দুর্বল নিউক্লিয় বল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দুর্বল নিউক্লিয় বলের কারণে তেজস্ক্রিয় বিটা ক্ষয় হচ্ছে। ফলে একটি নিউট্রন রূপান্তরিত হচ্ছে একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন এবং একটি ইলেকট্রন নিউট্রিনোতে।

কণা পদার্থবিজ্ঞান - এ দুর্বল নিউক্লিয় বল হচ্ছে প্রকৃতির চারটি মৌলিক বলের একটি। অন্য তিনটি বল হচ্ছে সবল নিউক্লিয় বল, তাড়িতচৌম্বক বল এবং মহাকর্ষ বলতেজস্ক্রিয়তার জন্য দুর্বল নিউক্লিয় বল দায়ী, নিউক্লিয় ফিশনে তেজস্ক্রিয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই বলটি ১০-১৮ মিটার দুরত্বে ক্রিয়া করে।[১] দুর্বল নিউক্লিয় বলের তত্ত্বকে কখনো কখনো কোয়ান্টাম ফ্লেভারডাইনামিক্স (QFD) বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিক্স যেমন সবল নিউক্লিয় বলের সাথে এবং কোয়ান্টাম তড়িৎ- বিজ্ঞান তাড়িতচৌম্বক বলের সাথে জড়িত। কিন্তু QFD নামপদটি খুব কম ব্যবহার করা হয়, কেননা দুর্বল বল দুর্বল-তড়িৎ তত্ত্বের (Electroweak interaction) অধীনে সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা করা যায়। [২]

তাড়িতচৌম্বকীয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একই সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে। তাই এই দুটিকে একত্রে ইলেক্ট্রো-উইক বলও (Electro-weak force) বলে।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালে, এনরিকো ফার্মি সর্বপ্রথম দুর্বল নিউক্লিয় বলের প্রস্তাবনা করেন- এটি ফার্মির মিথস্ক্রিয়া নামে পরিচিত। তিনি প্রসাতব করেন যে, বিটা ক্ষয় চারটি ফার্মিয়নের মিথস্ক্রিয়া দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেখানে একটি ব্যাপ্তিসীমাবিহীন সংযোগ বল থাকবে।[৩][৪]

দুর্বল বলকে অসংযোগ বল হিসেবে বর্ণনা করা হয় যেটার বলের ক্ষেত্র সীমিত ব্যাপ্তিযুক্ত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৬৮ সালে শেল্ডন লি গ্ল্যাশো, আবদুস সালাম এবং স্টিভেন ভেইনবার্গ তাড়িতচৌম্বক বল এবং দুর্বল মিথস্ক্রিয়াকে একীভূত করে দেখান যে তারা আসলে একি বলের দুটো ভিন্ন রূপ।এদেরকে এখন দুর্বল তড়িৎ বল বলা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৮৩ সালের আগে W এবং Z বোসনের অস্তিত্ব সুনিশ্চিত করা যায়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বৈশিষ্ট্যসমূহ[সম্পাদনা]

দুর্বল নিউক্লিয় বলের কারণে বিভিন্ন ক্ষয়ের পথ এবং সম্ভাব্য পথের ডায়াগ্রাম। লাইনগুলোর তীব্রতা হিসেব করা হয়েছে সিকেএম রাশির মাধ্যমে।

বিভিন্ন দিক থেকে দুর্বল নিউক্লিয় বল অনন্য।

  • একমাত্র দুর্বল নিউক্লিয় বলের মাধ্যমেই কোয়ার্কগুলো ফ্লেভার পরিবর্তন করে। (অর্থাৎ এক ধরনের কোয়ার্ক অন্য কোয়ার্কে রূপান্তরিত হয়)।
  • এটিই একমাত্র মিথস্ক্রিয়া যা প্যারিটি-প্রতিসাম্যকে ভেঙে দেয়। এটি চার্জ-প্যারিটি প্রতিসাম্যতাকেও অমান্য করে। 
  • এটি এমন কণা দ্বারা পরিবাহিত হয় যেগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ ভর আছে। এ ব্যাপারটি হিগস মেকানিজমের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড মডেলে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। 

দুর্বল সমস্পিন এবং দুর্বল অতিচার্জ[সম্পাদনা]

দুর্বল নিউক্লিয় বলের মাধ্যমে ধনাত্মক পাইওন ক্ষয় 

মিথস্ক্রিয়ার ধরন[সম্পাদনা]

দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের মিথস্ক্রিয়া দুই ধরনের। একটি হল "আধান-তড়িৎ মিথস্ক্রিয়া" যেটি ব্যাখ্যা করে কোনো কণার তড়িৎ পরিবহন (যেমন ডব্লিউ বোসন)। এটি বিটা-ক্ষয়ের ঘটনার জন্য দায়ী।  দ্বিতীয় ধরনের মিথস্ক্রিয়া "আধাননিরপেক্ষ ও তড়িৎ এর মিথস্ক্রিয়া" যেক্ষেত্রে কোনো আধান নিরপেক্ষ কণা (যেমন: Z বোসন) বিদ্যুৎ পরিবহন করে। 

চার্জিত- কারেন্ট মিথস্ক্রিয়া[সম্পাদনা]

বিটা-মাইনাস ক্ষয়ের ফাইনম্যান ডায়াগ্রাম যেখানে ভারী Wমাইনাস বোসন কণার মাধ্যমে একটি নিউট্রন ভেঙে একটি প্রোটন, ইলেকট্রন এবং ইলেকট্রন এন্টি-নিউট্রিনোতে পরিণত হচ্ছে। 

নিরপেক্ষ-তড়িৎ মিথস্ক্রিয়া[সম্পাদনা]

নিরপেক্ষ তড়িৎ মিথস্ক্রিয়ায়, একটি কোয়ার্ক অথবা একটি লেপটন (যেমন একটি ইলেকট্রন বা একটি মিউওন) একটি Z বোসন নির্গত বা শোষণ করে। উদাহরণস্বরূপ:

W বোসনের মত Z বোসনও খুব দ্রুত ক্ষয় হয়ে যায়। যেমন:

দুর্বল তড়িৎ তত্ত্ব[সম্পাদনা]

প্রতিসাম্যতার লঙ্ঘন[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

Citations[সম্পাদনা]

  1. পদার্থবিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ (শিক্ষাবর্ষ ২০২১)
  2. Griffiths, David (২০০৯)। Introduction to Elementary Particles। পৃষ্ঠা 59–60। আইএসবিএন 978-3-527-40601-2 
  3. Fermi, Enrico (১৯৩৪)। "Versuch einer Theorie der β-Strahlen. I"। Zeitschrift für Physik A88 (3–4): 161–177। ডিওআই:10.1007/BF01351864বিবকোড:1934ZPhy...88..161F 
  4. Wilson, Fred L. (ডিসেম্বর ১৯৬৮)। "Fermi's Theory of Beta Decay"American Journal of Physics36 (12): 1150–1160। ডিওআই:10.1119/1.1974382বিবকোড:1968AmJPh..36.1150W