থমাস চার্লস হোপ
থমাস চার্লস হোপ | |
---|---|
![]() থমাস চার্লস হোপের প্রতিকৃতি (হেনরি রেবার্ণ তৈরি)[১] | |
জন্ম | |
মৃত্যু | ১৩ জুন ১৮৪৪ | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | স্কটিশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | জলের সর্বাধিক ঘনত্ব (হোপের পরীক্ষা) স্ট্রনশিয়াম আবিষ্কার |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | Tentamen inaugurale, quaedam de plantarum motibus et vita complectens (1787) |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | জোসেফ ব্ল্যাক |



থমাস চার্লস হোপ FRSE FRS PRCPE FFPSG(২১ জুলাই ১৭৬৬ – ১৩ জুন ১৮৪৪) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ব্রিটিশ চিকিৎসক, রসায়ন বিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক।. তিনি স্ট্রনশিয়াম নামে এক নতুন মৃৎক্ষার ধাতু আবিষ্কার করেন।,[২][৩] তার নামাঙ্কিত পরীক্ষা হোপস্ এক্সপেরিমেন্ট-এর মাধ্যমে দেখান যে, ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় জলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। [২]
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে হোপ রয়াল কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অব এডিনবরার সভাপতি (১৮১৫-১৯) এবং যখন ওয়াল্টার স্কট এবং থমাস ম্যাকডুগাল ব্রিসবেন সভাপতি (১৮২৩ -৩৩) ছিলেন তিনি রয়াল সোসাইটি অব এডিনবরা'র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের উপর একটি পুরস্কার চালু করেন।। [২]
চার্লস ডারউইন ছিলেন হোপের অন্যতম ছাত্রদের একজন। চার্লস ডারউইনও বিশ্ববিদ্যালয়ে হোপের রসায়নের বক্তৃতার বহু প্রশংসা করেছেন, না হলে তার রসায়ন শিক্ষা মূলত নিস্তেজ হত।[৪]
জীবনের প্রথমার্ধ
[সম্পাদনা]থমাস চার্লস হোপের জন্ম ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে জুলাই এডিনবরায় । পিতা জন হোপ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক এবং মাতা জুলিয়ানা (নী স্টিভেনসন) ছিলেন এডিনবরার এক চিকিৎসকের কন্যা। তাঁদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে থমাস চার্লস ছিলেন তৃতীয় পুত্র। চার্লসের প্রাথমিক শিক্ষা এডিনবরায় তাঁদের বাড়ির কাছেই এক উচ্চ বিদ্যালয়ে। তবে তেরো বৎসর বয়সে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে ডামফ্রিজের এক স্কুলে পড়াশোনা করেন। [৫] অল্পদিনেই উদ্ভিদবিদ্যায় তিনি দক্ষতা অর্জন করেন, কিন্তু ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে কুড়ি বৎসর বয়সের সময় তার পিতৃবিয়োগ হয়। ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি এম.ডি স্নাতক হন। [৬] এবং প্যারিস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছিলেন । [৩] বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক জোসেফ ব্ল্যাকের ছাত্র ছিলেন তিনি।
তিনি প্রখ্যাত চিকিৎসক আলেকজান্ডার স্টিভেনসনের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। [৩]
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্রনশিয়াম আবিষ্কার
[সম্পাদনা]১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ঔষধবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। [৩]
১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে জন ওয়াকার, ড্যানিয়েল রাদারফোর্দ এবং আলেকজান্ডার মনরোর প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি রয়াল সোসাইটি অফ এডিনবরার ফেলো নির্বাচিত হন। [৩]
১৭৯১-৯২ খ্রিস্টাব্দে হোপ যে রাসায়নিক মৌল এর উপরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করেন তার প্রাপ্তিস্থান ছিল পশ্চিম হাইল্যান্ডের এক গ্রাম স্ট্রনশিয়ান'-এ। স্ট্রন্টিয়ানাইট ছিল বলেই মৌলটির নাম দেন স্টনটিয়াম। [২][৭] পরে মৌলটির নাম স্ট্রনশিয়াম রাখা হয়। [৭] ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর হোপ তার পর্যবেক্ষণ "অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ এ মিনেরাল ফ্রম স্ট্রনশিয়ান অ্যান্ড অফ এ পিকিউলিয়র স্পাইসেস অফ আর্থ হুইচ ইট কনটেন্স" শীর্ষক বিবরণীতে রয়াল সোসাইটি অব এডিনবরা'য় উপস্থাপন করেন। [২]
হোপ তার অন্য এক পরীক্ষায় দেখান জলের ঘনত্ব অধিক হওয়ার ফলে বরফ বা আইসবার্গগুলি জলের উপরে ভাসে।[৮]
হোপ ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে রয়াল সোসাইটি অফ এডিনবরার ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৮২২ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর সহ-সভাপতি ছিলেন। [৯]
১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে তার পিতৃব্য চিকিৎসক আলেকজান্ডার স্টিভেনসনের মৃত্যু পর গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে মেডিসিনের অধ্যাপক হন। [১০]
১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দে জোসেফ ব্ল্যাক হোপকে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৭৯৫ - ১৭৯৯) সময়ের তার সহকারী এবং মেডিসিন ও রসায়নের পরবর্তী (১৭৯৯- ১৮৪৩) সময়ের উত্তরসূরি নির্বাচন করেন। হোপের লক্ষ্য ছিল তার রাসায়নিক ফলাফলের নির্দেশ ও মেডিসিনের উপযোগী করে পুরোপুরি সুসংহত করা।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হোপ বার্ষিক 'এডিনবার্গ অ্যারো' নামক ধনু-প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেন।
১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'রয়াল হাইল্যান্ড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল সোসাইটি অফ স্কটল্যান্ড'-এর সদস্য হন। [৩]
১৮১০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির এর ফেলো নির্বাচিত হন। [১১]
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রয়াল কলেজ অফ ফিজিসিয়ান্স অফ এডিনবার্গ এর সভাপতি পদে আসীন ছিলেন। [১২]
১৮২৪ –৪০ খ্রিস্টাব্দ সময়ে হোপ ফ্রান্সের পয়সি গোষ্ঠীর বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করেন। শহরের প্রধান জিন-ফ্রানসোয়া সেনকোর্টের সাথে তিনি শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। কয়েক বৎসরের মধ্যে তার বক্তৃতায় অগণিত মেডিক্যালের ছাত্ররা উৎসাহিত হলে তাঁদের উদ্দেশ সফল হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৮৩০ এর দশকে তিনি এডিনবরার পশ্চিম প্রান্তে এক নতুন এডিনবরার শহরের মোরে এস্টেটের ৩১, মোরে প্লেসের একটি বৃহৎ টাউনহাউসে বসবাসের জন্য স্থির করেন। [১৩]
১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি অধ্যাপক পদ হতে পদত্যাগ করেন। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই জুন ৩১ মোরে প্লেসের নিজের বাড়িতে প্রয়াত হন।[১৪]
তাঁকে মধ্য এডিনবরার গ্রেফায়ার্স কিরকিয়ার্ডে সমাধিস্থ করা হয়। সমাধিটি উত্তর গির্জার উঠানের পশ্চিম প্রাচীরের বিপরীতে, উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত।
প্রকাশিত গ্রন্থ ও রচনা
[সম্পাদনা]- Hope, Thomas Charles। An account of a mineral from Strontian: and of a peculiar species of earth which it contains। পৃষ্ঠা 39।
- Hope, Thomas Charles। "On the beads for ascertaining the specific gravity of liquid"। Highland and Agricultural Society: 181।
- Hope, Thomas Charles; Rutherford, Daniel (১৭৯৬)। Thomas Charles Hope lectures: on Chemistry। পৃষ্ঠা 280।
- Telford, Thomas; Hope, Thomas Charles (১৮১৩)। Reports on the means of improving the supply of water for the city of Edinburgh: and on the quality of the different springs in the neighborhood। Printed for Archibald Constable। পৃষ্ঠা 76।
- Hope, Thomas Charles; University of Edinburgh (১৮৩৩)। Summary of a memorial to be presented to the Right Honourable the Lord Provost ...: respecting the institution of a professorship of practical chemistry in the University of Edinburgh। পৃষ্ঠা 17।

থমাস চার্লস হোপ, জলের ব্যতিক্রমী প্রসারণ ধর্ম পরীক্ষাগারে প্রদর্শনের জন্য যে সহজ ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন, (যা উপরের ছবিতে প্রদর্শিত) সেটি হোপের যন্ত্রপাতি হিসাবে পরিচিত।হোপ একটি লম্বা উল্লম্ব সিলিন্ডার আকৃতির জল ভর্তি জার নেন। এটির উপরের দিকে একটি এবং নীচের অংশে আর একটি থার্মোমিটার বায়ুনিরোধকভাবে লাগানো ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যবর্তী অংশে ধাতব নলাকার পাত্র জারটির চারপাশে লাগান যায় যেন এতে সাধারণ লবণের হিমশীতল মিশ্রণে ভরা যেতে পারে।।
হিমশীতল মিশ্রণ রাখার আগে উপর ও নিচের থার্মোমিটারে তাপমাত্রা মান এক থাকলেও, মাঝের নলাকার পাত্রে হিমশীতল মিশ্রণ রাখার পর দুটির থার্মোমিটারে তাপমাত্রার মান পৃথক হতে থাকে। জারের কেন্দ্রীয় অংশের জলের তাপ হ্রাস হতে থাকে, ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলস্বরূপ, কেন্দ্রীয় অংশের জলের স্তরগুলি নীচের দিকে চলে যায় এবং নীচের হাল্কা জলের স্তরগুলি উপরে স্থানান্তরিত হতে থাকে। এভাবে পরিচলন প্রক্রিয়া শেষ হলে শেষে দেখা যায়, উপরের থার্মোমিটারে পাঠ ক্রমাগত নিচে নামতে থাকলেও নীচের থার্মোমিটার, যেটি বেশি ঘনত্বের জলের সংস্পর্শে, তার পাঠ ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে স্থির থাকে।।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ William Raeburn Andrew (১৮৯৪)। "Appendix, 156 - Hope, Thomas Charles, M.D."। Life of Sir Henry Raeburn, R.A.: With Appendix। W. H. Allen & Company, limited। পৃষ্ঠা 156। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Sir Leslie Stephen (১৮৯১)। Dictionary of National Biography, Volume 27। Macmillan। পৃষ্ঠা 329। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Waterston, Charles D; Macmillan Shearer, A (জুলাই ২০০৬)। Former Fellows of the Royal Society of Edinburgh 1783–2002: Biographical Index (পিডিএফ)। The Royal Society of Edinburgh। আইএসবিএন 978-0-902198-84-5। ৪ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১১।
- ↑ "Thomas Charles Hope, MD, FRSE, FRS (1766-1844) | School of Chemistry"। www.chem.ed.ac.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-৩০।
- ↑ Edinburgh and Leith Post Office directory 1773-74
- ↑ Charles, Hope, Thomas (১৭৮৭-০১-০১)। "Tentamen inaugurale, quaedam de plantarum motibus et vita complectens" (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ "Element Groups by Periodic Table"। Periodic Table। ১৩ অক্টোবর ২০১৬। ১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
Strontium
- ↑ Royal Society (Edinburgh) (১৮০৫)। Transactions of the Royal Society of Edinburgh, Volume 5। Oliver & Boyd। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২১।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৭ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২১।
- ↑ "Library and Archive Catalogue"। Royal Society of London। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১০।[অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Biographical Index of Former Fellows of the Royal Society of Edinburgh 1783–2002 (পিডিএফ)। The Royal Society of Edinburgh। জুলাই ২০০৬। আইএসবিএন 0-902-198-84-X। ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০২১।
- ↑ "Edinburgh Post Office annual directory, 1832-1833"। National Library of Scotland। পৃষ্ঠা 88। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-১৮।
- ↑ Edinburgh and Leith Post Office Directory 1843-44
- ↑ Pearson (সেপ্টেম্বর ২০০৯)। Iit Foundations - Physics Class 9। পৃষ্ঠা 267। আইএসবিএন 9788131728468।