নাজমুদ্দিন আইয়ুব
নাজমুদ্দীন আইয়ুব | |
---|---|
نجم الدين ايوب | |
মালিকুল আফযল নাজমুদ্দীন আইয়ুব | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | দাবিল, আজারবাইজান |
মৃত্যু | ৯ই আগস্ট, ১১৭৩ মিশর |
সন্তান | সালাহউদ্দিন |
মালিকুল আফযল নাজমুদ্দীন আইয়ুব ইবনে শাযী ইবনে মারওয়ান (আরবি: الملك ألأفضل نجم الدين أيوب بن شاذي بن مروان, কুর্দি : Necmeddin Eyûbî) (মৃত্যু ৯ আগস্ট, ১১৭৩) ছিলেন একজন কুর্দি [১] সৈনিক এবং দাবিলের রাজনীতিবিদ।[২] এবং সালাহউদ্দিনের পিতা।[৩] তিনিই আইয়ুবী রাজবংশের পূর্বপুরুষ।
জীবন এবং কর্মজীবন
[সম্পাদনা]আইয়ুব ছিলেন শাদি ইবনে মারওয়ানের পুত্র এবং শিরকুহের ভাই। পরিবারটি রেভেন্দ, রেভেন্দি বা কুর্দি রাওয়াদিয়া গোত্রের অন্তর্গত,[৪][৫][৬] যেটি হাযবানী গোত্রের একটি শাখা। শারাফনামায় রেভেন্দের পরিবর্তে রেওয়েন্দ লেখা হয়েছে। ভ্লাদিমির মিনর্স্কির মতে, রেওয়েন্দ আরবি নাম "রাওয়াদিয়া" এর অপভ্রংশ হতেও পারে। অন্যদিকে, "রেওয়েন্দ" বা কিছু ক্ষেত্রে "রেভেন্দ" এর কুর্দি অর্থ যাযাবর। আর এই নামটি বেশিরভাগ অঞ্চলের যাযাবর কুর্দি উপজাতিদের জন্য প্রয়োগ করা হত। মিনর্স্কি এভাবে গোত্রগুলোর উপর আরবীয় প্রভাব হবার সম্ভাবনা রাখেন, অথচ তারা সাধারণতঃ কুর্দী হিসেবেই গণ্য ছিলেন। এর উপর মিনর্স্কি আরো যুক্ত করেন যে, গোতগুলোর শাসকরা এই গোত্রের নামকরণ করে থাকবেন। তিনি ধারণা করেন, রেওয়েন্দ বা রাওয়াদিয়া শাসকরা আরব বংশোদ্ভূত ছিলেন।[৫] এবং আর্বেলা (আধুনিক আর্বিল) অঞ্চল থেকে ৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে দাবিল অঞ্চলে এসেছিলেন, যেখানে আমরা জানি যে অনেক শাসকই আরবি বংশোদ্ভূত বলে দাবি করেছেন। আরবীয় বা ঐতিহাসিকরা যেমন দাবি করেন না। সালাহউদ্দিনের পুরো নাম হল "মালিকুন নাসির সালাহউদ্দিন আবুল মুজাফর ইউসুফ ইবনে আইয়ুব তিক্রিতি কুরদি" যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, নাজমুদ্দিন আইয়ুব এবং সালাহউদ্দিন কুর্দি ছিলেন, "কুরদি" তার কুর্দি জাতিসত্ত্বার উত্স বোঝায়। তাদের বেশিরভাগ অনুগত সঙ্গী এবং আইনবিদ ছিলেন হাক্কারি কুর্দি অঞ্চল থেকে, যা পশ্চিমা ইতিহাসের বইয়ে কোলেমার্গ বা জুলামের্ক নামে পরিচিত।[৭] আর এটিও বিবেচনা করা উচিত যে, ভ্লাদিমির মিনর্স্কির গবেষণাটি কুর্দি মধ্যযুগীয় ইতিহাসবিদ ইবনুল আসিরের বিষয়ভিত্তিক লেখার উপর ভিত্তি করে ছিল।[৮]
পরিবারটি শাদ্দাদিদ রাজবংশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। ১১৩০ খ্রিস্টাব্দে যখন শেষ শাদ্দাদিদকে দিভিনে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তখন শাযী পরিবারটিকে নিয়ে প্রথমে বাগদাদে এবং তারপরে তিকরিতে স্থানান্তরিত হন। তিকরিতে স্থানীয় প্রশাসক বিহরুজ তাকে গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিকরিতের গভর্নর হিসেবে থাকাকালেই শাযী মারা যান। শাযীর মৃত্যুর পর আইয়ুব তিকরিতের গভর্নর হন।
১১৩২ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুব ইমাদউদ্দিন জেনগির অধীনে ছিলেন। তিনি তিকরিতের নিকটবর্তী সেলজুক সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং দজলা পেরিয়ে তার পশ্চাদপসরণে সহায়তা করার সময় জেনগির জীবন রক্ষা করেন। ১১৩৬ খ্রিস্টাব্দে শিরকুহ একজন খ্রিস্টানের সাথে ঝগড়া করে তাকে হত্যা করেন। যার ফলে ভ্রাতৃদ্বয়কে পলায়ন করতে হয়েছিল। (আইয়ুবের পুত্র সালাহউদ্দিনের ব্যাপারে তাদের পলায়নের রাতে জন্ম হওয়ার ব্যাপারে জানা যায়।) জেনগি পরে আইয়ুবকে বালবেকের গভর্নর নিযুক্ত করেন। ১১৪৬ খ্রিস্টাব্দে বুরির দামেস্কের আমিরের আতাবেগ মুইনুদ্দীন আতাবেগী শহরটি অবরোধ করে। তখন আইয়ুব বালবেকের দায়িত্ব ছেড়ে দামেস্ক চলে আসেন। এরমধ্যে শিরকুহ নুরউদ্দিন জেনগির বাহিনীতে যোগ দেন। নুরউদ্দিনের দামেস্কের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ক্রুসেডাররা দামেস্ক অবরোধ করলে নুরউদ্দিন জেনগি মুইনুদ্দীন আর বুরিদের তাদের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জোট করতে বাধ্য করেন। এর পরই নুরউদ্দিন দামেস্ক তার কাছে হস্তান্তর করতে বলেন। আইয়ুব আর শিরকুহ ১১৫৪ খ্রিস্টাব্দে শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেন। আইয়ুব নুরউদ্দিনের অধীনে দামেস্কের গভর্নর নিযুক্ত হন। তিনি জেনগিদের মধ্যে এতটা সম্মানিত হয়েছিলেন যে, নুরউদ্দিনের কর্মকর্তাদের মধ্যে একমাত্র তাকেই নুরউদ্দিনের দরবারে বসে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
আইয়ুবের পুত্র সালাহউদ্দিনও নুরউদ্দিনের বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ক্রুসেডার-বাইজেন্টাইনদের মিশরের দিকে আক্রমণের সময় নুরউদ্দিন সালাহউদ্দিনকে মিশরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পাঠিয়েছিলেন। ১১৭০ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুব সেখানে তার সাথে যোগদান করেন। হয়ত সালাহউদ্দিন তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন অথবা নুরউদ্দিন শেষ ফাতিমীয় খলীফাকে পদচ্যুত করার জন্য সহায়তা করতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি মিশরে গেলে সালাহউদ্দিন তাকে উপদেষ্টা বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এর পরিবর্তে আলেকজান্দ্রিয়া, দমইয়াত আর বুহাইরার জমিদারী গ্রহণ করেন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]নাজমুদ্দীন আইয়ুব ১১৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জুলাই ঘোড়ায় চড়ার দুর্ঘটনায় আহত হন এবং ৯ আগস্ট মারা যান। তার মৃত্যু সালাহউদ্দিন এবং নূরুদ্দীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়। নুরুদ্দীন জেরুজালেম রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে সহায়তা করার জন্য সালাহউদ্দীনকে ডেকেছিলেন, কিন্তু সালাহউদ্দিন তার পিতার মৃত্যুর খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। যাইহোক, নুরুদ্দীন এবং সালাদিনের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি। পরের বছর নুরুদ্দীন মারা গেলে সালাহউদ্দিন সমগ্র মিশর ও সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদের মতে, আইয়ুব ছিলেন "একজন মহৎ, উদার মানুষ, বিনম্র এবং উত্তম চরিত্রের।" এছাড়াও তিনি পোলো খেলা খুব বেশি পছন্দ করতেন। ইবনে কালানিসি তাকে "একজন দৃঢ়, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং করণীয় বিষয়ের জ্ঞানের অধিকারী" বলে অভিহিত করেছেন। যিনি বিচক্ষণতার সাথে বালবেককে পুরস্কার এবং সম্মানের বিনিময়ে একটি উচ্চতর শক্তির কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
তাকে আইয়ুব উপাধি দেয়া হয়েছিল। এই নাম থেকেই সালাহউদ্দীন এবং তার উত্তরসূরীদের আইয়ুবীয় রাজবংশ এসেছে। নাজমুদ্দীনের অর্থ "ধর্মের তারকা"।
পরিবার ও সন্তান
[সম্পাদনা]আইয়ুবের বেশ কয়েকটি সন্তান ছিল:
- নুরুদ্দীন শাহানশাহ (মৃত্যু ১১৪৮)
- মালিকুল মুয়াজ্জাম শামসুদ্দৌলা তুরান শাহ (মৃত্যু ১১৮১)
- সালাহউদ্দিন ইউসুফ (১১৩৭-১১৯৩)
- মালিকুল আদিল সাইফউদ্দিন আবু বকর আহমদ (১১৪৫-১২১৮)
- তাজুল মুলুক আবু সাঈদ বুরী (মৃত্যু ১১৮৪)
- মালিকুল আজিজ সাইফুল ইসলাম তুগতেকিন (মৃত্যু ১১৯৭)
- রাবিয়া খাতুন (কন্যা, মৃত্যু ১২৪৬), বিবাহিত ক. আমির সা'দুদ্দিন মাসউদ খ. মুঈনুদ্দিন ওনোর, এবং
- সিত্তুশ শাম ফাতেমা খাতুন (কন্যা)।[৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Morton, Nicholas (২০২০-০৪-২৪)। The Crusader States and their Neighbours: A Military History, 1099-1187 (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-255799-5।
- ↑ Lyons, Malcolm Cameron and David Edward Pritchett Jackson, Saladin: The Politics of the Holy War, (Cambridge University Press, 1982), 2;"According to this, two Kurdish brothers from Dvin near Tiflis, Ayyub and Shirkuh, moved to Iraq..."
- ↑ George F. Nafziger; Mark W. Walton, Islam at War: A History, (Praeger, 2003), 42.
- ↑ Sherefkhan Bedlisi "Sherefname" Translation: Ziya Avci
- ↑ ক খ Vladimir Minorsky, Prehistory of Saladin http://rbedrosian.com/Ref/Minorsky/vmpsal1.htm#124.
- ↑ The Sharafnam̂a, or, The history of the Kurdish nation, 1597, Translation: Mehrdad Izady
- ↑ Jonathan Phillips, The Life and Legend of the Sultan Saladin, 496 pp., Random House, 2019. (pp. 15, 66)
- ↑ Vladimir Minorsky, The Prehistory of Saladin, Studies in Caucasian History, Cambridge University Press, 1957, pp. 124–132: 'The medieval historian Ibn Athir relates a passage from another commander: "...both you and Saladin are Kurds and you will not let power pass into the hands of...
- ↑ Women as Patrons of Religious Architecture in Ayyubid Damascus, R. Stephen Humphreys, Muqarnas, Vol. 11, (Brill, 1994), pp. 47 https://www.jstor.org/stable/1523208
সূত্র
[সম্পাদনা]- বাহাউদ্দীন ইবনে শাদ্দাদ, সালাদিনের বিরল এবং চমৎকার ইতিহাস, সংস্করণ। ডিএস রিচার্ডস, অ্যাশগেট, ২০০২।
- ক্রুসেডের দামেস্ক ক্রনিকল, ইবন আল-কালানিসির ক্রনিকল থেকে সংগৃহীত এবং অনুবাদিত । HAR Gibb, ১৯৩২ (পুনঃমুদ্রণ, Dover Publications, ২০০২)
- ভ্লাদিমির মিনরস্কি, "সালাদিনের প্রাগৈতিহাসিক", ককেশীয় ইতিহাসের অধ্যয়নে, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৫৭, পিপি। ১২৪-১৩২। ( অনলাইনে উপলব্ধ )
- এমসি লিয়ন্স এবং ডিইপি জ্যাকসন, সালাদিন: পবিত্র যুদ্ধের রাজনীতি, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮২।
- পিএম হল্ট, দ্য এজ অফ দ্য ক্রুসেডস: দ্য নিয়ার ইস্ট ফ্রম দ্য ইলেভেনথ সেঞ্চুরি টু ১৫১৭, লংম্যান, ১৯৮৬।