বিরাটনগর পাটকল ধর্মঘট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বিরাটনগর পাটকল ধর্মঘট (মাজদুর হরতাল) হলো ১৯৪৭ সালে নেপালের বিরাটনগরে সংঘটিত বিরাটনগর পাটকল লিমিটেড এর শ্রমিকদের একটি ধর্মঘট। এটি প্রথমে শ্রমিক অধিকার নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শুরু হয় কিন্তু, ধীরে ধীরে এটি একটি শাসক বিরোধী দেশব্যাপী আন্দোলনে পরিণত হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

পাটকলটির শ্রমিকদের মতে, সেখানে শ্রমিকদের কোনো অধিকার ছিল না এবং পাটকলের মালিকরা তাদের শ্রমকে উপেক্ষা করতেন। সেখানকার বসবাসের অবস্থাও অনেক খারাপ ছিল। শ্রমিকদের থাকার স্থানগুলোতে পানির ব্যবস্থা ছিল না। এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, কিছু মানুষ সেখানে শ্রমিকদের উপর শোষণ করছিল।[১]

ধর্মঘট[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের ৪ তারিখে, গিরিজা প্রসাদ কোইরালা, তারিনী প্রসাদ কোইরালা, মন মোহন অধিকারী এবং যুবরাজ অধিকারী এর পাটকলটির কর্মচারী হিসেবে নেতৃত্বে এই ধর্মঘট শুধুমাত্র শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত দাবি নিয়ে শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক বাণিজ্য সংঘ অধিকারও দাবি করা হয়।[২][৩] নেপালি কংগ্রেস বিরাটনগরের এই ধর্মঘটকে সমর্থন করে।[৪] মার্চ মাসের ৫ তারিখে, বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কোইরালা তার সমর্থকদের সাথে এই ধর্মঘটে যোগ দেন, যার ফলে এই ধর্মঘট আরও বড় হয়।[৫] রানা শাসকগোষ্ঠীর শাসকেরা ধর্মঘটটি থামাতে সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন। এই বাহিনী বিরাটনগর পৌছে ধর্মঘটের নেতাদের গ্রেপ্তার করলে ধর্মঘটটির সমাপ্তি ঘটে। নেতাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতে পালিয়ে যায়। নেপালি কংগ্রেস-এর ছয় নেতাকে (গিরিজা প্রসাদ কোইরালা তারিনী প্রসাদ কোইরালা, মন মোহন অধিকারী, যুবরাজ অধিকারী, বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কোইরালা এবং গেহেন্দ্রহারী শরমা) কাঠমান্ডুতে কারাবন্দি হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়। নেপালী কংগ্রেস ভারতের যোগবনীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে এবং দেশব্যাপী সত্যাগ্রহ বা আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে, রাষ্ট্রব্যাপী রানা রাজগোষ্ঠী বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।[৬]

পরিণাম[সম্পাদনা]

পদ্মা শামসের জাং বাহাদুর রানা

মার্চের ১৩ তারিখে রানা রাজগোষ্ঠী বিরোধী আন্দোলনটি পূর্বে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুরু হয়। কাঠমুন্ডু, বিরাটনগর, জনাকপুর এবং বীরগঞ্জে হাজার হাজার নেপালী স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হন। তারা সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং নাগরিক অধিকারকে আনুষ্ঠানিক করার দাবি জানান। কাঠমুন্ডুর ঘটনাটি রানা শাসকগোষ্ঠীকে উদ্বিগ্ন করে। কাঠমুন্ডুতে হাজার হাজার মানুষ রানা রাজগোষ্ঠী বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। ১৬ তারিখে পদ্মা শামসের জাং বাহাদুর রানা একটি ঐতিহাসিক বক্তব্যে শাসনকার্যে পূর্বের চেয়ে বেশি রানা বংশ বহির্ভূত সাধারণ জনগণকে সংযুক্ত করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।

বন্দিদের মুক্তি[সম্পাদনা]

সেই প্রতিশ্রুতিপূর্ণ বক্তব্যের পর পদ্ম শামসের দেশব্যাপী গ্রেপ্তার হওয়া অধিকাংশ বন্দির মুক্তির আদেশ দেন। তবে, বিশ্বেশ্বরপ্রসাদ কোইরালা এবং তার বিরাটনগরের সহযোগীদের তখনো বন্দি রাখা হয়। ভারতের রাজনীতিবিদরা তাদের মুক্তির জন্য আবেদন করেন। অবশেষে, তারা ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে মহাত্মা গান্ধীর আবেদনে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।[৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Self Portraits(In nepali),p. 53.
  2. Bhuwan Lal Joshi; Leo E. Rose (১৯৬৬)। Democratic Innovations in Nepal: A Case Study of Political Acculturation। University of California Press। পৃষ্ঠা 62। GGKEY:5N30S3HU9BC। 
  3. Mahendra Man Singh (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। Forever Incomplete: The Story of Nepal। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 124–। আইএসবিএন 978-81-321-1658-5 
  4. Bhuwan Lal Joshi; Leo E. Rose (১৯৬৬)। Democratic Innovations in Nepal: A Case Study of Political Acculturation। University of California Press। পৃষ্ঠা 61। GGKEY:5N30S3HU9BC। 
  5. Bhuwan Lal Joshi; Leo E. Rose (১৯৬৬)। Democratic Innovations in Nepal: A Case Study of Political Acculturation। University of California Press। পৃষ্ঠা 62। GGKEY:5N30S3HU9BC। 
  6. Human Rights Violations in Nepal। Human Rights Watch। ১৯৮৯। পৃষ্ঠা 15–। আইএসবিএন 978-0-929692-31-9 
  7. Bhuwan Lal Joshi; Leo E. Rose (১৯৬৬)। Democratic Innovations in Nepal: A Case Study of Political Acculturation। University of California Press। পৃষ্ঠা 63। GGKEY:5N30S3HU9BC।