বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রকাশনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুদ্রক কাজ করছে, পনেরো শতকের প্রথমদিকে গুটেনবার্গ লেটারপ্রেস (খোদন তারিখ অজানা)।

প্রকাশনা হল সাহিত্য, সংগীত, অথবা তথ্য প্রচার—সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য হাজির করার কার্যকরতা। কিছু ক্ষেত্রে, লেখকরা তাদের নিজেদের প্রকাশক হতে পারে, অর্থাৎ বিষয়ের সৃষ্টিকর্তা এবং উন্নয়নকারীরা বিষয়বস্তুর মাধ্যম পর্যন্ত সরবরাহ ও প্রদর্শন করে। তাছাড়া, প্রকাশক শব্দটা এক ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি একটা প্রকাশন সংস্থা অথবা একটা মুদ্রণ পরিচালনা করেন; অথবা একজন ব্যক্তি যিনি একটা পত্রিকার মালিক/প্রধান।

ঐতিহ্যগতভাবে, পরিভাষাটা ছাপানো কাজ, যেমন বই বই ব্যবসা এবং সংবাদপত্র নির্দেশ করে। ডিজিটাল তথ্য পদ্ধতি এবং অন্তর্জাল উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে, ইলেক্ট্রনিক উৎসযোগে প্রকাশনা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা বেড়েছে, যেমন বইয়ের ইলেক্ট্রনিক সংস্করণ এবং সাময়িকপত্রাদি, এছাড়াও মাইক্রোপাব্লিশিং, ওয়েবসাইটস, ব্লগস, ভিডিয়ো গেম পাব্লিশার্স, এবং সমজাতীয় বিষয়।

প্রকাশনার উন্নয়ন নিম্নলিখিত পর্যায়সমূহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত : অর্জন, পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, উৎপাদন, মুদ্রণ (এবং এর ইলেক্ট্রনিক সমতুল্যসমূহ), এবং বিপণন এবং বিতরণ

প্রকাশনা একটা আইনি ধারণা হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ:

  1. একটা অর্থপূর্ণ উদ্দেশ্যের জগতে নিয়মমাফিক নোটিশ দেওয়ার পদ্ধতি হিসেবে, উদাহরণস্বরূপ, বিয়ে করা অথবা দেউলিয়া অবস্থায় প্রবেশ; 
  2. মানহানি দাবি করায় সক্ষমতার পূর্বশর্ত হিসেবে, যেটা হল, অভিযোগপূর্ণ  মানহানিকর বই অবশ্যই প্রকাশিত হওয়া উচিত; এবং
  3. গ্রন্থস্বত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে, যেখানে প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত কাজগুলোকে সংরক্ষণে রাখার মধ্যে একটা ফারাক থাকতে হবে।

দু-ধরনের বই প্রকাশক আছে:

  1. অ-প্রদত্ত প্রকাশকগণ:টেমপ্লেট:Neologism inline একটা অ-প্রদত্ত প্রকাশন সংস্থা হল, যেটা লেখককে তার বইপত্র ছাপার জন্যে কোনো রকমের মূল্য প্রদান করেনা।[]
  2. প্রদত্ত প্রকাশকগণ: বই প্রকাশিত হলে পুরো খরচ নির্বাহের জন্যে লেখকের সঙ্গে সাক্ষাত করতে হয়, এবং বিপণন পদ্ধতির ব্যবস্থা করার অধিকার লেখকের আছে।[] এটাকে ভ্যানিটি প্রকাশনাও বলা হয়ে থাকে।টেমপ্লেট:Neologism inline

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

লেখন আবিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশনা সম্ভব হয়েছিল, এবং এটা অতিশয় বাস্তব রূপ পেয়েছিল মুদ্রণ আবিষ্কার হওয়ার ওপর নির্ভর করে। ছাপা শুরু হওয়ার আগে, বিতরণের কাজগুলো কেরানিদের দ্বারা হাতে কপি করা হোত। ছাপা কাজের ফলে, প্রকাশনা প্রগতির সঙ্গে হাতে-হাতে বইয়ের উন্নয়ন হয়েছিল।

১০৪৫ খ্রস্টাব্দ নাগাদ চিনা আবিষ্কর্তা বাই শেং মাটি দিয়ে চলমান টাইপ তৈরি করেন, কিন্তু সেই সময় তার ছাপার উদাহরণের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালে, যেটাকে সাধারণভাবে বলা হয় স্বাধীন আবিষ্কার, জোহানেস গুটেনবার্গ ইউরোপে হ্যান্ড মোল্ড এবং  ছাঁচের ওপর ভিত্তি করে নতুন উদ্ভাবনের সঙ্গে  চলমান টাইপ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার ক্রমশ কম খরচে বই তৈরি, এবং আরো বিস্তৃতভাবে প্রাপ্তিযোগ্য করে।

গোড়ার যুগে ছাপা বই, ইউরোপে যেটা ১৫০১ খ্রিষ্টাব্দের আগে একক শিট এবং ছবি তৈরি হোত, তাকে বলা হোত ইনকিউনেবলস অথবা ইনকিউনেবুলা। "একজন মানুষ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মেছে, যেটা হচ্ছে কনস্তান্তিনোপলের পতনের বছর, তার জীবৎকালের পঞ্চাশতম বছর থেকে পিছন ফিরে তাকাতে পারে, যেখানে প্রায় আশি লক্ষ বই ছাপা হয়েছে, খুব সম্ভবত ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে কনস্তান্তাইনের তাঁর শহর নির্মাণের বছর থেকে সকল ইউরোপের কেরানিদের হাতে লেখা বইয়ের চেয়ে বেশি।"[]

সম্ভাব্যভাবে, বই ছাড়াও অন্যান্য ধরনের প্রকাশনাও ছাপায় সম্ভব হোত।১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে জার্মানিতে আধুনিক সংবাদপত্র প্রকাশনা ইতিহাস শুরু হয়, সঙ্গে ১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দে  শুরু হয় পত্রপত্রিকা প্রকাশনা।

ঐতিহাসিকভাবে, প্রকাশনা প্রকাশকদের দ্বারা পরিচালিত হোত, কম্পিউটার আমাদের ইলেক্ট্রনিক প্রকাশনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত নিজ-প্রকাশনা ইতিহাসের সঙ্গে ধীর গতিতে চলত, যে মুহূর্ত থেকে বিশ্বে /অন্তর্জাল ছড়িয়েছে এ পর্যন্ত এটা হল গতিশীল সর্বব্যাপী।  ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর অতি দ্রুত গতিতে ওয়েবসাইট প্রকাশনার জগতে একটা প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়; অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রায় প্রত্যেকেই ওয়েবসাইট বানাতে পারে। এর পরই উইকিপিডিয়ার ইতিহাস শুরু হয়, তার পরপরই আসে ব্লগিংয়ের ইতিহাস। ব্যবসায়িক ছাপার কাজও দ্রুতগতিতে এগোতে থাকে, পূর্ববর্তী সময়ের ছাপার ধরনগুলো উন্নত হয়ে ক্রমশ অনলাইন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হতে থাকে, ছড়িয়ে যেতে আরম্ভ করে অনলাইন বই, অনলাইন সংবাদপত্র, এবং অনলাইন পত্রপত্রিকা। 

সূচনার সময় থেকেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব একদিকে ব্যবসায়িক এবং নিজ-প্রকাশনাকে কারিগরিগত সমকেন্দ্রাভিমুখিতার সুযোগ-সুবিধে দিয়েছে, একই সঙ্গে সমকেন্দ্রাভিমুখি করেছে প্রকাশনা এবং তৈরি করেছে অনলাইন উৎপাদন ব্যবস্থা; মাল্টিমিডিয়া বিষয়ের উন্নয়নের মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে।  

প্রকাশনার পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

বই এবং পত্রপত্রিকাদি প্রকাশকরা অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয় পাণ্ডুলিপি কেনা ও কর্মকাণ্ডে; অন্যদিকে সংবাদপত্র প্রকাশকরা সচরাচর তাদের ভাড়া করা কর্মী দিয়ে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে, যদিও তারা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নিয়োগ করে, যাদের |অস্থায়ী স্বাধীন সাংবাদিক বলা হয়। একটা ছোটো ছাপাখানায়, এটা সম্ভব যে নির্দিষ্ট জিনিসপত্র দিয়ে সব কাজ করে টিকে থাকা। কিন্তু যখন কাজের পরিমণ্ডল বাড়ে, তখন প্রকাশন সংস্থার বাইরে থেকে লেখক চৌহদ্দির দরকার পড়তে পারে।

প্রকাশনার কাজে স্বাধীনভাবে লেখার জন্যে লেখকরা প্রথমে সাহিত্যসেবী এজেন্ট কিংবা সরাসরি প্রকাশকের কাছে একটা জিজ্ঞাসাবাদের চিঠি অথবা প্রস্তাব দেয়। এগুলো অযাচিত দাখিল হিসেবে সরাসরি প্রকাশকের কাছে পাঠানো হয়, এবং বেশির ভাগই আসে অপ্রকাশিত লেখকদের তরফ থেকে। যদি প্রকাশক অযাচিত পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করে, তার পর পাণ্ডুলিপিটা অগোছালো রাশিকৃত বাণ্ডিলে জমা করা হয়, যেগুলো প্রকাশকের পাঠকরা পাণ্ডুলিপিগুলো থেকে গুণমান এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখে যাচাই করে গ্রহণযোগ্য সম্পাদকদের উদ্দেশ্যে সমীক্ষা করার জন্যে পাঠায়। গ্রহণযোগ্য সম্পাদকরা তাদের পছন্দের তালিকাগুলো সম্পাদকীয় কর্মীর কাছে চালান করে। প্রকাশন সংস্থার আকার অনুযায়ী সময়কাল এবং কতজন মানুষ এই কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত সেটা নির্ভর করে, বড়ো প্রকাশন কোম্পানির অযাচিত দাখিল করা পাণ্ডুলিপি এবং প্রকাশনাও বেশি পরিমাণ নির্দিষ্ট করে। অযাচিত দাখিলাগুলোর গ্রহণযোগ্যতার হার খুব কম, কিছু সূত্র থেকে অবগত হওয়া যায় যে, প্রকাশকরা সব শেষে প্রত্যেক দশটার মধ্যে তিনটে অযাচিত পাণ্ডুলিপি প্রকাশনার জন্যে গ্রহণ করে।

সারা পৃথিবীতে অনেক বই প্রকাশক কড়াকড়িভাবে "অযাচিত উপস্থাপন নয়" নীতি নিয়ে চলে এবং শুধুমাত্র সাহিত্যিক এজেন্টের মাধ্যমে যেকোনো উপস্থাপন গ্রহণ করে। এই নীতি লেখকদের যাচাই এবং উন্নতিবিধানের ঝামেলা প্রকাশকের বাইরে সাহিত্যিক এজেন্টদের ওপর বর্তায়। এই সব প্রকাশক অযাচিত পাণ্ডুলিপিগুলো ফেলে দেয়, অথবা অনেক সময় লেখক আগে ডাক খরচ দিলে সেটা ফেরত দিয়ে দেয়।

সাহিত্যিসেবী এজেন্ট সম্ভবত প্রতিষ্ঠিত লেখকদের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের কাজকর্ম প্রকাশকদের সামনে বিপণন এবং চুক্তির জন্যে আলাপআলোচনা করে। সাহিত্যিক এজেন্টরা লেখন আয়ের একটা অংশ (১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে তফাৎ পড়ে) তাদের কাজের জন্যে পেয়ে থাকে।

কিছু লেখক প্রকাশনার একটা গুণমান-বহির্ভূত রাস্তা অনুসরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, এই বিষয়ে সেই ব্লগাররা অন্তর্ভুক্ত, যাদের নিজেদের ওয়েবসাইটের ওপর ভিত্তি করে বানানো বইয়ের এক বিরাট সংখ্যক পাঠককূলের সঙ্গ যোগাযোগ আছে; বইগুলো অন্তর্জাল নামসমূহ ভিত্তিক।  তাৎক্ষণিক 'সেলিব্রিটিজ' যেমন হল জো দ্য প্লাম্বার, অবসৃত ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণভাবে যেকোনো ব্যক্তি একজন প্রকাশক অনুভব করে যে একটা বিপণনযোগ্য বই বানাতে পারবে। এই বইগুলো প্রায়ই কাল্পনিক লেখক পরিষেবার নামে কাজ করে। 

একটা উপস্থাপনাকে প্রকাশনায় পরিণত হতে হলে, বিষয়টাকে অবশ্যই একজন সম্পাদক অথবা একজন প্রকাশক দ্বারা সেরা বিবেচিত হতে হবে যিনি অন্য সহকর্মীদের প্রভাবিত করে একটা নির্দিষ্ট শিরোনামের প্রকাশন সম্ভব করতে পারেন। একজন সম্পাদক যিনি উদ্ভাবন করেন অথবা একটা বইকে সেরা বাছাই করেন, যেটা পরবর্তীতে একটা শ্রেষ্ঠ-বিক্রির শিরোপা পায় সম্ভাব্যভাবে তাদের সাফল্যের সঙ্গে সুনাম বৃদ্ধি করে।

গ্রহণযোগ্যতা ও আলাপ-আলোচনা

[সম্পাদনা]

যখন (যদি) একটা কাজ গ্রহণ করা হয়, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকরা বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার কিনে নেওয়ার এবং রয়্যালটির হারে সম্মত হয়ে আলাপ-আলোচনা করে।

ঐতিহ্যগত বিষয়বস্তুসমূহ ছাপার লেখকগণ বৈশিষ্ট্যমূলকভাবে বিশেষ ধরনের আঞ্চলিক বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার বিক্রয় করে, যেটা দেশগুলোর তালিকার সঙ্গে মিলে যায় যেখানে বিতরণ প্রস্তাবিত হয় (উদাহরণস্বরূপ, যেখানে আইনের বাধ্যতামূলক পদ্ধতির অধীনে গ্রন্থস্বত্ব সুরক্ষিত)। বইয়ের ক্ষেত্রে, প্রকাশক এবং লেখককে অভিপ্রেত প্রকাশনার আকারগুলোয় অবশ্যই সহমতও হতে হবে সুলভ সংস্করণ (মাস-মার্কেট পেপারব্যাক), 'ব্যবসা' পেপারব্যাক এবং শোভন সংস্করণ বা হার্ডব্যাক এগুলো অতি সাধারণ বাছাই।

যদি ইলেক্ট্রনিক আকারের ব্যবহার হয়ে থাকে তবে অবস্থা বেশ খানিকটা জটিলতর হয়। যেখানে বিতরণ কাজ সিডি-রম অথবা অন্যান্য বস্তুর মাধ্যম দিয়ে হয়, কাগজের আকার থেকে আলাদা পদ্ধতিতে এই ধরনের প্রয়োগের কারণ নেই, এবং জাতীয় গ্রন্থস্বত্ব হল একটা গ্রহণযোগ্য অভিগমন। কিন্তু ইন্টারনেট ডাউনলোড সম্ভবপর বাস্তব বিতরণ আটকানোর যোগ্যতা ছাড়া, জাতীয় সীমার মধ্যে আইনগত সমস্যাসমূহ আসে যেটা সমাধান করা হয় জাতীয় অধিকারের চেয়ে বাস্তবিকই ভাষা অথবা অনুবাদ বিক্রয় করে। এইভাবে, সারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জুড়ে ইন্টারনেটে প্রবেশ সার্বিকভাবে খোলা, কারণটা হল ওখানকার আইনসমূহ জাতীয়তার ওপর ভিত্তি করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি, কিন্তু প্রকাশনার ক্ষেত্রে সত্যটা হল, ধরো, ফ্রান্স বাজারের লক্ষ্যমাত্রা রাখে তাদের মধ্যে যারা ফরাসি ভাষা পড়তে পারে।

প্রকাশনার সম্ভাবনা এবং আকারের ব্যাপারে একমত হওয়ার পর, পক্ষদ্বয় একটা সমঝোতাপত্রের বইতে অবশ্যই রয়্যালটি হার নিয়ে একমত্যে আসবে, লেখককে স্থূল খুচরো দামের শতাংশের ভিত্তিতে যা হয় তার মূল্য মেটানো হবে, এবং সেটা অগ্রিম দাম মেটানো। প্রকাশক অবশ্যই বিক্রির সম্ভাবনা খতিয়ে হিসেব কষে প্রত্যেক বাজারের এবং উৎপাদন ব্যয়ের পরিবর্তে প্রকল্পিত ভারসাম্য দেখবে। সুপারিশকৃত খুচরো দামের ওপর ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে রয়্যালটি সাধারণভাবে ধরা হয়। একটা অাগাম দাম মেটানো প্রথম মুদ্রণ সংখ্যার মোট রয়্যালটির সাধারণত এক-তৃতীয়াংশ হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটা বই ৫০০০ কপি ছাপা হয় এবং $ ১৪.৯৫ মূল্যে বিক্রি হয় এবং লেখক যদি ১০ শতাংশ রয়্যালটি পায়, সব বই বিক্রি হয় গেলে লেখকের মোট পাওনা হবে $ ৭৪৭৫ (১০% x $ ১৪.৯৫ x ৫০০০)। অগ্রিমগুলো ভীষণভাবে বই অনুযায়ী তফাৎ হয়, প্রতিষ্ঠিত লেখকরা বড়োসড়ো অগ্রিম দাবি করে। 

উৎপাদন-পূর্ব পরিস্থিতিসমূহ

[সম্পাদনা]

যদিও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে তালিকাভুক্ত, এগুলোর অংশগুলো আনুষঙ্গিকভাবে ঘটে। যখন পাঠ্যাংশের সম্পাদনা এগিয়ে চলেছে, তখন প্রচ্ছদের নকশা এবং প্রাথমিক বিন্যাস সামনে আসে, এবং বইয়ের বিক্রয় ও বিপণন শুরু হয়।

সম্পাদকীয় পর্যায়

[সম্পাদনা]

একটা কাজ প্রকাশ করার এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবং কারিগরি আইনগত বিষয়গুলো সমাধান করা হয়, লেখক পুনর্লিখন অথবা সামান্য পরিবর্তন করে তার কাজটার গুণমান বাড়ানোর জন্যে বলতে পারেন এবং সম্পাদক-কর্মী কাজটা সম্পাদনা করে দেন। প্রকাশকরা সম্ভবত 'একটা ঘরানা' মেনে চলেন, এবং সম্পাদক-কর্মী কপি-সম্পাদনা করবেন যাতে সেটা ঘরানার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং প্রত্যেক বাজারের ব্যাকরণগত চাহিদা মেটায়। সম্পাদকরা প্রায়ই অভিনব শিরোনাম এবং অধ্যায়নাম পছন্দ করেন। সম্পাদনাও কখনো কখনো সম্ভাব্য কাঠামোগত পরিবর্তনে সামিল হয় এবং অধিক তথ্যের জন্যে অনুরোধ করে। কিছু প্রকাশক তথ্য পরীক্ষক রাখে, বিশেষত কল্পবিজ্ঞান ছাড়া অন্য বইয়ের ক্ষেত্রে।

নকশা পর্যায়

[সম্পাদনা]

যখন একটা ফাইনাল টেক্সট সহমতে আসে, পরবর্তী ধাপ হল নকশা। এটা সম্ভবত আর্ট ওয়ার্ক সমন্বিত, কর্মপ্রযুক্ত অথবা কাজের বিন্যাস স্বীকৃতি পায়। প্রকাশনা জগতে 'আর্ট' শব্দটা ফটোগ্রাফগুলি নির্দেশ করে। কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী কতগুলো ফটোগ্রাফ লাগবে সেটা নির্ভর করে, ফটোগ্রাফগুলো ফটো লাইব্রেরি থেকে লাইসেন্স করাতে হয়। যেসব কাজ বিশেষ করে চিত্রাদিতে শোভিত, প্রকাশক যথাসম্ভব একজন ছবি গবেষকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় এটা দেখার জন্যে যে, কাজে লাগার ফটোগ্রাফগুলোর লাইসেন্স করাতে হবে। ছাপা কাজের জন্যে নকশা পদ্ধতি প্রস্তুত হতে থাকে, টাইপসেটিং ধরনের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে, ডাস্ট জ্যাকেট সংযোজন, কাগজের গুণমান নির্ধারণ, বাঁধাই পদ্ধতি এবং আবরণ তৈরি। 

কী ধরনের বই তৈরি হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে নকশার পরিমাণ কতটা হবে। প্রামাণ্য কল্পবিজ্ঞান বইয়ের জন্যে, নকশা হয় সাধারণভাবে বর্ণাক্ষর এবং প্রচ্ছদ নকশার বিশিষ্টতায়। বইগুলোর মধ্যে সাজানো-গোছানো অথবা ছবিগুলো, কীভাবে বইয়ের অধ্যায়ের শুরু এবং শেষ হবে, পাতাগুলোর বিন্যাস হবে, রং, বর্ণাক্ষর, প্রচ্ছদের দৃশ্যমানতা এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র, যেমন পোস্টার, ক্যাটালগের ছবি, এবং বিক্রয় বস্তুসমূহ এই সব ব্যাপারেই নকশা একটা বেশ বড়ো ধরনের ভূমিকা নেয়। অ-কল্পবিজ্ঞান হিসেবে সাজানো শিরোনামগুলো আরো বেশি করে নিবিড় নকশা-নির্ভর বই হয়, যেখানে দরকার হয়ে পড়ে অত্যাবশ্যকীয় ছবি এবং সাজগোজের ধরন, ক্যাপশন, বর্ণক্ষর এবং গভীরভাবে পাঠকের অভিজ্ঞতার বিবেচনা এবং সম্পৃক্ততা।

টাইপসেটিং, পাতার বিন্যস, নেগেটিভ অথবা পজিটিভ প্রস্তুত, নেগেটিভ কিংবা পজিটিভ প্লেট, এবং বোর্ড বাঁধাইয়ের জন্যে, কিংবদন্তি পিতলের স্পাইনের প্রস্তুতি, এবং ইমপ্রিন্টের কাজকর্ম সবই এখন কম্পিউটারচালিত। বিশ শতকের প্রায় শেষ বিশ বছর কম্পিউটারচালিত ছাপাখানার বিবর্তন হয়েছিল। যদি কাজটা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিতরণ করতে হয়, পড়বার জন্যে যে হার্ডওয়্যার ব্যবহৃত হয় চূড়ান্ত ফাইলগুলো সেই অপারেটিং সিস্টেমের লক্ষ্যমাত্রায় নির্দিষ্ট আকারে সংরক্ষিত হয়। এগুলোর সঙ্গে থাকে পিডিএফ ফাইলসমূহ।

বিক্রি এবং বিপণন পর্যায়

[সম্পাদনা]

বিক্রি এবং বিপণন পর্যায় নিবিড়ভাবে সম্পাদকীয় কার্যকলাপের সঙ্গে একসূত্রে বাঁধা। যেই প্রথম প্রচ্ছদ প্রস্তুত হয়ে যায়, অথবা অধ্যায়গুলো সম্পাদিত হয়, 'বেচুবাবু'রা (সেলস পিপল) সম্ভবত বইটা সম্পর্কে  আগাম আগ্রহ তৈরি করার জন্যে তাদের খদ্দেরদের সঙ্গে কথা শুরু করে। প্রকাশন সংস্থাগুলো প্রায়শই আগাম তথপূর্ণ শিট বানায় যেটা সম্ভবত খদ্দের এবং সাগরপারের প্রকাশদের কাছে পাঠায় সম্ভাব্য বিক্রি মাপার জন্যে। আগাম আগ্রহ মেপে নেওয়ার পর, এই তথ্য সম্পাদনা পদ্ধতির মাধ্যমে ফিরতি প্রদান করে এবং বইয়ের আকার বানানো এবং বিক্রির কৌশল কাজে লাগানো সম্ভবপর হয়। উদাহরণ হিসেবে, যদি বিদেশি প্রকাশকদের আগ্রহ বেশি থাকে, তাহলে প্রকাশকরা যৌথ প্রকাশনায় চুক্তিবদ্ধ হয়, যখন তারা বেশি সংখ্যায় বই ছাপার খরচপাতি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়, যেখানে বই তৈরির ইউনিট প্রতি ব্যয় কমানো হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, যদি প্রাথমিক ফিরতি প্রদান মজবুত না-হয়, বইয়ের মুদ্রণ সংখ্যা সম্ভবত কমিয়ে দেওয়া হয়, বিপণনের খরচা কমানো হয় অথবা, অনেক ক্ষেত্রে সর্বসাকুল্যে বইটার প্রকাশনা বন্ধই করে দেওয়া হয়। 

সম্পাদনা এবং নকশা কাজ শেষ হয়ে গেলে, ছাপার ব্যাপারটা শুরু হয়ে যায়। প্রথম পদক্ষেপের মধ্যে আছে প্রি-প্রেস প্রুফ, যেটা মুদ্রক চূড়ান্তভাবে দেখে পরীক্ষা করে মিলিয়ে ফেরত দেওয়ার জন্যে প্রকাশকের কাছে পাঠায়। এই প্রুফটা সূক্ষ্মভাবে বইটা একবার ছাপা হলে কেমন দেখাবে সেটারই প্রতিরূপ এবং প্রকাশকের পক্ষে এটা দেখে কোনো ভুল থাকলে সগুলো সংশোধন করে দেওয়ার চূড়ান্ত সুযোগ থাকে। কিছু কিছু ছাপাই কোম্পানি ছাপানো প্রুফের বদলে অধিক মাত্রায় ইলেক্ট্রনিক প্রুফ ব্যবহার করে। একবার প্রকাশক যখন প্রুফগুলো অনুমোদন করে দেয়, তখন ছাপা--বাস্তবিক ছাপা কাজের উৎপাদন—আরম্ভ হয়। 

একটা নতুন ছাপার পদ্ধতি চালু করা হয়েছে যাকে বলে প্রিন্টিং অন ডিম্যান্ড (পিওডি)। বইটা সাধারণভাবে লেখা, সম্পাদনা করা, এবং নকশা করা হয়ে থাকে, কিন্তু যতক্ষণ না প্রকাশক একজন খদ্দেরের তরফ একটা অর্ডার পাচ্ছে ততক্ষণ এটা ছাপা হয়না। এই প্রণালী গুদামজাত করার খরচ কমানো নিশ্চিত করে এবং খুব সম্ভবত বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেও বেশি বই ছাপার ঝামেলা কমায়।

বাঁধাই

[সম্পাদনা]

বইয়ের ক্ষেত্রে, বাঁধাই অনুসরণ করা হয় ছাপার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে। এটা ছাপা শিটের ভাঁজাই করার কাজে জড়িত, "সেগুলোকে একসঙ্গে গ্রথিত করা, বোর্ড সাঁটানো অথবা  তাতে স্পাইন জোড়া, এবং পুরো বইটাকে চামড়া অথবা অন্যান্য জিনিস দিয়ে মোড়া।

বিতরণ

[সম্পাদনা]

প্রকাশনার চূড়ান্ত পর্যায় অন্তর্ভুক্ত হল জনসাধারণের কাছে প্রস্তুত উৎপাদনকে প্রাপ্তিযোগ্য করা, প্রথাগতভাবে এটা বিক্রির জন্যে অর্পণ করা। বিগত শতকগুলোতে, লেখকরা হামেশাই নিজেরাও তাদের সম্পাদক, মুদ্রক এবং বই বিক্রেতা হিসেবে কাজ করত, কিন্তু এসব কাজকর্ম এখন আলাদা হয়ে গিয়েছে। একবার একটা বই, খবরের কাগজ, অথবা অন্য প্রকাশনা ছাপা হলে, প্রকাশক এটা বিতরণ করার জন্যে সম্ভবত বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে। বই অত্যন্ত সাধারণভাবে বিক্রি হয় বুকসেলার্স এবং অন্যান্য খুচরো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। সংবাদপত্রসমূহ এবং সাময়িক পত্রিকাগুলো বিশেষত প্রকাশকদের দ্বারা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে আগাম বিক্রি হয়, এবং তারপর বিতরিত হয় ডাকযোগে অথবা সংবাদপত্র বাহকগণ দ্বারা। সাময়িকীগুলোও নিশ্চিতভাবে বিক্রি হয় নিউজ এজেন্ট এবং ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে।

বই শিল্পের ভিতর, মুদ্রকরা প্রায়ই নমুনা কপি হিসেবে কিছু সম্পূর্ণ ছাপা বই প্রকাশকদের কাছে বিক্রি বাড়াবার জন্যে দ্রুত চালিয়ে দেয় অথবা বাইরে পাঠানো হবে প্রকাশনা-পূর্ববর্তী সমীক্ষার জন্যে। বাদবাকি বইগুলো প্রায়ই ছাপার সুবিধে থেকে সাগর পরিবহনের মাধ্যমে যাতায়াত করে। তদনুসারে, মুদ্রণ-পূর্ববর্তী প্রুফ অনুমোদন এবং ওয়্যারহাউসে বইগুলোর আগমনের মধ্যবর্তী বিলম্ব হয়, অধিকতর কম খুচরো দোকানে, এটা লাগতে পারে কয়েক মাস। যেসব বই সিনেমা মুক্তি-দিবসের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ, সেই সব বইয়ের জন্যে (বিশেষ করে শিশু চলচ্চিত্রগুলোর জন্যে), প্রকাশকগণ সিনেমাতে আগ্রহ তৈরি করার প্রয়োজনে দোকানে বইগুলো হাজির করার ব্যবস্থা করে সিনেমা মুক্তি পাওয়ার দু-মাস পর্যন্ত আগে।

 প্রকাশন যখন একট ব্যবসা  

[সম্পাদনা]
তাইওয়ানে এসলাইট বুকস্টোর।

১৯১১ খ্রিস্টব্দে উপহাস করা হয়েছিল যে, এনসাক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা "একটা পুরোপুরি ব্যবসায়িক ব্যাপার" যেটা সাহিত্যের গুণমানের চেয়ে লাভের দিকে বেশি নজর দিত, প্রকাশন মৌলিকভাবে একটা ব্যবসা, একটা বই অথবা অন্য প্রকাশনার বিক্রি থেকে আয় ছাপিয়ে যাবেনা সৃষ্টি, উৎপাদন, এবং বিতরণের প্রয়োজনে খরচা করাতে। প্রকাশন এখন একটা বড়ো ধরনের শিল্প, যেমন সবচেয়ে বড়ো কোম্পানি রীড এলসেভিয়ার এবং পিয়ারসন পিএলসি যাদের বিশ্বজুড়ে প্রকাশন ব্যবস্থা চালু আছে।

প্রকাশক প্রথাগতভাবে বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য বিপণন কাজকর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু সম্ভবত বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকাশক বিপণন এজেন্সিদের সঙ্গ চুক্তির অধীন চুক্তি করে। বিভিন্ন কোম্পানিতে, সম্পাদনা, প্রুফরিডিং, বিন্যাস, নকশা, এবং অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গির উৎপাদন পদ্ধতিগুলো চালিয়ে যাওয়া হয় স্বাধীনভাবে কাজ করার কর্মীগোষ্ঠী দিয়ে। 

কখনো কখনো নিবেদিত-প্রাণ ঘরের বিক্রয় ব্যক্তিদের বদলে কোম্পানিগুলোকে, যারা বিশেষভাবে বইদোকানে বিক্রি করে, পাইকারি বিক্রেতাদের, এবং পয়সার বিনিময়ে চেইন স্টোরের সঙ্গে কাজ করে। এই প্রবণতা খুচরো বুক চেইন হিসেবে অগ্রগতি আনে এবং সুপারমার্কেটগুলো তাদের খরিদারি কেন্দ্রীভূত করে।

ছাপানোর পর্যায় পর্যন্ত পুরো পদ্ধতিটায় যদি বাইরের কোনো কোম্পানি অথবা ব্যক্তিরা হস্তক্ষেপ করে, এবং তারপর প্রকাশন সংস্থাকে বিক্রি করে, এটাকে বুক প্যাকেজিং হিসেবে জানা যায়। বিভিন্ন আঞ্চলিক বাজারের ছোটো প্রকাশকদের মধ্যে এটা একটা সাধারণ কৌশল, যেখানে  সেই কোম্পানিটা, যারা প্রথম বৌদ্ধিক সম্পদের অধিকার কিনেছে, তারপর প্যাকেজটা অন্য প্রকাশকদের বিক্রি করে এবং পুঁজি বিনিয়োগের তাৎক্ষণিক লাভ পায়। প্রথম প্রকাশক প্রায়শই সকল বাজারে চালানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ কপি ছাপবে এবং সেই অবস্থায় সকলের জন্যে ছাপার ওপর অধিকতম সংখ্যক কার্যকরতা পাবে।

কিছু সংখ্যক ব্যবসা উল্লম্ব একীকরণ নীতিতে তাদের লাভের অঙ্ক উচ্চতম হারে বাড়ায়; বই প্রকাশন তার মধ্যে একটা নয়। যদিও সংবাদপত্র এবং সাময়িকপত্র কোম্পানিগুলোর এখনো প্রায়ই নিজেদের ছাপাখানা এবং বাঁধাই কর্মীযূথ থাকে, বই প্রকাশকদের যেটা কদাচিৎ থাকে। একইভাবে, বাণিজ্যটায় সাধারণত প্রস্তুত উৎপাদনগুলো একটা বিতরণকারীর ডিস্ট্রিবিউটর মাধ্যমে বিক্রি হয়, যে প্রকাশকের জিনিসপত্র একটা শতাংশ ফিয়ের জন্যে কিংবা বিক্রি-অথবা-ফেরত চুক্তিতে গুদামজাত ও বিতরণ করে।

অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবে কাগজে ছাপার, বাস্তবে সরবরাহ এবং বই গুদামজাত করার প্রয়োজন ছাড়াই ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বই বিতরণ শুরু হয়। সুতরাং, বিষয়টা একটা মজাদার মোকাবেলার প্রশ্ন ছুড়ে দেয় প্রকাশক, বিতরণকারী, খুচরো বিক্রেতাদের দিকে। প্রশ্নটা প্রকাশন সংস্থাগুলোর, সর্বোপরি পুরো প্রকাশনা ব্যবস্থার ওপর কার্যকরতা এবং গুরুত্বের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এটা একটা সাধারণ অভ্যাস যে, লেখক, যিনি কাজটার আসল সৃষ্টিকারী, তিনি, হতে পারেন মহিলা কিংবা পুরুষ, বইয়ের কাজ চালু করার জন্যে মাত্র ১০ শতাংশের আশপাশ তার পুরস্কার হিসেবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এরকম চুক্তিতে যারা বইয়ের প্রকাশক সংস্থা, বিতরণ সংস্থা, বিপণনকারী, এবং খুচরো বিক্রেতা, তাদেরকে ৯০ শতাংশই ছেড়ে দেওয়া হয়। নিচে একটা বই বিক্রি থেকে বিতরণের ব্যবস্থাপনার উদাহরণ (পুনর্গঠিত) দেওয়া হল।

  • খুচরো বিক্রতাদের দেওয়া হয় ৪৫ শতাংশ
  • পাইকারি বিক্রেতাদের দেওয়া হয় ১০ শতাংশ
  • ছাপার জন্যে প্রকাশককে (এটা সাধারণত সাবকন্ট্রাক্টে চলে) দেওয়া হয় ১০.১২৫ শতাংশ 
  • বিপণনের জন্যে প্রকাশককে দেওয়া হয় ৭.১৫ শতাংশ  
  • প্রাক-উৎপাদনের জন্যে প্রকাশককে দেওয়া হয় ১২.৭ শতাংশ
  • লেখককে রয়্যালটি হিসেবে দেওয়া হয় ১৫ শতাংশ

সমাজে একটা ভুল ধারণা আছে যে, প্রকাশনা শৃঙ্খলের মধ্যে প্রকাশন সংস্থাগুলো অত্যধিক লাভ করে এবং সেই জায়গায় লেখকরা সামান্যতম দাম পায়। যাই হোক, বেশির ভাগ প্রকাশক এক-একটা আলাদা শিরোনাম থেকে অল্প লাভ করে, এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ বইতে না-লাভ না-লোকসানে চলে। আনুমানিক বইয়ের দামের ৮০ শতাংশ খরচ করতে হয় প্রস্তুতকরণ, বিতরণ, এবং ছাপাইয়ে (এর মধ্যে ছাপাতেই সবচেয়ে কম খরচ ধরা হয়)। সফলতাপূর্ণ শিরোনামগুলোতে সাধারণত প্রকাশন সংস্থাসমূহ ১০ শতাংশের মতো লাভ করতে পারে, সঙ্গ লেখকরা খুচরো দামের ৮-১৫ শতাংশ নেয়। যাই হোক, লেখকরা সবাই হল ব্যক্তি, আর তারা প্রায়ই বইয়ের লাভ হোক বা না-হোক অন্য কারো সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগ না-করে  অগ্রিম অর্থ পেয়ে যায়, এটা তাদেরকে প্রকাশনা পদ্ধতিটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম মেটানো ব্যক্তিদের তালিকায় রাখে। ইলেক্ট্রনিক বইয়ের জগতে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কার্যকলাপ প্রায় অভিন্ন। ই-বুক প্রকাশনার জন্যে একটা বই তৈরির পদ্ধতি ছাপা বইয়ের সঙ্গে একেবারে এক, মাত্র যে সমস্ত ফারাক, তাহল বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনের মাধ্যমের হিসেব রাখা। যখন কিছু ব্যয়, যেমন যে ছাড় খুচরো বিক্রতাদের (সাধারণভাবে ৪৫ শতাংশের কাছাকাছি) তা বাদ দেওয়া হয়, ই-বুকে বাড়তি ব্যয় যোগ করা হয় (বিশেষত অবস্থান্তর পদ্ধতিতে), উৎপাদন ব্যয়ের ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা একটা সমান স্তরে।

ঐতিহ্যপূর্ণ প্রকাশনের একটা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত বিকল্প হল চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণ। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে আমাজন.কম এর বুকসার্জ এবং সেল্ফসানপাব্লিশিং একটা বড় 'চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণ' কার্যকলাপের ঘোষণা করে। ক্রিয়েটস্পেস হল আমাজন ভর্তুকি যেটা ছোটো ছাপাখানাগুলো এবং ব্যক্তিগত লেখকদের সুবিধে দেয়। ক্রিয়েটস্পেসের মাধ্যমে ছাপা বই আমাজন এবং অন্যান্য দোকান থেকে বিক্রি হয়, আমাজনের সঙ্গে বিক্রিবাটা করে প্রকাশন, ছাপা এবং বিতরণ পরিষেবার জন্যে খুব উঁচু শতাংশ আয় আদায় হয়। শ্রেষ্ঠ বই বিক্রেতাপুঞ্জের একটা, বার্নেস অ্যান্ড নোবল, ইতিমধ্যে নতুন শিরোনাম  এবং উচ্চঙ্গের উভয় ছাপা-ই সাফল্যের সঙ্গে চালিয়েছে--বোর্ড-বাঁধাই সংস্করণ ছাপা-শেষ-হওয়া শ্রেষ্ঠ বিক্রেতা। একইভাবে, ইনগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিজ, ইনগ্রাম বুক গ্রুপের মূল কোম্পানি (আমেরিকার একটা তাবড় বইয়ের পাইকার), বর্তমানে লাইটনিং সোর্স নামে তার প্রিন্ট অন ডিম্যান্ড বিভাগ জুড়েছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইনগ্রাম একটা ছোটো ছাপাখানা এবং স্ব-প্রকাশন শাখা খুলেছিল যার নাম দেওয়া হয় ইনগ্রাম স্পার্ক। দাম মেটানো শর্তাদি আমাজনের সঙ্গে খুব কাছাকাছি এবং লাইটনিং সোর্সের মাধ্যমে আরো প্রতিষ্ঠিত প্রকাশকদের যারা সুযোগ দেয় তাদের চেয়ে কম প্রিয়। প্রকাশকদের মধ্যে, সাইমন অ্যান্ড স্কুস্টার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, সরাসরি গ্রাহকদের কাছে এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজেদের পুরোনো তালিকাভুক্ত শিরোনামগুলো বিক্রি শুরু করবে।  বুক ক্লাবগুলো সর্বসাকুল্যে সরাসরি খুচরো বিক্রিতে, এবং কুলুঙ্গি প্রকাশকেরা সব প্রাপ্তিযোগ্য দোকানের মাধ্যমে বিক্রির একটা মিশ্র কৌশল অবলম্বন করে--তাদের উৎপন্নের পরিমাণ বড়ো বই বিক্রেতাদের কাছে যথেষ্ট নয়, সুতরাং আয়ের ঘাটতি ছাপা, প্রকাশন, বিতরণ, এবং খুচরো বিক্রি এই চার ঐতিহ্যপূর্ণ মিথোজীবী সম্পর্কগুলোর প্রতি কোনো অমঙ্গল নয়। 

শিল্প উপ-বিভাগগুলো

[সম্পাদনা]

সংবাদপত্র প্রকাশন

[সম্পাদনা]

সংবাদপত্রগুলো নিয়মিত তালিকাভুক্ত প্রকাশনাসমূহ যাতে থাকে সাম্প্রতিক খবর, বিশেষভাবে কম দামের কাগজ যার নাম নিউজপ্রিন্ট। বেশির ভাগ সংবাদপত্র প্রাথমিকভাবে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি হয়, খুচরো নিউজস্ট্যান্ডগুলোতে অথবা বিতরিত হয় বিজ্ঞাপন-সমর্থিত বিনামূল্যের সংবাদপত্রগুলো। আমেরিকায় প্রকাশকদের এক-তৃতীয়াংশ হল সংবাদপত্রপ্রকাশক।

সাময়িক পত্র প্রকাশন

[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে, সাময়িক পত্র প্রকাশন সেই প্রকাশনায় সম্পৃক্ত যেটা নিয়মিত তালিকাভুক্ত একটা নতুন সংস্করণ আবির্ভূত হয়। সংবাদপত্র এবং সাময়িক পত্র সবগুলোই নিয়মিত ছাপার বিষয়, কিন্তু শিল্পের মধ্যেই সাময়িক পত্র সম্পূর্ণ আলাদা একটা শাখা যেটা পত্রপত্রিকা ও শিক্ষামূলক জার্নালের সঙ্গ অঙ্গীভূত, অথচ সংবাদপত্র নয়। আমেরিকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রকাশক সাময়িক পত্র প্রকাশ করে (সংবাদপত্র বাদ দিয়ে)।

বই প্রকাশন

[সম্পাদনা]

বিশ্বের বই প্রকাশন শিল্পের বার্ষিক আয় হিসেব করা হয় ১০০ বিলিয়ন ডলার, অথবা পুরো প্রচার শিল্পের প্রায় ১৫ শতাংশ।

আমেরিকায় বই প্রকাশকরা মোট প্রকাশকের এক-ষষ্ঠাংশের কম প্রতিনিধিত্ব করে। বেশির ভাগ বই ছাপে অল্প সংখ্যক বড়ো প্রকাশক, কিন্তু হাজারো প্রকাশকের অস্তিত্ব আছে। অনেক ছোটো এবং মাঝারি প্রকাশক আছে যারা বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। অতিরিক্তভাবে, হাজার হাজার লেখক প্রকাশন সংস্থা তৈরি করেছে এবং নিজেদের কাজ নিজেরা প্রকাশ করেছে।

বই প্রাশনার মধ্যে, আইএসবিএন (ISBN) হল নথির প্রকাশক, যার একটা বইয়ের অস্তিত্ব এই নামে নিবন্ধভুক্ত। নথির প্রকাশক আসল প্রকাশক হতেও পারে, না-ও হতে পারে।

আনুমানিকভাবে ইংরেজি ভাষার ৬০ শতাংশ বই উৎপাদিত হয় বড়ো পাঁচ  ('বিগ ফাইভ') প্রকাশকের মাধ্যমে : পেঙ্গুইন রান্ডম হাউজ, হ্যাশেট, হার্পারকলিন্স, সাইমন অ্যান্ড স্কুস্টার এবং ম্যাকমিলান। (আরও দেখুন : লিস্ট অফ ইংলিশ-ল্যাঙ্গুয়েজ বুক পাব্লিশিং কোম্পানিজ। বাংলাদেশে বইয়ের আইএসবিএন দেয় জাতীয় গ্রন্থাগার, আগাাঁরগাও, ঢাকা।

ডাইরেক্টরি প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

ডাইরেক্টরি প্রকাশনা হল প্রকাশনা শিল্পের এক বিশেষীকৃত ধরনের কাজ। এই ধরনের প্রকাশকরা ডাক যোগাযোগের ঠিকানা, দূরভাষ  বই, পরিবহন ডাইরেক্টরি, এবং অন্যান্য ডাইরেক্টরি উৎপাদন করে। ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত ডাইরেক্টরি এখন অনলাইনে পাওয়া যায়।

শিক্ষামূলক প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

শিক্ষামূলক প্রকশকরা হল বিশেষভাবে বই অথবা সাময়িক পত্র প্রকাশক যারা বিশেষীকৃত শিক্ষামূলক বিষয়ে কাজ করে। অনেকে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ছাপাখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায়, অন্যান্যারা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যারা শিক্ষামূলক বিষয়ে মনোনিবেশ করে।

ছাপাখানার উন্নতি সাম্প্রতিক প্রকল্প গবেষণার ফলগুলো শিক্ষার্থী সমাজকে সাহাযে করে, যেটা একজন পণ্ডিত ব্যক্তি নিজে করতে পারে, কিন্তু এই যোগাযোগের উন্নতি লাইব্রেরিগুলোর জন্যে একটা মোকাবেলা যেটা সাহিত্যকে আয়তন ও ভারিক্কি দিতে সক্ষম করে।

অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটা হল প্রকাশকরা জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করে মর্যাদাপূর্ণ সমীক্ষা। তাদের ভূমিকা হল গবেষণার পক্ষপাতমূলক নির্ণায়ক সুবিধে দেওয়া এবং এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এটা নয় যে, অনধিকার হস্তক্ষেপ, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং অনলাইন দলিল ভাগাভাগির উদ্ভাবনেও দরকারি।

বর্তমানে শিক্ষামূলক জার্নাল এবং পাঠ্য বই প্রকাশনা একটা আন্তর্জাতিক শিল্পের অংশ। সমালোচকরা অভিযোগ করে যে, গুণমানসম্পন্ন হিসেবপত্র ও লাভজনক নীতিগুলোতে সকলকে সামিল করে প্রকাশনার আদর্শচ্যুতি ঘটছে। ব্যবসায়িক প্রকাশনার মুখোমুখি অলাভজনক প্রকাশনা-ও আছে, যেখানে প্রকাশন সংস্থা বিশেষত প্রকাশনার কাজেই লাগে। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ছাপাখানা, অথবা বিনামূল্যের চিকিৎসা সংস্থা পয়সা দেয় শুধু বাস্তবে বিশেষ লক্ষ্য পূরণের জন্যে। কর্পোরেট মডেলের একটা বিকল্প হল উন্মুক্ত প্রবেশ, পাঠক ও লাইব্রেরির কাছে কোনো পয়সা ছাড়াই ব্যক্তিগত প্রবন্ধ ও শিক্ষামূলক জার্নাল অনলাইনে বিতরণ হয়। অগ্রগামী উন্মুক্ত প্রবেশ জার্নালগুলো হল বায়োমেড সেন্ট্রাল এবং দ্য পাবলিক অফ সায়েন্স

অনেক ব্যবসায়িক প্রকাশক দোআঁশলা মডেল নিয়ে পরীক্ষা করে যেখানে কিছু প্রবন্ধ অথবা সরকারপোষিত প্রবন্ধ বিনামূল্যে তৈরি হয় লেখকের দাম মেটানো কাজের পয়সা দেওয়ার জন্যে এবং প্রবন্ধ পয়সা দিয়েও প্রবন্ধ কিনতে পাওয়া যায়।

চুক্তিবদ্ধ প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

কারিগরিগতভাবে, রেডিয়ো, টেলিভিশন, সিনেমা, ভিসিডি এবং ডিভিডিগুলো, মিউজিক সিস্টেমগুলো, গেমস, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং মোবাইল ফোনে প্রকাশনা তথ্য তার গ্রাহকদের কাছে, যদিও প্রায়ই একটা বড়ো চলচ্চিত্রের বিপণন যুক্ত হয় উপন্যাস রূপান্তরকরণ, একটা গ্রাফিক উপন্যাস অথবা হাস্যকৌতুক রূপ, সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম, একটা গেম, মডেল, খেলনা এবং অশেষ বাজার উন্নতকরণের প্রকাশনা।

কিছু বড়ো প্রকাশকের পুরো বিভাগগুলো এক-একটা ফ্র্যাঞ্চাইসকে উৎসর্গিত, উদাহরণস্বরূপ, ব্যালান্টাইন দেল রে লুকাসবুক্সের আলাদাভাবে অধিকার আছে আমেরিকার স্টার ওয়ার্স, ইংল্যান্ডের রান্ডম হাউজ, বার্টেলম্যান। সেঞ্চুরি লুকাসবুক্সের সমান অধিকার আছে ইংল্যান্ডে। খেলার শিল্প স্ব-প্রকাশনা করে বি এল পাব্লিশিংয়ের মাধ্যমে। ব্ল্যাক লাইব্রেরি ওয়ারহ্যামার এবং উইজার্ডস কোস্টের ড্রাগনল্যান্স, ফরগটেন রিয়েলমস, ইত্যাদি। বিবিসি-এর প্রকাশনা বিভাগ আছে, সেটা ভালো কাজ করে লম্বা ছাপার সিরিজে, যেমন ডক্টর হুয়েরসঙ্গে। মাল্টিমিডিয়া আগ্রাসী খোলা বাজারের কাজ করে এবং স্বাধীনভাবে গড় একক স্তম্ভে কর্পোরেট স্বার্থে জোর দিয়ে প্রকাশনা সম্পাদন করে।

স্বাধীন প্রকাশনার বিকল্পসমূহ

[সম্পাদনা]

বিশেষীকৃত ক্ষেত্রে অথব একটা সংকীর্ণ আবেদনের লেখকরা ছোটো ছাপাখানা এবং স্ব-প্রকাশনার মতো ছোটোখাটো বিকল্পগুলো দেখতে পায়। অতি সম্প্রতি, এই বাছাইগুলো চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণ এবং ই-বুক আকারের অন্তর্ভুক্ত। প্রকাশনার এই বিকল্পগুলো লেখকদের একটা প্রতিবিধানের রাস্তা দেখায় যারা বিশ্বাস করে যে, মূল ধারার প্রকাশনা তাদের প্রয়োজন মেটায়না অথবা তারা বই দোকানের বিক্রি থেকে বেশি অর্থ রোজগারের অবস্থায় আছে, যেরকম জনপ্রিয় বক্তা যারা বক্তৃতার পর বই বিক্রি করে। লেখকরা নিজস্ব দ্রুত এই উপায়ে প্রকাশিত বইয়ের তৈরির ব্যয় কম পড়ে।

সাম্প্রতিক বিকাশসমূহ

[সম্পাদনা]

একুশ শতকে প্রকাশনা শিল্পে বেশ কিছু নতুন কারিগরিগত পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোতে যুক্ত হয়েছে ই-বুক, প্রিন্ট অন ডিম্যান্ড এবং সহজে প্রবেশযোগ্য প্রকাশনা। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো বড়ো প্রকাশনা বাজারে ই-বুক খুব দ্রুত হারে উপলব্ধ হওয়ার জায়গা তৈরি হয়েছে। গুগল, আমাজন.কম এবং সনি প্রকাশক ও লাইব্রেরিগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল বই তৈরি করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমদিকের মতো, আমাজনের কিন্ডল রিডিং ডিভাইস হল একটা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, সঙ্গে ছিল অ্যাপল আইপ্যাড এবং বার্নেস অ্যান্ড নোবল (উল্লেখ জরুরি) থেকে নুক। ই-বুকের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, অয়স্টার স্ক্রিবড এগুলোর মতো কিছু কোম্পানি সাবস্ক্রিপশন মডেলে কাজ করতে থাকে, বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল রিডিং ডিভাইসের ওপর একটা কন্টেন্ট লাইব্রেরিতে সদস্যদের অসীম প্রবেশের জোগান দেয়।

যদি বইয়ের কম অথবা অজানা চাহিদা থাকে, চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণের অর্থ হল প্রকাশককে গুদামগুলোতে বইয়ের মজুত আর রাখতে হবেনা। এটা প্রকাশকদের কাছে একটা বড়ো সুযোগ, যারা এখন বাড়তি খরচ ছাড়া কাজ করতে পারবে এবং প্রকাশকরা তাদের পুরোনো তালিকার বইগুলো কম খরচে বিক্রি করতে পারবে।

প্রবেশযোগ্য প্রকাশনা ব্যবহার করে বইকে ডিজিটাল বানিয়ে দাম বাড়িয়ে এক্সএমএল করা এবং তারপর গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করার জন্যে এটার আকার বহুমুখি করা হয়। প্রায়ই কষ্টকর পাঠের সঙ্গে লক্ষ্য স্থির করা, একটা বিচিত্র বড়ো মাপের ছাপাযুক্ত আকার, বৈশিষ্ট্যগত ছাপার আকারের জন্যে ডাইস্লেক্সিয়া, দেখার অসুবিধের জন্যে ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন, এছাড়াও আছে ব্রেইল, ডেইজি, অডিয়োবুক্স এবং ই-বই।

সবুজ প্রকাশনা হচ্ছে এমন একটা প্রকাশনা যাতে পরিবেশগত ঝামেলা কম হয়। এধরনের একটা উদাহরণ হল, চাহিদামতো ছাপা, ডিজিটাল এবং চাহিদামতো ছাপার কারিগরি হচ্ছে এটা শুধুমাত্র সময়বিশেষে খদ্দেরের কাছাকাছিতে পরিবহনের প্রয়োজন কমানো।

পরবর্তীতে বিকাশ হল অনলাইন প্রকাশনা বৃদ্ধি, যেখানে বস্তুগত বই তৈরি হয়না, ই-বুক লেখক সৃষ্টি হয় এবং কোনো ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয় যেখান থেকে এটা ডাউনলোড অথবা পাঠ করা যায়।

বাড়ন্ত সংখ্যার লেখকরা অনলাইনে কুলুঙ্গি প্রকাশনা ব্যবহার করে তাদের পাঠকদের কাছে অনেক বই বিক্রি করে। স্ম্যাশওয়ার্ডস অথবা আমাজনের ক্রিয়েটস্পেস -এর মতো বিনামূল্যের সেবাগুলো ব্যবহার করে লেখকরা বিশ্বব্যাপী বিক্রির জন্যে তাদের বই প্রাপ্তিসাধ্য করে। বারংবার চালু এজেন্ট/প্রকাশক মডেল বাতিল করে এই সুযোগ নেওয়ার জন্যে একটা আকর্ষণ অবশ্যই লেখকরা প্রথমবার উপলব্ধি করে। যাই হোক, বই বিতরণের এই বলবিদ্যা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, যেখানে বাধ্যবাধকতাপূর্ণ লেখকের দক্ষতা অথবা বানান লেখার যোগ্যতা পর্যন্ত যাচাই হয়না, এবং অন্তর্জালের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো ব্যক্তি সাহিত্যিক উৎকর্ষ অথবা লেখার প্রাথমিক পাঠযোগ্যতাকে অগ্রাহ্য করে নিজের ইচ্ছেমতো যাকিছু প্রকাশ করতে পারে।

প্রমিতকরণ

[সম্পাদনা]

আরো তথ্যাদির জন্যে আইসিএস ডিভিশন ০১.১৪০.৪০ এবং ৩৫.২৪০.৩০ [][]

আইনি বিচার্যসমূহ

[সম্পাদনা]

প্রকাশ করা হল কপি অথবা বিষয়সূচি জনগণ সমক্ষে বিতরণ। বার্নে কনভেনশন মন্তব্য করে যে, এটা শুধু হতে পারে গ্রন্থস্বত্ব অধিকারীর অনুমতির ভিত্তিতে, যেটা প্রাথমিকভাবে সব সময় লেখক হয়। বিশ্ব গ্রন্থস্বত্ব কনভেনশনে'প্রচার কাজ' সম্পর্কে বলা হয়, ধারা VI মোতাবেক "একটা কাজের বোধগম্য পুনরুৎপাদন এবং জনগণের কাছে সাধারণভাবে বিতরণ, যা পাঠ করে অথবা দেখে বোঝা যায়।

সাধারণ জনগণের মধ্য একটা কাজের সরবরাহ, প্রকাশক এমনভাবে প্রচার কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করে যেটা একটা সাধারণ মুদ্রক অথবা একজন দোকানদার পারেনা। উদাহরণস্বরূপ, প্রকাশক যদি মানহানির বিষয় উৎপাদন এবং জনগণের কাছে বিরণ করে, তাহলে সম্ভবত নিন্দাসূচক অভিযোগেরও মুখোমুখি হতে পারে, এমনকি যদি মানহানির বিষয় অন্য কোনো ব্যক্তিরও লেখা হয়।

ব্যক্তিগত প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত প্রকাশনা হল একটা আধুনিক বাংলা শব্দ যেটা ব্যবহৃত হয় অল্প পয়সায় একটা বইয়ের প্রকাশনার জন্যে, অথবা প্রকাশকের বিপণন, বিজ্ঞাপন এবং বিক্রির অভাব, ফলে বইটা জনগণের কাছে পৌঁছায়না।[] এই বইটা যখন কোনোক্রমে প্রকাশিত হয়, এটা স্বাভাবিক গতিপথ পেতে অসম্ভব হয়ে পড়ে; যেমন দোকান, বিশেষ-অর্ডার না-পাওয়া এবং প্রকাশকের সমর্থনের ঘাটতি থাকে, এবং এই সঙ্গে পুনর্মুদ্রণ প্রত্যাখ্যাত হয়। একটা বই যখন 'প্রাইভাইস' হয়েছে অর্থাৎ 'হত্যা'য় পর্যবসিত হয়েছে। প্রেরণার ওপর নির্ভর করে প্রাইভিশিং সম্ভবত স্থাপন করে চুক্তিভঙ্গ ও বিবাচন [] অথবা ভালো ব্যবসার অভ্যাস; উদাহরণস্বরূপ, যেটা প্রকাশক বিশ্বাস করে বেশি বই ছাপানো যা বিক্রি হবে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমায়।

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Steven, Daniel। "Self-publishing - In traditional royalty publishing"publishlawyer.com। Daniel N. Steven, LLC। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৮ 
  2. Steven, Daniel। "What is self-publishing"publishlawyer.com। Daniel N. Steven, LLC। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৮ 
  3. Clapham, Michael, "Printing" in A History of Technology, Vol 2. From the Renaissance to the Industrial Revolution, edd. Charles Singer et al. (Oxford 1957), p. 377. Cited from Elizabeth L. Eisenstein, The Printing Press as an Agent of Change (Cambridge University, 1980).
  4. International Organization for Standardization। "01.140.40: Publishing"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০০৮ 
  5. International Organization for Standardization। "35.240.30: IT applications in information, documentation and publishing"। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০০৮ 
  6. Winkler, David (১১ জুলাই ২০০২)। "Journalists Thrown 'Into the Buzzsaw'"। CommonDreams.org। আগস্ট ৪, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. Sue Curry Jansen of Muhlenberg College, Pennsylvania and Brian Martin of University of Wollongong, Australia (জুলাই ২০০৩)। "Making censorship backfire"Counterpoise7 

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  • Epstein, Jason. Book Business: Publishing Past, Present, and Future.
  • André Schiffrin (2000). The Business of Books: How the International Conglomerates Took Over Publishing and Changed the Way We Read.
  • Ugrešić, Dubravka (2003). Thank You for Not Reading.
  • Abelson et al. (2005). Open Networks and Open Society: The Relationship between Freedom, Law, and Technology

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]