তাতার খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাতার খান
দিল্লি সালতানাতের গভর্নর
কাজের মেয়াদ
১৩২৮ – ১৩৩৭
সার্বভৌম শাসকগিয়াসউদ্দিন তুগলক
মুহাম্মদ বিন তুগলক
ব্যক্তিগত বিবরণ
মৃত্যু১৩৩৭ খ্রিষ্টাব্দ
সোনারগাঁ, বাংলা
জীবিকাসোনারগাওয়ের শাসনকর্তা
ধর্মইসলাম
পুরস্কারখান-ই-আজম বাহরাম খান
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যদিল্লি সালতানাত
পদসেনাপতি

তাতার খান (বাহরাম খান নামেও পরিচিত) ১৩২৮ সাল থেকে ১৩৩৭ সাল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) সোনারগাঁওয়ের গভর্নর ছিলেন। তিনি ছিলেন দিল্লী সালতানাতের একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত সেনাপতি।[১]

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

তাতার খানের পিতা খোরাসানের সুলতান ছিলেন। তার পিতা মুলতান ও দিপালপুর জয়ের জন্য অভিযানে বের হন। এরপর দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক তাদের প্রতিহত করার জন্য মুলতানের দিকে যাত্রা করেন। যে রাতে গিয়াসউদ্দিন আক্রমণ করেন সেই রাতেই তাতার খানের জন্ম হয়। আক্রমণের ফলে আতঙ্কের কারণে তাকে ফেলে অন্যরা পালিয়ে যায়। সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে গিয়াসউদ্দিন পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তার নাম রাখেন তাতার খান।[১] গিয়াসউদ্দিনের কাছে তাতার খান লালিতপালিত হন।

সোনারগাঁয়ের শাসক[সম্পাদনা]

তাতার খান বাংলায় তুগলকদের আধিপত্য বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। ১৩২৪ সালে ত্রিহুত ও বাংলা জয়ের জন্য পরিচালিত গিয়াসউদ্দিন তুগলকের অভিযানে তাতার খান তার সাথে অংশ নেন। এসময় তিনি জৌনপুরের নিকটবর্তী জাফরাবাদের শাসক ছিলেন। তিনি লখনৌতি ও সোনারগাঁয়ের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহর বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাতার খান লখনৌতি থেকে বাহাদুর শাহকে বিতাড়িত করেছিলেন। পরে বাহাদুর শাহ পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বন্দী করা হয়।[১]

গিয়াসউদ্দিন তুগলক দিল্লি ফেরার পূর্বে তাতার খানকে সোনারগাঁ ও সাতগাঁয়ের শাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যান। ১৩২৫ সালে পরবর্তী সুলতান মুহাম্মদ বিন তুগলক কর্তৃক বাহাদুর শাহ মুক্তি পান এবং তাকে সোনারগাঁয়ের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। একইসাথে তাতার খান সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান।[১]

বাহাদুর শাহ ১৩২৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি নিজের নামে মুদ্রাও চালু করেন। এরপর তাতার খানের সাথে যুদ্ধে বাহাদুর শাহ পরাজিত ও নিহত হন। বাংলায় তুগলকদের আধিপত্য স্থাপনে অবদানের কারণে দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুগলক কর্তৃক তাতার খানকে "খান-ই-আজম বাহরাম খান" উপাধিতে ভূষিত করা হয়।[১]

তাতার খান ১৩২৮ সালে সোনারগাঁয়ের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান।[১]

জ্ঞানচর্চায় অবদান[সম্পাদনা]

তাতার খান জ্ঞানচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছেন। কুরআনের বহু তাফসির সংগ্রহ করে তিনি সোনারগাঁয়ের আলেমদের সহায়তায় তাফসির-ই-তাতারখানি নামক তাফসির সংকলন করেছিলেন।[১] এছাড়াও ফতোয়ায়ে তাতারখানি নামক আইন গ্রন্থ সংকলনে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।[১]

ফকিহ কামাল-ই-করিম ফিকহের উপর আরবিতে মাজমু-ই-খানী ফি আইন আল-মাআনি নামক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থ তিনি বাংলার শাসক উলুগ কুতলুগ আইজ্জুদ্দিন বাহরাম খানের নামে উৎসর্গ করেছেন। এই বাহরাম খান ও তাতার খান একই ব্যক্তি।[১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৩৩৭ সালে তাতার খান সোনারগাঁ মৃত্যুবরণ করেন। তার বর্ম রক্ষক ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ এরপর নিজেকে সোনারগাঁওয়ের স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "তাতার খান - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০২-২০ 
পূর্বসূরী
গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহ
সোনারগাঁওয়ের শাসক
১৩২৮–১৩৩৭
উত্তরসূরী
ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ