বেগার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বেগার (ইং‌রে‌জি‌তে: Veth, Vethi) অথবা সংস্কৃ‌তে: ভি‌ট্টি চাকু‌রি অথবা ফার্সি ভাষায় এক ধরনের বিনা পারিশ্রমিকের সামাজিক শ্রম, যা স্বাধীনতা-পূর্ব ভার‌তের জনগণ‌ সরকা‌রের জন‌্য কর‌তে বাধ‌্য হ‌তো।[১][২]

‌বিবরণ[সম্পাদনা]

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আওতায় জমিদারগণ তাদের জমিকে নিজ নিজ জোত বা খামার জমি হিসেবে রাখার অধিকার পেত। কৃষিশ্রমি‌কের সংখ‌্যা খুবই কম থাকায় বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক যেমন, কৃষি কাজে নিয়োজিত দাস, পাইকাশ্ত বা অনাবাসিক রায়ত, এবং জমিদারের ভৃত্য জ‌মিদা‌রের খামার জমি চাষ করত। প্রত্যেক সচ্ছল জমিদারিতে মেয়াদকালীন চাকরান এর ব্যবস্থা ছিল। সে অনুযায়ী, ভৃত্যদের খাজনা মওকুফ রে‌খে জমি চাষের সুবিধাসহ বি‌ভিন্ন সুযোগ সাহায্য-সেবা এবং পাওনা পরিশোধের পদ্ধতি ছিল।

ঊনিশ এবং বিশ শতকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সা‌থে সা‌থে যখন বৃহদাকারে ফসল ভাগাভাগি বা বর্গাপ্রথার প্রচলন হয় তখন বেগার একটি নিপীড়নমূলক ব্যবস্থায় প‌রিণত হ‌য়ে প‌ড়ে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বর্গা দেওয়ার মতো জমির পরিমাণ কমে যায়। বর্গাচাষিরা এ‌তে সুবিধাজনক শর্ত আদায় করার শক্তিপিায় না। অনেক জ‌মিদার এমন শর্তেও বর্গা দিত যে বর্গাদারকে কেবল ফসলের অর্ধেক দিলেই হ‌বে না, জ‌মির মালিকের ক্ষেতও বিনামূল্যে চাষ করবে। বর্গাদারকে বিনা পারিশ্রমিকে এবং বড়জোর এক পেট ভক্ষণ ক‌রে নির্দিষ্টসংখ্যক দিনে মালিকের জন্য কাজ করতে হতো। এমনটা তা শুধু ক্ষেতেই নয়, অন্যান‌্য জায়গায়, যেমন: পুকুর এবয় খাল খনন, ফসল মাড়াইয়ের ব্যবস্থা করা, বাজারে পণ‌্য পরিবহণ, গবাদিপশুর দেখাশোনা, মাছ ধরাসহ বি‌ভিন্ন কাজ শ্রম দিতে হতো।

উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব জেলাগুলোতে জমিদা‌রের ক্ষেতে আদিবাসী বর্গাচাষিদের জোর ক‌রে কাজ করা‌নো হতো। বেগার শ্রম ছিল প্রায় সর্বজনীন।

এ ধরনের শ্রমের বিরুদ্ধে বর্গাচাষিদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছিল। ১৯৪৬-১৯৪৭ সালের তেভাগা আন্দোলন কেবল বর্গা প্রথারই বিরু‌দ্ধে নয়, বেগার পদ্ধতির বিরুদ্ধেও এ‌টি এক‌টি সোচ্চার আ‌ন্দোলন ছিল। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হ‌য়ে যায়। ভার‌তের জাতীয়তাবাদী মানু‌ষের চেষ্টায় এরই সা‌থে বেগার পদ্ধতিও আনুষ্ঠানিকভা‌বে সমাপ্ত এবং বিলুপ্ত হ‌য়ে যায়।

ই‌তিহাস[সম্পাদনা]

মারাঠা সম্রা‌জ্যে পেশওয়া'র শাস‌নে ভেথ বেগার ব‌্যাপক প‌রিস‌রে প্রচ‌লিত ছিল। সাসওয়াদ অঞ্চচ‌লের কিছু শ্রেণির মানুষ যেমন, ব্রাহ্মণ, জ‌মিদার এবং কাসার (পিতল-শ্রমিক) এ‌টি থে‌কে অব‌্যাহ‌তি পেত।[১]

বৃ‌টিশ ভারত‌ে দেশীয় রাজ‌্যগুলো‌তে এ‌টি প্রচ‌লিত ছিল।[৩] মেওয়া‌ে রাজ্যে, কৃষক (উচ্চ শ্রেণির অন্তর্ভূক্তদেরসহ) বেগার প্রথার সা‌থে জ‌ড়িত হ‌তে বাধ‌্য করা হ‌তো। বেগার প্রথার অংশ হি‌সে‌বে কৃষক এবং নিম্ন শ্রেণির লে‌া‌কে‌দের শাসক‌দের প‌রিব‌া‌রের জন‌্য পা‌নি সরবরাহ করতে হ‌তো। এছাড়াও তা‌দের রাস্তা, বা‌ড়ি, বাঁধ তৈ‌রি কর‌তে হ‌তো এবং আহত সৈ‌নিক‌দের বহন কর‌তে হ‌তো।[২] ব্রিটিশ সরকার বেগার প্রথা থে‌কে খ্রিষ্টান‌দের অব‌্যাহ‌তি দেয়।[৪]

ভারতীয় কৃষ‌কেরা ব্রিটিশ অ‌ফিসার‌দের এবং সাধারণ প‌রিবহ‌নের লটবহরের কা‌জ কর‌তে বাধ‌্য হত। এছাড়াও তারা নি‌জে‌দের লা‌ভের জন‌্য অন‌্যান‌্য কিছু কাজ করত। বেগার না খাট‌লে ব‌ন্দি অথবা জ‌রিমানার শা‌স্তি প্রদান করা হ‌তো।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. P. A. Gavali (১৯৮৮)। Society and Social Disabilities Under the Peshwas। National Publishing House। পৃষ্ঠা 136। আইএসবিএন 978-81-214-0157-9 
  2. Ghanshyam Shah (২০০৪)। Social Movements in India: A Review of Literature। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 52–। আইএসবিএন 978-81-321-1977-7 
  3. Harshad R. Trivedi (১৯৯৩)। Tribal Land Systems: Land Reform Measures and Development of Tribals। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 312। আইএসবিএন 978-81-7022-454-9 
  4. Amita Baviskar (২০০৪)। In the Belly of the River: Tribal Conflicts Over Development in the Narmada Valley। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 978-0-19-567136-0 

ব‌হিঃসং‌যোগ[সম্পাদনা]