বিষয়বস্তুতে চলুন

ধূসর বনমোরগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ধূসর বনমোরগ
মোরগ, বান্দিপুর জাতীয় উদ্যান
মুরগি, ঠাট্টেকড় পক্ষী অভয়ারণ্য
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Galliformes
পরিবার: Phasianidae
উপপরিবার: Phasianinae
গণ: Gallus
প্রজাতি: G. sonneratii
দ্বিপদী নাম
Gallus sonneratii
Temminck, 1813
সুনির্দিষ্ট প্রাপ্তিস্থল (ফোঁটা) এবং সাধারণ বিস্তৃতি

ধূসর বনমোরগ (Gallus sonneratii) (ইংরেজি: Grey Junglefowl বা Sonnerat's Junglefowl) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত গ্যালাস (Gallus) গণের এক প্রজাতির বনমোরগ।[] পাখিটি সারা বিশ্বে কেবলমাত্র ভারতে পাওয়া যায়, অর্থাৎ এটি ভারতের এন্ডেমিক বা স্থানিক পাখি। ভারতীয় উপদ্বীপ এদের প্রধান আবাসস্থল।[] যেসব এলাকায় সাধারণ বনমোরগের সাথে সাথে এরাও অবস্থান করে, সেসব অঞ্চলে অনেকসময় এরা সংকর প্রজাতির সৃষ্টি করে। তবে সংকরায়ন খুব বিরল, কারণ বনমোরগের এলাকা মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। কেবলমাত্র আরাবল্লী পর্বতমালায় এই দুই প্রজাতির এলাকা পরস্পর আপতিত হয়েছে।[] জেনেটিক পরীক্ষণ প্রমাণ করেছে যে, সাধারণ বনমোরগের চেয়ে শ্রীলঙ্কার বনমোরগের সাথে এরা বেশি সম্পর্কিত। এদের ডাক প্রলম্বিত আর অন্যসব বনমোরগের প্রজাতি থেকে ভিন্ন। মাংসের জন্য এদের শিকার করা হয়। এছাড়া ঘাড়ের লম্বা পালকের জন্যও এদের শিকার করা হয়। এই পালক দিয়ে বড়শির ফাৎনা বানানো হয়।

উপপ্রজাতি

[সম্পাদনা]

ধূসর বনমোরগ প্রধানত একপ্রজাতিক (Monotypic) হিসেবে পরিচিত। তবে পালকের রঙের বিভিন্নতার আর ডাকের জন্য অনেক সময় এদের দুইটি উপপ্রজাতিতে বিভক্ত করা হয়- G. s. sonneratii এবং G. s. wangyeli. এই উপপ্রজাতিকরণ সর্বত্র সমর্থিত হয় নি।

বিবরণ

[সম্পাদনা]
ধূসর বনমোরগ

বনমোরগের দেহের বিভিন্ন স্থানে ধূসর আর রূপালি পালক দেখে অন্যান্য বনমোরগ থেকে এদের খুব সহজেই আলাদা করা যায়। মোরগ সাধারণ বনমোরগের মতোই বড়সড়, সুন্দর ঝালরাবৃতএকটি পাখি। তবে সাধারণ বনমোরগের তুলনায় এরা একটু লম্বাটে। গলা ও ঘাড়ের প্রতিটি পালক কালো রঙের এবং মাথার দিকে হলদে বা সাদা রঙের। ফলে গলা ও ঘাড় কালোর পটভূমিতে সাদা সাদা ফোঁটাযুক্ত মনে হয়। মাথার দিকের ফোঁটাগুলো ঘন ও ছোট, পরবর্তীতে ফোঁটা ক্রমে বড় ও পাতলা হতে থাকে। প্রজনন ঋতুর সময়ে বা পরে ঘাড়ের এই ফোঁটাযুক্ত পালকগুলি থাকে না। পেট ও পিঠের পালক ধূসর বা রূপালি রঙের যাদের প্রান্ত লালচে। ডানা ও লেজ কালো। লেজের কেন্দ্রীয় পালকগুলি লম্বা ও কাস্তের মত বাঁকানো। মুখ ও মুখের আশপাশ পালকহীন এবং লাল রঙের। মাথায় লাল মাংসল ঝুঁটি থাকে। ঠোঁটের নিচে দু'টি লাল ঝুলন্ত লতিকা থাকে। লতিকা ও ঝুঁটি সাধারণ বনমোরগের মত অত বড় নয়। সাদা কর্ণপটহ দৃশ্যমান। চোখের আইরিস হলুদ, পা লাল, ঠোঁট ময়লা হলুদ।[][]

বনমুরগী

বনমুরগী তুলনায় ছোট ও লেজে বাহারি পালক নেই। পালক বাদামী ও মেটে-বাদামী। পেটের দিকের পালক কালো, তাতে অসংখ্য সাদা ছোপ থাকায় প্রায় সাদা বলে মনে হয়। লতিকা থাকে না, ঝুঁটি ছোট ও ফ্যাকাসে বর্ণের। পা হলুদ, ঠোঁট সীসা বর্ণের, চোখের আইরিস মোরগের মতোই।[][]

বনমোরগ-মুরগী একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে বনে, ঘাসবনে বা বাঁশবনে ঘুরে বেড়ায়। মাটি থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শস্যদানা, ঘাসের গোড়া, কচিপাতা, কেঁচো, কীটপতঙ্গ, ফল, বাঁশের বীজ এসব খায়। খুব ভোরে ও সন্ধ্যার আগে আগে বনের পাশের খোলা জায়গায় খাবার খেতে আসে। শীতের সময় কুয়াশা থাকা অবস্থায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। বনের কোনো গাছতলায় পাকা ফল ঝরে পড়া শুরু করলে বনমোরগ-বনমুরগী প্রতিদিন সকাল-বিকাল সেই গাছতলায় আসে। আবার বনের বড় গাছে উঠেও এদের ফল খেতে দেখা গেছে। রাত কাটায় উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে। সামান্য শব্দে ভীত হয়ে উড়ে গিয়ে বসবে গাছের মগডালে। পালানোর সময় পোষা মুরগির মতোই কক্ কক্ করে ডাকে। ভোরে আর সন্ধ্যাবেলায় বেশি ডাকে। মোরগের ডাক অনেকটা কু-কায়াক-কিউক-কিউক। সাধারণ বনমোরগের মত ডাকার সময় ধূসর বনমোরগ ডানা ঝাপটায় না।

ধূসর বনমোরগ, বার্লিন
ধূসর বনমোরগের ডিম

প্রজনন

[সম্পাদনা]
ধূসর বনমোরগের ডাক

মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ধূসর বনমোরগের প্রজনন কাল। এরা মূলত একগামী, তবে বহুগামী হওয়ারও ইতিহাস আছে। বনমুরগী মাটিতে বাসা করে। অনেকসময় কাঠবেড়ালী বা অন্য পাখির পরিত্যক্ত বাসাতেও বাসা করে। বাসা বানানো শেষে বনমুরগী ৪-৭ টি ডিম দেয়। ডিমের বর্ণ সাদা বা খুব হালকা হলুদ। বনমুরগী একাই ডিমে তা দেয়। সাধারণত একুশ দিন পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ফোটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছানাগুলো বাসা ছাড়ে ও মায়ের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। এক বছর পর ছানারা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।[]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Gallus sonneratii[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ ধূসর বনমোরগ বিষয়ক পাতা।
  2. Gray Junglefowl , ধূসর বনমোরগ বিষয়ক পাতা।
  3. Grey Junglefowl ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ নভেম্বর ২০১১ তারিখে, Avian Web এ ধূসর বনমোরগ বিষয়ক পাতা।
  4. Grey Junglefowl ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে, ধূসর বনমোরগ বিষয়ক পাতা।