পুরাতন মাসকাট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুরাতন মাসকাট শহরের ঐতিহাসিক প্রাচীন দৃশ্য, ১৮৭৬
পুরাতন মাসকাট শহরের আধুনিক দৃশ্য

পুরাতন মাসকাট হলো মূল মাসকাট শহরের প্রকৃত ঐতিহাসিক স্থান। পূর্বে এই পাহাড় ঘেরা শহরটি ওমানের রাজধানী ছিলো। বর্তমানে মাসকাট শহরটি ওমানের রাজধানী।[১] জোড়া দুর্গের জন্য শহরটি বিখ্যাত। এছাড়া এখানে ওমানের সুলতানের বাসভবন আল আলম প্রাসাদ অবস্থিত।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ[সম্পাদনা]

পুরাতন মাসকাট শহরটি আধুনিক মাসকাট শহর থেকে পৃথক হয়ে আছে কিছু উপকূলীয় পাহাড় দ্বারা।[২] শহরটি মুত্রাহ করনিচ উপকূলীয় রাস্তা বরারবর গঠিত (মাসকাট গেট জাদুঘর দিয়ে প্রবেশে), যা পোর্ট সুলতান কাবুস ও আল বুস্তান বিচ এর মধ্যে অবস্থিত। শহরের চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে বেষ্টনী করা হয়েছে। প্রাচীরের সাথে বৃত্তাকার শৃঙ্গ উপরে উঠে গেছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের দেওয়াল ১৬২৫ সালে নির্মাণ করা হয়। পূর্ব ও উত্তর দিকে ওমান উপসাগর এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড় দ্বারা একটি প্রাকৃতিক সীমা তৈরি হয়েছে। ২০ শতকের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত সন্ধ্যা হওয়ার তিন ঘণ্টা পর সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হতো। সন্ধ্যায় কেউ যখন রাস্তায় আসে, তাদেরকে আলোর জন্য একটি লণ্ঠন বহন করতে হতো। শহরের রাস্তায় ধূমপান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়াও উন্মুক্ত ভাবে গান বাজনা করাও নিষিদ্ধ।

ভৌগোলিক অবস্থা[সম্পাদনা]

সমুদ্রের তীর ঘেষে এই শহরটি তৈরি করা হয়েছে। এর চারিদিকে পাহাড়ের সারি বেষ্টনী তৈরী করে রেখেছে। উপকূলবর্তী শহর হওয়ায় এখানে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম। [৩]

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

পুরাতন মাসকাট শহরে প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যকলা ও শিল্পকলার মিশ্রণ ঘটেছে। এখানে পুরাতন অবকাঠামোর পাশাপাশি আধুনিক ঘরবাড়ি লখ্য করা যায়। পুরাতন মাসকাটের রাস্তায় খাঁজকাটা জাফরি দিয়ে জ্যামিতিক আলো এসে পরে। এখানকার বেশিরভাগ বাড়ির রঙ সাদা। রঙিন অবকাঠামো নেই বললেই চলে। তবে রাতের বেলায় শহরের সাদা গম্বুজ-মিনার গুলো রঙিন আলোয় সাজানো হয়ে থাকে। [৪]

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

মাসকাটে বসবাসরত মোট মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ। [৫] এখানকার প্রধান ধর্ম ইসলাম।

অর্থনৈতিক অবস্থা[সম্পাদনা]

পুরাতন মাসকাটের অর্থনীতি প্রধানত পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এখানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক আসেন শহরের প্রাচীন নিদর্শগুলো দেখতে।[৬]

পর্যটন[সম্পাদনা]

পুরাতন মাসকাট শহরটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের অনেক কিছুই রয়েছে। শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণে সে নিজেও একটি আকর্ষণের কেন্দবিন্দু।

১) আল আলম প্রাসাদঃ ২০০ বছরের পুরনো ওমানের সুলতানদের জন্য তৈরি রাজকীয় বাসভবন। বর্তমান সুলতানের সপ্তম পূর্বপুরুষ ইমাম সুলতান বিন আহমেদ এই প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন। পুয়ারতন মাসকাট শহরের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পর্যটন হলো এই প্রাসাদ।

২) আল সাইদিয়া রাস্তাঃ এই রাস্তা ৫ কিলমিটার দীর্ঘ। এই রাস্তার পাশেই আল আলম প্রাসাদ অবস্থিত। এছাড়া মজলিস আস সূরা ভবন, বাইত আল জুবায়ের জাদুঘর ইত্যাদি অবস্থিত। রাস্তার দুই পাশের নয়ানভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

৩) বাইত আল জুবায়েরঃ পুরাতন মাসকাট শহরের অন্যতম সমৃদ্ধ জাদুঘর। এখানে প্রাচিনকালে ব্যবহৃত অস্ত্রের সংগ্রহ আছে। এছাড়া ওমানের প্রাচীন গৃহস্থালী সামগ্রী, পোশাক ইত্যাদি সংগ্রহ করে রাখা আছে। ১৯৯৮ সালে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।[৭]

৪) আল জালালি দুর্গঃ পুর্তগিজদের তৈরি দুর্গ। ১৬ শতকে আল আলম প্রাসাদের পাশে তৈরি করা হয়েছিলো। অটোমান সেনাবাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা সমুদ্রের তীর ঘেষে এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলো।

৫) আল মিরানি দুর্গঃ এটিও পুর্তগিজদের তৈরি দুর্গ। ১৬ শতকে আল আলম প্রাসাদের পাশে তৈরি করা হয়েছিলো। ১৫৫২ সালে অটোমান সেনাবাহিনী পুরাতন মাসকাট শহর দখল করে নেয়। তারপর এই দুর্গ নির্মাণ করা হয়।

৬) মাসকাত গেট জাদুঘরঃ আল সাইদিয়া রাস্তার পাশে অবস্থিত এই জাদুঘরে নিওলিথিক যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত ওমানের ইতিহাস প্রদর্শিত হয়। ২০০০ সালে জাদুঘরটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। [৭]

৭) জাতীয় জাদুঘরঃ এটি ওমানের জাতীয় জাদুঘর। ২০১৩ সালে রাজকীয় ফরমান জারী করে এটি তৈরি করা হয় ও ২০১৬ সালে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রাগঐতিহাসিক যুগে ওমানে মানব বসতির অস্তিত্ব ছিলো, তার কিছু নিদর্শ্ন এখানে আছে। এর আয়ত্ন প্রায় ১৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার। [৭]

৮) ওমানি ফরাসি যাদুঘরঃ ওমান-ফ্রান্স সম্পর্কের অনেক কিছু এখানে প্রদর্শিত হয়। ফ্রান্সের সাবেক এক দূতের বাস ভবনে এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছিলো।

৯) মেরিনা বন্দর আল রওযাঃ এটি পুরাতন মাসকাটের একটি বন্দর।

১০) আল খোর মসজিদঃ আল মিরানি দুর্গের পাশে এই মসজিদটি একইসাথে আরব, পারস্য ও ভারতীয় স্থাপত্যকলার মিশ্রনে বানানো হয়েছে। মসজিদটিতে অনেক রঙের সমাহার লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত পুরাতন মাসকাটে ভবন নির্মাণে শুধুমাত্র সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। [৮]

১১) রিয়াম পার্কঃ রিয়াম পার্কটি মাসকাট ও মুত্রাহর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে সবুজ গাছপালা আছে এবং বাচ্চাদের জন্য একটি খেলার মাঠও আছে। ১৬৪৮ সালে পর্তুগিজদের সাথে এখানে একটি শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিলো। [৯]

১২) পর্যবেক্ষণ টাওয়ারঃ প্রাচীন শহরের অন্যতম নিদর্শন ও পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় হলো এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। প্রাচীনকালে এই সব টাওয়ার থেকে সমুদ্রপথ পাহারা দেওয়া হতো।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Old Muscat"। Oman: Sultanate of Oman। ২৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৭ 
  2. "The 5 Best Muscat Old Town Tours, Trips & Tickets - Muscat | Viator" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  3. "Old Muscat, the fairytale capital of Oman - Deeper History Blog"Deeper History Blog (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০২-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  4. "মাসকাট ম্যাসকট"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  5. "Oman Population 2017 (Demographics, Maps, Graphs)"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  6. "Old Watch Tower in Old Muscat, Oman - The Gate"The Gate (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৮-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  7. "Old Muscat (Area) - Berny around Oman"Berny around Oman (স্পেনীয় ভাষায়)। ২০১৭-১১-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  8. "Al Khor Mosque in Muscat, Oman" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 
  9. "Riyam Park in Muscat, Oman" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]