বারা ঠাকুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বারা ঠাকুর হলেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশের বাঙালি হিন্দুসমাজে পূজিত এক অশাস্ত্রীয় লৌকিক দেবতা। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি প্রভৃতি জেলার গ্রামাঞ্চলে এই দেবতার পূজা প্রচলিত; তবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় এই বারাঠাকুরের পূজার প্রচলন অত্যধিক। 'বারা' শব্দের লোকায়ত অর্থ বাধা দেওয়া বা নিবারণ করা। মূলত ব্যাঘ্র-ভীতি নিবারণ ও সাংসারিক মঙ্গলকামনায় এই দেবতার পূজা করা হয়। ১লা মাঘ বা তার কাছাকাছি সময়ে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।[১]

তাঁর সাথে (বিশেষত মাথার চালির অবয়বে) মিশরের ফারাওদের আঁকা ছবিগুলির (যাদের মাথা অনেক লম্বা — বিশাল দেহ — রাজা বা দেবতা) মিল আছে বলে ধারণা করা হয়।[২]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

উল্টানো ঘট ও মাথায় লতা-পাতা আঁকা চ্যাপ্টা মুকুট — এটিই বারা ঠাকুরের মূর্তি। ঘটের উপর নানা রঙে আঁকা চোখ, মুখ, গোঁফ অঙ্কিত ধাকে। এই মূর্তিযুগলের গোঁফওয়ালা পুরুষমূর্তিটিকে দক্ষিণরায়-এর কাটা মুণ্ডু বলে মনে করা হয়, অপরটি তার মা নারায়ণী বা কালু রায় (ঘটে গোঁফ অঙ্কিত না থাকলে)।

খোলা মাঠে গাছতলায় গাছের গুঁড়ি বা শাখায় মূর্তি স্থাপন করে এঁর পূজা করা হয়। পূজায় বর্ণ ব্রাহ্মণ পৌরোহিত্য করেন; মূর্তির বিসর্জন হয় না। যে গাছে বারা ঠাকুর রাখা হয় তার সবচেয়ে উঁচু শাখায় একটি লালনিশান টাঙিয়ে দেওয়া হয়। শাস্ত্রীয় হিন্দু নিয়ম বহির্ভূতভাবে আগুনে পুড়িয়ে 'বারা' তৈরী হয় এবং পূজার পর সারাবছর খোলা আকাশের নিচে রেখে দেওয়া হয়।[২]

বারাঠাকুর পূজায় আদিমত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, তবে অশাস্ত্রীয় হলেও ব্রাহ্মণ-শাসিত বর্ণহিন্দু সমাজ এঁকে স্বীকার করে নিয়েছেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লোকসংস্কৃতি কোষ, বরুণ চক্রবর্তী, পৃষ্ঠা: ২৬৫
  2. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ৪৯৩

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]