটকে যায়। এতে শুটি মোল্ড নামক এক প্রকার ছত্রাক জন্মে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে পাতার উপরিভাগ ছেয়ে ফেলে। ফলে পাতা কালো দেখায়।

সবুজ পাতা কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উত্পাদন ব্যাহত হয়। ফলে গাছ দুর্বল হয় এবং ফলন কমে যায়। মারাত্মক এ হপার পোকা দমনে আমের বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে। এছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ১.০ মিলি হারে বাসাথ্রিন বা রিপকর্ড বা সিমবুশ ১০ ইসি মিশিয়ে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার গুটি অবস্থায় ওই ওষুধ আরও একবার স্প্রে করতে হবে। এ পোকার সৃষ্ট ছত্রাক দমনের জন্যও মুকুল আসার পর এবং ফুল ফোটার আগে থিওভিট ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে একইভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আমের গুটি অবস্থায় পুনরায় স্প্রে করতে হবে।

আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়েই আম গাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা, মুকুল ঝরে পড়েই আমের উত্পাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।