বুঢ়ীগোঁসানী দেবালয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বুঢ়ীগোঁসানী দেবালয়
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাযোরহাট
অবস্থান
অবস্থানগড় আলি
দেশভারত

বুঢ়ীগোঁসানী দেবালয় যোরহাট শহরের মধ্যভাগে গড় আলির পূর্বে অবস্থিত এক শাক্ত মন্দির। ১৭০৮ সালে আহোম স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহই জয়ন্তীয়া রাজ্য থেকে গোঁসানীর বিগ্রহ এনে গড়গাঁওয়ে স্থাপন করেছিলেন। গড়গাঁও থেকে রংপুর এবং রংপুর থেকে যোরহাটে আহোম রাজ্য-এর রাজধানী পরিবর্তন হওয়ায় পরে এই দেবালয় বর্তমান স্থানে স্থাপিত করা হয়।[১] মন্দিরে থাকা মূর্তিটি দুর্গা দেবীর। আগের সময়ে বুঢ়ীগোঁসানী দেবালয় "বরপূজাঘর দ'ল" বলেও পরিচিত ছিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৭০৮ সালে জয়ন্তীয়া রাজা রামসিংহ কাছাড়ি রাজা তাম্রধ্বজকে হারিয়ে আহোম রাজার বশ্যতা অস্বীকার করেন। তখন আহোম স্বর্গদেউ রুদ্রসিংহ‍ জয়ন্তীয়া রাজাকে আক্রমণ করে পরাস্ত করেন। জয়ন্তীয়া রাজ্য দমন করার সময় সেই রাজ্যের অন্যান্য উপঢৌকনের সাথে বুঢ়ী গোঁসানীর মূর্তি এবং যোনিকে স্বর্গদেব গড়গাঁতে আনার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তখন জয়ন্তীয়া রাজ-পরিবার শাক্ত ছিল এবং জয়ন্তীয়া গোঁসানী জাগ্রত বলে সর্বসাধারণ বিশ্বাস করত। জয়ন্তেশ্বরী দেবীকে আহোম রাজ্যে আনতে আহোম সেনার মধ্যে হেনো নানা রূপে দেখা দিল। তারপরে আহোম সেনাপতিকে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন যে তিনি সেই দেশ ছেড়ে যেতে চান না এবং আহোমরা মূর্তি নিতে চাইলে বুঢ়ী নদীর কানে থাকা গোঁসানীর মূর্তি এবং যোনি নিতে পারেন। এই স্বপ্নের পরে আহোম সেনাপতি বুঢ়ী নদীর কান থেকে দেবীর মূর্তি এনে স্বর্গদেউকে দেন। বুঢ়ী নদীর কান থেকে আনার জন্যই এই মূর্তিকে "বুঢ়ীগোঁসানী" বলা হয় বলে অনুমান করা হয়।[১]

জয়ন্তীয়ার থেকে গোঁসানীকে আনতে সাথে পূজারী সনাতনকে আনা হয়েছিল। বর্তমানের পূজারীরা সেই সনাতনেরই সন্তান-সন্ততি। স্বর্গদেব তাঁদের "পূজাঘরীয়া বরুয়া" উপাধিতে সম্মানিত করেছিলেন।[১] স্বর্গদেউ রাজধানী থেকে কোনো কারণে বাইরে গেলে পূজারী গোঁসানীকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। গড়গাঁও থেকে রংপুর এবং রংপুর থেকে যোরহাটে আহোম রাজ্যের রাজধানী তুলে আনার সময় বুঢ়ী গোঁসানীকেও যোরহাটে নিয়ে আসা হয়। এই দেবালয় বর্তমানে যোরহাট শহরের গড় আলির পূর্বে দেবালয় পথে স্থাপিত।

দেবালয়ে থাকা সোনারূপার ছত্র, ফুল, কোষা-অর্ঘ, তামা, বলিকাটা দা ইত্যাদিতে ওজন এবং কখন সেগুলি তৈরি করে দিয়েছিলেন তা সকল স্বর্গদেউ চন্দ্রকান্ত সিংহ-এর নামে লিখে রাখা হয়েছিল। যোরহাটে রাজধানী আনার পরে মরাণ এবং মানের উপদ্রবে আহোমরা বুঢ়ী গোঁসানীর দ'ল তৈরি করতে পারলেন না। কালক্রমে দেবালয়ের মাটি-বাড়ি এবং সেবায়তের তামার ফলকটিও হারাল। সেইজন্যই ব্রিটিশদের সময়ে এই দেউল কোনো সাহায্য পায়নি। পুরন্দর সিংহ‍ বর্তমানের দেবালয় থাকার স্থানে খড়ের ঘর তৈরি করে পূজার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রায় বাহাদুর রাধাকান্ত সিংহ সরকারের কাছে লেখালিখি করে জমিটি দেওয়ান এবং কর রেহাই করান। নাগরিকদের অবদানে তৈরি টিনের ঘরটি বড় ভূমিকম্পে নষ্ট হওয়ায় পরে বর্তমানের ঘরটি তৈরি হয়।[১]

পূজা-অর্চনা[সম্পাদনা]

পূজারীদের মতে মূর্তিটি দেবী দুর্গার। গোঁসানীর দৈনিক পূজার্চনা করা হয়। দেবীকে আবাহন এবং স্নানের সময় পূজাঘরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আহোম রাজ্য গেলে নাগরিকরা দৈনিক পূজার নৈবেদ্য ইত্যাদি দিত। আজকালও নাগরিকদের দানে পূজার ব্যবস্থা করা হয়।

পুরানো সময়ে গোঁসানীকে দৈনিক পূজা করে পূজার নির্মালি এবং হোমের ফোটা পূজারীকে স্বর্গদেউকে দিতে হত। নির্মালির সাথে পূজারী বড়ো একটি শরাইতে বলিকাটা ছাগলও প্রসাদ স্বরূপ দিতেন।

মন্দিরটিতে প্রতিবছর দুর্গা পূজা এবং শিব পূজা ধুমধামের সাথে আয়োজন করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সম্পাদনা: ড০ মহেশ্বর নেওগ (২০০৪)। পবিত্র আসাম। গুয়াহাটি: আসাম সাহিত্য সভা। পৃষ্ঠা ৬৮–৭০। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]