বনবিহারী মুখোপাধ্যায়
বনবিহারী মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮৫ |
মৃত্যু | ৫ জুলাই,১৯৬৫ (বয়স ৮০) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | দরদি চিকিৎসক ও ব্যঙ্গ-সাহিত্যস্রষ্টা |
পিতা-মাতা | বিপিনবিহারী মুখোপাধ্যায় (পিতা) অপর্ণা দেবী(মাতা) |
ডাঃ বনবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৮৮৫ - ৫ জুলাই ১৯৬৫) এক দরদি চিকিৎসক ও ব্যঙ্গ-সাহিত্যস্রষ্টা ও ব্যঙ্গচিত্রাঙ্কনশিল্পী।[১]
সংক্ষিপ্ত জীবনী
[সম্পাদনা]বনবিহারী মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার গরলগাছা গ্রামে। পিতা বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায়। মায়ের নাম অপর্ণা। পরে অবশ্য মুখোপাধ্যায় পরিবার কলকাতার বেহালায় বসবাস করতে থাকেন। প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায় ছিল তার সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা। মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা ছিলেন বিদ্যোন্মুখ, প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিবান। মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা কালে বাংলাসাহিত্যের প্রখ্যাত সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় তথা বনফুল ছিলেন তার ছাত্র। চিকিৎসকের পেশায় বনবিহারীর অসামান্য জনপ্রিয়তা ছিল। অকৃতদার তিনি সাধারণ মানুষের সেবায় সতত নিয়োজিত ছিলেন। অসহায়রা তার যথেষ্ট সহায়তা পেতেন। নিজে সাহিত্য অনুরাগী হিসাবে প্রেরণাও দিতেন ছাত্রদের। বনফুল পরবর্তীকালে মাস্টারমশাইয়ের জীবনী ভিত্তি করে "অগ্নীশ্বর" উপন্যাস রচনা করেছেন। যেটি তারই ভাই অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর-সংযোজনায় উত্তমকুমার অভিনীত ছায়াছবিটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল সেসময় ।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]ডাক্তারি পেশায় আসার আগে বনবিহারীর কাছে সংস্কৃত অত্যন্ত প্রিয় বিষয় ছিল এবং সংস্কৃত কবিতা রচনায় পারদর্শী ছিলেন। সংস্কৃত কলেজ থেকে "কাব্যতীর্থ" উপাধি পান। সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি দর্শনশাস্ত্রে সুপরিচিত তিনি ফরাসি সাহিত্যেও অধিকার অর্জন করেছিলেন। এছাড়া নক্ষত্রবিজ্ঞান, পক্ষীতত্ত্ব বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল। 'বঙ্গবাণী', 'শনিবারের চিঠি' প্রভৃতিতে নিয়মিত লিখতেন। ' 'বেপরোয়া' নামে তার একটা দল ছিল। দলের অন্যতম সভ্য বিষ্ণুচরণ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে "বেপরোয়া" নামে যে পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার বেশির ভাগ লেখাই তিনি লিখতেন। তার গল্প উপন্যাস নাটকের যে ভাবসংঘাত, তা বেশিরভাগই শ্লেষ ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের মধ্যে ফুটে উঠলেও তাতে ব্যক্তিগত আক্রমণ ছিল না। সমকালীন সমাজের মধ্য যে অন্ধতার তথা রক্ষণশীলতা ছিল কেবল তার বিরুদ্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সমালোচনা থাকতো। বনবিহারী যেমন ভাল লিখতে পারতেন, তেমন আঁকতেও পারতেন। নিজের রচনা তিনি হাসির ছবি দিয়ে নিজেই সাজাতেন। সেসময় বাংলাদেশে শক্তিশালী কার্টুনিস্ট হিসাবে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে নিজেকে পরিচিত করাতে পেরেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরীরাণী অবলম্বনে 'ঢেলে সাজা' নাম দিয়ে কার্টুনের সহযোগিতায় তার প্যারডি তৎকালে বিশেষ উপভোগ্য হয়েছিল। তার ব্যঙ্গ কবিতা ও কার্টুন 'ভারতবর্ষ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হত। তার রচিত উপন্যাস ও গ্রন্থ গুলি হল-
- উপন্যাস-
- 'দশচক্র'
- 'যোগভ্রষ্ট'
- অন্য গ্রন্থ-
- 'সিরাজের পেয়ালা'
- 'নরকের কীট'
বনবিহারী তার বিধবা ভগিনী 'শৈল'র পুনর্বিবাহ দিয়েছিলেন সামাজিক বাধানিষেধ উপেক্ষা করে। ওই বিবাহে তিনিই পৌরহিত্য করেন এবং সেখানে বিচারপতি আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলী বনবিহারীকে বলতেন - "ইণ্ডিয়ান ভলতেয়ার"। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি ভাগলপুরে বসবাস করতে থাকেন এবং পরামর্শ চিকিৎসকরূপে ডাক্তারি করতেন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]দরদি চিকিৎসক বনবিহারী ৮০ বৎসর বয়সে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ই জুলাই প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৪৫০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬