প্রতাপচন্দ্র হাজরা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রতাপচন্দ্র হাজরা
জন্ম১৮৩৬
মৃত্যু১৯০০ (বয়স ৬৪)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
অন্যান্য নামহাজরামশাই
পরিচিতির কারণশ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য

প্রতাপচন্দ্র হাজরা (১৮৩৬ — ১৯০০) ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের একজন ভক্ত ও গৃহী সন্ন্যাসী। শ্রীরামকৃষ্ণের লীলাবাসরের জটিলা-কুটিলা দক্ষিণেশ্বরে "হাজরামশাই নামে পরিচিত ছিলেন।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

প্রতাপচন্দ্র হাজরার জন্ম ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা হুগলি জেলার কামারপুকুরের পশ্চিমে শিহড় সন্নিহিত মড়াগেড়ে বা মামুদপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে। তিনি গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং বৈষ্ণব ঐতিহ্যে বড় হন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে শিহড়ে হৃদয়ের বাড়িতে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন ও উপদেশ লাভ করেন।কিন্তু তার পিতা ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা গেলে, প্রতাপ সেই অবস্থায় স্ত্রী পুত্র, কন্যা, বৃদ্ধা মাতাকে রেখে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের আশ্রয় নেন। প্রতাপচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত অহংকারী মানুষ। অসত্য, লোভী, স্বার্থপর, ঈর্ষান্বিত, দুষ্টু, দোষ-ত্রুটি সন্ধানী এবং কপট প্রকৃতির। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় নিত্য গঙ্গাস্নান সেরে মালাজপে আর মা ভবতারিণীর অন্নপ্রসাদে দিন অতিবাহিত করতেন। নিরাকারবাদী হাজরামশাই ছিলেন জ্ঞানমার্গী। তিনি ভক্তদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণের বিরুদ্ধে কথা বলতে, এমনকি নিজেকে তার সমকক্ষ প্রতিপন্ন করতেও দ্বিধা করতেন না। শ্রীরামকৃষ্ণ একবার হাজরাক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “আমি হাজরাকে শুকনো কাঠের টুকরার মতো দেখতে পেয়েছি। তাহলে সে এখানে থাকে কেন? এরও একটা অর্থ আছে। জটিলা এবং কুটিলার মত সমস্যা সৃষ্টিকারীদের উপস্থিতিতে ঐশ্বরিক লীলাখেলাটি প্রাণবন্ত হয়”। নরেন্দ্রনাথ প্রথমদিকে হাজরার প্রতি আকৃষ্ট হন জ্ঞান পথের দিকে তার ঝোঁক এবং পাশ্চাত্য দর্শন সম্পর্কে নরেন্দ্রের আলোচনার প্রতি তার আগ্রহের কারণে।[২] সেকারণে শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন হাজরা ছিলেন নরেন্দ্র-র 'ফেরেন্ড'। নরেন্দ্রনাথও কৌতুক করে তাকে থাউজেন্ডা নামে ডাকতেন। হাজরা দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে মোট আড়াই বৎসর (শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত অনুসারে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট হতে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি) কাল অবস্থান করেছিলেন। পরে অবশ্য ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে শ্যামপুকুর বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে দু-একবার দেখা হয়েছিল। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারির প্রথমদিকে কাশীপুরে উপস্থিত হয়েছিলেন, কিন্তু কাশীপুর উদ্যানবাটীর ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারির কল্পতরু উৎসবে অন্যান্য গৃহী শিষ্যদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের করুণার অনুগ্রহ লাভ করতে পারেন নি। প্রতাপচন্দ্র একরকম নরেন্দ্রনাথ মারফত জোর করেই শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে ইষ্টদর্শনের প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে) ৬৪ বৎসর বয়সে স্বগ্রামে তিনি লোকান্তরিত হন। অন্তিম সময়ে প্রতাপচন্দ্র "এই তাঁর (শ্রীরামকৃষ্ণের) রূপ দেখেছি" আর "হরি" উচ্চারণে তুলসী তলায় দেহরক্ষা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের জীবতকালেই শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের কথাকার "শ্রীম" কামারপুকুর দর্শনে এসে প্রতাপচন্দ্রের বাড়িতে আসেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের পরিচয়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৪ 
  2. "Pratap Chandra Hazra - VivekVani"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০৩