প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় (গায়ক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পণ্ডিত
প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম(১৯২৬-০৮-১৫)১৫ আগস্ট ১৯২৬
কদমকুঁয়া, পাটনা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বিহার) ভারত
মৃত্যু২২ মার্চ ১৯৯৭(1997-03-22) (বয়স ৭০)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ
ধরনহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী, সংগীতজ্ঞ
কার্যকাল১৯৪৯ –১৯৯৪
দাম্পত্যসঙ্গীমীরা বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরস্কারআইটিসি পুরস্কার (১৯৯৪)
ভুওয়ালকা পুরস্কার (১৯৯৫)

পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৫ আগস্ট ১৯২৬ – ২২ মার্চ ১৯৯৭) ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের বিশিষ্ট গায়ক।[১] তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের পাটিয়ালা ঘরানার কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। রাগ সঙ্গীতের জগতে খানদানি মুসলিম ঘরানার পাশাপাশি যে কয়জন বাঙালি কণ্ঠশিল্পী ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নিজের প্রতিভায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন তিনি।[১]

জন্ম ও সঙ্গীত জীবন[সম্পাদনা]

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বিহার রাজ্যের পাটনার কদমকুঁয়ায়। পিতা সুশীল বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বিল্ডিং কনট্রাক্টর। তবে পাটনার এই সম্ভ্রান্ত প্রবাসী বাঙালি পরিবারে ছিল সাঙ্গীতিক পরিবেশ। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল প্রসূনের। প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশের পর পাটনা সায়েন্স কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। কলেজে পড়ার সময়ই পড়াশোনা আর গান এক সঙ্গে সম্ভব নয়।[২] শুধুমাত্র গানের টানে কুড়ি বৎসর বয়সে কলেজের পড়াশোনা বন্ধ করে পাটনা হতে কলকাতায় চলে আসেন ভবঘুরে অবস্থায়। তবলাশিল্পী হীরু গঙ্গোপাধ্যায়ের সহায়তায় প্রথমে যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং পরে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে তালিম নেন। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ‘অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্স’-এ সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রথম শিল্পী হিসাবে স্বীকৃতি পান।[১] ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে পাটনায় আয়োজিত এক সঙ্গীত সম্মেলনে তাঁর আলাপ হয় প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মীরা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই আলাপের সূত্রে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁরা বিবাহ করেন।[৩] এরপর তাঁরা দুজনেই পাটিয়ালা ঘরনার কিংবদন্তি শিল্পী উস্তাদ ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলির কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষা নেন। তিনি আকাশবাণী কলকাতা ও কলকাতা দূরদর্শনে নিয়মিতই সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। আকাশবাণীতে তিনি ‘আপ গ্রেড’-এর সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। বাংলা খেয়াল ও রাগাশ্রয়ী গান এবং কাব্যগীতির জগতেও তাঁর বিশেষ অবদান আছে। আকাশবাণী ও দূরদর্শন ছাড়াও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা সংগীত আকাদেমি, গানের স্কুল সৌরভ -এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।[১] জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ প্রসূনকে চলচ্চিত্র জগতে নিয়ে আসেন নেপথ্য কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী হিসাবে। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘যদুভট্ট’ ছবিতে প্রথম কণ্ঠদান করেন। এর পর একে একে ‘আশা’, ‘ঢুলি’, ‘বসন্তবাহার’, ‘রাজদ্রোহী’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘বিলে নরেন’ ইত্যাদি ছবিতে নেপথ্য কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।[২] স্ত্রী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে কয়েকটি গানের রেকর্ডও করছিলেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ‘আইটিসি পুরস্কার’ এবং ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ভুওয়ালকা পুরস্কার’ লাভ করেন।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ কলকাতায় পরলোক গমন করেন। দেবযানী মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী মজুমদার সহ তাঁদের তিন কন্যা। প্রখ্যাত সরোদশিল্পী পার্থ সারথি তাঁর জামাতা।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গীত জীবন নিয়ে তাঁর বিদূষী স্ত্রী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি গ্রন্থ রচনা করেন - বন্দ্যোপাধ্যায়, মীরা। কথায় ও সুরে প্রসূন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। অমর ভারতী, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-9064-848-6 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1.  অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয়  খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি  ২০১৯ পৃষ্ঠা ২৩৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "কথা রাখতে বিনা পারিশ্রমিককে গান গেয়েছিলেন প্রসূনদা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-৩১ 
  3. "খাকি প্যান্ট সাদা শার্ট ভীমসেন যোশী'"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০১