বিনীতা রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বিনিতা রায় থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বিনীতা রায়
কাজের মেয়াদ
১৯৭৫ – ১৯৭৮
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯০৭-০৮-১৮)১৮ আগস্ট ১৯০৭
সারে, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩(1993-09-06) (বয়স ৯১)
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
দাম্পত্য সঙ্গীনলিনাক্ষ রায়
সম্পর্কসাধনা বসু (ভগিনী)
নয়নাদেবী (ভগিনী)
সন্তানত্রিদিব রায় (পুত্র)
পিতামাতা
  • সরল সেন (পিতা)
  • নির্মলা দেবী সেন (মাতা)
বাসস্থানচট্টগ্রাম
যে জন্য পরিচিতসাহিত্যরসিক, কূটনীতিবিদ ও মন্ত্রী
ধর্মহিন্দুধর্ম

রাজমাতা বিনীতা রায় (১৮ আগস্ট ১৯০২ - ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯০)[১] কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী অভিজাত সম্প্রদায়ভূক্ত প্রমিলা সাহিত্যরসিক, কূটনীতিবিদমন্ত্রী ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার চাকমা সার্কেলের ঊনপঞ্চাশতম রাণী ছিলেন বিনীতা রায়ত্রিদিব রায়দেবাশীষ রায়ের রাজত্বকালে রাজমাতার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

বিনীতা রায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ আগস্ট ইংল্যান্ডের সারেই নগরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।সরলচন্দ্র সেন ও নির্মলা দেবী সেনের কন্যা তিনি। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক কেশবচন্দ্র সেনের পুত্র এবং ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল হাইকোর্টের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী। সেইসূত্রে বিনীতা রায় ছিলেন কুচবিহারের মহারাণী সুনীতি দেবী ও ময়ূরভঞ্জের মহারাণী সুচারু দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্রী। রাজা নলিনাক্ষ রায়ের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন বিনীতা রায়।[২] এরফলে চাকমা সার্কেলের ঊনপঞ্চাশতম রাণীর মর্যাদা লাভ করেন তিনি।[৩] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় বিনীতা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রথম সাহিত্যপত্র প্রকাশ করেন। গৈরিকা নামের সাহিত্যপত্রটি চাকমা ভাষায় কবিতাগুচ্ছের ছিল এবং ১৬ বছরে এর ১৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে।[২][৪]

১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বিনীতা রায় তার রাঙ্গামাটি প্রাসাদে সাধারণ নাগরিকদের আশ্রয়দানের উদ্দেশ্যে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম প্রতিনিধি দলের সদস্যরূপে মনোনীত করেন। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার ঐ সময়ে পাল্টা পদক্ষেপরূপে স্বাধীনতা যুদ্ধ বিরোধী তার পুত্র ত্রিদিব রায়কে প্রতিনিধি করে পাঠায়। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ত্রিদিব রায়ের রাজ্যের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল নিয়ে মতভেদ চলছিল। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মুক্তিযুদ্ধকালে চাকমাগোষ্ঠী নানাবিধ কারণে এই যুদ্ধে যোগ দেয়নি। ফলস্বরূপ তিনি রাঙামাটি ত্যাগ করতে বাধ্য হলে বিনীতা দেবীই বৌদ্ধ চাকমা উপজাতিদের সমূহ বিপদকালীন অবস্থা ও দুর্দৈবের মধ্যে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি দুর্গত চাকমাদের পাশে দাঁড়ান। ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকারকে ও রাষ্ট্রসংঘকে চাকমাদের দুরবস্থার কথা জানান, প্রধান থেরকে (বৌদ্ধ সন্ন্যাসী) বিদেশে পাঠান। এতেও চাকমাদের অবস্থার তেমন উন্নতি না হলেও, তিনি আমৃত্যু চাকমাদের উন্নতির জন্য সচেষ্ট ছিলেন।[১]

১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কটকালে বিনীতাকে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি পুণর্গঠন ও ভূমি পুনর্বাসন (১৯৭৫-৭৬) এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী (১৯৭৬-৭৮) হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।[৫]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির রাজভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৫৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%97%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
  3. "CHAKMA - Royal Family Of India" [চাকমা - ভারতের রাজ পরিবার]। Royal Family Of India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০৬ 
  4. Kamala Visweswaran (২১ মার্চ ২০১৩)। Everyday Occupations: Experiencing Militarism in South Asia and the Middle East (ইংরেজি ভাষায়)। পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 268–। আইএসবিএন 0-8122-4487-7 
  5. "বাংলাদেশের মন্ত্রী"www.guide2womenleaders.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৫-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০৬