বিষয়বস্তুতে চলুন

প্যারীচরণ সরকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্যারীচরণ সরকার
Peary Charan Sarkar
প্যারীচরণ সরকার
জন্ম২৩ জানুয়ারি, ১৮২৩
মৃত্যু৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৫
কলকাতা
পেশাশিক্ষাবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীরাজকন্যা কৈলাসকামিনী
সন্তানশৈলেন্দ্র সরকার
পরিবারহাটখোলা রাজ পরিবার

প্যারীচরণ সরকার (ইংরেজি: Peary Charan Sarkar) (২৩ জানুয়ারি, ১৮২৩ – ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৫), ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক এবং উনিশ শতকের বাঙলার পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা। তার পাঠ্যবই মালা বাঙালির এক সমগ্র প্রজন্মকে ইংরেজি ভাষায় পরিচিত করেছে। তার পাঠ্যবইসমূহ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে এবং অধিকাংশ ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত ছিলেন এবং এজন্য তাকে 'প্রাচ্যের আর্নল্ড' বলা হতো।[] তিনি তার সময়কালে সুরাপান নিবারকরূপে সকলের দৃষ্টি ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলেন। বাঙালির ইংরেজি শিখবার তৎকালীন প্রবণতায় তার রচিত 'ফার্স্ট বুক' বইটি বাঙলার সামাজিক ইতিহাসে অক্ষর-মূর্তি হয়ে আছে।[]

প্যারীচরণ সরকার, রাজা শিবনারায়ণ বসুর চতুর্থ কন্যা, রাজকন্যা কৈলাসকামিনী, (মহারাজা মানিক বসু অথবা রাজা মানিকরাম বসুর বংশধর)[][] এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যেহেতু সরকার অত্যন্ত পরিশ্রমী, বৃত্তিপ্রাপ্ত, বুদ্ধিমান ছাত্র ছিলেন, তাই তিনি হাটখোলার রাজপরিবারের কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অতএব, প্যারীচরণ সরকার এবং তাঁর স্ত্রীর বংশধররা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে, রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বা দূরবর্তী সদস্য।[][][][]

শৈশব ও শিক্ষা

[সম্পাদনা]

প্যারীচরণ সরকার ডেভিড হেয়ারের পটলডাঙ্গার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮৩৮ সালে হেয়ার সাহেবের স্কুল থেকে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। অতপর হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে সিনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক চল্লিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৪৩-এ হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করেন।[]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

হিন্দু কলেজের শিক্ষা শেষ করে কিছুকাল হুগলি ব্যাংকে চাকরি করার পর হুগলি স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। কালীকৃষ্ণ মিত্র, নবীনকৃষ্ণ মিত্র প্রমুখদের সহায়তায় তিনি বারাসত শহরে মহিলাদের জন্যে প্রথম বিদ্যালয় স্থাপনের অন্যতম কারিগর ছিলেন। ১৮৪৬-১৮৫৪ বারাসত গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেখানে কৃষি বিদ্যালয় স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কুলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরূপে আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার চেষ্টায় স্কুলটির নাম পরিবর্তিত হয়ে হেয়ার স্কুল হয়। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের অস্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন[] এবং ১৮৬৭ সালে ঐ পদে স্থায়ী হয়ে আমৃত্যু কাজ করেন। বাংলার নবজাগরণে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিলো। স্ত্রীশিক্ষা প্রচারে একাধিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিধবাবিবাহ প্রচারেও বিদ্যাসাগরকে সাহায্য করেছিলেন। কৃষি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার সুষ্ঠু বন্দোবস্ত করেন। নারী শ্রমিকগণের সন্তানদের শিক্ষার জন্য তিনি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করেন এবং বেথুন স্কুলে মেয়েদের পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের প্রভাবিত করেন। ১৮৬৬ সালে সরকারি সংবাদপত্র 'এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্তাবহ'-এর সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেছিলেন।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৯৯-৪০০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. প্রমথনাথ বিশী, চিত্র-বিচিত্র; বোধি; ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ২০১৩; পৃষ্ঠা- ১০১-১০২।
  3. Mitra, Radharaman (১৯৫২)। Kolikata - Darpan Parba 1 
  4. BeeZone (২০১৯-০৭-০৩)। Sailendra Sircar Centenary 
  5. Dutt, Haradhan (১৯৭৮)। Sekālora śikshāguru। Tuli-Kalama। 
  6. Mitra, Rādhāramaṇa (১৯৮০)। Kalikātā-darpaṇa। Subarṇarekhā। আইএসবিএন 978-81-86263-48-8 
  7. Rao, R. Venkoba (১৯২৫)। The Life And Work Of Bengal Zemindars Vol. 1 
  8. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২২৩-২২৪।