বিড়ালের মাংস
বিড়ালের মাংস গৃহপালিত বিড়াল থেকে প্রস্তুত করা মাংস যা মানুষের ভোগের জন্য প্রস্তুত করা হয়। কিছু দেশের মানুষেরা নিয়মিত বিড়ালের মাংস খায়, অন্যদিকে কিছু মানুষ যুদ্ধকালীন সময়ে বা দারিদ্র্যজনিত কারণে বিড়ালের মাংস খেয়ে থাকে।
আফ্রিকা
[সম্পাদনা]আফ্রিকার প্রাগৈতিহাসিক সময়কালের মানুষের মলে বন্য বিড়ালের হাড় পাওয়া গেছে।[১] ক্যামেরুনের কিছু সংস্কৃতিতে, বিড়ালের মাংস খাওয়ার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আছে যা সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে বলে মনে করা হয়।[২]
এশিয়া
[সম্পাদনা]চীন
[সম্পাদনা]দক্ষিণ-পূর্ব চীনের কুয়াংতুং এবং কুয়াংশি প্রদেশে, বিশেষ করে বয়স্ক- মানুষ শীতের মাসে বিড়ালের মাংসকে একটি ভালো উষ্ণকারী খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করে। অনুমান করা হয় যে, দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের (জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লক্ষ) মানুষ প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার বিড়াল খায়।[৩][৪]
কুয়াংতুংয়ে বিড়ালের মাংস ঐতিহ্যবাহী খাবার "ড্রাগন, টাইগার, ফিনিক্স" (সাপ, বিড়াল, মুরগি) -এর একটি প্রধান উপাদান। বলা হয়ে থাকে এ খাবার নাকি শরীরকে বলবান করে।[৫]
সংগঠিত বিড়াল সংগ্রাহকরা দক্ষিণের রেস্টুরেন্টগুলোকে প্রাণী সরবরাহ করে থাকে।এগুলো বেশিরভাগই আনহুয়েই এবং চিয়াংসু প্রদেশে উৎপাদিত হয়।[৫][৬][৭] দেশটির পশুদের সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য, ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে চীন তার প্রথম খসড়া প্রস্তাব চালু করে। এ আইনে প্রাণীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের শাস্তিস্বরূপ মানুষকে বিড়াল বা কুকুরের মাংস খাওয়ার অপরাধে ১৫ দিন পর্যন্ত কারাবাসে রাখার বিধান রয়েছে।[৮][৯]
চীনে পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়ালের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঐতিহ্যগত খাদ্য হিসেবে বিড়ালের ব্যবহারের বিরোধিতা বেড়েছে। ২০০৬ সালের জুন মাসে প্রায় ৪০ জন আন্দোলনকর্মী শেনচেনের ফাংচি ক্যাট মিটবল রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়, যার ফলে এটি বন্ধ হয়ে যায়।[১০] ৪০ জনেরও বেশি সদস্য নিয়ে গঠিত সোসাইটি চীনা পশু সুরক্ষা নেটওয়ার্ক ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে কুয়াংচৌতে কুকুর এবং বিড়ালের ভোগের বিরুদ্ধে সুপ্রচারিত প্রতিবাদের আয়োজন শুরু করে। মানুষের সন্তোষজনক সাড়া পাওয়ায় পরবর্তীতে আরও ১০টি শহরে এ আন্দোলন শুরু করা হয়।[১১]
জাপান
[সম্পাদনা]জাপানে বিড়ালের মাংস ১৯ শতকের তোকুগাওয়া যুগের শেষ পর্যন্ত খাওয়া হত।[১২]
কোরিয়া
[সম্পাদনা]কোরিয়ায় বিড়ালের মাংস থেকে ঐতিহাসিকভাবে স্নায়ুশূল (নিউরালজিয়া) এবং গ্রন্থিবাত বা গেঁটেবাতের (আর্থ্রাইটিস) জন্য লোকজ প্রতিকার হিসেবে একটি বলবর্ধক ঔষধ তৈরি করা হয়। সাধারণত খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয় না। আধুনিককালে বিড়াল ভক্ষণ দেখা যায় এবং সম্ভবত বিড়ালকে স্যুপ আকারে খাওয়া হয়।[১৩][১৪][১৫]
তাইওয়ান
[সম্পাদনা]২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে তাইওয়ানের জাতীয় আইনসভা, যা আইন ইউয়েন নামে পরিচিত, দেশটির পশু সুরক্ষা আইনে সংশোধনী পাস করে, যা কুকুর এবং বিড়ালের মাংস বিক্রি এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।[১৬]
ভিয়েতনাম
[সম্পাদনা]২০১৫ সালের হিসাবে বিড়ালের মাংস ভিয়েতনামে খাওয়া হয়, যদিও সাধারণভাবে এটি অবৈধ।[১৭][১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩] এটি সাধারণত "tiểu hổ" -এর মেনুতে দেখা যায় (আক্ষরিক অর্থে "শিশু বাঘ")। উত্তর ভিয়েতনামের মানুষের মতে বিড়ালের আচড়ে অ্যাফ্রোডিসিকাল বৈশিষ্ট্য আছে।[২৪][২৫] তবে ২০১৮ সালে হ্যানয় শহরের কর্মকর্তারা নাগরিকদের কুকুর এবং বিড়ালের মাংস খাওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই উপদেশের প্রাথমিক কারণ ছিল একটি ভয়। মনে করে হয়েছিল যে, কুকুর এবং বিড়াল খাওয়ার চর্চা (যার অধিকাংশই বাড়ির চুরি করা পোষা প্রাণী) শহরের ভাবমূর্তিকে একটি সভ্য এবং আধুনিক রাজধানী হিসেবে কলঙ্কিত করতে পারে।[২৬] ফোর প'স (Four Paws) দ্বারা একটি বাজার গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হ্যানয়ে বসবাসকারী প্রায় ৮% মানুষ তাদের জীবনে এক বার হলেও বিড়ালের মাংস খেয়েছে।[২৭]
ইসলাম, ইহুদী ও হিন্দু ধর্মে
[সম্পাদনা]ইহুদী আইন কাশ্রুত এবং ইসলামী খাদ্য আইন উভয় আইনে বিড়ালের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ।[২৮] কাশরত ও হালাল আইন উভয়ই কোন স্থলজ শিকারী প্রাণী ভক্ষণ করতে নিষেধ করে। হিন্দুধর্ম বিড়ালের মাংস খাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং একে একটি পাপকার্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ David Taylor; Daphne Negus; Dave King; Jane Burton (১৯৮৯)। The Ultimate Cat Book। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 9–। আইএসবিএন 978-0-671-68649-9।
- ↑ Ngwa-Niba, Francis (২০০৩-০৩-১৭)। "The cat eaters of Cameroon"। BBC News।
- ↑ "China Protesters: Stop 'Cooking Cats Alive' – Fury After Newspaper Says 10,000 Felines Are Eaten Daily in Single Province"। NBC News। Associated Press। ১৮ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Trying to get cat off the menu in China"। The Star। ২৬ জুলাই ২০০৯।
- ↑ ক খ Some call it an indelicate trade, others, a delicacy ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৭-০৩-১৪ তারিখে, Xinhuanet.com, 13 Jan 2012 (from China Daily)
- ↑ Wang, Yu (২০০৮-১২-১৯)। "Nanjing sends meat that meows to Guangzhou"। Beijing: Beijing Today। ২০১৪-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২০।
- ↑ Moore, Malcolm (২০০৯-০১-০১)। "Cat-nappers feed Cantonese taste for pet delicacy"। London: Telegraph।
- ↑ "China to jail people for up to 15 days who eat dog"। Chinadaily। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২৬।
- ↑ "Trung Quốc sắp sửa cấm ăn thịt chó, mèo"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] (ভিয়েতনামী ভাষায়)
- ↑ "Animal rights protest shuts restaurant"। Reuters। ২০০৬-০৭-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-২২।
- ↑ "Guangzhou bans eating snakes--ban helps cats"। Reuters via animalpeoplenews.org। ২০০৮-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-১৬।
- ↑ Hanley, Susan (১৯৯৭)। Everyday Things in Premodern Japan। পৃষ্ঠা 66।
- ↑ "Dog and Cat Meat Consumption – In Defense of Animals – In Defense of Animals"। In Defense of Animals। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Ban South Korean dog and cat meat trade"। Our Compass। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Important Update On South Korean Dog And Cat Meat Trade"। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ Zeldin, Wendy (অক্টোবর ১৮, ২০১৭)। "Taiwan: Animal Protection Law Amended | Global Legal Monitor"। www.loc.gov।
- ↑ Việt Báo Thịt mèo ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মে ২০১৯ তারিখে
- ↑ "Thành phố thịt mèo"। ২০১৩-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০১।
- ↑ "9 Countries That Eat Cats and Dogs"। The Daily Meal। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Cat Meat"। Vietnam Coracle। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "The Truth About Cats & Dogs In Vietnam - The Dropout Diaries"। The Dropout Diaries। ২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ "Where cat sits happily on the menu"। Stuff। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ The Christian Science Monitor। "Why do Vietnamese keep cats on a leash? (Hint: What's for dinner?)"। The Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ Jerry Hopkins (১৫ মে ২০০৪)। Extreme Cuisine: The Weird and Wonderful Foods That People Eat। Tuttle Publishing। পৃষ্ঠা 25–। আইএসবিএন 978-1-4629-0472-3।
- ↑ Jerry Hopkins (২৩ ডিসেম্বর ২০১৪)। Strange Foods। Tuttle Publishing। পৃষ্ঠা 8–। আইএসবিএন 978-1-4629-1676-4।
- ↑ "Vietnamese capital Hanoi asks people not to eat dog meat"। BBC News। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ The Dog and Cat Meat Trade in Southeast Asia: A Threat to Animals and People Harvard Kennedy School, February 2020 (PDF; Page 16)
- ↑ সহীহ মুসলিম, ২১:৪৭৫২ (ইংরেজি)