নির্মল ভার্মা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নির্মল ভার্মা
জন্ম (1929-04-03) ৩ এপ্রিল ১৯২৯ (বয়স ৯৫)
সিমলা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৫ অক্টোবর ২০০৫(2005-10-25) (বয়স ৭৬)
নতুন দিল্লি, ভারত
পেশাঔপন্যাসিক, লেখক, কর্মী, অনুবাদক
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপদ্মভূষণ (২০০২)

নির্মল ভার্মা (৩ এপ্রিল ১৯২৯ - ২৫ অক্টোবর ২০০৫) ছিলেন একজন হিন্দি লেখক, ঔপন্যাসিক, কর্মী এবং অনুবাদক। তাকে হিন্দি সাহিত্যের কথাসাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।[১] তার প্রথম গল্প সংকলন পারিন্দে (পাখি) এই আন্দোলনের প্রথম স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হয়।[২]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

নির্মল ভার্মা ৩ এপ্রিল ১৯২৯ সালে সিমলায় জন্মগ্রহণ করেন। সিমলায় তার বাবা ব্রিটিশ ভারত সরকারের সিভিল অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম সন্তান। তার এক ভাই ভারতের অন্যতম সেরা শিল্পী রাম কুমার।[৩] নির্মলের স্ত্রী গগন গিলও একজন লেখিকা।[৪][৫]

ছাত্রাবস্থায় ১৯৪৭-৪৮ সালে নির্মল দিল্লিতে মহাত্মা গান্ধীজির সকালের প্রার্থনা সভায় নিয়মিত যোগদান করতেন। যদিও তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত আক্রমণের পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন।

১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে একটি ছাত্রদের পত্রিকার জন্য তিনি প্রথম গল্প লেখেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পাশ করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

দিল্লিতে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। এই সময় থেকেই বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।

তিনি ১০ বছর চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে ছিলেন। প্রাগে থাকাকালীন আধুনিক চেক লেখকদের যেমন কারেল ক্যাপেক, মিলান কুন্ডেরা এবং বোহুমিল হরবালের লেখা হিন্দিতে অনুবাদ করার জন্য তাকে ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউট দ্বারা আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি চেক ভাষাও শিখেছিলেন। প্রাগ বসন্তের ফলস্বরূপ ১৯৬৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আসার আগে হিন্দিতে নয়টি বিশ্ব ক্লাসিক অনুবাদ করেন।

প্রাগে থাকাকালীন তিনি ইউরোপের অনেক স্থান ভ্রমণ করেন। পরে তার ইউরোপ ভ্রমণের কথা সাতটি ভ্রমণকাহিনীতে লেখেন। যার মধ্যে রয়েছে চিঁড়িও পর চাঁদনী (১৯৬২), হার বারিশ মে (১৯৭০) এবং ধুন্ধ সে উঠতি ধুন উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৪ সালে প্রাগে থাকাকালীন তার ছাত্রজীবনের উপর ভিত্তি করে তিনি প্রথম উপন্যাস ভে দিন (সেই দিনগুলি) লেখেন। প্রাগ থেকে ফিরে আসার পর তার কমিউনিজমের উপর মোহভঙ্গ হয়। তিনি ভারতীয় জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে উচ্চ সোচ্চার ছিলেন। তিব্বতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন। নির্মল ভার্মার কাজের একটি সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন রাম প্রকাশ দ্বিবেদী।[৬]

১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ভোপালের ভারত ভবনে নিরালা সৃজনশীল লেখার চেয়ার-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮-৯০ সালে তিনি সিমলায় যশপাল ক্রিয়েটিভ রাইটিং চেয়ার-এর নির্দেশক ছিলেন। ১৯৭২ সালে তার গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত কুমার শাহানি পরিচালিত একটি চলচ্চিত্র মায়া দর্পণ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার পায়।[৭]

সাহিত্যিক জীবন[সম্পাদনা]

পাঁচ দশক ধরে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় যেমন গল্প, ভ্রমণকাহিনী এবং প্রবন্ধ লেখার কর্মজীবনে তিনি পাঁচটি উপন্যাস, আটটি ছোটগল্পের সংকলন এবং প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী সহ নয়টি নন-ফিকশন বই লিখেছেন।[৮]

মুখ্য রচনাবলী[সম্পাদনা]

  • উপন্যাসভে দিন (১৯৬৪), লাল টিন কি ছত (লাল টিনের ছাদ) (১৯৭৪), এক চিথড়া সুখ (১৯৭৯), রাত কা রিপোর্টার (১৯৮৯), অন্তিমা অরণ্য (২০০০),
  • গল্প সংকলনপরিন্দে (পাখি) (১৯৫৯)[৯], জলতি ঝাড়ি (১৯৬৫), পিছলি গর্মিয়ো মে (১৯৬৮), বিচ বহস মে (১৯৭৩), কাভে আউর কালা পানি (১৯৮৩), সুখা তথা অন্য কাহানিয়া (১৯৯৫),আকালা ত্রিপাঠী, দেড় ইঞ্চি উপরে, মেরি প্রিয় কাহানিয়া (১৯৭৩), ধগে (২০০৩)
  • প্রতিবেদন এবং ভ্রমণকাহিনীচিঁড়িও পর চাঁদনী (১৯৬২), হার বারিশ মে (প্রতি বৃষ্টিতে) (১৯৭০)
  • নাটক— কিশোর একান্ত (১৯৭৬)
  • প্রবন্ধ ও সাহিত্য সমালোচনাশব্দ আউর স্মৃতি (১৯৭৬)— সাহিত্য প্রবন্ধ, কলা কা জোখিম (১৯৮১)— বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় শিল্পকলার তদন্ত, ধুন্ধ সে উঠতি ধুন—হিন্দি সাহিত্য সম্পর্কিত বিষয়গুলির উপর একটি ডায়েরির মতো লেখা।—সাহিত্য সমালোচনা, দালান সে উতারতে উয়ে (১৯৮৫)— সাহিত্য সমালোচনা, ভারত আউর ইউরোপ: প্রতিশ্রুতি কে ক্ষেত্র (১৯৯১)— প্রবন্ধ।

সম্মাননা এবং পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • ১৯৯৯ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, ভারতীয় লেখকদের জন্য সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার।
  • সাতটি ছোট গল্পের সংকলন 'কাভে অর কালা পানি' ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে।[১০]
  • ২০০২ সালে পদ্মভূষণ।[১১]
  • জ্ঞানপীঠ ট্রাস্টের "মূর্তিদেবী পুরস্কার" তার প্রবন্ধের বই, ভারত আউর ইউরোপ: প্রতিশ্রুতি কে ক্ষেত্র (১৯৯১) এর জন্য।
  • জুরি সদস্য লেটার ইউলিসিস অ্যাওয়ার্ড ফর দ্য আর্ট অফ রিপোর্টেজ (২০০৩)।[২]
  • ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের ফেলো।
  • লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস তার সংগ্রহে থাকা নির্মল ভার্মার বেশিরভাগ কাজ ক্যাটালগ করে।
  • ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার, আজীবন কৃতিত্বের জন্য, ২০০৫ সালে সাহিত্য একাডেমি ফেলোশিপ।[১২]
  • ১৯৮৮ সালে লন্ডনের রিডার্স ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা তার বই "দ্য ওয়ার্ল্ড অন্য কোথাও" প্রকাশের পর, বিবিসি চ্যানেল ফোর তার জীবন এবং কাজের উপর একটি চলচ্চিত্র প্রচার করে।[২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর নতুন দিল্লিতে নির্মল ভার্মার জীবনাবসান হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ode to Nirmal Verma The Hindu, 6 November 2005.
  2. Nirmal Verma, India. Lettre-ulysses-award.org. Retrieved on 22 May 2016.
  3. 'He was the modern voice of Indian genius' Obituary, Rediff.com, 26 October 2005
  4. दुबे, प्रियंका (৩ এপ্রিল ২০১৮)। "निर्मल वर्मा ने इंदिरा को बताया था 'साक्षात बुराई'"BBC News हिंदी। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৮ 
  5. "Gagan Gill | The Caravan" 
  6. Dwivedi, Ram Prakash (১৬ অক্টো ২০২০)। "CCGS International Journal"journal.globalculturz.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৭ 
  7. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে নির্মল ভার্মা (ইংরেজি)
  8. AUTHOR SPEAKS:"I cater to several layers of sensibilities" The Tribune, 10 March 2002.
  9. भारत और यूरोप : प्रतिश्रुति के क्षेत्र, निर्मल वर्मा, राजकमल प्रकाशन, नयी दिल्ली, द्वितीय संस्करण-2001, अंतिम आवरण फ्लैप पर लेखक-परिचय के अंतर्गत उल्लिखित।
  10. Sahitya Akademi Awards. sahitya-akademi.org
  11. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  12. Fellowships ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জুন ২০০৭ তারিখে Sahitya Akademi Official website.