চুরুং (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
চুরুং | |
---|---|
祝融 | |
থিয়েনওয়েন-১ অংশ | |
ধরন | মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান |
প্রস্তুতকারী | চীনের মহাকাশ প্রযুক্তি অ্যাকাডেমি[১] |
কারিগরি | |
মাত্রা | ২.৬ বাই ৩ বাই ১.৮৫ মিটার (৮ ফু ৬ ইঞ্চি × ৯ ফু ১০ ইঞ্চি × ৬ ফু ১ ইঞ্চি) |
উৎক্ষেপণ ভর | ২৪০ কিলোগ্রাম (৫৩০ পা) |
ক্ষমতা | সৌর প্যানেল |
সরঞ্জাম | |
|
চুরুং (চীনা: 祝融; ফিনিন: Zhùróng) একটি মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান। এটি মঙ্গলগ্রহে প্রেরিত চীনা মহাকাশ অভিযান থিয়েনওয়েন-১-এর একটি অংশ। থিয়েনওয়েন-১ যানটিকে ২০২০ সালের ২৩শে জুলাই পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। যানটি ২০২১ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণকারী কক্ষপথে প্রবেশ করে। বিচরণ যানসহ অবতরণ যানটি ২০২১ সালের ১৪ই মে তারিখে মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠে সফলভাবে মসৃণ অবতরণ সম্পন্ন করে।[২] এর ফলে চীন বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পরে) মঙ্গলগ্রহপৃষ্ঠে সফলভাবে কোমল অবতরণ করতে এবং সেখান থেকে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।[৩] ২০২১ সালের ২২শে মে তারিখে সর্বজনীন সমন্বিত সময় অনুযায়ী ২টা বেজে ৪০ মিনিটে চুরুং মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানযানটিকে সফলভাবে অবতরণ যান থেকে মোতায়েন করা হয়।[৪]
অভিযান
[সম্পাদনা]চুরুং থিয়েনওয়েন-১-এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ২৩শে জুলাই সর্বজনীন সমন্বিত সময় অনুযায়ী ১২টা বেজে ৪১ মিনিটে ওয়েনছাং মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৫] এটি ২০২১ সালের ১৪ই মে তারিখে মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠের ইউটোপিয়া প্ল্যানিটিয়া সমভূমিতে অবতরণ করে। অবতরণের জন্য এটি একটি বায়ুখোলক, প্যারাশুট, ও পশ্চাদমুখী-রকেট (রেট্রোরকেট) ব্যবহার করে।[৬]
সৌরশক্তিতে চালিত মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটিতে ছয়টি চাকা আছে। এটির পূর্বপরিকল্পিত চলনক্ষম আয়ু ৯০ মঙ্গলদিবস (সল)। মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান ও এর অবতরণ মঞ্চটির সম্মিলিত ওজন ২৪০ কিg, এবং এটির উচ্চতা ১.৮৫ মি।[৬]
মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটির অভিযানে যে কাজগুলি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলি নিম্নরূপ:[৭]
- স্থানীয় অঞ্চলটির ভূসংস্থান ও ভূতাত্ত্বিক ব্যবস্থা অধ্যয়ন করা
- মৃত্তিকা পর্যবেক্ষণ করা এবং কোনও বরফ আছে কি না, তা পরীক্ষা করা।
- মৌলিক পদার্থ, খনিজ ও শিলাগুলি জরিপ করা
- মঙ্গলগ্রহের আবহমণ্ডলের নমুনায়ন
চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন ২০২১ সালের ১৯শে মে তারিখে মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠ থেকে চুরুংয়ের প্রেরিত আলোকচিত্রগুলি প্রথমবারের মতো প্রকাশ করে। [৮]
সরঞ্জামাদি
[সম্পাদনা]মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটি ছয়টি বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম বহন করছে:[৬][৭]
- একটি ভূমি-ভেদকারী রাডার (RoPeR বা GPR), যা দুইটি কম্পাংকে কাজ করে এবং মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠের ১০০ মিটার গভীরতার চিত্রগ্রহণে সক্ষম।[৯]
- মঙ্গলগ্রহ চৌম্বক ক্ষেত্র শনাক্তকরক (RoMAG বা MSMFD)
- মঙ্গলগ্রহ জলবায়ু কেন্দ্র (MCS) বা মঙ্গলগ্রহ আবহমণ্ডলীয় পরিমাপ সরঞ্জাম (MMMI), যাতে তাপমানযন্ত্র, চাপ সংবেদক, বায়ুপ্রবাহমাপকসহ একাধিক সংবেদক রয়েছে।
- মঙ্গল গ্রহপৃষ্ঠ যৌগ শনাক্তকারক (MarSCoDe বা MSCD), যাতে লেজার-আবেশিত পৃথকীকরণ বর্ণালীবীক্ষণ ( laser-induced breakdown spectroscopy) এবং অবলোহিত বর্ণালীবীক্ষণ (infrared spectroscopy) - এই দুই পদ্ধতির সমবায় ব্যবহার করা হয়েছে।[৭]
- বহুবর্ণালী আলোকচিত্রগ্রাহক (MSCam বা MSC)
- যানচালনা ও ভূসংস্থান আলোকচিত্রগ্রাহক (NaTeCam বা NTC)
নামকরণ
[সম্পাদনা]২০২১ সালের ২৪শে এপ্রিল তারিখে চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয় যে মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যানটির নাম হবে "চুরুং" (চীনা: 祝融号)। আগুন ও আলোর সাথে সম্পর্কিত চীনা পৌরাণিক চরিত্র চুরুংয়ের নামে এই নাম রাখা হয়।[১০] ২০২১ সালের ২০শে জানুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইন্টারনেটে অনুষ্ঠিত একটি উন্মুক্ত ভোটদান প্রক্রিয়াতে নামটি নির্বাচন করা হয়। চুরুং নামটি ৫ লক্ষের বেশি ভোট পেয়ে ১ম স্থান অধিকার করেছিল।[১১] কিছু চীনা মন্তব্যকারীর মতে চুরুং নামটি "চীনের আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযানের অগ্নিশিখা প্রজ্জ্বলন এবং নক্ষত্রসমূহ অনুসন্ধান ও মহাবিশ্বের অজানা রহস্যগুলি উদ্ঘাটনে চীনা জাতির দৃঢ়সংকল্পের প্রতীক।"[১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- মঙ্গলগ্রহ অনুসন্ধান
- কিউরিয়সিটি (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
- অপারচুনিটি (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
- পার্সিভিয়ারেন্স (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
- সোজোর্নার (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
- স্পিরিট (মঙ্গলগ্রহ বিচরণ যান)
- ভাইকিং কর্মসূচি
- পৃথিবী-বহিঃস্থ নভোবস্তুসমূহের পৃষ্ঠে বিচরণ যানের তালিকা
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lei, Zhao (২৩ জুলাই ২০২০)। "China-made Mars rover set for upcoming mission"। China Daily। ১৮ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২১।
Developed by the China Academy of Space Technology in Beijing, a major manufacturer of Chinese spacecraft, the rover carries six scientific instruments...
- ↑ Myers, Steven Lee; Chang, Kenneth (১৪ মে ২০২১)। "China's Mars Rover Mission Lands on the Red Planet"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২১।
- ↑ "China's Tianwen-1 spacecraft completes historic Mars landing"। Al Jazeera। ১৫ মে ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মে ২০২১।
- ↑ Zhao, Lei (২০২০-০৫-২২)। "China's Zhurong rover moves onto Martian surface to begin scientific operations"। China Daily। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০২১।
- ↑ Jones, Andrew (২৩ জুলাই ২০২০)। "Tianwen-1 launches for Mars, marking dawn of Chinese interplanetary exploration"। SpaceNews। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুলাই ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ গ Jones, Andrew। "Full Page Reload"। IEEE Spectrum: Technology, Engineering, and Science News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২১।
- ↑ ক খ গ Zou, Yongliao; Zhu, Yan; Bai, Yunfei; Wang, Lianguo; Jia, Yingzhuo; Shen, Weihua; Fan, Yu; Liu, Yang; Wang, Chi; Zhang, Aibing; Yu, Guobin; Dong, Jihong; Shu, Rong; He, Zhiping; Zhang, Tielong; Du, Aimin; Fan, Mingyi; Yang, Jianfeng; Zhou, Bin; Wang, Yi; Peng, Yongqing (২০২১)। "Scientific objectives and payloads of Tianwen-1, China's first Mars exploration mission"। Advances in Space Research। 67 (2): 812–823। আইএসএসএন 0273-1177। ডিওআই:10.1016/j.asr.2020.11.005 । বিবকোড:2021AdSpR..67..812Z।
- ↑ "China on Mars: Zhurong rover returns first pictures"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২১।
- ↑ The subsurface penetrating radar on the rover of China's Mars 2020 mission, B. Zhou, S. X. Shen, Y. C. Ji, 2016 16th International Conference on Ground Penetrating Radar (GPR), 13–16 June 2016
- ↑ "China's first Mars rover named Zhurong"। Xinhua। ২৪ এপ্রিল ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৪ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ""祝融号"荣登榜首!中国首辆火星车全球征名投票结束"। ২ মার্চ ২০২১। ২৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০২১।
- ↑ 高孟阳 Gao Mengyang। "定了!"祝融号"——中国首辆火星车有名字了!" [Deal! "Zhurong"—China's first Mars rover has a name!]। CCTV News (চীনা ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২১।