তরুণ রায় (ধনঞ্জয় বৈরাগী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তরুণ রায় (ধনঞ্জয় বৈরাগী)
জন্ম১৯২৭
মৃত্যু৩০ অক্টোবর ১৯৮৮ (বয়স ৬১)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশানাট্যকার, নাট্য পরিচালক
দাম্পত্য সঙ্গীদীপান্বিতা রায়
সন্তানদেবরাজ রায়

তরুণ রায় বা ধনঞ্জয় বৈরাগী (জন্ম: ১৯২৭ - মৃত্যু: ৩০ অক্টোবর ১৯৮৮) ছিলেন এক বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকার, সাহিত্যিক, মঞ্চাভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক। বাংলা একাঙ্ক নাটকের একটি নতুন ধারার প্রবর্তক ছিলেন তিনি।[১][২]

সংক্ষিপ্ত জীবনী[সম্পাদনা]

বাংলা থিয়েটার জগতে তরুণ রায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, মহেন্দ্র গুপ্ত'র সমসাময়িক ছিলেন। উৎপল দত্তের সহপাঠী ছিলেন। তবে পড়াশোনার সময় থেকেই তার বাংলা রঙ্গমঞ্চের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া রোডে নিজের বাড়িতে "থিয়েটার সেন্টার" নামে একটি রঙ্গালয় স্থাপন করেন। সেখানে তিনি নিয়মিত নাট্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত অপর সংস্থাটি ছিল "মুখোশ"। সারা ভারতের নাট্যদলকে নিয়ে প্রথম একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা সংগঠন করার কাজে তিনি পথিকৃত। ১৯৫১ - ৫২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে বৃটিশ ড্রামা লিগের সাথে যুক্ত ছিলেন। । সেসময় ইংরাজী ভাষায় বিদেশী শিল্পীদের নিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের "বিসর্জন" এবং "ডাকঘর" সার্থক প্রযোজনা করে প্রশংসা লাভ করেন। বাংলা নাট্যজগতে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের পাশাপাশি পেশাদারি মঞ্চের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। আন্তঃকলেজ নাট্য প্রতিযোগিতায় "ক্ষুধিত পাষাণ" নাটকে নায়িকার ভূমিকায় স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্রী দীপান্বিতার সাথে প্রথম আলাপ হয় ও পরে বিবাহ। এরপরে বহু নাটকে এক সঙ্গে অভিনয় করেন এই দম্পতি। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে রঙমহল মঞ্চে 'এক মুঠো আকাশ' নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। তার 'এক পেয়ালা কফি' , 'আগন্তুক' প্রভৃতি নাটকও পেশাদারি মঞ্চে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মঞ্চে তিনিই প্রথম দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। 'বন পলাশির পদাবলী', 'পঙ্কতিলক ', কুহেলী' প্রভৃতি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। উপন্যাস এবং ছোটগল্পও তিনি লিখেছেন। তবে লেখালেখিতে তিনি ধনঞ্জয় বৈরাগী ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। তার রচিত গ্রন্থগুলি হল -

  • ধৃতরাষ্ট্র (১৯৫৭)
  • রুপোলি চাঁদ ১৯৫৮)
  • আর হবে না দেরী
  • সৈনিক
  • রজনীগন্ধা (১৯৬০)
  • পরাজিত নায়ক
  • অঘটন আজো ঘটে
  • পুড়েও যা পোড়ে না
  • মুখোশের আড়ালে
  • কালো হরিণ চোখ
  • কেঁচো খুঁড়তে সাপ ( জীবনতারা হালদারের জীবনী অবলম্বনে)
  • নুনের পুতুল সাগরে
  • রেসকোর্স প্রভৃতি।

তরুণ রায় রাজনীতিতে কংগ্রেসি ছিলেন বলেই বাম আমলে তেমন কিছু করতে পারেন নি। তিনি কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস অল্ডারম্যান ছিলেন। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা দূরদর্শনের সৌমকান্তি সংবাদ পাঠক দেবরাজ রায় তার পুত্র এবং অভিনেত্রী অনুরাধা রায় তার পুত্রবধূ।[৩]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

বিভিন্ন সংস্থার পুরস্কারের সাথে তিনি নাট্য পরিচালনায় ভারত সরকারের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

নাট্যব্যক্তিত্ব তরুণ রায় ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে অক্টোবর কলকাতায় প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ১৫১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৯১। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  3. "বাজে গো বীণা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৭