দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চন্দ্রকলা ও দোলন :২০১৯ সালে উত্তর গোলার্ধে ঘন্টায় ঘন্টায় গৃহীত ; বাদন ,শিরোনাম ও লেখচিত্রসহ ।
Over one lunar month more than half of the Moon's surface can be seen from the surface of the Earth.
মাসব্যাপী চাঁদের নির্মিত রূপ যাতে অক্ষাংশেদ্রাঘিমাংশে দোলন প্রদর্শিত হচ্ছে । এখানে আরও দেখা যাচ্ছে : চাঁদের বিভিন্ন কলা ও পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বের কারণে দৃশ্য আকারের বিভিন্নতা ।
দোলনের কারণে দৃশ্যমান চন্দ্র পৃষ্ঠের তাত্ত্বিক ব্যাপ্তি (সবুজ রঙে) , দোলনহীন অবস্থায় দৃশ্যমান চন্দ্র পৃষ্ঠের ব্যাপ্তি যেমনটা হতো (হলুদে) । অভিক্ষেপটি হল উইঙ্কেল ট্রিপেল অভিক্ষেপ । মেরে ওরিয়েন্টাল (হলুদের ঠিক বাইরে) অঞ্চল দোলনের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমানতায় আসে ।

চন্দ্র জ্যোতির্বিদ্যায় দোলন হল পৃথিবীস্থ পর্যবেক্ষকদের দ্বারা অনুভূত চাঁদের দোলায়িত নড়াচড়া যা তাদের পটভূমির পরিবর্তনের কারণে ঘ'টে থাকে । এটি কোনো পর্যবেক্ষককে বিভিন্ন সময়ে চন্দ্রপৃষ্ঠের সামান্য ভিন্ন ভিন্ন গোলার্ধ দেখার অবকাশ দেয় । দূরত্বের পরিবর্তনের কারণে চাঁদের আপাত আকারের পরিবর্তনের কারণ এবং প্রভাব উভয় ক্ষেত্রেই এটি একই রকম । এটি নিম্নবর্ণিত তিনটি প্রক্রিয়ায় ঘটে , যার মধ্যে দুটি পৃথিবী প্রয়োগিত মহাকর্ষীয় প্রবাহ-বলের মাধ্যমে তুলনামূলক ক্ষীণ ভৌত দোলন ঘটায় । এই ধরনের সত্যিকারের দোলনসমূহ আবদ্ধ ঘূর্ণনযুক্ত অন্যান্য চাঁদের জন্যও পরিচিত ।

একটি ট্রোজান গ্রহাণুর গতিবিধির সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রপঞ্চকে বলা হয় ট্রোজান দোলন ; এবং ট্রোজান দোলন বিন্দু মানে ল্যাগ্রাঞ্জীয় বিন্দু ।

চান্দ্র দোলন[সম্পাদনা]

মহাকর্ষীয় প্রবাহাবদ্ধতার কারণে চাঁদ নিজের একটি গোলার্ধকে পৃথিবীর দিকে মুখ করে রাখে। তাই , ৭ অক্টোবর, ১৯৫৯ সালে সোভিয়েত অন্বেষকযান লুনা ৩ চাঁদে না পৌঁছানো পর্যন্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা আরও চন্দ্র অন্বেষণ না হওয়া পর্যন্ত চাঁদের দূরপৃষ্ঠের প্রথম দর্শন সম্ভব হয় নি। এই সাধারণ চিত্রটি কেবল প্রায়-সত্য কেননা সময়ের সাথে সাথে , চন্দ্রপৃষ্ঠের অর্ধেকের একটু বেশি (মোট প্রায় ৫৯%) দোলনের কারণে পৃথিবী থেকে দেখা যায়।[১]

চান্দ্র দোলন পরিপ্রেক্ষিতের তিনটি পরিবর্তনের কারণে উদ্ভূত হয়: অ-বৃত্তাকার ও আনত কক্ষপথ , পৃথিবীর সসীম আকার এবং মহাকাশে চাঁদের অভিযোজন। এর মধ্যে প্রথমটিকে বলা হয় চাক্ষুষ দোলন , দ্বিতীয়টিকে লম্বন দোলন এবং তৃতীয়টিকে ভৌত দোলন। অবদানানুযায়ী এদের প্রতিটিকে দুটি ভাগ করা যায়।

চান্দ্র দোলন নিম্নোক্ত চার প্রকারের :

  • চাক্ষুষ দোলন, দ্রাঘিমাংশীয় ও অক্ষাংশীয় দোলনের সম্মিলিত দোলন চন্দ্রের প্রদক্ষিণকালে উপ-পৃথিবী বিন্দুর নড়াচড়া ও চাঁদের সাময়িকভাবে দৃশ্যমান অংশগুলির মধ্যে একটি দোদুল্যমান দৃশ্য তৈরি করে। এটিকে , চাঁদের উপবৃত্তাকার প্রদক্ষিণকালে , চাঁদ এবং পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্বের পরিবর্তনের কারণে চাঁদের আপাত আকারের পরিবর্তনের সাথে বা চাঁদের আনত অক্ষের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে অবস্থানগত কোণের পরিবর্তনের সাথে , কিংবা চাঁদের প্রদক্ষিণকালে পৃথিবীর আনত অক্ষের আপেক্ষিক অবস্থানের কারণে চাঁদের পর্যবেক্ষিত দোলন গতির সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।[২]
    • দ্রাঘিমাংশীয় দোলন ঘটে পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতার কারণে ; চাঁদের ঘূর্ণন কখনও বাড়ে ও কখনও কখনও তার কক্ষপথের অবস্থান থেকে পিছিয়ে যায়। ১৬৪৮ সালে জোহানেস হেভেলিয়াস দ্রাঘিমাংশে চন্দ্রের দোলন আবিষ্কার করেন।[৩] এটি প্রশস্ততায় ৭°৫৪′ পর্যন্ত হতে পারে।[৪] দ্রাঘিমাংশীয় দোলন পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষককে চাঁদের প্রদক্ষিণকালে বিভিন্ন ধাপে যথাক্রমে চাঁদের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকের আরও কিছুটা দেখার অবকাশ দেয়।[২]
    • অক্ষাংশীয় দোলন ঘটে চাঁদের ঘূর্ণন অক্ষ এবং পৃথিবীর চারপাশে এটির স্বাভাবিক কক্ষপথীয় সমতলের মধ্যকার সামান্য আনতি (প্রায় ৬.৭°) থেকে। এটির উৎস সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর আবর্তন থেকে যেভাবে ঋতুসমূহ উদ্ভব হয় তার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। গ্যালিলিও গ্যালিলিকে কখনও কখনও ১৬৩২ সালে অক্ষাংশে চান্দ্র দোলন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয় ,[৩] যদিও টমাস হ্যারিয়ট বা উইলিয়াম গিলবার্ট তার আগেই এটি করে থাকতে পারেন।[৫] ক্যাসিনির নীতি লক্ষণীয়। এটি প্রশস্ততায় ৬°৫০′ অবধি পৌঁছাতে পারে।[৪] ৬.৭º নির্ভর করে কক্ষপথের ৫.১৫º আনতি ও ১.৫৪º ঋণাত্মক বিষুবীয় আনতির ওপর। অক্ষাংশীয় দোলন পৃথিবীর একজন পর্যবেক্ষককে চাঁদের কক্ষপথের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদের উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু ছাড়িয়ে দেখার অবকাশ দেয়।[২]
  • লম্বন দোলন পৃথিবীর যেখান থেকে চাঁদকে দেখা যায় সেখানকার দ্রাঘিমাংশ এবং অক্ষাংশ উভয়ের উপর নির্ভর করে।
    • আহ্নিক দোলন হল পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ঘটা ছোট দৈনিক দোলন যা একজন পর্যবেক্ষককে পৃথিবী ও চাঁদের কেন্দ্রদ্বয়কে যুক্তকারী সরল রেখার একপাশ থেকে অন্য আরেক পাশে নিয়ে যায় , এবং পর্যবেক্ষককে প্রথমে চাঁদের একপাশের ও পরে আরেক পাশের চতুর্দিক দেখার অবকাশ দেয় — যেহেতু পর্যবেক্ষক পৃথিবীর কেন্দ্রে নয় পৃষ্ঠে থাকে। এটি বিস্তারে ১° পর্যন্ত হয়।[৪]
  • ভৌত দোলন হল অভিন্ন ঘূর্ণন এবং অক্ষীয় অগ্রগতি সম্পর্কিত মহাকাশে পারিপার্শ্বিকায়নের দোলন। ৩টি অক্ষের সবগুলিতেই ভৌত দোলন আছে। এদের আকার প্রায় ১০০ আর্ক সেকেন্ড। পৃথিবী থেকে এর পরিমাণ ১ সেকেন্ডের কম দেখা যায়। চাঁদের কক্ষপথ এবং আকৃতি দেখে জোরপূর্বক ভৌত দোলনের পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। মুক্ত ভৌত দোলনের সময়কালও ভবিষ্যদ্বাণী করা যেতে পারে , তবে তাদের বিস্তার এবং পর্যায়গুলি ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. World Book at NASA 
  2. SVS, NASA's (২০২১-০৮-১৮)। "SVS: Moon Phase and Libration, 2020"Home - NASA Scientific Visualization Studio। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০১ 
  3. Highlights of Astronomy: As Presented at the XXIst General Assembly of the IAU, 1991। Springer Science & Business Media। ২০১৩। পৃষ্ঠা 521। আইএসবিএন 978-9401128285 
  4. Ratkowski, Rob; Foster, Jim (মে ৩১, ২০১৪)। "Libration of the Moon"Earth Science Picture of the Day 
  5. Stephen Pumfrey: Harriot’s Maps of the Moon: New Interpretations. Notes Rec. R. Soc. 63, 2009, doi:10.1098/rsnr.2008.0062.